ব্যস্ততম জীবনে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ দেহে রোগ নিরাময় করা। আর রোগ নিরাময়ের সবচেয়ে ভালো কার্যকর উপায় হল যোগব্যায়াম। ব্যায়াম শুধু রোগ নিরাময়ই করে তা নয় বরং শরীরে এনার্জি প্রদান করে। আর এই যোগাসনের মধ্যে একটি আসন হল ভুজঙ্গাসন ।
আরও পড়ুন । মেডিটেশন কি এবং কীভাবে করবেন
আজকে আমরা এই আসনটির সম্পর্কে আলোচনা করব। এই যোগাসনটি অভ্যাস করলে কি কি উপকার হয় এবং কীভাবে করবেন এই আসন। এছাড়াও আপনাদের জানাব এই আসন করার কয়েকটি সতর্কতা।
আরও পড়ুন । রইল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য টিপস
ভুজঙ্গ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। ভুজঙ্গ কথার মানে সাপ এবং আসন মানে কোনও অবস্থা অথবা ভঙ্গিকে বোঝায়। অর্থাৎ ভুজঙ্গাসন কথার অর্থ সাপের ভঙ্গিতে আসন। ভুজঙ্গাসনকে ইংরেজিতে কোবরা পোজ বলা হয়।
সব আসনগুলির মধ্যে ভুজঙ্গাসন খুব জনপ্রিয় একটি আসন। এটি পিঠে ব্যথার রোগীদের জন্য খুব কার্যকর। পাশাপাশি এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে মেরুদন্ড শক্তিশালী হয়। এছাড়া নিয়মিত এই ভঙ্গিটি কাঁধ, হাত, কনুই, পিঠ, কিডনি এবং লিভার শক্তি লাভ করে এবং অনেক রোগ থেকে মুক্তি পায়।
ভুজঙ্গাসনের উপকারিতা:
নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে আমাদের শরীরে কয়েকটি স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে। সেগুলি হল-
- এটি দুর্দান্ত স্ট্রেস রিলিজ হিসাবে কাজ করে।
- এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে পিঠের হাড় মজবুত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়, গ্যাসের সমস্যা ( পেটে ব্যথা ) দূর হয়। পেটের অতিরিক্ত চর্বি দূর হয় এবং হজমে উন্নতি হয়।
- ভুজঙ্গাসন করে কিডনি এবং লিভার সুস্থ থাকে। আর যদি কোনও ব্যক্তি কিডনি, যকৃত বা পেট সম্পর্কিত রোগে ভুগতে থাকেন তবে এই আসনটি নিয়মিত অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে এই রোগগুলি দূর করতে পারেন । এই আসন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
- যে সমস্ত লোকেরা সারাদিন বসে কাজ করে তারা পেট এবং কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ বাড়ায়। তারা যদি প্রতিদিন এই আসন অভ্যাস করলে নিয়মিত দ্রুত চর্বি হ্রাস হতে পারে।
- ভুজঙ্গাসন শ্বাসের উন্নতি করে।
- এটি বিপাক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- এটি হৃদরোগের রোগীদের জন্য খুব উপকারী।
- হাঁপানি থেকে মুক্তি দেয়।
- হজম শক্তি উন্নত করে।
- মানসিক চাপ ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত ভুজঙ্গাসন অনুশীলনের ফলে ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব।
আরও পড়ুন >>
৮ টি ঘরোয়া উপাদানে ব্রণের দাগ দূর করার উপায়
দাঁতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকা
জেনে রাখুন আশ্চর্যজনক ১০ টি গাজরের উপকারিতা
৮ টি কালমেঘ পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ
ভুজঙ্গাসন করার নিয়ম:
- প্রথমে একটি সমতল জায়গা উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন।
- এবার পায়ের উপর দিকটা মুড়ে মেঝেতে রাখুন।
- এবার ঠিক ছবিতে যেমন আছে হাতের তালু দুটি উপুড় করে ভাঁজ করে পাঁজরে দুই পাশে রাখুন।
- এবার কোমর থেকে পা পর্যন্ত মাটিতে রেখে শরীরের বাকি অংশ হাতের তালুর উপর ভর রেখে ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলুন। (যেমন ছবিতে রয়েছে)।
- এবার ধীরে ধীরে মাথাটাকে সামান্য বেঁকিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকুন। এই অবস্থায় ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড মতো থাকুন।
আরও পড়ুন >>
টাইফয়েড কি, টাইফয়েডের লক্ষণ, ঘরোয়া প্রতিকার
এই খাবারগুলি শরীরে ভিটামিন বি ১২ অভাব পূরণ করবে
স্বাস্থ্যের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা
১০ টি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার তালিকা
ভুজঙ্গাসনের সময়সীমা
ভুজঙ্গাসন প্রথম প্রথম তিনবার করা উচিত। অভ্যাস হয়ে গেলে এটি পাঁচ ছয় বার করা যেতে পারে।
ভুজঙ্গাসনের করার কিছু সতর্কতাঃ
- ভুজঙ্গাসন করার সময় আপনার কাঁধ দুটোই সংকুচিত করবেন না। কাঁধগুলি যতটা সম্ভব প্রশস্ত করুন। এবং শিথিল রাখুন। এই আসনটি করার সময় খুশিতে থাকুন। আসনটি করার সময় শরীরের সীমা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করবেন না।
- পিঠে কোন গুরুতর আঘাত বা ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই আসন করা উচিত। আপনি যদি পেটের ব্যথায় ভোগেন তবে তাহলেও এই ভঙ্গি করা উচিত নয়।
- হার্নিয়ার রোগীর এই আসন একদম করা উচিত নয়। আলসার রোগীদের ভুজঙ্গাসন করা উচিত নয়। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেও ভুজাঙ্গাসন এড়িয়ে চলা উচিৎ। এছাড়াও মাসিক চক্রে সময় এই আসন না করাই ভালো।
আরও পড়ুন >>
স্বাস্থ্যের জন্য মেথির উপকারিতা আপনার জানা উচিত
অ্যাভোকাডো : স্বাস্থ্যের জন্য অ্যাভোকাডোর উপকারিতা
ক্যান্সারের লক্ষণ: কয়েকটি লক্ষণ যা ক্যান্সার রোগের কারণ
স্বাস্থ্যের জন্য আনারসের উপকারিতা
আশা করি ভুজঙ্গাসন সম্পর্কে আপনাদের একটি ধারনা তৈরি হয়েছে। আপনারা জানতে পারলেন এই আসনের উপকারিতা এবং কখন এই আসন করা উচিত নয়। তবে আমাদের বডি ফিট রাখতে আমাদের নিয়মিত যোগাসন করা উচিত।
Key point
ভুজঙ্গাসন আমাদের মেরুদন্ড খাঁড়া রাখতে সহায়তা করে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. যোগব্যায়ামের সুবিধা কি?
A. যোগব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ফিট থাকে, ক্লান্তির দূর হয়, ব্যথা উপশম হয়, রোগব্যাধি প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং চাপ মুক্ত হয়।
Q. ভুজঙ্গাসনের উপকারিতা কি?
A. নিয়মিত ভুজঙ্গাসন করলে হাড় মজবুত হয়, চাপ কমে, পেটের অতিরিক্ত চর্বি দূর হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়, গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।