একজিমা একপ্রকার চর্মরোগ বলা যেতে পারে। ত্বকের জ্বলা এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যাধি একজিমা হিসাবে পরিচিত। এই রোগে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ত্বকে ক্রামগত চুলকায়। ত্বকে চুলকানোর একমাত্র কারন ত্বকে আর্দ্রতার অভাব। ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যাওয়ার ফলে ত্বকের কোন সুরক্ষা থাকে না এবং সহজেই ব্যাকটেরিয়া ত্বকের ভিতর প্রবেশ করতে পারে।
Table of Contents
Table of Contents

এই চর্মরোগ মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে যেমন ত্বক ফুলে যেতে পারে এবং কখনো কখনো রক্তক্ষরণও হতে পারে। এই রোগটি মূলত সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো না হলে শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি এই রোগের আক্রান্ত রোগীরা অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। এটি যেকোনো পুরুষ অথবা মহিলার হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো উচিত। তবে কয়েকটি ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমেও আমরা এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারি।
আজকের এই নিবন্ধে আমরা একজিমা চর্মরোগ সম্পর্কে আপনাদের জানাব। আসুন তাহলে জেনে নিই এই চর্মরোগ কি, এর লক্ষণগুলি এবং ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে এর থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ লিভার ক্যান্সার কেন হয় এবং লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ
একজিমা কি (What is eczema)
আমরা আগেই জানালাম একজিমা একধরনের চর্মরোগ বিশেষ। এটি এটপিক ডার্মাটাইটিস নামেও পরিচিত এবং একজিমা এমন একটি অবস্থা যা ত্বকে রুক্ষ, খসখসে এবং জ্বালা সৃষ্টি করে। কিছু কিছু সময় ফোস্কা দেখা দেয়। এটি আপনার প্রতিরক্ষা সিস্টেমেও প্রভাব ফেলে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতি এবং মাঝে মাঝে অতিরিক্ত জ্বালা অনুভব হয়।
আরও পড়ুনঃ টনসিলের চিকিৎসা: টনসিলের লক্ষণ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা
একজিমার কারণ (cause of eczema)
- ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের কারণেও একজিমা দেখা দেয়।
- মানসিক চাপও একটি কারণ। স্ট্রেস সাধারণত একজিমার লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তোলে।
- যাদের ধুলো, সূর্যের আলো ইত্যাদিতে অ্যালার্জি থাকে তাদের মধ্যে একজিমা রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- হাঁপানির সমস্যা থাকলে একজিমা হতে পারে।
- শরীরে পুষ্টির অভাবে একজিমা হতে পারে।
একজিমার লক্ষণ (Symptoms of eczema)
একজিমার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। একজিমার লক্ষণগুলি গুলি হল-
- অতিরিক্ত জ্বালা
- র্যাশ
- ফোঁড়া
- ফুসকুড়ি
- ফুসকুড়ি থেকে তরল রস বেরানো
- লালচে ফোলাভাব
আরও পড়ুনঃ আর্থ্রাইটিস কি, রোগের লক্ষণ এবং ব্যথা কমানোর চিকিৎসা
ঘরোয়া উপাদানে একজিমা চর্মরোগ প্রতিরোধ করার উপায় (Ways to prevent eczema dermatitis in home remedies)
1. চর্মরোগ প্রতিরোধে অ্যালোভেরা (Aloe vera)
একজিমা চর্মরোগটি সাধারণত ত্বকে আর্দ্রতা হারিয়ে যাওয়ার অভাবে হয়। আর আমরা সবাই জানি অ্যালোভেরা আমাদের ত্বক ময়শ্চারাইজ করতে একটি কার্যকর উপাদান। এটি শুষ্ক ত্বককে পুনরায় হাইড্রেট করতে আশ্চর্যজনক কাজ করে।
Key point
অ্যালোভেরার জেল ত্বকের জ্বালা হ্রাস করতে সক্ষম।
2. চর্মরোগ প্রতিরোধে নারকেল তেল (Coconut oil)
এটি ত্বকের জ্বালা নির্মূল করে এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রামণের ঝুঁকি হ্রাস করে করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি আপনার ত্বককে হাইড্রেট করে রাখে এবং যা একজিমা চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
নারকেল তেল ত্বকের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস হ্রাস করে কারণ এতে লরিক অ্যাসিড রয়েছে। আপনি একজিমা চর্মরোগ আক্রান্ত অংশে নারকেল তেল প্রয়োগ করতে পারেন অথবা দ্রুত ফল পেতে রাতারাতি রেখে দিতে পারেন।
Notes
নারকেল তেলে স্কিন অ্যালার্জি থাকলে স্কিনে না প্রয়োগ করাই ভালো।
আরও পড়ুন| টিউমার চিকিৎসা: ব্রেইন টিউমার কি, লক্ষণ এবং চিকিৎসা
3. চর্মরোগ প্রতিরোধে ল্যাভেন্ডার অয়েল (Lavender Oil)
ত্বকের জ্বালা এবং প্রদাহ কম করতে ল্যাভেন্ডার অয়েল খুব উপকারি। একটি গবেষণায় দেখা যায় ল্যাভেন্ডার অয়েল একজিমা আক্রান্ত অংশে ব্যথা এবং অস্বস্তি হ্রাস করে। স্নানের আগে জলে কয়েকফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল যুক্ত করুন এবং একটি তুলোর বলে করে চর্মরোগ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রাখুন।
4. চর্মরোগ প্রতিরোধে জোজোবা অয়েল (Jojoba Oil)
জোজোবা অয়েল সূর্যের পোড়া ত্বক থেকে একজিমা পর্যন্ত ত্বকের চিকিৎসা করে। এটি ত্বকের রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাব কমিয়ে ত্বক হাইড্রেট করতে সহায়তা করে। যার ফলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে না এবং চর্মরোগ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। জোজোবা অয়েল ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন অথবা জোজোবা অয়েলের সঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করে ব্যবহার করতে পারেন।
Key point
জোজোবা অয়েল একজিমার জন্য উপকারি।
আরও পড়ুন। ক্যান্সারের লক্ষণ: কয়েকটি লক্ষণ যা ক্যান্সার রোগের কারণ
5. চর্মরোগ প্রতিরোধে ওটমিল (Oatmeal)
আপনি জানলে অবাক হবেন ওটমিল চর্মরোগের জন্য কার্যকারী উপাদান। এটি অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বকের প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা ত্বককে পরিষ্কার এবং হাইড্রেট রাখে।
6. কড লিভার অয়েল অথবা মাছের তেল (Cod liver oil or fish oil)
ফিস অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি কারণ এটি ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ধারন করে। একটি গবেষণায় বলা হয়, শৈশবকাল থেকে বাচ্চাদের মাছ অথবা কড লিভার অয়েল খাওয়ানোর মাধ্যমে একজিমা প্রতিরোধ করা যায়।
আপনার বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটযুক্ত মাছ যেমন- হেরিং এবং সালমন ইত্যাদি মাছ খাওয়াতে পারেন। যদি আপনার শিশু মাছ খেতে পছন্দ না করেন তাহলে কড লিভার অয়েল বা ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ কিডনি রোগের প্রতিকার: কিডনি রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার
চর্মরোগ খুব বাজে একধরণের রোগ। তাই আপনার যদি একজিমার সমস্যা থাকে তাহলে এই লক্ষণগুলি দেখলেই অবশ্যই চিকিৎসা করান। ঘরোয়া উপায়ে এই টোটকাগুলিতে উপকৃত হবেন।
Key point
নিমপাতা চর্মরোগের জন্য একটি চমৎকার প্রাকৃতিক উপাদান।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. একজিমা কি চর্মরোগ?
A. হ্যাঁ, একজিমা একধরণের চর্মরোগ বিশেষ।
Q. এই ঘরোয়া টোটকাগুলি কি চর্মরোগের জন্য সত্যিই কার্যকর?
A. এই ঘরোয়া টোটকা চর্মরোগের জন্য সত্যিই কার্যকর। এই উপাদানগুলি ব্যবহার করলে আপনি উপকার পেতে পারেন। তবে পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
Q. একজিমা চর্মরোগের উপসর্গগুলি কি কি?
A. র্যাশ, জ্বালা, ফুসকুড়ি, লালচে ভাব, ফোঁড়া, পুঁজ বেরানো ইত্যাদি চর্মরোগের উপসর্গ।