পেঁয়াজ বিশ্বের অতি পরিচিত রন্ধনপ্রণালী। পেঁয়াজ ছাড়া বাঙালি রান্না, ভাবাই যায় না। পেঁয়াজ অনেক সুস্বাদু রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এমনকি স্যালাড তৈরিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা তো রয়েছেই পাশাপাশি স্বাস্থ্যের পক্ষে পেঁয়াজের উপকারিতা অনেক। চুল পড়া কমাতে এর জুরি মেলা ভার। এছাড়াও পেয়াজে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উৎপাদনে সহয়তা করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে।
Table of Contents
পেঁয়াজে রয়েছে ভিটামিন বি ও সি। পেঁয়াজের বহুবিধ উপকারিতা অনেকের অজানা। তাই তাদের জন্য এই নিবন্ধে রইল ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্যের জন্য পেঁয়াজের উপকারিতা –
পেঁয়াজ কি?
পেঁয়াজ একটি ঝাঁজযুক্ত অসাধারণ সবজি, প্রকৃতির একটি উপহার। এটি ভিটামিনে ভরপুর সবজি। পেঁয়াজ বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন কোনো খাবারের সৌন্দর্যতার জন্য খাবারের উপরে ছড়ানো যেতে পারে বা রান্নার মশলা তৈরিতে অথবা রান্নাতে।
আরও পড়ুন । জেনে নিন সঠিক পদ্ধতিতে আদা খাওয়ার নিয়ম
পেঁয়াজের কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে
১০০ গ্রাম পেঁয়াজে পুষ্টি উপাদান রয়েছে-
- ক্যালোরি (40)
- জল (89%)
- প্রোটিন (1.1 গ্রাম)
- চিনি (4.2 গ্রাম)
- কার্বস (9.3 গ্রাম)
- ফাইবার (1.7 গ্রাম)
- ফ্যাট (0.1 গ্রাম)
- ভিটামিন বি ৬ (16%)
- ভিটামিন সি (15%)
- পটাসিয়াম (10%)
আরও পড়ুন । আদার গুনাগুনঃ শরীর সুস্থ রাখতে আদার গুনাগুন
পেঁয়াজের পুষ্টিগুণের উপকারিতা
- ক্যালোরি – দেহের শক্তির উৎস ক্যালরি। আমাদের দেহে শক্তির জোগান দেয়।
- প্রোটিন – প্রোটিন আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিন ছাড়া আমাদের শরীরের ত্বক, চুল, নখ বিকাশ করে।
- কার্বস – কার্বোহাইড্রেটগুলি আমাদের দেহে গ্লুকোজ হিসাবে দ্রুত রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে।
- ফাইবার – ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা এবং কিছু রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। ফাইবার আমাদের হজম স্বাস্থ্য এবং নিয়মিত অন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- ভিটামিন বি ৬ –বি 6 দেহের শক্তি বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। অ্যানিমিয়া রোগের জন্য উপকারী এবং চোখের জন্য উপকারী।
- ভিটামিন সি – ভিটামিন সি অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির মধ্যে একটি। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি হ’ল পুষ্টিকর উপাদান যা ফ্রি র্যাডিক্যাল ফলে ক্ষতির রক্ষা করে। ত্বকের ভালো রাখে।
- পটাসিয়াম – রক্তচাপ সঠিকভাবে বজায় থাকে এবং এটি পেশী শক্তিশালী করে।
আরও পড়ুন । লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে রাখুন
পেঁয়াজের উপকারিতা
-
স্বাস্থ্যের জন্য পেঁয়াজের উপকারিতা (Health benefits of onions)
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ-
রেডিকেল শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি করে। পেঁয়াজ ক্যান্সারের কোষগুলি দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করে। পেঁয়াজে রয়েছে সালফার যৌগ যা রেডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। স্টাডিজে দেখা যায়, যারা প্রতিদিন কাঁচা পেঁয়াজ খায় তারা ক্যান্সারের হাত থেকে দূরে থাকে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ-
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। ডায়াবেটিস পরিচালনা একটি বড় সমস্যা হল রক্তে শর্করার লেভেল বজায় রাখা। পেঁয়াজে রয়েছে ২৭ শতাংশ বায়োটিন। প্রাথমিক গবেষণা থেকে জানা যায় পেঁয়াজে উপস্থিত বায়োটিন এবং ক্রোমিয়ামের সংশ্লেষণ রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধের করে।
অ্যানিমিয়া পরিচালনায় সাহায্য করেঃ-
অ্যানিমিয়া পরিচালনায় সহায়তা করতে পেঁয়াজের ভূমিকা অপরিসীম। অ্যানিমিয়া আয়রনের অভাব সৃষ্টি করে এবং এটি মারাত্মক রোগ ধারণ করতে পারে। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
হার্ট ভালো রাখেঃ-
পেঁয়াজ রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে, হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভবনা কমায়।
ভালো নিদ্রাঃ-
এই সবজিটি প্রিবায়োটিক সমৃদ্ধ। যা ভালো নিদ্রা দেয় এবং চাপ মুক্ত করে।
আরও পড়ুন । সিদ্ধ রসুনের উপকারিতা জেনে নিন
-
ত্বকের যত্নে পেঁয়াজের উপকারিতা (Benefits of onion for skin care)
ত্বক গ্লোয়িং করেঃ-
পেঁয়াজে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি। যা ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ। পেঁয়াজের ফেস মাস্ক ত্বক গ্লোয়িং করে তোলে। বাড়িতে বসেই এটা সম্ভব।
ব্যবহার করার টিপসঃ দুই টেবিল চামচ গ্রাম আটা, দেড় চা চামচ পেঁয়াজের রস, হাফ চামচ দুধ এবং এক চিমটি জায়ফল নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। প্যাকটি যদি খুব পাতলা হয়ে যায় এর মধ্যে আরও দুধ মিশিয়ে নিতে পারেন। এবার প্যাকটি মুখে প্রয়োগ করে নিন। ২০ মিনিট পর প্যাকটি যখন শুকিয়ে আসবে তখন মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণ চিকিৎসাঃ-
পেঁয়াজ অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য আপনার ত্বকে অসাধারণ কাজ করতে পারে। ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। তাই ব্রণ চিকিৎসার জন্য আপনি পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহার করার টিপসঃ সমপরিমাণ পেঁয়াজের রস ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ – ২০ মিনিট পর জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এটি ব্রণ চিকিৎসার পাশাপাশি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায়।
কীটপতঙ্গের হুল ফোটানো বা কামড়ানোর জ্বালাভাব থেকে রেহাই পেতেঃ-
বোলতা বা মৌমাছি কামড়ালে বা হুল ফোটালে জ্বালা করে। আর এই জ্বালাভাব কমাতে আপনি পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারেন। এক ফালি পেঁয়াজ কেটে বা তার রস আক্রান্ত অংশে লাগালে জ্বালাভাব কমে যায়।
আঁচিল মুক্ত করাঃ-
পেঁয়াজের রসে রাসায়নিক অম্লতা রয়েছে যা আঁচিল নিরাময় করতে সক্ষম। আঁচিলে আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত পেঁয়াজের রস লাগিয়ে রাখুন। রসটি পুরোপুরি ভাবে শোষণ করে নিলে ধুয়ে ফেলবেন। এক মাস নিয়মিত পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে ফল বুঝতে পারবেন।
আরও পড়ুন । জেনে নিন, কিছু গরুত্বপূর্ন রসুন এর উপকারিতা
-
চুলের যত্নে পেঁয়াজের উপকারিতা (Benefits of onion for hair care)
উকুন দূর করতেঃ
পেঁয়াজের মধ্যে সালফার থাকে যা মাথার উকুন দূর করতে পারে। চার পাঁচটি পেঁয়াজ নিয়ে পেস্ট করে রস বের করে নিন এবার সেই রসটি মাথা স্ক্যাল্পে ও চুল এই রস মাসাজ করুন এবং ঘণ্টা খানেক পর শ্যাম্পু করে নিন।
চুল পড়া কম করতেঃ
চুল পড়া রোধ করতে পেঁয়াজের রস স্ক্যাল্পে লাগান। পেঁয়াজ চুল পড়া কমায়। সপ্তাহে ২-৩ বার ট্রাই করে দেখুন।
খুশকি দূর করতেঃ
খুশকি থেকে মুক্তি পেতে পেঁয়াজ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তিন চা চামচ মেথি বীজ এক রাত ভিজিয়ে রেখে ঘন পেস্ট করে নিন এবার এতে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে চুলে লাগান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নেবেন।
আরও পড়ুন । জেনে রাখুন কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতা
Key Point: পেঁয়াজের রস অনেক ঔষুধি গুণাগুণ থাকায় এটি ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবে পরিচিত।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. পেঁয়াজ ব্যবহার করলে কি চুল পড়া কমে?
A. হ্যাঁ, পেঁয়াজের রস মাখলে চুল পড়া কমে।
Q. কীটপতঙ্গ হুল ফোটালে পেঁয়াজ কীভাবে ব্যবহার করব?
A. কীটপতঙ্গ হুল ফোটালে পেঁয়াজের আক্রান্ত অংশে লাগালে জ্বালাভাব কমে যায়।
Q. পেঁয়াজ খেলে কি ক্যান্সার রোধ করা যায়?
A. পেঁয়াজে সালফার রয়েছে। কাঁচা পেঁয়াজ খেলে ক্যান্সারের রোধ হয়।
Q. পেঁয়াজ রোজ খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে?
A. পেঁয়াজ রোজ খেলে কোলেস্টেরল কমায়, ধমনী শক্ত করতে বাধা দেয়, রক্তনালীগুলির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ বাড়ায়।