লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে রাখুন

লবণ রান্নার সুপরিচিত একটি উপাদান। খাবার পাতে হোক বা রান্নায় লবণ খাবারের স্বাদ বদলে দেয়। এটি কাঁচা খেলে যেমন অপকার ঠিক তেমনি এটি একদম না খেলেও ক্ষতি। লবণ খাওয়ার উপকার ও অপকার দুটিই রয়েছে। লিভার, কিডনি, হার্টের মতো শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশের কার্যকালাপ লবণের উপর নির্ভর করে।

লবণ কী?

Source

Table of Contents

লবণ কী? (What is Salt)

আমাদের সমস্ত খাবারের স্বাদ অতুলনীয় রাখতে লবণ একমাত্র খাবারের বস্তু । মানুষের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে লবণের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ । স্নায়ু ও পেশীর কাজ ঠিক রাখতে ও শরীরের তরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে লবণ । খুব বেশি পরিমানে লবণ গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা থাকে এমনকি স্ট্রোকের মত মারাত্মক রোগ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে ।

আরো পড়ুন । আপনার জানা উচিত থাইরয়েডে কি খাওয়া বারণ

লবণে কি কি পুষ্টিগুন রয়েছে-

source

লবণে কি কি পুষ্টিগুন রয়েছে (What are the nutrients in Salt)

১ কাপ (২৯২ গ্রাম) লবণে রয়েছেঃ

      • ক্যালশিয়াম – ৭০.১ মিলিগ্রাম
      • আয়রন – ১.০ মিলিগ্রাম
      • পটাশিয়াম – ২৩.৪ মিলিগ্রাম
      • সোডিয়াম – ১১৩১৭৪ মিলিগ্রাম
      • সেলেনিয়াম – ০.৩ মাইক্রোগ্রাম
      • ফ্লুরাইড – ৫.৮ মাইক্রোগ্রাম
      • জিঙ্ক – ০.৩ মিলিগ্রাম
      • ম্যাগনেশিয়াম – ২.৯ মিলিগ্রাম
      • কপার – ০.১ মিলিগ্রাম
      • ম্যাঙ্গানিজ – ০.৩ মিলিগ্রাম
      • জল – ০.৬ গ্রাম

আরো পড়ুন । শীতকালে ভালো থাকার উপায়ঃ শীতকালে ভালো থাকার জন্য কিছু সহজ টিপস

লবণের পুষ্টিগুনের উপকারিতাঃ

লবণের পুষ্টিগুনের উপকারিতা (Nutritional benefits of Salt)

      • ক্যালশিয়াম – ক্যালশিয়াম শক্তিশালী হাড় তৈরি করতে সাহায্য করে । ক্যালশিয়াম ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে রক্ষা করতে পারে ।
      • আয়রন – আয়রন রক্তাল্পতা কমানোতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । আয়রন শরিরে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়, ক্লান্তি হ্রাস করে, পেশি শক্তি উন্নত করে ।
      • পটাশিয়াম – পটাশিয়াম রক্তচাপ সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
      • সোডিয়াম – লবণে সোডিয়ামের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি । সোডিয়াম শরীরে রক্তচাপ কমায়, স্ট্রোকের সম্ভাবনা রোধ করে, দৃষ্টিশক্তি ভাল করে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে ।
      • সেলেনিয়াম – সেলেনিয়াম থাইরয়েড কার্জকলাপে গুরুত্বপূর্ণ আছে ।
      • ফ্লুরাইড – ফ্লুরাইড দাঁতের এনামেল সঠিক রেখে ক্যাভিটি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
      • জিঙ্ক – জিঙ্ক বয়স জনিত রোগগুলির ঝুঁকি হ্রাস করে । জিঙ্ক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে ।
      • ম্যাগনেশিয়াম – ম্যাগনেশিয়াম হাড় গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় । ম্যাগনেশিয়াম মাইগ্রেনের মাথাব্যাথা রোধ করতে সাহায্য করে
      • কপার – কপারে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য । হাড়ের ঘনত্বকে রক্ষা করে কপার ।
      • ম্যাঙ্গানিজ – ম্যাঙ্গানিজ ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রন করে ।

লবণের উপকারিতা (Benefits of Salt):-

ওজন কমায়ঃ

1. ওজন কমায়ঃ

আপনি কি খুব মোটা ? আপনার ওজন হ্রাস করতে চান। তাহলে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে স্বাস্থ্যবান রাখতে লবন একটি শ্রেষ্ঠ উপাদান হতে পারে। ওজন অতিরিক্ত হলে রোগ ব্যাধি বেশি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। ওজন হ্রাস করা লবণের উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম।

লো ব্লাড প্রেসার হাই করতেঃ

2. লো ব্লাড প্রেসার হাই করতেঃ

ব্লাড প্রেসার হাই করতে লবণের গুনাগুন উপযোগী। তাই যাদের ব্লাড প্রেসার কম, তারা খাবার পাতে এক চিমটে লবণ খেতে পারেন।

Key Point: মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া কিছুই ভালো না। তাই পরিমাণ মতো খাওয়ার অভ্যাস করুন।

বডির স্ক্রাব

3. বডির স্ক্রাবঃ

ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে তুলতে লবণের উপকারিতা ভূমিকা অপরিহার্য। লবণ বডি স্ক্রাব হিসাবে খুব ভালো একটি উপাদান।

ব্যবহারের প্রণালীঃ

পরিমাণ মতো লবণ, অ্যালোভেরা জেল এবং নারকেল তেল এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে বডি স্ক্রাব বানিয়ে নিন। এবার ত্বকে স্নানের আগে ধীরে ধীরে মাসাজ করলে চামড়ার মরা কোষগুলি উঠে যাবে।

আরো পড়ুন । জেনে রাখুন আশ্চর্যজনক ১০ টি গাজরের উপকারিতা

মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে এবং মাড়ির ব্যথা উপশমঃ

4. মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে এবং মাড়ির ব্যথা উপশমঃ

লবণ মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া সঙ্গে লড়াই করতে পারে। নিয়মিত লবণ জলের গার্গল করলে মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয় এবং মাড়ির ব্যথা , দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।

মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে

5. মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখেঃ

লবণে রয়েছে সোডিয়াম যা মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। সোডিয়াম শরীরের জল প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। সোডিয়াম আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট। শরীরে সোডিয়ামের অভাব থাকলে মানুষ ভুল বকতে থাকে।

লবণ খাবার হজম করতে সহায়তা করেঃ

6. লবণ খাবার হজম করতে সহায়তা করেঃ

খাবার হজম করতে সাধারণত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রয়োজন হয়। আর এই অ্যাসিড ক্লোরিন এবং হাইড্রোজেন উপাদানের সমন্বয়ে উৎপন্ন হয়। এই উপাদান দুটি লবণে উপস্থিত।

পায়ের খিচুনি দূর করেঃ

7. পায়ের খিচুনি দূর করেঃ

বয়স্কদের, অ্যাথলেটদের, ব্যায়াম করার ফলে পায়ে খিচুনি সৃষ্টি হয় । অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে লবণের পরিমান হ্রাস হতে পারে, প্রাকৃতিক উৎসযুক্ত লবণের খাবারগুলি খিচুনির তীব্রতা হ্রাস করে । এই ক্ষেত্রে সোডিয়াম শরীরে বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় ।

গলার সমস্যা দূর করেঃ

8. গলার সমস্যা দূর করেঃ

উষ্ণ নুন জলের গার্গল গলা ব্যাথা কমানোর প্রাথমিক চিকিৎসা । এমনকি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের চিকিৎসায় সাহায্য করে ।

আরো পড়ুন । ৪ টি মুখরোচক স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট রেসিপি

লবণের অপকারিতা (Side effects of Salt):-

শরীর ডিহাইড্রেশন রাখেঃ

1. শরীর ডিহাইড্রেশন রাখেঃ

শরীরকে হাইড্রেট রাখা খুব জরুরী। কিন্তু খাবার পাতে অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ শরীরকে ডিহাইড্রেশন করে তোলে। তাই আপনার খাদ্য থেকে এই উপাদানটি অপসারণ করা ভালো।

উচ্চ রক্তচাপঃ

2. উচ্চ রক্তচাপঃ

অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ খাওয়ার ফলে রক্ত চাপ বেড়ে যেতে পারে। ব্লাড প্রেসার রোগীদের লবণ না খাওয়াই উত্তম

ওজন হ্রাস

3. ওজন হ্রাসঃ

খাবার পাতে লবণ দ্রুত চর্বি হ্রাস করতে সহায়ক। তাই অতিরিক্ত লবণ খেলে ওজন আরও কমে যেতে পারে। তাই যাদের ওজন কম তাদের লবণ না খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

আরো পড়ুন । জেনে নিন, শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার এ কী কী রাখা জরুরী

হাড়ের ক্ষতি হতে পারেঃ

4. হাড়ের ক্ষতি হতে পারেঃ

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ক্ষয় হতে পারে। যা অস্টিওপরোসিসের সমস্যা হতে পারে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। তাই লবণ খাওয়া পরিত্যাগ করলে আপনার দীর্ঘায়ু হতে পারে। যাদের হার্টের অসুখ রয়েছে বিশেষত বয়স্কদের লবণ খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।

স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতাঃ

5. স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতাঃ

বাইরের খাবার যেমন জাঙ্ক ফুড বা স্ট্রিট ফুডগুলিতে বেশি করে লবণের পরিমাণ থাকে। এই ধরনের খাবার আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে। কিন্তু আমরা এই ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করে থাকি। যার ফলে হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের প্রবণতা থাকে।

আরো পড়ুন । স্বাস্থ্যের পক্ষে অ্যালোভেরার উপকারিতা

গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে স্ট্রোক আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ শতাংশ। তাই দৈনিক খাবারের লবণে এর পরিমাণ কমানো না হলে স্ট্রোক আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলবে।

কিডনির সমস্যা

6. কিডনির সমস্যাঃ

অত্যাধিক পরিমাণ লবণ খাওয়ার জন্য হৃদ চাপ বেড়ে যায়। যার ফলে কিডনি থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম নিঃসৃত হয় এবং কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়। কিডনির সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য লবণ খাওয়া বন্ধ করা মাস্ট।

ডায়াবেটিস হওয়ার সমস্যাঃ

7. ডায়াবেটিস হওয়ার সমস্যাঃ

লবণের কারনে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। যার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

Key Point: লবণের উপকারিতা পেতে হলে সরাসরি কাঁচা লবণ খাওয়া থেকে রান্নায় লবণ খাওয়া উত্তম।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

Q. প্রতিদিন কত পরিমানে নুন খাওয়া উচিত?
A. প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দিনে ৬ গ্রাম (১ চামচ) লবণ খাওয়া উচিত। শিশুদের ১ থেকে ৩ বছর অবধি ২ গ্রাম লবণ আর ৪ থেকে ৬ বছর অবধি ৩ গ্রাম লবণ খাওয়া উচিত।
Q. খাবারের জন্য স্বাস্থ্যকর লবণ কি?
A. গোলাপি হিমালয়ান লবণ রান্নার জন্য ভালো। এছাড়া আপনি সাদালবনের পরিবর্তে বিটলবণ খাবারে ব্যবহার করতে পারেন।
Q. থাইরয়েডের জন্য কোন লবণ সবচেয়ে ভালো ?
A. আয়োডিন যুক্ত লবণ গ্রহণ করা সবচেয়ে ভালো। আয়োডিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যা আপনার থাইরয়েড কে নির্দিষ্ট হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে।
Q. অতিরিক্ত লবণ খেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে?
A. অতিরিক্ত লবণ খেলে আপনার শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত জল আপনার রক্তচাপ বাড়ায়, ফলে যত বেশি নুন খাবেন তত বেশি রক্তচাপ বাড়বে। আর রক্তচাপ বাড়লে আপনার হৃদয়, কিডনি, মস্তিষ্কের উপর চাপ তত পড়বে। ফলে বিভিন্ন রোগের আক্রমন হতে পারে।

Previous articleচুলের যত্নে ভিনিগার: চুলের যত্নে আপেল সাইডার ভিনিগার
Next articleরূপচর্চায় লেবু ব্যবহারে দেখে নিন কত উপকার
Tisha Sen
হাই, আমি তিশা সেন। একজন ব্লগ লেখিকা এবং স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। আমার প্যাশন মানুষের শরীর- স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা। মানুষের শরীরের রোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখার টিপস নিয়ে লেখালেখির কাজ করতে ভালোবাসি। আমার লক্ষ্য রোগের এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। বিভিন্ন ধরণের রোগের চিকিৎসার উপায় জেনে নিজেকে সুস্থ রাখুন এবং নিজের সৌন্দর্যকে বজায় রাখার টিপস জানতে আমাদের এই পেজ অনুসরণ করুন।

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here