১০ টি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার তালিকা

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে আমাদের শরীরে যেমন প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি ভিটামিনেরও প্রয়োজন। সেইরকমই একটি ভিটামিনের নাম হল ভিটামিন ই । আমাদের শরীরে ভিন্ন ধরণের ভিটামিনের ভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা রয়েছে। ভিটামিন আমাদের দেহের অঙ্গগুলির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাশাপাশি আমাদের শরীরের অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। তাছাড়াও এটি একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন যা আমাদের দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরকে নানারকম অ্যালার্জির হাত থেকে রক্ষা করে।

ভিটামিন-ই

তাই নিয়মিত আমাদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার (vitamin e food) যোগ করা উচিৎ। যা শুধুমাত্র সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেই নয়, এটি আমাদের চুল গজাতে, ত্বককে সুন্দর রাখতেও সহায়তা করে। আসুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা।

ভিটামিন ই

শাক সবজি, মাছ, বাদাম ছাড়াও এমন আরও কিছু খাবার রয়েছে যাতে এই ভিটামিন উচ্চ পরিমাণে রয়েছে। তাই আজকের নিবন্ধে আমরা আপনাদের সঙ্গে এই ভিটামিন যুক্ত খাবার এর তালিকা শেয়ার করে নেব।

 ভিটামিন ই

ভিটামিন-ই কি (What is Vitamin E) 

এটি একটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় ভিটামিন যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই ভিটামিন শরীরের টিস্যু গুলিকে ফ্রি র‌্যাডিকেল দ্বারা হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এবং যেকোন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ থেকেও আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে পারে।

আরও পড়ুন | ৭ টি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা আপনার ডায়েটে থাকা উচিত

ভিটামিন ই এর উৎস কি কি (Source of Vitamin-E) 

প্রচুর খাবারের মধ্যেই এই ভিটামিন রয়েছে। যেমন চিনাবাদাম, আখরোট, বাদাম, উদ্ভিজ্জ তেল, কুসুম, গম, সয়াবিন এবং সূর্যমুখী ইত্যাদি ভিটামিন ই এর প্রাকৃতিক উৎস। এর সাথে সূর্যমুখী বীজ এবং শাকের মতো সবুজ শাকসব্জিতেও উচ্চমাত্রায় এই ভিটামিন পাওয়া যায়।

ভিটামিন-ই গ্রহণে কি কি উপকার পাওয়া যায়

কি কি উপকার পাওয়া যায় (What are the benefits of taking Vitamin-E)

এই ভিটামিন আমাদের দেহের কোষগুলিকে সুস্থ রাখতে কাজ করে। ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং অ্যামনেসিয়া জাতীয় অনেক ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা হ্রাস করতে সহায়তা করে। এছাড়াও আমাদের ত্বক এবং চুলের পক্ষেও এর উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। এই ভিটামিনের কারণে আমরা চোখে ছানি পড়ার মতো সমস্যাকেও এড়াতে পারি।

ভিটামিন-ই এর উৎস

রোজ কতটা পরিমাণ গ্রহণ করা উচিত (How much vitamin-E should be taken daily) 

জন্ম থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ৪ মিলিগ্রাম, ৭-১২ মাস পর্যন্ত ৫ মিলিগ্রাম, ১-৩ বছর পর্যন্ত ৬ মিলিগ্রাম, ৪-৮ বছর পর্যন্ত ৭ মিলিগ্রাম এবং ৯-১৩ বছর পর্যন্ত ১১ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন ই প্রয়োজন।

আরইডি অনুসারে, ১৪ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত এই ভিটামিন নেওয়া উচিত। তবে যেসব মহিলারা বাচ্চাকে বুকের দুধের খাওয়ান তাদের জন্য ১৯ মিলিগ্রাম নেওয়া উচিত।

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা । List of Foods Rich in Vitamin E

  1. সূর্যমুখীর বীজ
  2. সবুজ শাক সবজি
  3. অ্যাভোকাডো
  4. মাছ
  5. পালং শাক
  6. কাঠ বাদাম
  7. চীনা বাদাম
  8. সয়াবিন তেল
  9. ব্রোকলি
  10. কিউই ফল
  • সূর্যমুখীর বীজঃ 

সূর্যমুখীর বীজ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারঃ

সূর্যমুখীর বীজ ভিটামিন ই এর ভালো উৎস। এতে একধরণের উপাদান মজুত রয়েছে যা আমাদের শরীরকে অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং ক্যান্সারের হাত থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি আমাদের শরীরের অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে পাশাপাশি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ঝরিয়ে আমাদের বডি ফিট রাখে।

Key Point:  100 গ্রাম সূর্যমুখী বীজে 35 মিলিগ্রাম ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে।

আরও পড়ুন | ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা জেনে রাখুন

  • সবুজ শাক সবজিঃ

সবুজ শাক সবজি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারঃ

সবুজ শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিয়মিত খাবার তালিকায়  সবুজ শাক সবজি রাখতে হবে না হলে দেহের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কারণ শাক সবজিতে প্রোটিন, খনিজ এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ থাকে যা আমাদের শরীর সুস্থ থাকতে প্রয়োজন। এই জন্যই ডাক্তার আমাদের ডায়েট চার্টে নিয়মিত সবুজ শাক সবজি রাখার পরামর্শ দেয়।

Key Point: আমাদের শরীরে আয়রনের কারণে অ্যানিমিয়া রোগ হয়। সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা অ্যানিমিয়া থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।

আরও পড়ুন | জেনে নিন, শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার এ কী কী রাখা জরুরী

অ্যাভোকাডোঃ

  • অ্যাভোকাডোঃ

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা আমারা আগেও আপনাদের জানিয়েছিলাম। অ্যাভোকাডোতে পটাশিয়ামের পাশাপাশি উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। যা আমাদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভবনা অনেকাংশ হ্রাস করে। এর পাশাপাশি আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল সরিয়ে দেহে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।

Key Point: প্রতি 100 গ্রাম অ্যাভোকাডোয় প্রায় 2.1 মিলিগ্রাম পরিমাণ এই ভিটামিন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন | ৮ টি লিভার ভালো রাখার খাবার তালিকা

  • মাছঃ

 মাছঃ

ডিম, মাছ, মাংস আমাদের খাদ্য তালিকায় তো রাখতে হয়। তবে কেন জানেন, তাদের পুষ্টিগুণের জন্য। মাছ ভিটামিন ই এর ভালো উৎস। মাছে উপস্থিত ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে  হৃদরোগের ঝুঁকির সম্ভাবনা কমায়।

Key Point:  100 গ্রাম রেইনবো ট্রাউট মাছে 2.8 মিলিগ্রাম পর্যন্ত এই ভিটামিন পাওয়া যায়।

  • পালং শাকঃ

স্বাস্থ্যকর সবজিগুলির মধ্যে পালং শাক একটি পুষ্টিকর সবজি। কারণ এই সবজিটি ভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজে ভরপুর। বিশেষ করে ভিটামিন ই। স্যালাডের মাধ্যমে এই সবজিটি গ্রহণ করা যেতে পারে আবার রান্নায় ব্যবহার করে খাওয়া যেতে পারে। তাই দেহে এই ভিটামিনের অভাব পূরণ করতে সবজিটি অবশ্যই আপনার ডায়েটে যোগ করুন।

Key Point: প্রতি 100 গ্রাম পালং শাকে 2.3 মিলিগ্রাম পর্যন্ত এই ভিটামিন রয়েছে।

আরও পড়ুন | দৌড়ানোর পর খাবারঃ দৌড়ানোর পর খাদ্য তালিকা কি কি রাখা উচিত?

  • কাঠ বাদামঃ

কাঠ বাদাম এনার্জির চাবিকাঠি। নিয়মিত একমুঠো বাদাম আমাদের হার্ট ভালো রাখবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে রাখবে। এতে উচ্চমাত্রায় ক্যালরি থাকার পাশাপাশি এটি ভিটামিন ই এর ভালো উৎস।

Key Point: প্রতি 100 গ্রাম কাঠ বাদাম খাওয়ার মাধ্যমে 26 মিলিগ্রাম মত ভিটামিন আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।

  • চীনা বাদামঃ

 চীনা বাদামঃ

চীনা বাদাম ভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য উপকারী। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকার জন্য ওজন অতিরিক্ত বাড়ে না। পাশাপাশি এটি উচ্চ ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন ই- এর উৎস। যা আমাদের হাড় শক্তিশালী করার জন্য খুব উপকারী একটি খাদ্য উপাদান।

Key Point: 100 গ্রাম চীনা বাদাম খাওয়ার মাধ্যমে 8.3 মিলিগ্রাম পর্যন্ত এই ভিটামিন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ আদর্শ খাবারের তালিকা ও তার শ্রেণীবিভাগ

  • সয়াবিন তেলঃ

 সয়াবিন তেলঃ

সয়াবিন তেল ভিটামিন ই এর ভালো উৎস। এটি অনেক বাড়িতেই রান্নার জন্য ব্যবহার করা হয়।

Key Point: 100 গ্রাম সয়াবিন তেলে সম্ভবত 8.8 মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে।

  • ব্রোকলিঃ

 ব্রোকলিঃ

ওজন কমাতে এটি খুব উপকারী, এটি রান্না করে খাওয়া যায়, আবার সিদ্ধ অবস্থাতেও খাওয়া যায়। এটি ভিটামিন ই এর ভালো উৎস যা সহজেই আপনি বাজারে পেয়ে যাবেন। এটি হাড় এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে।

Key Point: 91 গ্রাম ব্রোকলি খাওয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রয়োজনের ৪ শতাংশ এই ভিটামিন পাওয়া যায়।

  • কিউই ফলঃ

 কিউই ফলঃ

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ কিউই আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য অত্যন্ত উপকারি। এটি একটি ভিটামিন ই যুক্ত খাবার যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিউই ফলের মধ্যে সেরোটোনিন থাকে যা অনিদ্রা নিরাময়ে সহায়তা করে। এটি কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি দইয়ের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

Key Point: 177 গ্রাম কিউই ফল প্রতিদিনের প্রয়োজনের 13 শতাংশ এই ভিটামিন সরবরাহ করে।

এই ১০ টি খাবার ছাড়াও আরও কিছু ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে। তবে এই খাবারগুলি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে শরীরে এই ভিটামিনের অভাব পূরণ হবে।

সাইড এফেক্ট (Side effects of Vitamin-E)

ভিটামিন আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে এর কিছু সাইড এফেক্ট দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এটি শরীরে জমা হতে পারে কারন এটি ফ্যাট দ্রবণীয়।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

Q. কোন খাবারে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ভিটামিন ই রয়েছে?

A. সূর্যমুখী বীজ, সয়াবিন তেল, কাঠ বাদামে এই ভিটামিন সবচেয়ে বেশি রয়েছে।

Q. কোন তেলে ভিটামিন ই উচ্চ পরিমাণে রয়েছে?

A. অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী তেল এবং বাদাম তেলে এই ভিটামিন উচ্চ পরিমাণে রয়েছে।

Q. কোন ফলে ভিটামিন ই উচ্চ পরিমাণে রয়েছে?

A. আভোকাডো, কিউই ফল, আমে এই ভিটামিন ভালো পরিমাণে রয়েছে।

Q. ডিমে কি ভিটামিন ই রয়েছে?

A. হ্যাঁ, ডিমে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে।

Q. এই ভিটামিন কি ব্রণের জন্য উপকারি?

A. ব্রণের দাগ দূর করতে এই ভিটামিন খুবই উপকারি।

Q. কাঠ বাদামে ভিটামিন ই কি থাকে?

A. হ্যাঁ, কাঠ বাদামে এই ভিটামিন উচ্চ পরিমাণে থাকে।

Q. এই ভিটামিন গ্রহণের সাইড এফেক্ট কি?

A. এই ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারি। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের পরে এটি শরীরে জমা হতে শুরু করে। কারণ এটি ফ্যাট দ্রবণীয় ভিটামিন। তাই অনেক রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন-ক্লান্তি, গ্যাস, ডায়রিয়া, মাথা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

Q. ভিটামিন ই নিলে চুল কি দ্রুত গজায়?

A. ভিটামিন ই চুল গজাতে সহায়তা করে।

Q. ভিটামিন ই কি ত্বকের জন্য ভালো?

A. হ্যাঁ, ত্বকের জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত কার্যকর।

3 Comments

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here