ব্যস্ততায় ভরা জীবনে আমরা নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য সময় বের করে উঠতে পারি না, ফলে খুব সহজেই আমাদের নানারকম রোগের সন্মুক্ষিন হতে হয়। আর তার থেকে মুক্তি পেতেই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ নিজের জন্য খানিকটা সময় বের করে নিয়ে নিয়মিত মেডিটেশন করা।
আমরা অনেকেই এখন মেডিটেশন কথাটির সঙ্গে পরিচিত। তবে কি এই মেডিটেশন জানেন কি? অনেকে মেডিটেশন বলতে শুধু প্রার্থনা করাকে ভাবে। তবে সেটি কিন্তু ভুল ধারণা। এক কথায় এরমানে আমরা যেটিকে ধ্যান বলে থাকি। যার মাধ্যমে আমাদের মনের শান্তি মেলে।
মেডিটেশনের মুখ্য উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র মানুষের মনে শান্তি প্রদান করাই নয় তার সাথে মানসিক চাপ মুক্ত করা। পাশাপাশি মানুষের মনে করুণা, ধৈর্য, শক্তি, প্রেম ইত্যাদি বজায় রাখা।
আরও পড়ুন । টাইফয়েড কি, টাইফয়েডের লক্ষণ, ঘরোয়া প্রতিকার
সঠিক পদ্ধতিতে করা মেডিটেশন বেঁচে থাকার রাস্তা। তাই প্রত্যেকেরই মানসিক অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসতে এই রাস্তা বেছে নেওয়া উচিত। তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব মেডিটেশন কি, এর সুবিধা এবং কেমন ভাবে করবেন এই বিষয়ে।
মেডিটেশন কি (What is meditation)
মেডিটেশন বা ধ্যান এমন একধরণের ক্রিয়া যা কোনও ব্যক্তি তার মনকে একটি চেতনা বিশেষ অবস্থায় আনার চেষ্টা করে। এর মাধ্যমে মনকে সান্ত্বনা দেওয়া থেকে শুরু করে শরীরে এনার্জি প্রদান করা হয়। যা আমাদের জীবনে ইতিবাচক সুখ নিয়ে আসে।
শারীরিক যোগব্যায়াম যেমন শরীরের জন্য কাজ করে, তেমনি ধ্যান হল মনের জন্য একটি ব্যায়াম। তাই বিশেষজ্ঞরা, স্বাস্থ্যকর এবং সক্রিয় জীবনযাপনের জন্য ধ্যানের পরামর্শ দেন। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারি।
মেডিটেশনের সুবিধা (Meditation facilities)
মেডিটেশনের সুবিধাগুলি হল-
- মানসিক চাপ এবং ডিপ্রেশন হ্রাস হয়।
- ডায়াবেটিস এবং হাই ব্লাড প্রেসারের মতো রোগ মোকাবিলা করার জন্য সহায়তা পাওয়া যায়।
- ধূমপান এবং নেশা করার অভ্যাস থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তি পান।
- মেডিশন বা ধ্যান আমাদের মনকে শান্ত রাখে, চাপ এবং উত্তেজনা থেকে মনকে মুক্তি দেয়।
- শারীরিক অসুস্থতা যেমন ডিপ্রেশন, অবসাদ, মানসিক রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- মেমরি শক্তিশালী হয়।
- মাথা ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- জীবনের উদ্দেশ্যে বুঝতে সহজ হয়।
- চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়।
- জ্ঞান লাভ হয়।
- একাগ্রতা এবং মনোযোগ উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন । ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে টমেটোর উপকারিতা
মেডিটেশন কীভাবে করবেন (How to Meditation)
যদি মেডিটেশন সঠিক পদ্ধতিতে করা হয়, তাহলে আপনার জন্য খুব লাভজনক। এটি আপনার শারীরিক এবং মানসিক শান্তি তথা এবং ফিটনেস প্রদান করে। কিন্তু এটার জন্য সবচেয়ে জরুরী হল যে আপনি কি পদ্ধতিতে এটি করছেন। আপনি আপনার মেডিটেশন সঠিক পদ্ধতিতে যাতে করতে পারেন, তার জন্য নীচে কয়েকটি পদ্ধতি দেওয়া হল।
আরও পড়ুন । চর্মরোগ | একজিমা কি, লক্ষণ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা
-
সবার প্রথমে মেডিটেশনের জন্য উপযুক্ত স্থান বাছাই করুনঃ
মেডিটেশন করার জন্য আপনি প্রথমে আপনার পছন্দ অনুযায়ী এমন একটি জায়গা পছন্দ করুন যেখানে আপনি এটির জন্য শান্তি অনুভব করতে পারেন। এটি করার জন্য যেই জায়গাটি বাছাই করবেন সেটা যেন খুব অন্ধকার না হয় আবার খুব আলোকিত না হয়। খুব ঠাণ্ডা অথবা গরম ঘর না হয়। এক কথায় জায়গাটি শান্তিপূর্ণ হওয়া চাই।
আরও পড়ুন । দাঁতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকা
-
আপনি মেডিটেশন করার জন্য একটি অবস্থা বাছাই করুনঃ
আপনি আপনার সুবিধা অনুসারে মেডিটেশন করার জন্য যেকোনো অবস্থা বাছাই করতে পারেন। যেকোনো অবস্থা যেমন বসে, শুয়ে, দাঁড়িয়ে, যেকোন অবস্থায় করতে পারেন।
আপনি যেকোনো অবস্থায় এটি করতে পারেন, তবে আপনার জন্য এটা ভালো হবে যে আপনি যেকোনো একই অবস্থায় নিয়মিত মেডিটেশন না করে মাঝে মাঝে অবস্থা বদলান।
-
দাঁড়িয়ে মেডিটেশনঃ
অনেকেই মনে করেন যে দাঁড়িয়ে মেডিটেশন করা যায় না, কিন্তু এটা একদম ভুল ধারণা। আমাদের পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কোন সমস্যার কারণে ঠিকভাবে বসতে পারেন না। অথবা দীর্ঘক্ষণ ধরে একভাবে বসে থাকতে পারে না। তাদের জন্য বসে মেডিটেশন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাদের জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় মেডিটেশন করা শ্রেষ্ঠ। দাঁড়ানো অবস্থায় এটি করার জন্য প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং হাত দুটি নমস্কার ভঙ্গিতে রাখুন।
আরও পড়ুন >>
স্বাস্থ্যের জন্য মেথির উপকারিতা আপনার জানা উচিত
কিসমিসের উপকারিতা: শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত কিসমিস
অ্যাভোকাডো : স্বাস্থ্যের জন্য অ্যাভোকাডোর উপকারিতা
ক্যান্সারের লক্ষণ: কয়েকটি লক্ষণ যা ক্যান্সার রোগের কারণ
-
শুয়ে মেডিটেশনঃ
এই অবস্থায় মেডিটেশন করার জন্য আপনাকে এক সাইড হয়ে শুতে হবে। যদি আপনি ডান সাইড হয়ে শোন তাহলে আপনার ডান হাত আপনার মাথার নীচে রাখুন এবং বাঁ হাত মাথার নীচে রাখুন। যদি আপনার এই পজিশনে সমস্যা হয় তাহলে আপনি এর পরিবর্তে যেকোনো পজিশন করতে পারেন।
আরও পড়ুন । চুল ঘন করার উপায়ঃ ৯ টি আশ্চর্যজনক পদ্ধতি
-
বসে মেডিটেশনঃ
বসে মেডিটেশন করার জন্য অনেক অবস্থা রয়েছে। কেউ পদ্মাসন ধ্যান করে শান্তি পায়, কেউ আবার বজ্রাসনে। তাই আপনি এই অবস্থায় যেকোনো পজিশন চয়েস করতে পারেন যেটায় আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। এছাড়াও আপনি আপনার হাত যেকোনো অবস্থায় রাখতে পারেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী। তবে পুরো শরীর ব্যালেন্স রাখতে হবে।
আরও পড়ুন >>
দাঁতের যত্নঃ কীভাবে নেবেন দাঁতের যত্ন জেনে নিন
১০ টি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার তালিকা
ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেটে ব্যথা কমানোর উপায়
-
মেডিটেশনের সময় চাপ মুক্ত রাখুনঃ
আপনি মেডিটেশন শুরু করার সময় মন থেকে সমস্ত রকমের চিন্তা দূরে রাখুন। আপনার মাথায় যেসমস্ত টেনশন কাজ করছে যেমন আপনার বাড়ির কোন সমস্যা, পারিবারিক কোন চিন্তা অথবা অফিসের কোন সমস্যা এই সব চিন্তা মাথা থেকে বের করে মনকে আগে শান্ত করুন।
আপনি মনে করুন এই পৃথিবীতে আপনি সবচেয়ে সুখী এবং আপনার কোন সমস্যা নেই। হয়তো আপনার এই মনোভাব আনতে একটু সময় লাগবে। তবে এই মনোভাব এসে গেলে দেখবেন অনেকটা চিন্তা মুক্ত হবেন।
-
মেডিটেশনের অভ্যাস চালিয়ে যানঃ
যখন আপনি ধ্যান করবেন অথবা মেডিটেশন করার জন্য কোন পজিশন বেছে নেবেন তখন হতে পারে আপনি শুরুতে এটি করতে পারছেন না বা মনোযোগ দিতে পারছেন না। তবে এরকম হলে হাল না ছেড়ে মেডিটেশনের অভ্যাস চালিয়ে যাবেন। বার বার চেষ্টা করার পর সহজেই আপনি মন লাগাতে পারবেন।
তাহলে আশা করি বুঝতে পারলেন মেডিটেশন আসলে কি এবং কীভাবে করবেন। এটি করার জন্য আগে আপনার মন স্থির রাখতে হবে। তাহলে প্রথমে নিজের মন থেকে সব চিন্তা দূরে সরিয়ে শান্ত মনে মেডিটেশন করুন।
আরও পড়ুন । ব্রণ দূর করার উপায়ঃ চট জলদি ব্রণ দূর করুন
Key point
নিজেকে সুস্থও রাখতে প্রত্যেক ব্যক্তির মেডিটেশন করা প্রয়োজন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. মেডিটেশন আসলে কি?
A. এটি আসলে এক প্রকার ধ্যান।
Q. মেডিটেশনের উদ্দেশ্য কি?
A. এর উদ্দেশ্যে হল মানুষের মনে শান্তি প্রদান করা এবং মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ মুক্ত করা।
Q. নিয়মিত মেডিটেশন করলে কি উপকার হয়?
A. মানসিক চাপ এবং ডিপ্রেশন কম হয়, নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, মেমরি শক্তিশালী হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
Q. মেডিটেশন কীভাবে করতে হয়?
A. মনের থেকে চিন্তা দূর করে এবং আরাম করে কোনও নিরিবিলি জায়গায় বসে, শুয়ে বা দাঁড়িয়ে মেডিটেশন করতে পারেন। এই সময় ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। তবে এটি করার সময় আপনার মনোযোগ শুধু শ্বাসের দিকে রাখতে হবে।