মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নঃ মানসিক রোগের প্রতিকার

আমদের মন খুব চঞ্চল ও প্রাণবন্ত। মনের কাজই হল চিন্তা করা। কিন্তু যত চিন্তা বাড়বে ততই মন ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আমদের যত রোগ হয়, ৭০ শতাংশ মানসিক। অর্থাৎ মানসিক রোগ থেকেই উৎপন্ন হয় শারীরিক রোগ। মানে, মন যদি চিন্তা না করে তাহলে শরীর সুস্থ ও সবল রাখা সম্ভব মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এ যেমন মনের ভূমিকা অনন্য, ঠিক তেমনি মনের অসুস্থতার ক্ষেত্রেও মনের ভূমিকা অপরিহার্য।

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এ

Source

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এর প্রতিকার করার আগে আমাদের জানতে হবে মানসিক অসুস্থতা বা মানসিক রোগ কী-

মানসিক রোগ কী

মানসিক রোগ কী (What is mental illness) 

মানসিক রোগের প্রধান কারণ মনের দুশ্চিন্তা। একটুতেই ব্যতিব্যস্ত হওয়া, কী হবে বা কী হবে না ভেবে অস্থির হয়ে ওঠা। দুশ্চিন্তা কারণ। মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে ব্যক্তির মেজাজ প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয় এবং ব্যক্তির নিজের অনুভূতি ইত্যাদির উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না

আরও পড়ুন । শিশু স্বাস্থ্য সচেতনতায় ৪ টি কার্যকর উপায়

মানসিক রোগ

Source

মানসিক রোগের প্রকার (Types of mental illness) 

মানসিক রোগ অনেক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

  1. হতাশা
  2. চিন্তা
  3. ভয়
  4. উদ্বেগ
  5. স্মৃতিলোপ
  6. বিভ্রম

আরও পড়ুন । শীতকালে ভালো থাকার উপায়ঃ শীতকালে ভালো থাকার জন্য কিছু সহজ টিপস

মানসিক রোগের লক্ষণ

Source

মানসিক রোগের লক্ষণ (Symptoms of mental illness)

  • মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন
  • হতাশাবোধ
  • অস্বাভাবিক আচরণ
  • বন্ধুবান্ধব, পরিবার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা
  • ক্লান্তি , স্বল্প শক্তি বা ঘুমের সমস্যা
  • মানুষের সামনে কথা বলতে ভয় পাওয়া।
  • দৈনন্দিন সমস্যা বা মানসিক চাপ সহ্য করতে অক্ষম

আরও পড়ুন ।  আপনার জানা উচিত থাইরয়েডে কি খাওয়া বারণ

মানসিক রোগের কারণ (Causes of mental illness) 

স্ট্রেসজনিত দুশ্চিন্তা

Source

স্ট্রেসজনিত দুশ্চিন্তা (Stressful anxiety) 

কোন কিছু যখন পাওয়া সম্ভব হয় না বা জীবনে ব্যর্থতা এলে, ভুল হলে তা বারবার মনে করতে থাকেল, আশানুরূপ ফল না পাওয়া গেলে তখন স্ট্রেসজনিত দুশ্চিন্তা দেখা যায়।

ভাবনাত্মক দুশ্চিন্তা

Source

ভাবনাত্মক দুশ্চিন্তা (Emotional anxiety)

কেউ কেউ খুব সামান্য কারণজনিত দুশ্চিন্তা করেন। কারো সামান্য কথায় বা সামান্য আঘাত পেলে। এই ধরণের চিন্তা করতে করতে মানসিক ও শারীরিক অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন ।  জেনে রাখুন আশ্চর্যজনক ১০ টি গাজরের উপকারিতা

সম্পর্কজনিত দুশ্চিন্তা

Source

সম্পর্কজনিত দুশ্চিন্তা (Relationship anxiety) 

পরিবার হোক বা কর্মস্থলে হোক কিংবা সামাজিক স্তরে সম্পর্কের টানাপোড়ন চলতে থাকে। সেক্ষেত্রে সহনশীলতা ও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কম থাকায় এই ধরণের দুশ্চিন্তার প্রকট বাড়ে।

প্রাকৃতিক দুশ্চিন্তা

Source

প্রাকৃতিক দুশ্চিন্তা (Natural anxiety) 

কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণে দুশ্চিন্তা দেখা যায়। ব্যবসায় মন্দার কারণে, আর্থিক সংকটের কারণে, কঠিন রোগ হলে বা অহেতুক বদনাম হলে এই ধরণের দুশ্চিন্তা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন ।  জেনে নিন, শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার এ কী কী রাখা জরুরী

মানসিক রোগের প্রতিকার

Source

মানসিক রোগের প্রতিকার (Remedy for mental illness)

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এর জন্য কিছু উপায় দেওয়া হল যা নিয়মিত অভ্যাস করলে ৯০ শতাংশ সুফল পাওয়া সম্ভব-

  1. মনের স্বাস্থ্যের যত্ন এর জন্য চাপ মুক্ত রাখা খুব জরুরী। যা রোজ হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে করা সম্ভব। নিয়মিত সকালে ১৫-২০ মিনিট প্রাণায়াম করলে মানসিক চাপ মুক্ত হয়।
  2. দুশ্চিন্তা এলে বই পড়ুন, গান শুনুন বা সেবা মূলক কাজে যুক্ত থাকুন।
  3. অনিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস মনের চাপ সৃষ্টকারী হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে তোলে। যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিয়মিত সুষম খাদ্য ও পরিমাণ মতো জল পান করতে পারেন।
  4. নিজেকে কাউন্সিলিং করতে পারলে মানসিক রোগ থেকে উপকৃত হবেন তাই নিজের সমস্যাগুলি একটি খাতায় লিখে নিন। এবার মন একাগ্র করে সমাধান খুঁজে বের করুন। দেখবেন এইভাবে অধিকাংশ সমস্যা নিজেই সমাধান করতে পারছেন।
  5. আমাদের সবারই পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার। নিয়ম হচ্ছে রাতে ঠিকমতো ঘুমানো আর দিনে কাজ করা। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম মনের স্ট্রেস দূর করে।
  6. মানসিক কোন সমস্যা হলে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে ভাগ করে নিন। এতে মন হালকা লাগবে। দেখবেন সমস্যার সমাধানও হয়তো খুঁজে পাবেন।
  7. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এর জন্য পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে অন্তত ১ দিন তাদের সঙ্গে বেড়াতে যান, আড্ডা দিন, খাওয়া- দাওয়া করুন। এতে মনের রোগ অনেকটাই সেরে যায়।
  8. মন থেকেই দুশ্চিন্তার উৎপত্তি হয়। এই দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখার একমাত্র পথ মেডিটেশন। এটি হল মনের একাগ্রতা ও ইতিবাচকতা। এতে মনের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সব পরিস্থিতিতে সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। এই কারনে মেডিটেশনকে অ্যান্টিবায়োটিকও বলা হয়ে থাকে। যা মানসিক সমস্যা দূরীকরণে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে থাকে।
  9. মনের সমস্যা যে কোন কারনে হতে পারে। যেমন- ঘুমের সমস্যা, কথাবার্তা পরিবর্তন, অহেতুক মন খারাপ, অতি উত্তেজনা, ভাঙচুর করা, ভ্রান্ত বিশ্বাস ইত্যাদি। বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ বা সাইকোথেরাপি গ্রহণ করতে হবে।
  10. রোজ সকালে উঠে ভালো চিন্তা করবেন। সুচিন্তা করার অভ্যাস হয়ে গেলে, সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাসও হয়ে যাবে। দুশ্চিন্তা সমাধানের পথ নয়। এতে সমস্যা আরও জটিল হয়ে দাঁড়ায়। সুচিন্তা সমাধানের পথ দেখায়। শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে দেয় না।

আশা করি, নিয়মিত এই অভ্যাসগুলি পালন করলে মানসিক রোগের প্রতিকার করা সম্ভব হবে।  তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে।

আরও পড়ুন ।  স্বাস্থ্যের জন্য সকালে দৌড়ানোর উপকারিতা

Key Point: শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। শরীর ভালো থাকলে মন আপনা আপনি ভালো থাকবে।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

Q. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন কেন? 

A. মনের রোগ খুব বড় একটি সমস্যা। মানসিক রোগের জন্য মানুষের মস্তিষ্ক কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

Q. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে কি হবে?

A. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে মানুষ ডিপ্রেশনে চলে যেতে পারে।

Q. কীভাবে বোঝা যায় মানসিক রোগ আছে?

A. দুশ্চিন্তা, হতাশা, অস্বাভাবিক আচরণ, কথা বলতে ভয় পাওয়া এই ধরনের লক্ষণগুলি দেখলে বোঝা যায় মানসিক রোগে আক্রান্ত।

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here