পুষ্টিকারক উপাদান দিয়ে ভরপুর, আনারস এমন একটি ফল যেটা খেতেও যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনি তার উপকারিতাও বহুগুণ। এই ফলের রস অথবা ফল উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য লাভজনক। আপনি যদি আনারসের উপকারিতা না জেনে থাকেন তাহলে বলতেই হবে আজকের এই নিবন্ধটি বিশেষ করে আপনার জন্য। কারণ আজকের এই নিবন্ধে আমরা আপনাদের স্বাস্থ্যের জন্য আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে জানাব। তবে তার আগের চলুন আমরা জেনে নিই আনারস কি কি পুষ্টিগুণে ভরপুর।
খাদ্যের মধ্যে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর আনারস নিজেই পুষ্টিতে ভরপুর। আনারসে ফ্যাট খুব কম পরিমাণে থাকে এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফাইবার ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
আনারস (Pineapple)
আনারস একটি মিষ্টি শক্ত ফল, যা ষোড়শ শতকে ইউরোপীয়রা দক্ষিণ আমেরিকায় পাইনগাছের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পেয়ে এই ফলের নাম রেখেছিল (পাইন + আপেল) পাইনাপেল। অপরিচিত এই ফলটি তাদের স্বাদের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এখন এটি প্রায় সমস্ত দেশেই পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের সাইড এফেক্ট আপনার জেনে রাখা উচিত
আনারসের পুষ্টিগুণ (Nutrition of pineapple)
আমরা এখানে ১০০ গ্রাম আনারসের কি কি পুষ্টি উপাদান কত পরিমাণ রয়েছে তার একটি চার্ট শেয়ার করলাম।
পুষ্টির উপাদান |
পরিমাণ (মাত্রা) |
|
০.৫৫ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট |
১১.৮২ গ্রাম |
সুগার |
৮.২৯ গ্রাম |
ক্যালোরি |
৮২.৫ |
ফ্যাট |
০.০১ গ্রাম |
ভিটামিন এ |
৫২ IU |
ভিটামিন সি |
১৬.৯ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ |
০.১০৬ মিলিগ্রাম |
আয়রন |
০.২৫ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম |
১৩ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম |
১২ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম |
১২৫ মিলিগ্রাম |
আরও পড়ুনঃ সবুজ আপেলের উপকারিতা জেনে নিন
আনারসের পুষ্টিগুণের উপকারিতা (Nutritional benefits of pineapple)
- প্রোটিন – শরীরের ত্বক, চুল, নখ, হাড় বিকাশে প্রোটিন প্রয়োজন।
- কার্বোহাইড্রেট – কার্বোহাইড্রেটগুলি আমাদের দেহে গ্লুকোজ হিসাবে দ্রুত রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে।
- ক্যালোরি – আমাদের দেহে শক্তি জোগান দেয়।
- ভিটামিন এ – শক্তিশালী হাড়, স্বাস্থ্যকর দাঁত, ত্বক, চুল এবং মাড়ির তৈরি এবং বজায় রাখতে সহায়তা করে। বিটা ক্যারোটিন আকারে ভিটামিন এ একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা আপনার কোষগুলিকে ফ্রি র্যাডিক্যাল কারণে ক্ষতি হতে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
- ভিটামিন সি – ভিটামিন সি ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
- ভিটামিন বি৬ – ভিটামিন বি ৬ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
- আয়রন – রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে।
- ক্যালসিয়াম – শরীরের হাড় মজবুত করে।
- ম্যাগনেসিয়াম – ম্যাগনেসিয়াম হাড় গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
- পটাসিয়াম – পেশী সংকোচন এবং স্নায়ু সংকেত নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনঃ পেঁপের গুণাগুণ: স্বাস্থ্যের জন্য পেঁপের ৭ টি গুণাগুণ
স্বাস্থ্যে ভালো রাখতে আনারসের উপকারিতা (Benefits of pineapple to maintain good health)
-
আনারস অ্যান্টি আক্সিডেন্টের উচ্চ উৎসঃ
আনারস ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। তাই আনারস খাওয়ার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। পাশাপাশি শীতকালে ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
-
আনারস খেলে চোখ ভালো থাকতে পারেঃ
আনারসে ভিন্ন ধরণের পুষ্টিগুন থাকায় বিশেষ করে ভিটামিন এ থাকায় এটি আমাদের দৃষ্টি শক্তির জন্যও খুব উপকারি। গবেষণা অনুযায়ী আনারস খেলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখ দৃষ্টি ক্ষমতা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কম হয়।
আরও পড়ুনঃ কলার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যের জন্য কলার উপকারিতা
-
আনারস হাড় শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারেঃ
আমাদের শরীরে হাড়ের জন্য আনারস উপকারিতা অনেক। আনারসে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম যা হাড় মজবুত করে এবং শরীরের এনার্জি প্রদান করে। নিয়মিত এক কাপ আনারসের জুস খেলে আমাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব পূরণ হয় এবং হাড় শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
-
আনারস আপনার হার্টের জন্য উপকারি হতে পারেঃ
আনারস যেহেতু অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎস তাই শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেলস দূরে রাখে পাশাপাশি কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। যার মাধ্যমে আমরা হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারি। তাই স্বাস্থ্যকর হৃদয় পেতে আজই নিজের খাদ্য তালিকায় এই ফল যোগ করুন।
আরও পড়ুনঃ অ্যাভোকাডো : স্বাস্থ্যের জন্য অ্যাভোকাডোর উপকারিতা
-
আনারস দাঁতের ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচাতে পারেঃ
আনারস আপনার দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন সি দাঁতের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। যার ফলে আমাদের দাঁত ক্ষয়ের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকে। এছাড়াও এই ফলটি দাঁত চকচকে করে তোলে।
-
আনারস উচ্চ রক্তচাপ কম করতে সহায়তা করেঃ
আপনার কি হাই ব্লাড প্রেসার এবং কিছুতেই কি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। তাহলে আপনাকে আনারস ফলটি সহায়তা করতে পারে। আনারসে পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে এবং সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকে যা রক্তের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন অবশ্যই এই ফলটি খাওয়া শুরু করুন।
আরও পড়ুনঃ শসার রসের উপকারিতাঃ শসার রসের জাদুকারী গুনাগুণ
-
আনারস ফ্রি রেডিকেলস ক্ষতির হাত থেকে শরীরকে বাঁচাতে পারেঃ
আনারস অ্যান্টি অক্সিডেন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আপনার হার্টের রোগ, বাতের রোগ, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
-
আনারস ক্যান্সারের হাত থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করতে পারেঃ
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আনারস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিকেলস দূর হয় এবং শরীরের কোষগুলি সুস্থও থাকে যার ফলে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের হাত থেকে আমাদের দূরে রাখতে সহায়তা করে।
Key point
আনারস যৌগ ধারন করে যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ হ্রাস করে। এই উভয়ই ক্যান্সারের সঙ্গে যোগ রয়েছে। তাই আনারস ক্যান্সারের জন্য উপকারি।
-
আনারস আপনার পচনতন্ত্র ভালো রাখতে সহায়তা করতে পারেঃ
আনারসে ভিটামিন সি এবং ফাইবার থাকায় এটি হাজম ক্ষমতা বাড়ায়। যার ফলে বদহজমের সমস্যা দূর হয়। তাই আনারস খাওয়ার মাধ্যমে আপনি পচনতন্ত্র ভালো রাখতে পারেন।
Key point
আনারস ব্রোমেলাইন ধারন করে যা হজমে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনঃ কিসমিসের উপকারিতা: শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত কিসমিস
-
ব্রংকাইটিস রোগে সহায়তা করেঃ
আনারসে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুনছে, যা রয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে ব্রঙ্কিয়াল টিউবে প্রদাহকে কমাতে সাহায্য করে, যা সাধারণত ব্রংকাইটিসের কারণে হয়ে থাকে।
11. আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তি দিতে পারেঃ
আর্থ্রাইটিসের ফলে আমাদের শরীরের জয়েন্টগুলোতে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। আনারসে ব্রোমেলাইন রয়েছে যা একটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এনজাইম বলে মনে করা হয় যা আনারসের রস থেকে আমরা পেতে পারি। নিয়মিত আনারসের রস খেলে এটি জয়েন্টের ব্যথা উপশম করবে এবং আর্থ্রাইটিস থেকেও রক্ষা করবে।
12. ত্বকের যত্নেঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমতে শুরু করে এবং বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে। আনারস আপনার ত্বককে মসৃণ করে তুলতে পারে। আনারসের রসে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন যা সামগ্রিক ত্বকের গঠন উন্নত করতে এবং UV রশ্মি ও দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ব্রণ এবং ত্বকের নানারকম সমস্যার সমাধান করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ নিমপাতার গুণাগুণঃ নিমপাতার অসাধারণ ৯ টি গুণাগুণ
আজকের নিবন্ধে থাকা আনারসের উপকারিতা গুলি আশা করি আপনার সুস্বাস্থ্যের সহায়ক হবে। তাহলে আজ থেকেই সুস্থও থাকতে শুরু করুন এই ফল গ্রহণ।
Key point
আনারস অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ইমিউন সিস্টেমকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. আনারস প্রতিদিন খাওয়া কি ভালো?
A. প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে আনারস খাওয়া আপনার শরীরের ভিতরে এবং বাইরে উভয়ের পক্ষেই ভাল।
Q. আনারস শরীরের জন্য কি উপকার করে?
A. আনারস হ’ল গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা ভিটামিন, এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়াতে, শক্তিশালী হাড় তৈরি করতে এবং পচনতন্ত্রকে ভালো রাখতে খুবই কার্যকরী।
Q. আনারস কি পেটের মেদ কমাতে পারে?
A. আনারসে ব্রোমেলাইন নামক একটি এনজাইম থাকে। এই এনজাইম আনারসের রসগুলিতে পাওয়া যায় যা বিপাক প্রোটিনগুলিতে সহায়তা করে ফলস্বরূপ অতিরিক্ত পেটের মেদ কমাতেও সহায়তা করে।
Q. আনারস কি ত্বকের জন্য ভালো?
A. হ্যাঁ, নিয়মিত আনারসের রস খাওয়ার মাধ্যমে আমরা ত্বক ভালো রাখতে পারি।