চুল থেকে শুরু করে ত্বক, যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে জবা ফুল অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। অকালে চুল পড়ে যাওয়া বা চুল সাদা হয়ে যাওয়া এরকম নানা ধরনের সমস্যায় আজকাল মানুষ বেশি ভুগছে। চুলের সঠিক যত্ন না নেওয়া, হরমোনের সমস্যা বা পুষ্টি উপাদানগুলির অভাবেই মূলত এই ধরনের সমস্যাগুলি দেখা দেয়। কিন্তু আপনি জানেন কি জবা ফুলের মধ্যে এমন জাদু আছে যা দিয়ে আপনি আপনার নষ্ট হয়ে যাওয়া চুলও ভালো করতে পারেন। যার কাছে দামি দামি তেলও ব্যর্থ। প্রাচীনকাল থেকেই এই ফুল চুলের সৌন্দর্যের বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। তাই আজকের নিবন্ধে রইল বেশ কিছু জবা ফুলের উপকারিতা ।
Table of Contents
জবা ফুল (Hibiscus Flower)
জবা ফুল কেবল বাগানের শোভা বাড়ায় না, বরং চুল মজবুত এবং তরতাজা করে। জবা ফুল ও তার পাতা উভয়ই চুলের জন্য উপকারি। জবা ফুলের ভিটামিন সি, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম ও ফ্যাটের বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি চুলের পক্ষে খুব লাভজনক।
আরো পড়ুন। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নঃ মানসিক রোগের প্রতিকার
জবা ফুলে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে (What are the Nutrients in Hibiscus Flower)
১০০ গ্রাম জবা ফুলে রয়েছেঃ
- ক্যালোরি – ৩৭
- ফ্যাট – ০.৭ গ্রাম
- সোডিয়াম – ৩ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম – ৯ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট – ৭ গ্রাম
- প্রোটিন – ০.৪ গ্রাম
- ভিটামিন এ – ৫%
- ভিটামিন সি – ৩০%
- আয়রন – ৪৭%
আরো পড়ুন। লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে রাখুন
জবা ফুলের পুষ্টিগুনের উপকারিতা (Nutritional Benefits of Hibiscus Flower)
- ক্যালোরি – ক্যালোরি আমাদের দেহে শক্তির জোগান দেয়।
- ফ্যাট – হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। রক্তচাপ কমায়। কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস এবং হৃদয়ের স্বাস্থ্যের সমর্থন করে।
- সোডিয়াম – সোডিয়াম রক্তচাপ কমিয়ে দিন। কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করে। স্ট্রোকের সম্ভাবনা রোধ করুন। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
- পটাসিয়াম – পটাসিয়াম স্ট্রোকের ঝুঁকিও হ্রাস করে, রক্তচাপকে হ্রাস করে, পেশী ভর হ্রাস থেকে রক্ষা করে, হাড়ের খনিজ ঘনত্বকে সংরক্ষণ করে এবং কিডনিতে পাথরগুলির গঠন হ্রাস করে।
- কার্বোহাইড্রেট – কার্বোহাইড্রেটগুলির প্রাথমিক কাজগুলির একটি হল আপনার শরীরকে শক্তি সরবরাহ করা। আপনার খাওয়া খাবারগুলিতে বেশিরভাগ শর্করা রক্ত প্রবাহে প্রবেশের আগে হজম হয় এবং গ্লুকোজে ভেঙে যায়।
- প্রোটিন – ক্ষুধা এবং ক্ষুধা স্তর হ্রাস করে, পেশী ভর এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। আপনার হাড়ের জন্য ভালো। আপনার রক্তচাপকে হ্রাস করে। ওজন হ্রাস বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন এ – ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন যা স্বাস্থ্যকর দৃষ্টি, ত্বক, হাড় এবং দেহের অন্যান্য টিস্যুগুলির জন্য ভাল। ভিটামিন এ প্রায়শই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে, কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে তবে এর আরও অনেক ব্যবহার রয়েছে।
- ভিটামিন সি – ভিটামিন সি, যা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড হিসাবে পরিচিত, শরীরের সমস্ত টিস্যুগুলির বৃদ্ধি, বিকাশ এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়। ভিটামিন সি কোলাজেন গঠন, আয়রন শোষণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ক্ষত নিরাময়, দাঁতের রোগ নিরাময় হয়।
- আয়রন – আয়রন সাধারণ শক্তি এবং ফোকাস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল প্রক্রিয়াগুলি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আয়রন দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহ শরীরে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন। ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ
চুলের সৌন্দর্যে জবা ফুলের উপকারিতা (Benefits of Hibiscus flower for hair beauty)
1. চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
জবা ফুলের মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিড নামক উপাদান আছে যা ক্যারোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। নারকেল এবং জবা ফুলের তেল চুলের স্ক্যাল্পে পুষ্টি যোগায় এবং চুল গজাতে সহায়তা করে পাশাপাশি স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
নারকেল এবং জবা ফুলের তেল
উপকরণঃ–
- ১ কাপ নারকেল তেল
- ৭ টা জবা ফুল
- ৭ টা জবা ফুলের পাতা
প্রণালীঃ-
- জবা ফুলের পাতা এবং ফুল ভালো করে ধুয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন।
- একটি প্যানে ১ কাপ নারকেল তেল গরম করে নিন।
- এবার গরম তেলে পেস্টটি মিশিয়ে কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিন।
- তেলটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পরিমাণ মতো তেল নিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নেবেন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
প্রস্তুতির সময়ঃ-
৪০ মিনিট
আরো পড়ুন। শিশু স্বাস্থ্য সচেতনতায় ৪ টি কার্যকর উপায়
Key Point: ক্যারোটিন চুলের খাদ্য। এই উপাদানটি চুল দ্রুত বৃদ্ধি করে।
2. চুল মজবুত করে
জবা ফুল অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ। যা চুলের গোঁড়া শক্ত করে এবং জবা ফুলের তৈরি মাস্ক চুলকে ময়শ্চারাইজ করে তোলে।
চুল মজবুতের জন্য দই এবং জবা ফুলের মাস্ক
উপকরণঃ–
- ৪-৫ টা জবা ফুলের পাতা
- ১ টা জবা ফুল
- ৩-৪ টেবিল চামচ টক দই
প্রণালীঃ-
- জবা ফুল এবং জবা ফুলের পাতা পেস্ট করে নিন।
- পেস্টের মধ্যে টক দই ভালো করে মিশিয়ে নিন। যতক্ষণ না পর্যন্ত মিশ্রণটি মসৃণ হয়।
- এবার এই মাস্কটা চুলের স্ক্যাল্পে এবং পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন।
- ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে উষ্ণ গরম জলে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন।
প্রস্তুতির সময়ঃ–
৬০ মিনিট
আরো পড়ুন। শীতকালে ভালো থাকার উপায়ঃ শীতকালে ভালো থাকার জন্য কিছু সহজ টিপস
3. খুশকি দূর করতে সাহায্য করে
আপনার কি খুশকির কারণে চুল পড়ে যাছে ? খুশকির শ্যাম্পু লাগিয়েও সমস্যা সেই থেকেই যাছে। তাহলে এখানে আপনার জন্য রইল প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জবা ফুল এর হেয়ার প্যাক যা দিয়ে আপ্নারা অনায়াসেই খুশকির সমস্যা দূর করতে পারবেন।
জবা ফুল এবং মেহেন্দির অ্যান্টি ড্যানড্রাফ হেয়ার প্যাক
উপকরণঃ-
- কয়েকটি জবা ফুলের পাতা
- কয়েকটি জবা ফুল
- অর্ধেক লেবু
- পরিমাণ মতো মেহেন্দি পাতা
প্রণালীঃ-
- মেহেন্দি পাতা, জবা ফুলের পাতা, জবা পাতা ভালো করে পেস্ট করে নিন।
- এবার এই পেস্টে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে নিন । এবার প্যাকটি স্ক্যাল্পে এবং পুরো চুলে লাগিয়ে নিন । ঘণ্টা খানেক বাদে শ্যাম্পু করতে ভুলবেন না।
প্রস্তুতির সময়ঃ–
৬০ মিনিট
Key Point: মেহেন্দি পাতা এবং জবা ফুলের প্যাক খুশকি প্রবণতা চিরতরে বন্ধ করে।
4. স্ক্যাল্প ভালো রাখতে জবা ফুলের উপকারিতা
জবা এবং আমলা হেয়ার মাস্ক চুলের স্ক্যাল্প ভালো রাখে। স্ক্যাল্পে ময়লা জমতে দেয় না পাশাপাশি চুল নরম ও মসৃণ করে তোলে।
জবা এবং আমলকীর হেয়ার মাস্ক
উপকরণঃ–
- ২-৩ টেবিল চামচ জবা ফুলের পাতার পেস্ট
- ২-৩ টেবিল চামচ জবা ফুলের পেস্ট
- ২-৩ টেবিল চামচ আমলকীর গুড়ো
প্রণালীঃ-
- জবা ফুল, পাতা এবং আমলকীর পেস্ট একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।
- এবার মিশ্রণটিতে সামান্য জল যোগ করুন নরম করার জন্য।
- এই আমলকী এবং জবা হেয়ার মাস্কটি চুলের স্ক্যাল্পে এবং চুলে লাগিয়ে নিন।
- একটি পাতলা কাপড়ে পুরো চুলটি বেঁধে রাখুন। এবং ৪০-৪৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- হেয়ার মাস্কটি শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে নিন।
প্রস্তুতির সময়ঃ–
৪০ মিনিট
আরো পড়ুন। আপনার জানা উচিত থাইরয়েডে কি খাওয়া বারণ
5. জবা ফুলের শ্যাম্পু
বাজারে কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পুর পরিবর্তে বাড়িতেই জবা ফুল দিয়ে তৈরি শ্যাম্পু বানিয়ে নিতে পারেন।
উপকরণঃ–
- ৫ টি জবা ফুল
- ১২-১৩ টি জবা ফুলের পাতা
- ১ চা চামচ আটার দানা
- ১ কাপ জল
প্রণালীঃ–
- জবা ফুল ও পাতা সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে নিন।
- এবার মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে এলে আটার দানা মেশান।
- সপ্তাহে ২-৩ দিন এই শ্যাম্পুটি দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে চুল ভালো থাকবে।
প্রস্তুতির সময়ঃ–
১০ মিনিট
Key Point: বাজারের শ্যাম্পুর পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জবা ফুলের শ্যাম্পু বেশি উপকার।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. জবা ফুল কি ত্বকের রঙকে হালকা করে?
A. জবা ফুলের টোনারঃ জবা ফুলে উপস্থিত এএইচএস ত্বকের বর্ণ এবং গঠনকে উন্নত করতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি ত্বকের রঙকে হালকা করতে সহায়তা করে যখন ভিটামিন ই ত্বকে ময়শ্চারাইজ করে এবং এর বর্ণকে উন্নত করে।
Q. কোন রঙের জবা ফুল চুলের জন্য ভালো?
A. ধূসর চুলকে কালো করার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে রঙ্গিন জবা ফুলকে ব্যবহার করাই ভালো। জবা ফুলে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনগুলি মেলানিন উৎপাদন সাহায্য করে।
Q. পাকা চুল রঙ করার জন্য কিভাবে জবা ফুল ব্যবহার করবেন?
A. একটি বাটিতে জবা ফুল শুকিয়ে গুড়ো করে নিন। পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যালোভেরা জেল দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। মাথায় মেখে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
Q. জবা ফুলের তেল কি চুলের জন্য ভালো?
A. কোলাজেন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় জবা ফুলের তেল চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে কার্যকর। এটি প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিডযুক্ত যা আপনার চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে এবং পুষ্ট করে। জবা ফুলের তেল আপনার চুলকে কন্ডিশন করে, চুল পড়া কমায়, চুলের রুক্ষতা দূর করে।
জবা ফুল ও পাতা তৈরি প্যাক চুলের সমস্যা মেটে কি ?
জবা ফুল চুলের জন্য খুব কার্যকারী। এতে চুলের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়। আপনি ট্রাই করে দেখতে পারেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।
কমলা রঙের জবা ফুল ব্যাবহার করা যাবে কি?
হ্যাঁ যেতে পারে তবে সম্ভব হলে লাল রঙয়ের জবা ফুল ব্যবহার করলে ভালো।