চুলের খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা যা আজকাল প্রায়ই সবাই এর মুখোমুখি হয়। সে মহিলাই হোক অথবা পুরুষ হোক। অনেক সময় চুলে খুশকি হওয়ার কারণে চুল ঝরতে শুরু করে। যার ফলে আমাদের চুলের সমস্যা হতে থাকে। চুলের খুশকি সবচেয়ে শত্রু হিসাবে বলা হয়। কারণ এটি চুলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। এটি চুল দুর্বল করে এবং পড়ে যায়।
চুলের খুশকি মাথায় চুলকানোর মতো সমস্যাও নিয়ে আসে। এর থেকে মুক্তি পেতে প্রতেকেই চায়। আজকের এই নিবন্ধে চুলের খুশকির সমস্যা সামাধানের জন্য কয়েকটি কার্যকর ঘরোয়া টোটকা নিয়ে হাজির। এই উপাদানগুলি ব্যবহার করে আপনি খুশকির সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে চলুন তার আগে খুশকি কারণ, প্রকার এবং এফেক্ট জেনে নিই।
Read more: চুলের যত্নে আপেল সাইডার ভিনিগার
চুলে খুশকি হওয়ার আসল কারণ কি (What Is The Real Cause For Dandruff In The Hair)
চুলের খুশকি সমস্যা চুলের গোড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক সময় আমরা ভাবি যে আঁচড়ানোর কারণে তারা পুরোপুরি পড়ে যাবে এবং আমরা খুশকি থেকে মুক্ত হব। তবে এটি মোটেও নয়। খুশকির মূল কারণটি আমাদের জীবনের সাথে জড়িত যেমন খাবার, অভ্যাস, চাপ ইত্যাদি।
-
চুলে তেল ব্যবহার না করাঃ
অনেকেই ভাবে চুলে তেল ব্যবহার করব, চুল তো আঠালো হয়ে যাবে। এই ধারণার জন্যই আমাদের চুলে খুশকি হয়। এটা হয়তো অনেকেই জানেন না দীর্ঘদিন ধরে চুলে তেল ব্যবহার না করলে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায় এবং চুলে খুশকি হয়।
-
মাথায় সঠিকভাবে চিরুনি না করা:
সঠিকভাবে চিরুনি না দেওয়া আমাদের চুলে খুশকি হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির মাথায় মরা ত্বক জমায়েত হয়। এই মরা ত্বক চিরুনি দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলা যায়। তাই আমাদের প্রত্যেকের দিনে কমপক্ষে ২ বার ভালো করে চিরুনি দেওয়া উচিত। চিরুনি দিয়ে মরা কোষ সরিয়ে ফেললে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।
-
সঠিকভাবে শ্যাম্পু না করাঃ
সঠিকভাবে শ্যাম্পু না করা হলে মৃত ত্বক চুলে জমে এবং তেল শিকড়গুলিতে জমে। যার কারণে খুশকি তৈরি হয়। চুল ধোঁয়ার জন্য আমাদের হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত, এটি চুলকে নরম এবং সিল্কি করে তোলে
কেমিক্যাল চুলের ক্ষতি করে তাই মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। সাধারণ শ্যাম্পুতে প্রচুর কেমিক্যাল থাকে যা আমাদের চুল রুক্ষ এবং প্রাণহীন করে তোলে। চুলের শ্যাম্পুর পরে কন্ডিশনার ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ, এটি চুলকে ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে।
-
স্ক্যাল্পে প্রোটিনের ঘাটতিঃ
বর্তমানে মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ভুলেই বসে পরিবর্তে তাদের খাবারের তালিকায় স্থান পায় স্ট্রীট ফুড, বেশি তেল দেওয়া খাবার, ফাস্টফুড ইত্যাদি। যার ফলে অধিকাংশ মানুষের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হয় এবং পেটের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অংশে প্রভাব পড়ে। এই সমস্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। পাশাপাশি শরীরে প্রোটিনের অভাব দেখা যায় যা চুলের খুশকি হওয়ার মূল কারণ। তাই বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
-
মানসিক চাপঃ
আজকাল মানুষের জীবনে সমস্যার কমতি নেই। সেই বাড়ির সমস্যা হোক অথবা বাইরের সমস্যা লেগেই রয়েছে। গভীর রাত অবধি কাজ করা, দেরি করে ঘুমানো, পরীক্ষার চিন্তা, এই সমস্ত বিষয় আমাদের মানসিক পাশাপাশি শারীরিকভাবেও প্রভাবিত করে। এই মানুষের অতিরিক্ত মানসিক চাপ খুশকির অন্যতম কারণ। তাই চেষ্টা করুন মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকতে। সময় মতো জল পান করুন, খাবার খান এবং ঘুমান।
-
চুলের পণ্যের অতিরিক্ত ব্যবহারঃ
বর্তমানে ত্বকের পাশাপাশি চুলের সৌন্দর্যও জরুরী। চুলে স্টাইলের জন্য অথবা চুল সেট করতে আমরা বিভিন্ন ধরণের স্প্রে ব্যবহার করি। যা খুশকির সৃষ্টি করে। জেল জাতীয় পণ্য চুলে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ক্ষতি হয় এবং শিকড়কেও প্রভাবিত করে। তাই যতটা সম্ভব এই সমস্ত পণ্য ব্যবহার না করা উচিত।
-
চর্মরোগঃ
অনেক সময় ত্বকের সমস্যা থাকলে তা চুলে এফেক্ট হতে পারে। বলা হয় চর্মরোগও চুলের খুশকি হওয়ার একটি বড় কারণ। তাই যদি চর্মরোগ থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Notes
কন্ডিশনারটি কখনই চুলের গোড়ায় প্রয়োগ করা উচিত নয়।
Read more: ত্বক এবং চুলের জন্য আমন্ড অয়েলের উপকারিতা
চুলের খুশকির প্রকার – Types of Dandruff
সাধারণত চার ধরণের খুশকি প্রকার রয়েছে-
- শুষ্ক খুশকি।
- তৈলাক্ত খুশকি।
- ফাঙ্গাল খুশকি।
- রোগ সম্পর্কিত খুশকি।
Read more: চুল এবং ত্বকের যত্নে মেথি ব্যবহারের উপকারিতা
চুলের খুশকির ফলে কি সমস্যা হয়?
খুশকি একটি ত্বকের সমস্যা যা আপনার মাথার ত্বকে চুলকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে। চুলের খুশকির ফলে যে সমস্ত সমস্যাগুলি হয় তা হল-
- মাথার স্ক্যাল্প শুষ্কতা।
- মাথার স্ক্যাল্পে চুলকানি।
- চুল পড়া।
- চুল নষ্ট হয়ে যায়।
- ব্রণ।
Happy Kwanzaa from #GO DANDRUFF to stop. #Dandruff #Dryscalp #Dryskin #Eczema #Psoriasis #Itchyscalp #SeborrheicDermatitis. #Sulfatefree.
Just spray and brush or massage throughout hair and or skin.
To Purchase link to:https://t.co/qQdcKJ6XPY pic.twitter.com/4vyIUeHCCn— Godandruff (@godandruff) December 30, 2019
Read more: ঘরে বসে করে নিন পাকা চুলের চিকিৎসা
চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় (Hair Dandruff removal Home Remedy)
-
Tea Tree তেল ব্যবহার করুনঃ
ট্রি টি অয়েল চুলের খুশকি দূর করার জন্য অত্যন্ত ভালো। আপনার চুলের গোড়াটি সামান্য তেল দিয়ে মালিশ করুন। তারপরে ৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে উপকৃত হবেন।
Key point
ট্রি টি অয়েলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকির দূর করতে সহায়তা করে।
-
অ্যান্টি- ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করুনঃ
আমরা চুলে অনেক রকমের শ্যাম্পু ব্যবহার করি। মার্কেটে অ্যান্টি- ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু রয়েছে। আপনি যেকোনো ভালো কোম্পানির অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেবন। তবে এই শ্যাম্পু চুলের গোড়া কিন্তু ক্ষতি করে। তাই অতিরিক্ত ব্যবহার না করে আপনি সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
-
নারকেল তেল ব্যবহার করুনঃ
রাতে ঘুমানোর আগে চুলের স্ক্যাল্পে নারকেল তেল দিয়ে মাসাজ করুন এবং সকালে উঠে অ্যান্টি-ড্রানড্রফ শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। সারা রাত নারকেল তেল চুলে লাগিয়ে রাখলে চুলের খুশকি দূর হতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি চুলের গোড়া শক্ত করে। সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
Key point
নারকেল তেলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বক হাইড্রেট করে রাখে এবং একজিমা ও খুশকির লক্ষণগুলি হ্রাস করতে পারে।
-
মুলতানি মাটি ব্যবহার করুনঃ
মুলতানি মাটি খুব ভালো ঘরোয়া উপাদান যা দিয়ে খুশকি দূর করা সম্ভব। শুধু ত্বকের যত্নে না এটি চুলের যত্নেও কার্যকর। মুলতানি মাটি কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে নিন। এবং এটির একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। চুলের গোড়ায় এই পেস্টটি লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিটের জন্য। তারপর ভালো করে শ্যাম্পু করে নেবেন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
Read more: ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
-
বেকিং সোডা দিয়ে চুল পরিষ্কার করুনঃ
খুশকির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বেকিং সোডা একটি চমৎকার ঘরোয়া টোটকা। ১ চা চামচ সোডা নিন এবং শুষ্ক স্ক্যাল্পে এটি প্রয়োগ করুন। ২ থেকে ৩ মিনিট অপেক্ষা করার পরে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করলে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে খুশকি থেকে মুক্তি পাবেন।
Key point
বেকিং সোডায় অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বকের জ্বালা উপশম করে।
-
খুশকি দূর করতে ভিনিগারঃ
২ টেবিল চামচ ভিনিগারে ২ টেবিল চামচ জল যোগ করুন এবং এটি চুলে লাগিয়ে মাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করলে খুশকি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
-
চুলে খুশকি দূর করতে দই লাগানঃ
দই চুলের খুশকি দূর করতে একটি কার্যকর উপায়। এক বাটি টাটকা দই নিন এবং এটি চুলে ও স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। ১-২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। কিছুদিন এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে খুশকির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
Key point
চুল পড়া কমাতে দই অসাধারণ টোটকা।
-
চুলের খুশকির জন্য অ্যালোভেরা জেলঃ
অ্যালোভেরা জেল চুলের খুশকি দূর করতে খুব উপকারি উপাদান। এটি ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন সঙ্গে লড়াই করে। যা মাথার ত্বকের থেকে খুশকি দুর করতে সহায়তা করে।
Key point
অ্যালোভেরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা খুশকি হ্রাস করে।
Read more: চুলে ক্যাস্টর অয়েলের ব্যবহারঃ নতুন চুল গজাতে ক্যাস্টর অয়েলের ব্যবহার
তাহলে এখানে কয়েকটি সেরা চুলের খুশকি দূর করার টোটকা রইল, যা আপনার রান্নাঘরেই রয়েছে। যদি আজকের এই টোটকা আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে, এগুলি ব্যবহার করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার চুলের খুশকি সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রঃ দিনে কতবার চুল আঁচড়ানো ভালো?
উঃ যতবার সম্ভব।
প্রঃ অ্যালোভেরা জেল সপ্তাহে কত বার লাগাতে হবে?
উঃ অ্যালোভেরা জেল সপ্তাহে ২-৩ বার লাগান।
প্রঃ দই লাগালে খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব?
উঃ অনেকটা খুশকির সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
প্রঃ বেকিং সোডা কীভাবে লাগাব?
উঃ বেকিং সোডা এক চামচ নিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন। ২-৩ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নেবেন।
প্রঃ মুলতানি মাটি চুলের জন্যও কি উপকার?
উঃ হ্যাঁ, এটি চুলের জন্য উপকার।