সরিষার বীজ থেকে সরিষার তেল পাওয়া যায়। শুধু রান্নাতেই নয়, ত্বকের যত্নে সরিষার তেল এর গুনের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। এই তেলটি আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। এটি ত্বকের ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করে, শুষ্ক ত্বক তরতাজা করে তোলে পাশাপাশি ত্বকের সমস্ত রকম সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। সরিষার তেল সৌন্দর্যের গোপন ঔষধ।
সরিষার তেল (What is Mustard Oil)
রূপটানে রয়েছে সরিষার তেলের অপরিহার্য ভূমিকা। ত্বকের পাশাপাশি চুলের যত্নে এটি কার্যকর। এই তেল ওমেগা আলফা ৩, ওমেগা আলফা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উৎস। এর জন্য সরিষার তেলকে আয়ুর্বেদিক তেল হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন। মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্য ব্যক্তিদের লক্ষণ
Key Point: সরিষার তেল ব্যবহারের আগে আপনাকে সচেতন হতে হবে। আপনি যে সরিষার তেলটি ত্বকে ব্যবহার করবেন ওটা খাটি তো? কারণ ভেজাল তেল ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে।
সরিষার তেলে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে (What are the nutrients in Mustard Oil)
১ কাপ(২১৮ গ্রাম) সরিষার তেলে রয়েছেঃ
- ক্যালোরি – ১৯২৭
- ফ্যাট – ২১৮ গ্রাম
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড – ১২৮৬২ মিলিগ্রাম
- ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩৩৪২৪ মিলিগ্রাম
আরো পড়ুন। জেনে নিন সঠিক পদ্ধতিতে আদা খাওয়ার নিয়ম
সরিষার তেলের পুষ্টিগুনের উপকারিতা (Nutritional benefits of Mustard Oil)
- ক্যালোরি – আমাদের দেহে শক্তির জোগান দেয়।
- ফ্যাট – স্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলি কম স্বাস্থ্যকর চর্বি হিসাবে বিবেচিত হয় কারণ তারা হৃদরোগে অবদান রাখতে পারে। সরিষার তেল প্রতি টেবিল চামচ প্রতি 2 গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা আপনার প্রস্তাবিত দৈনিক ভোজনের প্রায় 1 শতাংশ সরবরাহ করে।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড – ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হতাশা ও উদবেগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের পক্ষে ভালো।
- ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড – ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য, কোলেস্টেরল মাত্রা কমানোর জন্য, ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে উপকারী।
আরো পড়ুন। স্বাস্থ্যের জন্য সকালে দৌড়ানোর উপকারিতা
সরিষার তেল সংরক্ষণ করার উপায় কী? (How to store mustard oil)
সরিষার তেলটি এয়ারটাইট পাত্রে রাখতে হবে এবং সরাসরি সূর্যের আলো ছাড়াই শীতল শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত।
ত্বকের যত্নে সরিষার তেলের উপকারিতা (Mustard Oil use for Skin)
1. রোদে পোড়া ত্বকে ঔজ্জ্বল্যতা আনেঃ
সরিষার তেলে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, আলট্রাভায়োলেট রশ্মির হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। পাশাপাশি রোদে পোড়া ত্বকে ঔজ্জ্বল্যতা ফিরিয়ে আনে।
টোটকাঃ-
১ চামচ সরিষার তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে ১০- ১৫ মিনিট ত্বকে মাসাজ করুন। এবার একটি ভেজা টিস্যু দিয়ে মুখটি মুছে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার রোদে পোড়া ত্বকে ঔজ্জ্বল্যতা ফিরে আসবে।
আরো পড়ুন। পায়ের নখের যত্নঃপা এবং পায়ের নখের যত্ন যেভাবে নেবেন
2. সান্সক্রিমের কাজ করেঃ
সরিষার তেলে রয়েছে ভিটামিন সি, যা সূর্যের সুরক্ষার এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। ত্বককে দূষিত পদার্থের হাত থেকে রক্ষা করে এবং স্ক্রিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
টোটকাঃ-
সান্সক্রিম লোশানের পরিবর্তে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত অ্যাপ্লাই করলে সূর্যের ইউ ভি রশ্মির হাত থেকে স্ক্রিনকে বাঁচানো সম্ভব।
3. ত্বকের কালো দাগ রিমুভ করতেঃ
ত্বকের কালো দাগকে কি চিরতরে বিদায় জানাতে চান? তালে নিঃসন্দেহে ব্যবহার করতে পারেন এই অয়েলটি।
টোটকাঃ-
কয়েক ফোঁটা মধু ও কিছুটা চন্দনের গুড়ো নিয়ে সরিষার তেলে সঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট রেডি করে নিন। এবার পেস্টটি হালকা করে পুরো মুখে লাগিয়ে মাসাজ করে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২- ৩ বার ব্যবহারে ভালো ফল অব্যশই পাবেন।
আরো পড়ুন। আদার গুনাগুনঃ শরীর সুস্থ রাখতে আদার গুনাগুন
4. ত্বকের র্যাশ প্রতিরোধ করেঃ
ত্বকের যত্নে সরিষার তেল শুধুমাত্র অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টি ফ্যাঙ্গাল নয়, এটি অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরিও হতে পারে। নিয়মিত এই তেল মাসাজ করলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালনের পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
টোটকাঃ-
নিয়মিত স্নানের আগে এই তেলটি বডিতে মাসাজ করুন।
5. ত্বকের বলিরেখা দূর করেঃ
সরিষার তেলে ওমেগা আলফা ৩ এবং ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড মুখের ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি বলিরেখা পড়তে বাঁধা দেয়।
আরো পড়ুন। জেনে নিন ঘরে বসে ওজন কমানোর ব্যায়াম
টোটকাঃ-
রোজ স্নানের আগে ত্বকে সরিষার তেল বডি মাসাজ হিসাবে ব্যবহার করুন। আপনার ত্বক সতেজ থাকবে।
6. ব্রণ চিকিৎসাঃ
সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা ব্রণ নিরাময় করার ক্ষমতা রাখে। সরিষার তেল অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি সমৃদ্ধ। যা পিম্পেলে প্রতিরোধ করার সঙ্গে লড়াই করে।
টোটকাঃ
একটি প্যানে নারকেল তেল ও সরিষার বীজ নিয়ে গরম করুন। এবার মিশ্রণটি ঠাণ্ডা করে একটি পাত্রে ঢেলে রাখুন।
প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই তেলটি মুখে মাসাজ করুন। কিছু সপ্তাহের মধ্যেই অসাধারণ ফল দেখতে পাবেন। এবং আপনি গর্বের সাথে ব্রণকে বিদায় জানাতে পারবেন।
7. ঠোঁটের যত্নে সরিষার তেলের উপকারিতাঃ
শীতকালে ঠোঁট ফাটা একটি বড় সমস্যা। লিপবামে এই সমস্যার থেকে হালকা মুক্তি পেলেও ঠোঁটে কিন্তু সেই রুক্ষতা দেখাই যায়। শুষ্ক ঠোঁটে এই তেল চমৎকার কাজ করে।
টোটকাঃ-
শুষ্ক ঠোঁটেকে বিদায় জানাতে প্রতিদিন রাতে শোবার আগে নাভিতে ২-৩ ফোঁটা সরিষার তেল মাসাজ করে নেবেন।
সরিষার তেলের ক্ষতিকর প্রভাব (Side effects of Mustard Oil)
সরিষার তেলে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ইউরিক অ্যাসিড। তাই বেশি পরিমানে বা রান্নায় অতিরিক্ত পরিমানে সরিষার তেল খাওয়ায় উচিত না। যাদের ইউরিক অ্যাসিড আছে তাদের সরিষার তেল খাওয়া উচিত না।
Key Point: সরিষার তেল রান্না ও ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্য পুষ্টিকর।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এর উৎসগুলি কি কি?
A. ডিম, বাদাম, গম, কুমড়োর বীজ, তিল তেল, ভেজিটেবিল তেল, সরিষার তেল।
Q. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর উৎসগুলি কি কি?
A. ফ্ল্যাকসিডস, আখরোট, অ্যাভোকাডো, ব্রকোলি, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, কড মাছের তেল।
Q. সরিষার তেল ত্বক কি কালো করে দেয়?
A. না, সরিষার তেল ত্বক কালো করে দেয় না। আপনার ত্বককে আরো ঝকঝকে করে তুলতে সাহায্য করে।
Q. বলিরেখা কমাতে সরিষার তেল কি সাহায্য করে?
A. সরিষার তেলে রয়েছে ভিটামিন ই। এটি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করতে ও বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। উপরের নিবন্ধটি পড়ুন সরিষার তেলের সম্বন্ধে সব জানতে পারবেন।