কিসমিসের স্বাদ সম্পর্কে তো আমরা সবাই জানি কিন্তু কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন কি? কিসমিসের গুণাগুণ শুধুমাত্র এর মিষ্টত্বেই সীমাবদ্ধ নয়, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে কিসমিস। তবে নিয়মিত কিসমিস খাওয়া শরীরের জন্য কি সত্যিই উপকার? অনেকেই ভাবে কিসমিস বেশি পরিমাণ খেলে হয়ত স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তবে জানেন কি কিসমিসকে শুকনো ফলের রাজা বলা হয়। এই বাদামী রঙের ফলটি টনিক, খাবার এবং শক্তির জন্য অপরিহার্য।
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ কিসমিসের উপকারিতা আমরা হয়ত অনেকেই জানি না। বলা হয়ে থাকে হার্টের জন্য এটি খুব উপকারি। তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। আসুন তাহলে দেখে নিই কিসমিসের উপকারিতা।
কিসমিস কি (What are raisins)
কিসমিস একটি শুকনো ফল। আঙ্গুর প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় কিসমিস। এটি সরাসরি খাওয়া যায় ও বিভিন্ন খাদ্য রান্নার সময় উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন । স্বাস্থ্যের জন্য মেথির উপকারিতা আপনার জানা উচিত
কিসমিসের পুষ্টিগুণ (The nutritional value of raisins)
100 গ্রাম কিসমিসে রয়েছে-
- ক্যালোরি ২৯৯
- প্রোটিন ৩.০৭ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৭৯.১৮ গ্রাম
- ফাইবার ৪.৫ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম
- আয়রন ১.৮৮ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৩২ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১০১ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৭৪৯ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ১১ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি ২.৩ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই ০.১২ মিলিগ্রাম
আরও পড়ুন । জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের লক্ষণ এবং চিকিৎসা
কিসমিসের পুষ্টিগুণের উপকারিতা (Nutritional benefits of raisins)
- ক্যালোরি – আমাদের দেহে শক্তি জোগান দেয়।
- প্রোটিন – শরীরের ত্বক, চুল, নখ, হাড় বিকাশে প্রোটিন প্রয়োজন।
- কার্বোহাইড্রেট – কার্বোহাইড্রেটগুলি আমাদের দেহে গ্লুকোজ হিসাবে দ্রুত রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে।
- ফাইবার – হজম স্বাস্থ্য এবং নিয়মিত অন্ত্রের জন্য ফাইবার প্রয়োজনীয়।
- ক্যালসিয়াম – শরীরের হাড় মজবুত করে।
- আয়রন – রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে।
- ম্যাগনেসিয়াম – ম্যাগনেসিয়াম হাড় গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
- পটাশিয়াম – পেশী সংকোচন এবং স্নায়ু সংকেত নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- সোডিয়াম – সোডিয়াম আমাদের দেহে অ্যাসিড এবং ক্ষারীয় অবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- ভিটামিন সি – ভিটামিন সি ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
আরও পড়ুন । জেনে রাখুন থাইরয়েড কেন হয় এবং তার প্রতিকার
শরীর সুস্থ রাখতে কিসমিসের উপকারিতা (The benefits of raisins to keep the body healthy)
-
বদহজম দূর করতে কিসমিসের উপকারিতা (keep indigestion away)
যদি কোন ব্যক্তির বদহজমের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত তার খাবারে কিসমিস যোগ করা উচিত। কিসমিসে পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম দুই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলি একসঙ্গে বদহজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
2. কোলেস্টেরল কমাতে কিসমিসের উপকারিতা (keep away cholesterol)
আপনি কি জানেন কিসমিস কোলেস্টেরল মুক্ত। কিসমিসে দ্রবণীয় ফাইবার খুব উচ্চ পরিমাণ থাকে। এই দ্রবণীয় ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে। এছাড়াও কিসমিস, আমাদের দেহে পলিফেলন এনজাইমকে দমন করে যা কোলেস্টেরলের জন্য দায়ী।
3. ওজন বৃদ্ধিতে কিসমিসের উপকারিতা (increase weight gain)
আপনি যদি আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাহলে কিসমিস আপনাকে সহায়তা করতে পারে। কারণ কিসমিস ওজন বাড়াতে সহায়তা করে পাশাপাশি দেহে এনার্জি বৃদ্ধি করে। তাই আপনি নিজের ওজন বাড়ানোর জন্য আজ থেকে নিয়মিত কিসমিস খাওয়া শুরু করে দিন।
আরও পড়ুন । ট্রেডমিলে অথবা মেশিনে দৌড়ানোর উপকারিতা
4. অ্যানিমিয়া দূর করতে কিসমিসের উপকারিতা (eliminating anemia)
কিসমিসে আয়রন যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে যা অ্যানিমিয়া ঠিক করতে সহায়তা করে। এটি নতুন রক্ত গঠন করে এবং দেহে ভিটামিন বি – এর অভাব পূরণ করে।
5. হাড় শক্তশালী করতে কিসমিসের উপকারিতা ( strengthening bones)
ক্যালসিয়ামের একটি উৎস হওয়ার কারণে কিসমিস খাওয়ার ফলে হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী হয়। এছাড়াও কিসমিসে বোরন নামক এক উপাদান রয়েছে যা ক্যালসিয়াম শোষণ করে হাড় গঠনে সহায়তা করে।
6. ক্যান্সার প্রতিরোধে কিসমিসের উপকারিতা (anti-cancer)
ক্যান্সার কোষের বিকাশের একটি প্রাথমিক কারণ ফ্রি রেডিকেলস। ক্যান্সারে উপস্থিত অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলস নষ্ট করে ক্যান্সারের কোষকে বৃদ্ধি হতে বাঁধা দেয়।
আরও পড়ুন । দৌড়ানোর পর খাবারঃ দৌড়ানোর পর খাদ্য তালিকা কি কি রাখা উচিত?
7. পাচন তন্ত্রের উন্নতিতে কিসমিসের উপকারিতা ( beneficial for the digestive system)
কিসমিস পাচন তন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারি। কিসমিসে উপস্থিত ফাইবার দেহের বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে এবং হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
8. মুখের স্বাস্থ্যের জন্য কিসমিসের উপকারিতা (oral health)
অনেকের একটি ভুল ধারণা কিসমিস মিষ্টি হওয়ার কারণে দাঁতের জন্য খারাপ। অনেকে আবার ভেবে থাকেন অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খেলে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জমতে পারে অথবা দাঁত ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তবে আপনি কি জানেন কিসমিসে একধরণের অ্যাসিড রয়েছে যা দাঁতের জন্য খুব উপকারি। যা দাঁতে ব্যাকটেরিয়া হওয়া রোধ করে।
9. চোখের জন্য কিসমিসের উপকারিতা (The benefits of raisins for the eyes)
কিসমিস ভিটামিন এ, এ-বিটা ক্যারোটিন এবং ক্যারোটিনয়েড রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রেডিকেলস সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন । ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃএই লক্ষণগুলি দেখলেই বুঝবেন ডেঙ্গু জ্বর
10. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিসমিসের উপকারিতা (controlling blood pressure)
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী শুষ্ক ফলের মধ্যে কিশমিশকে সর্বত্রই প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে থাকা উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, দেহে রক্তচাপ বাড়ার প্রধান কারণ। কিসমিস আমাদের দেহে সোডিয়ামের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাছারাও কিশমিশে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সহায়ক।
তাহলে নিশ্চয়ই আর কিসমিস খাওয়া নিয়ে আপনাদের ভয় পেতে হবে না। স্বাস্থ্যের জন্য কিসমিস সত্যিই উপকার তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং ভালো থাকুন।
Key point: অনেক ড্রাই ফ্রুট রয়েছে যা এনার্জির জন্য ব্যবহার করা হয়। কিসমিস তাদের মধ্যে অন্যতম। এতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রামে ২৪৯ ক্যালরি রয়েছে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. নিয়মিত কিসমিস খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে?
A. কিসমিস আয়রনে ভরপুর। নিয়মিত কিসমিস খেলে অ্যানিমিয়া রোগ হওয়ার সম্ভবনা কম হয়।
Q. নিয়মিত কতটা পরিমাণ কিসমিস খাওয়া উচিত?
A. নিয়মিত ৩০ গ্রাম অর্থাৎ একমুঠো কিসমিস খাওয়া ভালো।
Q. কিসমিস কি চোখের জন্য উপকার?
A. কিসমিসে ভিটামিন এ, এ-বিটা ক্যারোটিন এবং ক্যারোটিনয়েড রয়েছে যা চোখের জন্য খুব উপকারী।
Q. কিসমিস ওজন বাড়াতে পারে?
A. হ্যাঁ, কিসমিস ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।
Ak mitho kismise katota JAL dite have athaba 30 frame
এক কাপ অথবা দুই কাপ জলে।