ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃএই লক্ষণগুলি দেখলেই বুঝবেন ডেঙ্গু জ্বর

ইদানীং ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে প্রতি বছর মানুষ মারা যাচ্ছে। ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে এই জ্বর প্রবেশ করছে মানুষের শরীরে। এডিস নামক এক ধরণের মশা আক্রমণের জন্য এই রোগটি হয়ে থাকে। বিশেষ করে বর্ষার সময় এই ভাইরাস বেশি দেখা যায়। বর্তমানে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবল আকার ধারণ করছে, তবে ভয়ের কোন কারণ নেই। ইতিমধ্যেই এই জ্বরের চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ জানতে হবে। ঠিক সময় চিকিৎসা ফেরাবে হাজার মানুষের প্রাণ।

ডেঙ্গু-জ্বর-কি

Source

ডেঙ্গু জ্বরের মৃত্যুর প্রধান কারণ অসময়ে চিকিৎসা। অনেক সময় এই ভাইরাসটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং জ্বর হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা বুঝে উঠতে পারি না। যখন বুঝতে পারি তখন আর হাতে সময় থাকে না। তাই নিজের বাঁচাতে আগেই থেকেই চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু কেমন ভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু জ্বর আপনার শরীরে প্রবেশ করেছ। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ রয়েছে যা দেখে সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে এবং সময়মতো চিকিৎসা করাও সম্ভব। এই নিবন্ধন থেকে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলি জেনে নিন।

ডেঙ্গু জ্বর কি (What is dengue fever)

ডেঙ্গু জ্বর কি (What is dengue fever)

ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশা দ্বারা প্রেরিত একটি ভাইরাস সংক্রামণ রোগ । এই জ্বর সাধারণত ডান্ডি জ্বর এবং ব্রেকবোন জ্বর হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন । ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধঃ ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার উপায়

Source

ডেঙ্গু জ্বর কেন হয় (Why is dengue fever)

ডেঙ্গু সাধারণত প্রধানত এডিস পরিবারের সম্পর্কিত মশা। ডেঙ্গু জ্বর একরকম ভাইরাস জনিত জ্বর। এডিস নামক ডেঙ্গু মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে এবং এই মশা যখন অন্য কাউকে কামড়ায়, তার দেহে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এবং ডেঙ্গু জ্বর আক্রমণ করে। আবার মশার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির রক্ত অন্য ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে। এইভাবে চক্রাকারভাবে আবর্তিত হয়।

আরও পড়ুন ।  ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রতিকার, পরীক্ষা, প্লেটলেট

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

Source

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ (Symptoms of dengue fever)

কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখলেই বোঝা যায় ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। যেমন-

  1. উচ্চ মাত্রায় জ্বর
  2. বমি বমি ভাব
  3. মাথা ব্যথা
  4. ত্বকে র‌্যাশ
  5. ফুসকুড়ি
  6. ফোলা গ্রন্থি
  7. শরীর ব্যথা
  8. রক্তকণিকা
  9. মাথার পিছনে ব্যথা
  10. ফোলা গ্রন্থি
  • উচ্চ মাত্রায় জ্বর (High fever)

উচ্চ মাত্রায় জ্বর (High fever)

Source

ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে প্রধান লক্ষণ হল উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর। ডেঙ্গু জ্বর হলে তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রীতে যায়। উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে চার সাতদিন ধরে জ্বর থাকে। ৩-৪ দিনের বেশি যদি দেখেন জ্বর না কমে তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।

  • প্রচণ্ড মাথা ব্যথা (Severe headache)

প্রচণ্ড মাথা ব্যথা (Severe headache)

Source

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়। চোখের পেছনের দিকে ব্যথা হবে। মাথাব্যথা ডেঙ্গু রোগের অন্যতম পূর্বলক্ষণ।

আরও পড়ুন ।  জেনে রাখুন থাইরয়েড কেন হয় এবং তার প্রতিকার

  • শরীর ব্যথা (Body pain)

শরীর ব্যথা (Body pain)

Source

প্রাথমিকভাবে শরীরের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হয়, এর পাশাপাশি ব্যথা হয় পেশীতেও। হাড় ভাঙলে যেরকম তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, ডেঙ্গু হলেও ঠিক সেরকম ব্যথা অনুভূত হবে।

  • ত্বকের র‍্যাশ (Skin rash)

ত্বকের র‍্যাশ (Skin rash)

source

জ্বর হওয়ার এক থেকে দুইদিনের সময় সারা শরীরে লালচে র‌্যাস দেখা যায়। যাকে বলা হয় স্কিন র‌্যাশ, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ত্বকে লাল ছোপ ছোপ দাগ। সাধারণত ডেঙ্গু হওয়ার দ্বিতীয় দিনের মধ্যে ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • বমির ভাব (Feeling Vomiting)

বমির ভাব (Feeling Vomiting)

Source

ডেঙ্গু জ্বরের আরেকটি লক্ষণ হল বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব অনুভব হওয়া। অনেক সময় বমি তেমন না হলেও প্রচন্ড বমি ভাব হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের আরেকটি অন্যতম ও প্রধান লক্ষণ হল বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব অনুভব হওয়া। অনেক সময় বমি তেমন না হলেও প্রচণ্ড বমি ভাব হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের এই লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে অতিসত্বর চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এর যে কোনো একটি লক্ষণ থেকে হতে পারে ডেঙ্গু জ্বর।

  • রক্তকণিকা (Blood cells)

রক্তকণিকা (Blood cells)

Source

ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা মনে করলে তাড়াতাড়ি করে প্লেটলেট টেস্ট করা যায়। এসময় প্লেটলেট কিংবা রক্তকণিকার পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। প্লেটলেট কাউন্ট যদি ২০ হাজার এর নিচে হয় তাহলে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন ।  ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়

  • পানি শূন্যতা (Dehydration) 

images (4)

Source

শরীরে পানির মাত্রা কমিয়ে দেয় ডেঙ্গু জ্বর বেশি তাপমাত্রার কারণে শরীরে পানি শুকিয়ে গেলে অনেক সময়ই শরীরে ফুইডের ঘাটতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে রোগীকে স্যালাইন পান করতে দেওয়া উচিত। এতে কিছুটা হলেও পানির ঘাটতি কমে যাবে।

জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। আর কোনো ওষুধের দরকার নেই। তবে জ্বর প্রথম দিন থেকেই জটিল আকার মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নয়তো বাড়িতে তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। তিন দিনে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

Notes: নিজে দোকান থেকে কিনে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাবেন না।

ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তির উপায়

Source

ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তির উপায় (Ways to get rid of dengue fever)

ডেঙ্গু জ্বর হলে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। তবে ডেঙ্গু জ্বর যাতে শরীরে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য আগে থেকে কয়েকটি সতর্কতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

  1. জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলুন।
  2. জানালা মশা উপদ্রব কমানোর জন্য নেট ব্যবহার করুন।
  3. জল নিয়মিত ব্যবহার করে ফেলুন। জল ধরে রাখবেন না।
  4. ফুল হাতা শার্ট অথবা ফুল হাতা জামাকাপড় পড়া পড়ার অভ্যাস করবেন।
  5. বাড়ির আশেপাশে নিয়মিত পরিষ্কার রাখবেন।
  6. বাড়ির চারপাশে জল জমতে দেবেন।
  7. রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমানো উচিত।
  8. বাড়ির আশেপাশে নোংরা জমতে দেবেন না। আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলার ব্যবস্থা করুন।

আরও পড়ুন ।  আর্থ্রাইটিস কি, রোগের লক্ষণ এবং ব্যথা কমানোর চিকিৎসা

আশাকরি, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ নিবন্ধনে লক্ষণগুলি জেনে গেলেন । এবার সতর্ক হলেই ডেঙ্গু জ্বরের থেকে মুক্তি পাবেন।

Key point: ডেঙ্গুর জ্বরের লক্ষণ বুঝতে পারলেই দেরি না করে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন ।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ 

Q. ডেঙ্গু ভাইরাসের শরীরে কতক্ষণ থাকে ?

A. ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত সংক্রামিত ব্যক্তির দেহে ২ থেকে ৭ দিন ধরে সঞ্চালিত হয়।

Q. ডেঙ্গু জ্বর নিশ্চিত হতে গেলে কি পরীক্ষা করতে হয়?

A. ডেঙ্গু জ্বর নিশ্চিত হতে গেলে একটি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা এবং একটি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা।

Q. ডেঙ্গু ভাইরাস কোথা থেকে ছড়ায়?

A. ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত এডিস মশা দ্বারা ছড়ায়। পচা জল এবং আবর্জনা থেকে ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি হয়।

Q. ডেঙ্গু জ্বরে কি বাঁচার সম্ভবনা আছে?

A. অবশ্যই। ডেঙ্গু জ্বর সঠিক সময় চিকিৎসা করালে ৯৯ শতাংশ বাঁচার সম্ভবনা রয়েছে।

Q. কম তাপমাত্রায় কি ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে?

A. প্রচণ্ড তাপমাত্রায় জ্বরে ডেঙ্গু হয়, তবে কম তাপমাত্রা থাকলে এবং দীর্ঘদিন ধরে থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভালো।

Q. ডেঙ্গুর জ্বরের লক্ষণ কি?

A. প্রচণ্ড জ্বর, বমি বমি ভাব, গায়ে লাল লাল দানা দেখা দিলে অবশ্যই টেস্ট করানো দরকার।

Q. ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করনীয়?

A. সময় মতো পরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসা করা।

7 Comments

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here