আদা রান্নার মশলার উপকরণ হিসাবে খুব জনপ্রিয়, বিশেষত এশিয়ান এবং ভারতীয় খাবারের মধ্যে। হাজার হাজার বছর ধরে এটি ঔষধি চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। আদার গুনাগুন রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ যেমন দশগুণ বাড়িয়ে দেয়, তেমনি এর মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষমতাও বিদ্যমান।
আদা মুখের রুচি বাড়ানোর পাশাপাশি শারীরিক সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এতে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে। সর্দি – কাশি কমানোর সঙ্গে দেহকে সজীব রাখে। তাই নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের অনেক সমস্যা দূর হয়। শরীরর সুস্থ রাখতে আদার গুনাগুন আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। তাই চলুন জেনে নিই শরীর নীরোগ রাখতে আদার অপরিসীম গুণাগুণ –
আরও পড়ুন । মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নঃ মানসিক রোগের প্রতিকার
আদা (Ginger)
আদা এমন একটি সুগন্ধযুক্ত মশলা যা আপনার খাবারের স্বাদ বাড়াতে সহায়তা করে। আদা এর উপকারিতা স্বাস্থ্য এবং ত্বকের সাথে সম্পর্কিত। এটি আপনাকে ওজন হ্রাস করার পাশাপাশি পেটের সমস্যাগুলি দূরে রাখতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন । জেনে নিন সঠিক পদ্ধতিতে আদা খাওয়ার নিয়ম
আদার পুষ্টিগুণ (Nutritional value of ginger)
100 গ্রাম আদায় পুষ্টিগুণ রয়েছে –
- ক্যালোরি (৮০)
- প্রোটিন (১.৮২ গ্রাম)
- আয়রন (০.৬ মিলিগ্রাম)
- ক্যালসিয়াম (১৬ মিলিগ্রাম)
- পটাসিয়াম (৪১৫ মিলিগ্রাম)
- ফাইবার (২ গ্রাম)
- ভিটামিন সি (৫মিলিগ্রাম)
আরও পড়ুন । স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিকঃ ত্বকের সমস্যায় ভেষজ টোটকা
আদার পুষ্টিগুণের উপকারিতা (Nutritional benefits of ginger)
ক্যালোরি – দেহের শক্তির উৎস ক্যালরি। আমাদের দেহে শক্তির জোগান দেয়।
আয়রন – শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।
প্রোটিন – শরীরের ত্বক, চুল, নখ, হাড় বিকাশে প্রোটিন প্রয়োজন। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে প্রতিরক্ষা করে।
ক্যালসিয়াম – শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে।
পটাসিয়াম – রক্তচাপ, কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য, হাড়ের শক্তি এবং পেশী মজবুত করে।
ফাইবার – ফাইবার হজম স্বাস্থ্য এবং নিয়মিত অন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান।
ভিটামিন সি – ভিটামিন সি অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির মধ্যে একটি। ভিটামিন সি শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন । জেনে নিন স্বল্পদিনের মধ্যে ওজন কমানোর মন্ত্র
শরীর সুস্থ রাখতে আদার গুনাগুন ও উপকারিতা (Properties and benefits of ginger to keep the body healthy)
-
পেশীর ব্যথা উপশম (Relieve muscle pain)
আদায় অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ উপস্থিত থাকায় এটি ধীরে ধীরে হাত পায়ের জয়েন্টের ব্যথা উপশম করতে সহায়ক। তেলে আদা ছেঁচে ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে নিয়মিত তেলটি হাত পায়ের জয়েন্টে মালিশ করুন। ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
-
ব্ল্যাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে (Controls blood sugar)
ব্যথা উপশমে আদার গুনাগুন অতুলনীয় তা সবারই প্রায় জানা। কিন্তু জানেন কি? আদায় আশ্চর্যজনক একটি স্বাস্থ্যের সুবিধা আছে। এটি রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি হাই ব্যাল্ড সুগারের নেতিবাচক উপসর্গগুলিকে কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং সুস্থ থাকার জন্য সহায়তা করে।
-
ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে (Reduces the risk of cancer)
কিছু গবেষকরা সুপারিশ করেন অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। আর আদা হল শক্তিশালী অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি। ২০১২ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান প্রোস্টেট ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দিতে কার্যকর। ওভারি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে।
আরও পড়ুন । লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে রাখুন
-
সর্দি – কাশি উপশম (Cold – cough relief)
আদায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা সর্দি কাশি হাত থেকে দূরে রাখে। এটি শরীরের রোগ জীবাণুর ধ্বংস করে শরীর সুরক্ষিত রাখে।আদা রান্না চেয়ে কাঁচা খাওয়া বেশি উপকার। সর্দি কাশি উপশমের জন্য আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান।
-
ইনফেকশন সাথে লড়াই করে (Fights infection)
আদার গুনাগুন এর শেষ নেই। আদায় রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল মিশ্র যৌগ, ইনফেকশন সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে।
-
হজম ক্ষমতা বাড়ায় (Increases digestion capacity)
অনেক দিন ধরে এটি ভেষজ ঔষধিতে ভালো পাচক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পেটে ব্যথা, বেদনা, বমিভাব কমাতে আদা কার্যকারী অ্যান্টিডোট। আদা শুকিয়ে খেলে হজম শক্তি বাড়ে। আদা মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে পাশাপাশি বদহজম রোধ করে।
-
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে (Eliminates gastric problems)
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে আদা খুব কার্যকর। নিয়মিত আদা সেবন করলে গ্যাস ও অম্বলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি পেটের অস্বস্তিকর যন্ত্রণা থেকে রেহাই মেলে। তাই সবকিছুর মধ্যে আদা একটি ভালো উপাদান। নিজেকে সুস্থ রাখতে এটা আপনার ডায়েট চার্টে অন্তর্ভুক্ত করুন।
-
ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে (Helps to increase immunity)
আদা শরীরের প্রদাহ সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম। আদা উপস্থিত অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল দেহের জীবাণুর ধ্বংস করে এবং শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়তা করে।
-
ত্বকের জ্বালাভাব নিরাময় করে (Cures skin irritation)
শীতে ত্বকে খসখসে হওয়ার দরুন কিছুক্ষণ রোদে থাকলেই ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। যার ফলে লালচে ভাব, জ্বালাপোড়া করে। আদায় অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের জ্বালাভাব কমাতে সাহায্য করে।
-
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে আদার গুনাগুন (Ginger is good for the beauty of the skin)
আদায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন রয়েছে, যা ত্বকের সৌন্দর্য বড়াতে অতুলনীয়। কারণ এই উপাদানগুলি ত্বকের জমে থাকা টক্সিন বের করে দেয় পাশাপাশি কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ত্বকে বয়স্কের ছাপ পড়তে দিতে না চাইলে নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
আদার গুনাগুন তো জানা হয়ে গেল, এবার নিজেকে ভালো রাখতে নিয়মিত আদা খাওয়া শুরু করুন।
আরও পড়ুন । খেজুরের পুষ্টিগুণঃ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেজুরের পুষ্টিগুণ
Key Point: গবেষণায় দেখা যায়, আদা মস্তিষ্কের বয়স সংক্রান্ত ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং এটি বৃদ্ধ মহিলাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. নিয়মিত আদা খাওয়া কি ভালো?
A. নিয়মিত আদা খেলে পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং বদহজম, বমি বমি ভাব এবং অম্বল প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
Q. রোজ কতটা পরিমাণ আদা খাওয়া ভালো?
A. রোজ ৩ থেকে ৪ গ্রাম আদা খাওয়া ভালো।
Q. অতিরিক্ত পরিমাণ আদা খেলে কোনও সাইড এফেক্ট হয় কি?
A. যেকোনো জিনিস পরিমাণ অনুযায়ি খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণ আদা খেলে আপনার ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা হতে পারে।