স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিকঃ ত্বকের সমস্যায় ভেষজ টোটকা

বছর শেষ হয়ে গেল প্রায়। অক্টোবর থেকে শুরু করে যেন ছুটির ঘণ্টা বাজতেই থাকে। ঝকঝকে রোদ্দুর, গাঢ় নীল আকাশ, বাতাসে ঠাণ্ডার চোরা টান – সব মিলে যেন জানিয়ে দিচ্ছে পুজো শেষ তো কি হয়েছে, উৎসবের মরসুম দাঁড়িয়ে রয়েছে দোরগোড়ায়। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বিয়েবাড়ি ও বছর শেষের রাতপার্টির প্ল্যানিং। এই মরসুমে নিজেকে একদম টপ ফর্মে রাখতে গেলে কিন্তু নিজের দিকে একটু নজর দিতেই হবে। ত্বককে সতেজ ও তরতাজা করার জন্য পার্লারে লাইন দেওয়ার কোন দরকার নেই বা গুচ্ছের টাকা খরচ করে দামি দামি কসমেটিকস কেনার কথাও বলা হচ্ছে না।

স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিক ব্যবহার করেই একাধিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন। কী ধরনের আয়ুর্বেদিক বা ভেষজ ব্যবহার করবেন, সেটা একটু পরখ করে নিতে হবে। যে আয়ুর্বেদিক ব্যবহার করবেন, সেটা আপনার ত্বকের সঙ্গে মানানসই কিনা সেটা আগে দেখা দরকার। এই সাবধানতাগুলি মাথায় রেখে চললে আয়ুর্বেদিক রূপটান ফল পাওয়া অবশ্যই সম্ভব।তেমন কিছু ত্বক বা স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিক এর সন্ধান রইল-

স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিক টোটকাঃ

স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিক টোটকাঃ

  • ব্ল্যাকহেডেস থেকে মুক্তি

ব্ল্যাকহেডেস থাকলে দেখতে তো খারাপ লাগেই, মেকআপও ঠিকভাবে বসে না। হেয়ার ফলিকল জমে রোম ছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে উপরের অংশটা কালো হয়ে যায়। যার ফলে ব্ল্যাকহেডেস দেখা যায়। ব্ল্যাকহেডেস নানা কারনে হতে পারে। তৈলাক্ত ত্বক এই সমস্যার বড় কারন।

ব্ল্যাকহেডেস থেকে স্থায়ী মুক্তি পেতে জাঙ্ক ফুড খাবার এড়িয়ে চলুন এবং ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখুন। অ্যালোভেরা জুস ব্যাজার থেকে কেনার পরিবর্তে বাড়িতে বানিয়ে খেতে পারেন। অ্যালোভেরা বা করলা জুস ব্রণ বা ব্ল্যাকহেডেস দূর করতে কার্যকর।

টিপসঃ-

পরিমাণ মতো চালের গুড়ো ও গুড়ো দুধ জল দিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি ব্ল্যাকহেডেস এর ওপরে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। নিয়মিত স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিক টোটকাটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।

সূর্যের ট্যান রিমুভ

  • সূর্যের ট্যান রিমুভ

সূর্যরশ্মির আলো ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ভালো হয় না, যদি বাড়িতেই সূর্যের ট্যান রিমুভ করার আয়ুর্বেদিক টোটকা বানিয়ে নিতে পারেন? খুব সহজেই সেটা করা সম্ভব আর ফলও পাওয়া সম্ভব।

টিপসঃ-

একটু খোঁজ করলেই দশকর্মা দোকানে শিমুলকাঁটা দেখতে পাবেন। হাফ টেবিলচামচ শিমুলকাঁটার পেস্ট ও হরতকির পেস্ট, সঙ্গে ৪-৫ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। পেস্টটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে ফল পাবেন।

  • শুষ্কতা হাত থেকে রেহাই

শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। দেখতে তো খারাপ লাগেই পাশাপাশি কোন সাজপোশাক ভালো লাগে না। আয়ুর্বেদিক বা ভেষজ চিকিৎসায় শুষ্ক বিবর্ণভাব দূর করে ত্বকে লাবণ্য পাওয়া যায় খুব সহজেই।

টিপসঃ-

  1. দু চাচমচ ওটমিল গুড়ো করে, এক চাচমচ মধু ও দই মিশিয়ে একটা প্যাক রেডি করে নিন। প্যাকটি ভালো করে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
  2. বাড়িতে বসেই আয়ুর্বেদিক উপাদান দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন ক্রিম।

সুপারিশ নিবন্ধন :- 

উপকরণঃ-

  • সিকি কাপ নারকেল তেল
  • ১ চাচমচ শিয়া বাটা
  • ১ চাচমচ অ্যালোভেরা জেল
  • ১ চাচমচ আমন্ড অয়েল (জোজোবা অয়েল নিতে পারেন)
  • ১০ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা অন্য কোন এসেনশিয়াল অয়েল

পদ্ধতিঃ-

  • প্রথমে শিয়া বাটা ও নারকেল তেল গরম করে নিন।
  • এবার এই মিশ্রিত গরম তেলে অ্যালোভেরা রস, আমন্ড অয়েল বা জোজোবা অয়েল, আর এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ঠাণ্ডা করে বোতলে ভরে নিলেই ক্রিম রেডি।
  • দূরে থাকুক বলিরেখা

মুখের বয়সের ছাপ পড়তে দেখলেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে যায়। নামীদামী ব্র্যান্ডের অ্যান্টি রিঙ্কেল ও অ্যান্টি এজিং ক্রিম ব্যবহার না করে আয়ুর্বেদিক ভেষজ দিয়েই রুখে দিতে পারেন আপনার বয়সের ছাপ। স্ক্রাব ত্বকের উপর থেকে মৃত কোষ নির্মূল করে ত্বকের আর্দ্রতা জোগায় আর সেই সঙ্গে জোগান দেয় ভরপুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।

টিপসঃ-

ত্বকের বলিরেখা কমাতে মাখন বা দুধের সর মুখে মাখার পরামর্শ দিচ্ছেন আয়ুর্বেদিকরা।

দাগছোপ কমাতে

  • দাগছোপ কমাতে

ত্বকের দাগছোপ নিয়ে নাজেহাল অনেকেই। এর জন্য অনেকই ব্লিচিং করান পার্লারে গিয়ে। কিন্তু সাবধান ভুলেও সেই পথে পা বাড়াবেন না। এটি আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতি করবে। বাড়ি বসেই আপনি ভেষজ চিকিৎসার দ্বারা এর হাত থেকে চিরতরে রেহাই পেতে পারেন।

ত্বকের দাগছোপ ও ত্বকের কালচে অংশ নির্মূল করে কোমলভাবে ত্বক পরিষ্কার রাখতে জুরি নেই লেবুর। লেবুর রসে রয়েছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট যা ত্বক পরিষ্কার ও তেলমুক্ত রেখে ব্রণর প্রকোপ থেকেও অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়।

টিপসঃ-

একটা ডিমের সাদা অংশ, আধ চামচ টাটকা লেবুর রস এবং আধকাপ বিয়ার নিন। এবার ডিমের সাদা অংশ ও বিয়ার ভালো করে ফেটিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে নিন। এবার সারা মুখে লাগিয়ে নিন, শুকিয়ে এলে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে নিন।

হাতে–পায়ের যত্নে আয়ুর্বেদিকঃ

  • হাতে–পায়ের যত্নে আয়ুর্বেদিকঃ

এযুগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সময়ের অভাব। তাই মুখ আর চুলের যত্ন যদিও নেওয়া হয়, বাদ পরে হাত পা। ফাটা পা, ভঙ্গুর নখ আপনার উৎসবের সাজটাই মাটি করে দেবে। বাজারের ফুট ক্রিমের পরিবর্তে আপনি ঘরে বসেই বানিয়ে নিতে পারেন নারকেল তেল আর গ্লিসারিন দিয়েই হাত ও পায়ের ক্রিম।

টিপসঃ-

রোজ রাতে সমপরিমাণ নারকেল তেল আর গ্লিসারিন মিশিয়ে পায়ের গোড়ালিতে লাগিয়ে রাখুন। নিয়মিত কয়েকদিন করলেই পা ও হাত মসৃণ ও কোমল হয়ে যাবে।

বাজারে নামীদামী কসমেটিক এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ এতে সাইড এফেক্ট রয়েছে। ভেষজ চিকিৎসার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

সারকথাঃ

আয়ুর্বেদিক কথার অর্থ হল জীববিদ্যা। স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বলতে ভেষজ বা উদ্ভিদের মাধ্যমে যে চিকিৎসা করা হয়। এই চিকিৎসা পাঁচ হাজার বছর পুরাতন।

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here