খেতে কার না ভালো লাগে? আর বিয়ে বাড়ি বা যে কোন অনুষ্ঠান বাড়ি বা restaurant -এর খাওয়া হলে তো কথাই নেই। পেট পুরে খেতে আমরা সকলেই পছন্দ করি। কিন্তু যদি হয় পেটে ব্যথা? তাহলে খাবার সব আনন্দই মাটি। কিন্তু pete betha hole ki korbo ? পেট ব্যাথা হলে কি খাওয়া উচিত ? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন থাকে মানুষের মনে। আর সেই জন্যেই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পেটে ব্যথা।
মানুষ নিত্য জীবনযাত্রায় এতটাই ব্যস্ত যে ঠিকমত শরীরের যত্ন নিতে পারে না। তাই প্রায়শই মানুষ পেটের সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমাদের মনে রাখতে হবে সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে সঙ্গে হজম ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। কারণ পেট কে সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরী।
Read more: ৮ টি লিভার ভালো রাখার খাবার তালিকা
পেটের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই অনেক ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু বারবার এগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পেটের ব্যথা সারাতে আপনি কিছু সহজ home remedy -র সাহায্য নিতে পারেন।
এই নিবন্ধে, আমরা কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকারের বিষয়ে জানব যা পেটের ব্যথা থেকে সহজেই মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।
পেটে ব্যথা (Stomach Ache)
আমাদের Health ভালো রাখতে হলে সবার আগে আমাদের পেট ভালো রাখতে হবে। পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ ? পেট ব্যথা হওয়ার পিছনে থাকতে পারে একাধিক কারণ।
এক্ষেত্রে গ্যাস, Acidity, বদহজমে মতো সমস্যা থাকতে পারে। এমনকি ব্যাকটেরিয়াল বা Virus জনিত কোনও ইনফেকশন থেকেও পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া পেটে ব্যথার অন্যতম কারণ।
Read more: দাঁতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকা
পেট ব্যাথার সাধারণ কারণ (Causes of Abdominal Pain)
- গ্যাস-অম্বলের ব্যাথা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজমের কারণে পেট ব্যাথা
- ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাসজনিত সংক্রমনের কারণে ব্যাথা
- আলসার
- গলব্লাডার
- অ্যাপেন্ডিসাইটিস
- কিডনিতে পাথর
- ওভারিয়ান সিস্ট
পেট ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া টোটকা (Home remedy for stomach ache)
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার কারণই, পেটে ব্যথা হওয়ার সাধারণ কারণ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি আজকাল মানুষ তেল, মশলা, চর্বি যুক্ত খাবার বেশি খেয়ে থাকেন। যার কারণে প্রায়শই মানুষ গ্যাস অম্বলের সমস্যায় ভুগে থাকেন।
তাহলে উপায় কি? Pete betha hole ki korbo ? এক্ষেত্রে ঘরোয়া উপাদানই কার্যকর বিকল্প হিসাবে সেরা উপায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপাদান গুলি কি কি-
Read more: বাতের ব্যথা ? মুক্তি পেতে ৯ টি ঘরোয়া টিপস
1. আদা (Ginger) পেটের ব্যথা উপশম করে
পেট ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে আদা খেতে পারেন। এতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা পেট ব্যথা এবং বদহজমের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
এর জন্য এক টুকরো আদা গ্রেট করে এক গ্লাস জলে মিশিয়ে নিন। কিছুক্ষণ ফুটতে দিন এরপর ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খান। পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায় হিসাবে এটি একটি দুর্দান্ত Remedy।
Read more: নিয়মিত হাঁটু ব্যথার ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ থাকুন
2. পেটে ব্যথা কমাতে মৌরি (Fennel)
মৌরি শুধু পেটের ব্যথা দূর করে না, হজমশক্তিও উন্নত করে। মৌরিতে উপস্থিত গুণাবলী পাকস্থলীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি গ্যাস এবং পেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
তবে কিভাবে খাবেন মৌরি? এক কাপ জলে এক চামচ মৌরি যোগ করুন এবং কিছুক্ষণ ফুটতে দিন। এরপর মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে খেয়ে ফেলুন। দিনে দুই থেকে তিনবার এটি খেলে পেটের ব্যথা থেকে দারুণ উপশম হবে। দ্রুত পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ হিসাবে মৌরির বিকল্প নেই।
3. পেট ব্যথা কমাতে সহায়ক পুদিনা (Mint)
পুদিনা পেট ব্যথা ও গ্যাস অম্বলের মত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি হজমশক্তিরও উন্নতি ঘটায়।
Pete betha hole ki korbo ? এর জন্য, এক কাপ জলে কয়েকটি পুদিনা পাতা দিয়ে ১০ মিনিটের জন্য ফুটিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। মিশ্রণটিকে চায়ের মতো দিনে ২-৩ বার পান করুন।
Read more: জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের লক্ষণ এবং চিকিৎসা
4. পেট ব্যথা কমাতে জোয়ানের (Joan) বিকল্প নেই
মহৌষধির গুণে ভরপুর জোয়ানে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেটে বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তির কার্যকর উপায় হিসাবে পরিচিত।
এক্ষেত্রে এক চামচ জোয়ান সরাসরি খাওয়া যেতে পারে বা একগ্লাস জলে জোয়ান ও নুন মিশিয়ে খেতে পারেন। রোজ রাতে ঘুমানোর আগে এই পদ্ধতিতে জোয়ান খেলে গ্যাস-অ্যাসিডিটি থেকেও অচিরেই মিলবে মুক্তি।
5. পেট ব্যথা কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল (Water) খেতে ভুলবেন না
আমরা সবাই জানি যে জল আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে। অনেকসময় শরীর ডিহাইড্রেটেড হওয়ার ফলে আমাদের বমি ও ডায়রিয়ার কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। কিংবা আমাদের পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলেও অনেকসময় তীব্র পেটে ব্যথা অনুভব হয়।
সেক্ষেত্রে আমাদের নিত্যডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমানে জল খাওয়া খুবই জরুরি। পাশাপাশি লবণজল আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করতে পারে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সারাদিনে অন্তত ৩-৪ লিটার জল খাওয়া উচিত।
Read more: আর্থ্রাইটিস কি, রোগের লক্ষণ এবং ব্যথা কমানোর চিকিৎসা
6. পেটের ব্যথা উপশম করতে জিরের (Cumin) জুড়ি মেলা ভার
পেটে ব্যথা কমানোর ওষুধ হিসাবে জিরের জুড়ি মেলা ভার। জিরেকে সাধারণত আমরা মশলা হিসাবেই বেশি ব্যবহার করে থাকি। তবে জানেন কি? আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা পেটে ব্যথার চটজলদি উপায় হিসাবে জিরেকেই বেছে নেন।
শুধু তাই নয়, এই মশলার গুণে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপার মতো সমস্যারও Effortless relief দিতে পারে। তাই পেটের সমস্যায় ভাজা জিরে দিনে দু- তিনবার চিবিয়ে খেতে পারেন বা জিরে ভেজানো জলও খেতে পারেন।
Read more: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের তালিকা
পেটে ব্যথা হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়-
- দুগ্ধজাত খাবার (যেমন, পনির, আইসক্রিম এবং দুধ)
- আচার কিংবা লেবুর মতো টক জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়।
- যদি পেটে ব্যথার কারণে বমি হয় তবে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য কিছু না খাওয়া উচিত এবং পরে অল্প পরিমাণে হালকা খাবার খাওয়া উচিত যাতে তা সহজেই হজম হয়।
- ভারী খাবার যেমন গমের রুটি কিংবা গম জাতীয় যেকোন খাবার খাওয়া উচিত নয়।
- বাদাম এবং বীজ
- সবজি যা অতিরিক্ত গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে (যেমন, বাঁধাকপি, ফুলকপি এবং পেঁয়াজ)
- উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার (যেমন, কাঁচা শাকসবজি এবং পুরো শস্য)
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. মানসিক চাপ কি পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে?
A. অনিয়মিত জীবনযাত্রার ফলে আমরা প্রায়শই স্ট্রেস, উদ্বেগজনিত অসুখে ভুগি। যার প্রভাব আমাদের খাওয়া দাওয়ার উপরও পরে। যার অন্যতম কারণ পেটে ব্যথা।
Q. স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা কিভাবে পেট ভালো রাখতে পারি?
A. নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাসে সামান্য কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি। তার মধ্যে অন্যতম হল পেট সুস্থ রাখা। তারজন্য ডায়েটে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরি। সেইসাথে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করাও বিশেষ দরকার।
Q. পেট ব্যথায় কি করা উচিত?
A. ১। পেটে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে প্রচুর পরিমানে জল খাওয়া উচিত। ২। বাইরের ফাস্টফুডের পরিবর্তে বাড়িতে বানানো খাবার খাওয়া উচিত। ৩। পর্যাপ্ত সময় ঘুমানো ও মানসিক স্ট্রেস থেকে দূরে থাকা উচিত। ৪। অ্যালকোহল জাতীয় নেশার থেকে নিজেকে দূরে রাখা উচিত।
Q. পেটে ব্যথায় কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
A. পেটে ব্যথা যদি ১ সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হয় কিংবা ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি তেমন স্বস্তি না মেলে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাছারাও ব্যথা যদি তীব্র হয় এবং সেইসাথে যদি বমি ও পেটে ফোলাভাব বেশি অনুভূত হয় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন।