সূত্র :- i.ytimg . com
সাধারণ মরসুমের পরিবর্তনের কারণে টনসিল অথবা টনসিলাইটিসের সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যাটি কম বেশি সবার হয়ে থাকে। তবে টনসিল হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। টনসিল হলে গলার দুইপাশে ফুলে যায় এবং মুখে ব্যথা হয়। এই সমস্যার জন্য জ্বরও আসতে হবে। টনসিল খুব বড় সমস্যা না হলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে ব্যথা আরও বাড়তে পারে অথবা পুঁজ সৃষ্টি হলে মারাত্মক আকার নিতে পারে। তাই প্রয়োজন সঠিক সময়ে টনসিলের চিকিৎসা করানো।
প্রথম অবস্থায় কিছু ঘরোয়া টোটকায় এটি কমানো যায়। তবে টনসিলের চিকিৎসা করানোর আগে আপনার জেনে নেওয়া টনসিল কেন হয় অথবা এই সমস্যার লক্ষণগুলি কি? আসুন তাহলে আজকের এই নিবন্ধ থেকে আমরা জেনে নিই টনসিলের কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে টনসিলের চিকিৎসা করানোর টিপস।
আরও পড়ুনঃ এলার্জি জাতীয় খাবার: এই খাবারগুলি খেলে এলার্জি হতে পারে
গলায় টনসিল কেন হয়?
টনসিলাইটিস হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে টনসিল দুর্বল হয়ে পড়লে টনসিলাইটিসের সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়াও ইমিউনিটি দুর্বল হলে, প্রচুর গরম এবং মশলাদার খাবার খেলে, বেশি ঠাণ্ডা খেলে অথবা ঠাণ্ডা লাগলে, মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার না হলে টনসিলাইটিস হতে পারে। এছাড়া সর্দি- কাশি অথবা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণেও টনসিল হয়।
আরও পড়ুনঃ আর্থ্রাইটিস কি, রোগের লক্ষণ এবং ব্যথা কমানোর চিকিৎসা
টনসিলের লক্ষণগুলি কি কি?
টনসিল হয়েছে কিনা তা চেনার উপায় খুব সহজ। কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে যা দেখলেই বোঝা যায় টনসিলের সমস্যা। নীচে এই লক্ষণগুলি দেখলে বুঝবেন টনসিলের সমস্যা হয়েছে।
- গলা ব্যথা।
- গলার দুপাশে ফুলে যাওয়া।
- গলায় ব্যথা সহ জ্বর।
- নীচের চোয়াল ফুলে যাওয়া।
- গলার চারপাশে লাল ফোলাভাব।
- গলাতে ব্যথাজনক ফোস্কা
- গলার স্বর পরিবর্তন।
- মুখে বাজে গন্ধ।
- গলা ব্যথার সঙ্গে খাবার খেতে অসুবিধা।
আরও পড়ুনঃ টিউমার চিকিৎসা: ব্রেইন টিউমার কি, লক্ষণ এবং চিকিৎসা
ঘরোয়া পদ্ধতিতে টনসিলের চিকিৎসা :-
-
টনসিলের চিকিৎসায় তুলসী পাতাঃ
সূত্রঃ- Instagram
তুলসী পাতায় অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণ থাকায় এটি টনসিলের চিকিৎসার জন্য কার্যকর। এটি গলা ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমিয়ে টনসিল হ্রাস করতে সহায়তা করে।
দেড় কাপ জলে ১২-১৩ টি পাতা সেদ্ধ করুন। এবার তুলসী পাতার জলটি ছেঁকে নিয়ে তার মধ্যে একটি লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। তুলসী ও লেবুর জলটি দুই সপ্তাহের জন্য দিনে তিনবার খেলে টনসিল পুরোপুরি ভাবে দূর হতে পারে।
সারকথাঃ
তুলসী পাতা সেদ্ধ করে মরিচ মিশিয়ে নিয়মিত সেই জল পান করলে টনসিল হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।
-
টনসিলের চিকিৎসায় মেথিঃ
সূত্রঃ- Instagram
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেথিতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা টনসিল চিকিৎসার জন্য একটি অসাধারণ ঘরোয়া উপাদান। এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রামন সঙ্গে লড়াই করে, যা টনসিল সমস্যার জন্য দায়ী। মেথিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি আপনাকে ব্যথা এবং প্রদাহ থেকে মুক্তি দেবে।
দুই এবং তিন কাপ জলে দুই টেবিল চামচ মেথি বীজ মিশিয়ে ৩০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার একটি পাত্রে ছেঁকে ঠাণ্ডা করে নিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধরে ওই জলে গার্গেল করুন। প্রতিদিন দুই বার করলে টনসিল ফোলা কমে যাবে।
আরও পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফোস্কা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
-
টনসিলের চিকিৎসায় লবণ জলঃ
আমরা সবাই গলা ব্যথা বা গলার সমস্যা হলে উষ্ণ লবণ জল কুলকুচি করি। এটি গলার যেকোনো সমস্যায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে বলা যায়। পাশাপাশি টনসিল চিকিৎসার জন্য এটি অসাধারণ ঘরোয়া চিকিৎসা। লবণ ব্যাকটেরিয়া হ্রাস করে গলা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। দিনে যতবার সম্ভব উষ্ণ গরম জলে গার্গেল করুন টনসিল বেদনা থেকে মুক্তি পেতে।
সারকথাঃ
উষ্ণ গরম জলে লবণ দিয়ে কুলকুচি করলে, লবণ চটজলদি প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে।
-
টনসিলের চিকিৎসায় হলুদঃ
সূত্রঃ– Instagram
হলুদ এর শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টিসেপটিক গুণগুলির কারণে, টনসিলাইটিসের সংক্রমণ থেকেও লড়াই করতে পারে। টনসিল কম করতে এক কাপ সামান্য হালকা উষ্ণ গরম জলে দেড় চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং দেড় চামচ লবণ মিশিয়ে সকাল এবং বিকেলে গার্গেল করলে প্রদাহ এবং ঘা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে করলে ভালো কাজ দেবে।
সারকথাঃ
গরম দুধে এক টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং সামান্য কালো মরিচ মিশিয়ে রাতে খেলে টনসিল নিরাময় হয়।
আরও পড়ুনঃ ক্যান্সারের লক্ষণ: কয়েকটি লক্ষণ যা ক্যান্সার রোগের কারণ
-
টনসিল চিকিৎসায় দারচিনিঃ
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ হওয়ায় দারুচিনি টনসিলের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিকে দমন করতে সহায়তা করে। টনসিলের ব্যথা নিরাময়ের জন্য এক গ্লাস উষ্ণ গরম জলে এক টেবিল চামচ দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এবং এই মিশ্রণে দুই টেবিল চামচ মধু মিশ্রিত করুন। গরম থাকাকালীন অল্প অল্প করে পান করুন। এক সপ্তাহের জন্য দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন উপকৃত হবে।
সারকথাঃ
দারচিনি টনসিলের ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি ফোলাভাব, ব্যথা এবং প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনঃ কিডনি রোগের প্রতিকার: কিডনি রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার
টনসিলের লক্ষণগুলি বুঝতে পারলে প্রথম অবস্থায় এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে টনসিলের চিকিৎসা করলে আশা করি উপকৃত হবেন। যেকোনো সমস্যায়ই ছোট থেকে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। তবে বড় আকার ধারণ করলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে চলুন। ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি এই টোটকাগুলি অনুশীলন করতে পারেন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রঃ টনসিল কেন হয়?
উঃ বেশি ঠাণ্ডা লাগলে, ইমিউনিটি দুর্বল হলে অথবা ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে টনসিল হয়।
প্রঃ টনসিল এই ঘরোয়া টোটকায় কি উপকার পাওয়া সম্ভব?
উঃ প্রথম অবস্থায় টনসিলের সমস্যা আছে বুঝতে পারলে এই ঘরোয়া টোটকায় টনসিলের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন। তবে টনসিল বড় হয়ে গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রঃ টনসিল চিকিৎসায় দারচিনি কি কার্যকর?
উঃ হ্যাঁ, টনসিল চিকিৎসায় দারচিনি ভালো কাজ করে।