সৌন্দর্যচর্চার ভালো একটি মাধ্যম হল ফেসিয়াল। ত্বকের সৌন্দর্য ও তারুণ্য বজায় রাখতে ফেসিয়াল খুব উপকারি। ত্বকের নানা ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তিও মেলে। কিন্তু তার জন্য সঠিক ত্বকের জন্য উপযুক্ত ফেসিয়াল জানা প্রয়োজন। কারণ ভুল ফেসিয়াল ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক। ত্বকের জন্য ফেসিয়াল খুবই উপকারি।
ফেসিয়াল (Facial)
ফেসিয়াল হল একটি ত্বকের চিকিৎসা যা ছিদ্রগুলি পরিষ্কার করে, মৃত ত্বকের কোষকে দূর করে ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনে । এটি আপনার ত্বককে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে। ফেসিয়াল ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল করে তোলে।
আরো পড়ুন। বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
ফেসিয়াল করা প্রয়োজন কেন? (Why Facial is Important)
ফেসিয়াল আমাদের সৌন্দর্যচর্চার চিকিৎসা যা একাধিক পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত। বিউটি পার্লারে এটি ত্বকের রূপচর্চা করে থাকে।
অনেকেই মনে করেন ফেসিয়াল করা মানে শুধুমাত্র টাকা খরচ করা। এটা ভাবা একদমই ভুল। কারণ এটি আপনার ত্বকে ভালোও হতে পারে। কারণ বিবর্ণ ত্বকে ফেসিয়াল উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
আপনার ত্বকে যদি ফ্যাকাসে, ব্রণ বা অন্যান্য সমস্যা থাকে তাহলে সুস্থ ত্বক পেতে ফেসিয়াল খুব জরুরী। এটি ত্বকে গ্লোয়িং করার পাশাপাশি ত্বক ফ্রেশ রাখে।
আরো পড়ুন। ছোট চুলের উপকারিতাঃ ছোট চুল রাখার সুবিধা
ফেসিয়ালের পদ্ধতিগুলি কি কি? (What is the Procedure for doing Facial)
1. পরিষ্কার করা
ফেসিয়ালের প্রথম ধাপ হল মুখ পরিষ্কার করা। মুখের মধ্যে থাকা ময়লা প্রথম ধাপে তুলে ফেলতে হবে। গরম কাল হলে ফেস ওয়াশ আর শীতকাল হলে ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নেবেন। শীতকালে ক্লিনজার ব্যবহার করলে আপনার ত্বক শুষ্ক হবে না।
2. এক্সফোলিয়েট করা
দ্বিতীয় ধাপ হল এক্সফোলিয়েশন। মৃত ত্বকের কোষগুলিকে পরিষ্কারের জন্য আমরা এক্সফোলিয়েট করে থাকি। এক্সফোলিয়েটিং ক্রিম বা স্ক্রাবার দিয়ে সরিয়ে ফেলতে হবে শুষ্ক ত্বককে।
3. ম্যাসাজ
তৃতীয় ধাপ হল ম্যাসাজ। ম্যাসাজ হল ফেসিয়ালের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ম্যাসাজের ফলে আপনার ত্বকের রক্ত চলাচল ভালো হবে। ফলে আপবার ত্বক আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।
4. মাস্ক বা মুখে প্যাক লাগানো
চতুর্থ ধাপ হল মাস্ক লাগানো। মাস্ক আপনার ত্বককে করে তুলে উজ্জলময়। আপনার ত্বকের হাইড্রেটকে ধরে রাখবে মাস্ক। সাথে আপনার ত্বকের দাগ দূর করবে। আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করার জন্য আপনি বাড়িতেও যেকোনো মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
5. টোনার
পঞ্চম এবং শেষ ধাপ হল টোনার ব্যবহার করা। মাস্ক তুলে অবশ্যই টোনার লাগিয়ে নেবেন। ফেসিয়াল করে রোদের মধ্যে বাইরে না বেরোনোই ভালো। তবে যদি রদের মধ্যে বেরতেই হয় তবে সান্সক্রিম মেখে বেরবেন। আর সবচেয়ে ভালো রাতের বেলাতে ফেসিয়াল করা। রাতের বেলা করে ঘুমনোর ফলে আপনার ত্বক আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।
আরো পড়ুন। জেনে রাখুন কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতা
১০ টি অসাধারণ ফেসিয়াল করার উপকারিতা (Benefits of doing Facial)
1. ফেসিয়াল ত্বক পরিষ্কার রাখেঃ
একটি উপযুক্ত ফেসিয়াল ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ত্বক পরিষ্কার করে তোলে। এটি পরিবেশের দূষণের কারণে তৈলাক্ত, ময়লা এবং বিষাক্ততা দূর করে ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে তোলে।
2. ব্রণ এবং দাগ রিমুভঃ
ভালো ফেসিয়াল ত্বকের দাগ ও ব্রণ রিমুভ করে। এছাড়াও ফেসিয়ালের সময় যে স্টিম করা হয়, লোমকূপে জমে থাকা ময়লা অনায়াসে পরিষ্কার করা হয়। যার ফলে ব্রণ এবং দাগ নিয়ন্ত্রণে আসে।
3. বলিরেখা কমায়ঃ
অ্যান্টি এজেনিং ফেসিয়াল ত্বকের বলিরেখা কমায়। মুহূর্তের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন এবং অক্সিজেন স্বাভাবিক রাখতে অ্যান্টি এজেনিং ক্রিম মাসাজ করুন।
আরো পড়ুন। ঘরে বসে করে নিন পাকা চুলের চিকিৎসা
4. রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করেঃ
স্টাডিজে বলা হয়, মুখে মাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ত্বকে ফেসিয়াল করার ফলে কোষগুলিও অক্সিজেন এবং পুষ্টির সঙ্গে রক্ত বহন করে।
5. স্ট্রেস কমায়ঃ
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে মুখের মাসাজ স্নায়ুতন্ত্রের চেয়ে বেশি সক্রিয়, যা স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের প্রেসার পয়েন্ট থাকে যা বিভিন্ন সিস্টমের সঙ্গে জড়িত। এই প্রেসার পয়েন্টে যখন ফেসিয়াল মাসাজ করা হয় তখন আমদের শরীরের প্রতিক্রিয়া প্রভাব ফেলে। তাই ফেসিয়াল মাসাজ আমাদের শরীরের স্ট্রেস কমায়।
6. ব্ল্যাকহেডস দূর করেঃ
ফেসিয়াল করার উপকারিতা মধ্যে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হল ব্ল্যাকহেডস দূর করা। মাসে অন্তত একবার ত্বকের সঙ্গে মানানসই ফেসিয়াল করলে দাগছোপ সরে যায়।
আরো পড়ুন। সৌন্দর্যচর্চায় পাকা টমেটোর উপকারিতা জানলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন
7. ফেসিয়াল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখেঃ
প্রাকৃতিকগত কারণে ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে ত্বক শুষ্ক হওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই প্রতিদিন ত্বক সঠিকভাবে ময়শ্চারাইজ করা গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক ময়শ্চারাইজ করার ভালো বিকল্প ফেসিয়াল। ফেসিয়াল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
8. নরম এবং মসৃণ ত্বকঃ
এটি শুধুমাত্র ত্বকের ভালো লুকস দেয় না বরং ত্বকে ভালো অনুভুতি দেয়। যে সমস্ত পণ্যগুলি আপনার চিকিৎসা সময় প্রয়োগ করা হয়েছে যেমন সিরাম, ময়শ্চারাইজার এবং মাস্ক এবং বিশেষ করে, কোলাজেন মাস্কগুলি – আপনার ত্বকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ত্বক নরম ও মসৃণ করে তোলে।
9. গ্লোয়িং ত্বকঃ
যারা নিয়মমাফিক ফেসিয়াল করেন। তারা একটি গ্লোয়িং ত্বকের অধিকারী হন। তাই মাসে ১ বার ফেসিয়াল করলে ত্বক চকচকে হয়ে উঠবে।
আরো পড়ুন। চুল পাকার কারণ এবং চুল পাকা থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন
10. স্ক্রিন টোনঃ
আপনি ত্বকের ডার্ক প্যাচ নিয়ে খুব চিন্তিত ? এগুলি মেলানিন ছাড়া আর কিছুই নয়। বয়ঃসন্ধিকালীন, খুব বেশি সূর্যের এক্সপোজার এবং হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে অনেক মেলানিন উৎপাদন হতে পারে, যার ফলে গাঢ় দাগ হয়। এই ক্ষেত্রে ফেসিয়াল ভালো বিকল্প।
ফেসিয়াল করার উপকারিতা জানা হয়ে গেল আশা করি, এবার আপনি নিশ্চিন্ত মনে ফেসিয়াল করতে পারবেন। যদি বাড়িতে প্রাকৃতিক উপায়ে করতে পারেন তাহলে ভালো কাজ দেবে।
Key Point: প্রাকৃতিক উপাদানে ফেসিয়ালের কোন সাইড এফেক্ট নেই।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. কতদিনের মধ্যে একজনের ফেসিয়াল করা উচিত?
A. প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে একবার ফেসিয়াল করা উচিত।
Q. ফেসিয়ালের প্রভাব মুখে কতদিন থাকে?
A. ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা।
Q. কোন ধরণের ফেসিয়াল সবচেয়ে ভাল?
A. হোসেন পরামর্শ দেয়, “আপনার যদি স্বাভাবিক বা শুষ্ক ত্বক থাকে তবে আদর্শভাবে ক্লাসিক ফেসিয়াল বা উদ্ভিদ স্টেম ফেসিয়াল বেছে নিন” ক্লাসিক ফেসিয়াল: ক্লাসিক সেলুন ফেসিয়াল ক্লিনজিং, টোনিং এবং ম্যাসেজ (ম্যানুয়ালি বা গ্যাজেটের সাহায্যে সম্পন্ন করা), মাস্ক এবং সুরক্ষা কভারেজ অন্তর্ভুক্ত।
Q. ফেসিয়ালের পরে আমাদের কি কি করা উচিত নয়?
A. ১/ সেই রাতে মুখ ধোবেন না। ২/ মেকআপ করবেন না। ৩/ কয়েকদিনের জন্য মুখে স্ক্রাব করবেন না। ৪/ রোদ থেকে দূরে থাকুন। ৫/ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ৬/ প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন।