আমাদের স্বাধীনতার পিছনে যেমন হাজার হাজার বলিদান রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে প্রচুর মানুষের অবদান। কেউ কেউ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে সরাসরি আবার কেউ তার লেখার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘকাল লড়াই করে গেছেন। তারা প্রতেকেই আমাদের ভারতের কিংবদন্তি। তারা আমাদের বাংলার গর্ব। তারা আজ আমাদের মধ্যে জীবিত না থাকলে রয়েছে আমাদের প্রত্যেকের মনের অন্তরে। তার সবাই চিরস্মরণীয়। এরকমই কয়েকজন মহান কিংবদন্তি নিয়ে আমাদের আজকের নিবন্ধ। আজকের এই পেজে আমরা তাদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করব। আসুন তাহলে জেনে নিই বাংলার কিংবদন্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী।
বাংলার কিংবদন্তিঃ
রাজা রামমোহন রায়ঃ
রাজা রামমোহন রায় হলেন এমন একজন কিংবদন্তি যাকে বাংলার নবজাগরণের দূত অথবা এক কথায় বলা যায় বাংলার রত্ন। দুই শতাব্দী ধরে বাংলায় রয়েছে তার বহু অবদান। ২২ মে ১৭৭২ সাল, এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলার এই কিংবদন্তি। তার পিতা ছিলেন (রামকান্ত ) একজন ধার্মিক স্বভাবের মানুষ। যিনি তার বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন ঈশ্বরের প্রার্থনায়।
রাজা রাম মোহন রায় ভারতীয় রেনেসাঁর জনক হিসাবে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মহান বিদ্বান পাশাপাশি একজন স্বাধীন চিন্তাবিদ। সামাজিক সংস্কারের বিরুদ্ধে এবং মানবতার প্রতি উদ্বেগের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে ভারতীয়দের জন্য এক নতুন জীবনের পথ খুলেছিলেন।
শৈশবে তিনি বাংলা, সংস্কৃত , ফারসি ও আরবি ছাড়া বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তিনি তার শেষ জীবন পর্যন্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। স্বামীর শব দাহের সঙ্গে বিধবা স্ত্রীকে জীবন্ত দাহ করানোর প্রথা নিজের চোখে দেখেছিলেন এবং সেদিন থেকে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে অনেক চেষ্টা করেছেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে সতীদাহ প্রথা বিরুদ্ধে নিজের মতামত প্রকাশ করেন এবং অবশেষে ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি আইন পাস করে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেন।
বলাই যায় বাংলার কিংবদন্তি রাজা রামমোহন রায় শিক্ষার ব্যবস্থার এক নতুন ধারা জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষাই মানুষের মনে কুসংস্কারের ছায়া ঘুচিয়ে দিতে পারে। তাই নিজের তহবিলে কলকাতায় ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
তার সময়কালে সরকার শুধুমাত্র সংস্কৃত স্কুল চালু করতেন তবে তিনি এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করেছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন ভারতীয়দের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমান তালে চলতে হলে শুধু সংস্কৃত ভাষা নয় বরং সংস্কৃতের পাশাপাশি ভিন্ন ভাষায় জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য তিনি ডেভিড হেয়ারের সাথে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮২৮ সালে আর্থ-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্রহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা প্রথম ভারতীয় সামাজিক-ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম। তিনি সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছিলেন। ১৯৩১ সালে মুঘল সম্রাট তাকে ‘রাজা’ উপাধি দিয়েছিলেন। বিষদ জানুন– রাজা রামমোহন রায়
রাণী রাসমণিঃ
আমাদের বাংলার ইতিহসে কিছু সাহসী নারী ছিলেন যারা বাংলায় অনেক অবদান রেখে গেছেন। ঠিক সেরকমই একজন নারী ছিলেন রাণী রাসমণি যিনি বাংলায় এক অবিশ্বাস্য চিহ্ন রেখে গেছেন। অসহায় মানুষদের বিপদে দেখে যিনি সর্বদা ঝাঁপিয়ে পড়েন পাশাপাশি গোটা জীবন মানুষের সেবা করে গেছেন। তিনি যেমন ছিলেন দয়াময়ী তেমনি ছিলেন ঈশ্বরপ্রেমী।
উত্তর চব্বিশ পরগনায় ১৭৯৩ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর হালিশহরে কোণা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রানী রাসমণি। রাসমণি বাবার নাম ছিল হরেকৃষ্ণ দাশ এবং মা প্রিয়া দাশি। সাত বছর বয়সে তার মা মারা যান এবং এগারো বছর বয়সে তার তাকে এক জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাসের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তিনি তার স্বামীকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতেন। তারা দুইজনেই ছিল দয়ালু প্রকৃতির মানুষ। তাই তারা দুইজন মিলে সমাজ সেবা এবং অসহায় মানুষদের সেবা করে গেছেন।
গঙ্গায় মাছ ধরার জন্য জেলেদের কাছ থেকে ইংরেজরা কর নিত। বাংলার কিংবদন্তি রানী রাসমণি এই অন্যায় বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং ইংরেজ সরকার বাধ্য হয়ে কর তুলে নেন। সেই সময় বাংলাদেশের মকিমপুরের মানুষদের প্রতি ইংরেজ সাহেবদের জোর করে নীলচাষ বন্ধ করেন।
কিংবদন্তি রানী রাসমণির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দির, যা তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মা কালীর ভক্ত। একদিন অন্নপূর্ণা ও বিশ্বনাথের পূজা দেওয়ার জন্য তিনি কাশিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং যাওয়ার ঠিক আগের দিন রাতে মা ভবতারিণী তাকে স্বপ্নে বলেন গঙ্গার তীরে মন্দির প্রতিষ্ঠিত করতে এবং সেখান থেকেই তিনি রাসমণির পূজা গ্রহণ করবেন। তাই ১৮৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত করলেন গঙ্গার ধারে দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দির।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তাদের বিপদের দিনে। বাংলায় তার প্রচুর অবদান রয়েছে দক্ষিণেশ্বরে মন্দির ছাড়াও তিনি তৈরি করেছেন আহিরীটোলা স্নানঘাট ও নিমতলা স্নানঘাট। এছাড়াও বাবুঘাট বাঁধাতে সহায়তা করেন। বিস্তারিত জানতে পড়ুন – রানী রাসমণি
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরঃ
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এমন এক ব্যক্তি যিনি তার চারপাশের অনেকের জীবনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি মেধাবী ছিলেন এবং প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। নি নিজের চিন্তাভাবনা, ধারণা এবং জ্ঞান অন্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য লেখা শুরু করেন। তিনি একজন উজ্জ্বল লেখক হিসাবে প্রমাণিত। তিনি বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছিলেন যা সারা বিশ্বের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করে।
১৮২০ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পশ্চিমবাংলায় মেদিনীপুর জেলায় বীরসিংহ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা ভগবতী দেবী। তিনি খুব দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। গ্যাস প্রদীপের সামর্থ্য না তিনি রাস্তার ল্যাম্পের নীচে বসে পড়াশুনো করেছেন। তার বয়সী অন্যান্য ছেলেরা দিনের বেশিরভাগ অংশ খেলাধুলায় ব্যয় করলেও তাকে বইয়ে ডুবে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তিনি পড়াশুনো এতোই ভালো ছিল যে ভালো নম্বরের সঙ্গে স্কলারশিপ অর্জন করেছিলেন। তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৪১ সালে সংস্কৃত নিয়ে পাস করেন। আরও জানতে পড়ুন – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
পরিবারকে সাহায্য জন্য কিংবদন্তি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে একটি পার্ট টাইম চাকরিতে করতেন। পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে সংস্কৃতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় এক নতুন সংস্কার নিয়ে এসেছিলেন এবং ১৮৫৬ সালে কলকাতায় বরিশায় উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
বিদ্যাসাগর ভারতীয় সমাজে নারীদের অবস্থার উন্নতির জন্য কঠোর লড়াই করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মেয়েদের শিক্ষিত করে কাজ করতে দেওয়া উচিত। সমাজে বিশেষত বিধবাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হত এবং তাদের সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া হত। বিদ্যাসাগর বিধবাদের অবস্থার উন্নতির জন্য লড়াই করেছেন এবংবিদ্যাসাগর বিধবা পুনরায় বিবাহের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি আবেদন করেছিলেন। হিন্দু রীতিনীতিের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য তিনি সমাজের তীব্র সমালোচনা পেয়েছিলেন। ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন চালু করেন।
রামকৃষ্ণ:
“তুমি যদি পাগল হতে চাওয় তবে তা সাংসারিক বস্তুর উপর নয় বরং ঈশ্বরের প্রেমে পাগল হন”
রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের এই উক্তি তার জীবনকে বর্ণনা করেছে যথাযথভাবে। তিনি উনিশ শতকের নবজাগরণের একজন বাঙালি কিংবদন্তি ছিলেন। যিনি বাংলার নবজাগরণে পঞ্চমুখ ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৬ সাল, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কামারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। তিনি গদাধর চট্টোপাধ্যায় হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং মা ছিলেন চন্দ্রমণি দেবী। তিনি যখন গর্ভে ছিলেন তার বাবা এবং মা বুঝেছিলেন তিনি কোনও সাধারণ শিশু হবে না।
শৈশব থেকেই রামকৃষ্ণ দেব পড়াশুনোর চেয়ে ধর্মীয় এবং উপাসনার প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন। ছোট থেকে দেবদেবীর মূর্তি আঁকতেন এবং রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ এবং অন্যান্য পবিত্র সাহিত্য পাঠ করতেন। পরবর্তীকালে তিনি সংস্কৃত পড়ানোর জন্য স্কুল খোলেন পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শৈশবকালেই তিনি রহস্যময় ও অলৌকিক শক্তির অভিজ্ঞতা অর্জন শুরু করেছিলেন।
রামকৃষ্ণের মতে নারী মানেই জগজ্জননীর রূপ। তাই তার স্ত্রী সারদামণিকে কালীর আসনে মায়ের রূপে পূজা করেন। ১৮৫৬ সালে রামকৃষ্ণের বড়ভাই রামকুমার মারা গেলে তিনি কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দিরে পুরোহিতের পদ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি দেবতাকে সাজাতেন। কথিত আছে পবিত্রতা এবং অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হলেন গদাধর। যার জন্য রানী রাসমণির জামাই মথুরবাবু তাকে রামকৃষ্ণ নাম দেন।
রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন এবং মহিলা সাধু এবং ভৈরবী ব্রাহ্মণীর কাছ তন্ত্র শিখেছেন এবং ৬৪ টি সাধনা সম্পূর্ণ করেছিলেন। এছাড়াও তোতাপুরী নামক জনৈক পরিব্রাজক বৈদান্তিক সন্ন্যাসীর নিকট সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। রামকৃষ্ণ দেব দেখেছিলেন যে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য তার দেহে মিলিত হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন হিন্দু, মুসলিম বা খ্রিস্টান সব ধর্মই এক ঈশ্বরের দিকে পরিচালিত হয়। তার সবচেয়ে কাছের শিষ্যে স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন এবং রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠা করে সমাজ সেবায় নিবেদিত করে। সম্পূর্ণ জীবনী জানুন – রামকৃষ্ণ
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ঃ
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এমন একজন কিংবদন্তি ছিলেন যিনি দেশের মহান লেখকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একজন কবি আবার একজন লেখক এবং সাংবাদিক। ভারতের জাতীয় সংগীত বন্দে মাতরম তার লেখা বহু বছর আগে। আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে এই কিংব্দন্তির স্থান রয়েছে। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে জুন নৈহাটি শহরের কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেদিনীপুরের একজন ডেপুটি কালেক্টর এবং মা দুর্গাসুন্দরী দেবী। ছোট থেকেই পড়াশুনোয় আগ্রহী ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দু’জন স্নাতকের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল, তার মধ্যে তিনি একজন ছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সরকারী চাকরি করতেন বলে সরাসরি কোনও গণআন্দোলনে অংশ নিতে পারেনি। এর জন্য তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ নিয়েছিলেন। তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলি হল দুর্গেশনন্দিনী, কাপালকুণ্ডলা, মৃণালিনীচন্দ্র, চন্দ্রশেখর, আনন্দমঠ ইত্যাদি। তার রচিত লোকসাহিত্য হল লোক রহস্য,বিবিধ প্রবন্ধ, সীতারাম, কৃষ্ণ চরিত্র,দেবী চৌধুরানী, কমলাকান্ত, মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত ইত্যাদি। বিস্তারিত জানুন – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
জগদীশ চন্দ্র বসুঃ
একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী হলেন জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি উদ্ভিদবিদ, পদার্থবিদ এবং জীববিজ্ঞানী। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন উদ্ভিদের প্রাণ রয়েছে এবং উত্তেজনায় সাড়া দেয়। ৩০ শে নভেম্বর ১৮৫৮ সাল ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি অঞ্চলের ময়মনসিংহে বাংলার কিংবদন্তি জগদীশ চন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন ভগবান চন্দ্র বসু এবং মা ছিলেন সুন্দরী দেবী। জগদীশ চন্দ্র বসু তার প্রাথমিক শিক্ষার সূত্রপাত করেছিলেন বাংলার গ্রামের স্কুলে মাধ্যমে । সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
জগদীশ চন্দ্র বসু বাংলার এমন এক কিংবদন্তি যিনি অবিশ্বাস্য জিনিস আবিষ্কার করে গেছেন। তিনি একজন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের। কর্মরত অবস্থায় তাকে বেতন দেওয়া হত ব্রিটিশ অধ্যাপকদের থেকে কম। তাই তিনি তার প্রতিবাদে তিন বছর তিনি বিনা বেতনে শিক্ষা দান করেছেন এবং দীর্ঘকাল প্রতীবাদের পর তাকে ব্রিটিশ অধ্যাপকদের সমতুল্য বেতন দেওয়া হত। এইরকমই ছিল তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
পরীক্ষানিরীক্ষা সময়কালীন তাকে অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। শত বাধা থাকলেও তিনি বিজ্ঞান সাধনার প্রতি হার মানে নি। অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করেন এবং ৫মিমি থেকে স্বল্পতম রেডিও-তরঙ্গ তরঙ্গ আবিষ্কার করেন। উদ্ভিদের বৃদ্ধি পরিমাপের জন্য ক্রিস্কোগ্রাফ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তথ্য আবিষ্কার করেন। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত তার সবচেয়ে বড় নিদর্শন হল বসু বিজ্ঞান মন্দির। আরও পড়ুন – জগদীশ চন্দ্র বসু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের বাংলার একজন কিংবদন্তি তা আর বলার বাকি রাখে না। তিনি আমাদের বাংলার গর্ব। একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক, কবি ও দার্শনিক যিনি নোবেল পুরস্কার জয়লাভ করেছেন। যিনি তার লেখার মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি বাংলার সাহিত্য এবং সংগীতের এক নতুন ধারা আবিষ্কার করেছেন। যার জন্য তাকে বিশ্বকবি বলে অভিহিত করা হয়।
৭ মে ১৮৬১ সাল, কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদা সুন্দরী দেবী। তিনি শৈশবে বিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জন করতে চাননি বরং গৃহে শিক্ষক রেখে পড়াশুনো করেছেন। তিনি ছোট থেকে বাড়ির ভৃত্যদের কাছে লালন পালন হয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা ‘জন গণ মন’ এবং ‘আমার সোনার বাংলা’ দুই দেশের জাতীয় সংগীত। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রচনা রচিত করেছেন। গীতাঞ্জলী কাব্য রচনার জন্য ১৯১৩ সালে ১৪ ই নভেম্বর নোবেল পুরস্কার পান। ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি দিয়েছিলেন। তবে স্বাধীনতার জন্য জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
বিশ্বকবি শেক্সপিয়ার এবং কয়েকজন বিখ্যাত লেখকের রচনা অধ্যায়ন করে। বিভিন্ন কবিতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সময়ের জন্য লিখেছেন ছোট গল্প, উপন্যাস, নিবন্ধ, উপন্যাস, নাটক এবং প্রচুর গান। ১৮৭৭ সালে তার সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী এবং ১৭৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ কবিকাহিনী।
তার মানসী কাব্যগ্রন্থ কয়েকটি কবিতার মাধ্যমে রাজনৈতিক এবং সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি প্রায় ২২৩০ টি গান রচনা করেছিলেন এবং তার এই গানগুলিকে রবীন্দ্র সংগীত বলা হয়। এছাড়াও তিনি জীবনীমূলক এবং ভ্রমণকাহিনী লেখায় দক্ষ ছিলেন। বিষদ জানতে পড়ুন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ঃ
কিংবদন্তি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন একজন দার্শনিক, রসায়নবিদ, কবি এবং বিজ্ঞানী। তিনি আবিষ্কারের পাশাপাশি তার জীবনে দরিদ্র এবং অসহায় মানুষদের সেবা করে গেছেন। এই কিংবদন্তির অবদান বাংলায় কম কিছু নয়। শৈশব থেকেই তার প্রতিটি বিষয়ের উপর প্রবল আগ্রহ ছিল। তার মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার বিশ্বে প্রচুর খ্যাতি পেয়েছিল।
বাংলাদেশের খুলনায় ২ রা আগস্ট ১৮৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। তার বাবা হরিশচন্দ্র রায় সেখানকার একজন মস্ত বড় জমিদার ছিলেন। এবং তার মা ছিলেন ভুবনমোহিনী দেবী। তিনি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার পর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন এবং পদার্থবিজ্ঞান পাঠ করেন। পিএইচ ডি ও ডি এসসি ডিগ্রী লাভ করেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণীর সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ করেন এবং এর জন্য হোপ প্রাইজ দেওয়া হয়।
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়কে ঔষধের জনক বলা হয়। তিনি প্রথমে বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা তৈরি করেন এবং পরে সেটি কলকাতার মানিকতলায় স্থানান্তর করেন। যা নাম এখন ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড’। তিনি অধ্যাপনা এবং গবেষণার পাশাপাশি বিজ্ঞানের উপর প্রাচীন গ্রন্থ অধ্যয়ন করেছিলেন। এবং ‘A History of Hindu Chemistry from the Earliest Times to the Middle of Sixteenth Century’ নামে বইটি প্রকাশিত করেন। তিনি একজন সমাজসেবকও ছিলেন।
তার একাধিক লেখা প্রকাশিত হত “ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি” জার্নালে। প্রেসিডেন্সি এবং রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে রসায়ন নিয়ে অধ্যাপনা করেন এবং প্ল্যাটিনাম, ইরিডিয়াম এবং সালফাইডের মতো যৌগগুলি নিয়ে গবেষণা করেন। বিস্তারিত জানতে পড়ুন – আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
স্বামী বিবেকানন্দঃ
নরেন্দ্রনাথ দত্ত স্বামী বিবেকানন্দ নামে খ্যাত। তিনি শুধুমাত্র ভারতে নয়, সারা বিশ্বে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতা প্রচার করেছিলেন। তিনি একটি কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব থেকেই ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মীয় গ্রন্থ শেখার প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
কিংবদন্তি স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন স্ব-শৃঙ্খলা ও নীতিমালার মানুষ। জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তার দৃঢ় মতামত ছিল এবং তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের মধেই ঈশ্বর বিরাজমান। ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিকতার বিষয়গুলি ছড়িয়ে দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন।
নিজের দেশকে তিনি সকলের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছেন। তিনি নিজেকে মানুষ সেবার নিয়োগ করেন। কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ মঠ। তিনি ভারতবাসীর দুঃখ উপলব্ধি করেছিলেন। বেলুড়ে তৈরি করেন বেলুড় মঠ যা আজও বিখ্যাত। আমেরিকার শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন। মানুষের সেবা করাই তার মূল আদর্শ। আরও পড়ুন – স্বামী বিবেকানন্দ
সিস্টার নিবেদিতাঃ
সিস্টার নিবেদিতা কথা আমরা সবাই জানি। এই কিংবদন্তি ছিলেন একজন আইরিশ সমাজকর্মী, শিক্ষক এবং স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য। তিনি শিখেছিলেন মানুষের সেবা করাই মানে ঈশ্বরের সেবা। এই কথাটা তার মনে এমনভাবে গেঁথে ছিল যে তিনি নিজের দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন মানুষের সেবা করার জন্য। মানুষের জন্য নিজের জীবন ত্যাগের কারণে তিনি ভারতের একজন শ্রদ্ধাশীল মানুষ। তিনি মানুষের সেবার পাশাপাশি স্বাধীনতার আন্দোলনের সমর্থন করেছেন এবং রেখে গেছেন নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
২৮ অক্টোবর ১৮৬৭ সাল, য়ারল্যান্ডে ডানগ্যানন শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা একজন ধর্মযাজক। মা মারা যাওয়ার পর সিস্টার নিবেদিতা তার দাদামশাইয়ের কাছে মানুষ হয়েছেন। তিনি লন্ডন চার্চ বোর্ডিং স্কুল এবং হ্যালিফ্যাক্স কলেজে পদার্থবিজ্ঞান, শিল্প, সংগীত এবং সাহিত্যে নিয়ে পড়াশুনো করেছেন।
তার বয়স যখন ১৭ বছর তখন থেকে তিনি শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেছিলেন। প্রাইভেট স্কুলের ছোট শিশুদের পড়াতেন। পড়ানোর পাশাপাশি তিনি একজন লেখিকা ছিলেন। অনেক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখতেন। আস্তে আস্তে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।
১৮৫৫ সালে লন্ডনে থাকাকালীন তার পরিচয় হয় স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে। এবং বিবেকানন্দের নীতিগুলি তার মনের অন্তরে বিবেকানন্দের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোলে এবং সেদিন থেকে তিনি বিবেকানন্দকেই নিজের গুরু বলে মানেন। গৌতম বুদ্ধ এবং বিবেকানন্দের নীতি তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
তিনি স্বামী বিবেকানন্দের তত্ত্বাবধানে ‘ব্রহ্মচর্য’ ব্রত দীক্ষা গ্রহণ করেন ১৮৯৮ সালে। তিনি বহু জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং সেখানকার সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করেছেন। কলকাতায় ভয়াবহ প্লেগ চলাকালীন তিনি ভালো সেবা প্রদান করেন। সেবার পাশাপাশি তিনি নারী শিক্ষার উন্নতির জন্য উত্তর কলকাতায় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি স্বাধীনতার আন্দোলনে সরাসরি অংশ না নিলেও তার লেখার মধ্যে দিয়ে জাতীয় আন্দোলনে অংশ নেন। সম্পূর্ণ জীবনী পড়ুন – সিস্টার নিবেদিতা
অরবিন্দ ঘোষঃ
বাংলার কিংবদন্তি অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। পাশাপাশি কবি, পণ্ডিত এবং দার্শনিক। স্বাধীনতার জন্য তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৭২ সালে কলকাতায়। তিনি এক বিখ্যাত রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কৃষ্ণ ধন ঘোষ ছিলেন একজন সার্জেন। তিনি লন্ডনের সেইন্ট পলস থেকে পড়াশুনো করেন এবং কেমব্রিজে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় জন্য ভর্তি হন। তবে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করলে অশ্বারোহীদের প্রয়োজনীয পরীক্ষায় ব্যর্থ হন এবং তিনি সিভিল সার্ভিসে প্রবেশ করতে পারেননি।
তিনি গ্রিক এবং ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ভারতে ফিরে এসে বরোদার একটি সরকারী বিদ্যালয়ের উপ-অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হয়। পাশাপাশি বাংলা সাহিত্য, দর্শন এবং সংস্কৃত নিয়ে গবেষণা করেন। বঙ্গভঙ্গের পর (১৯০৬ সাল) তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ নেয়।
১৯০৮ সাল থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেন। রাজনীতির গাইড বলা হত এই কিংবদন্তিকে। তিনি দেশবাসীকে ব্রিটিশ পণ্য- দ্রব্য ত্যাগ করতে সমর্থন করেছিলেন এবং মানুষকে সত্যাগ্রহের সত্যাগ্রহের জন্য তৈরি করেন। তিনি ‘বন্দে মাতরম’ পত্রিকা প্রকাশ করেন।
আলিপুর বোমা মামলাটি জন্য অরবিন্দ ঘোষ এক বছর আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন। বন্দি অবস্থায় তার যোগ ও ধ্যানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং শুনানির পরে ধ্যান এবং প্রাণায়াম অনুশীলন করেন। পন্ডিচেরিতে ১৯২৬ সালে শ্রী অরবিন্দ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও শ্রী অরবিন্দ আর্য নামে একটি দার্শনিক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। আরও পড়ুন – অরবিন্দ ঘোষ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ঃ
বাংলার কিংবদন্তি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হুগলী জেলায় এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মা ভুবনমোহিনী দেবী। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একদিকে যেমন ছিলেন লেখক তেমনি অন্যদিকে ছিলেন ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার। তিনি পড়াশুনোয় খুব মেধাবী ছিলেন এবং হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন। তবে তার মা মারা যাওয়ার পর তিনি মামা বাড়ি ভাগলপুরে চলে যান এবং সেখানে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন।
তিনি শৈশব থেকেই লেখালেখি করতেন এবং সাহিত্যের প্রতি শৈশব থেকেই তার গভীর আগ্রহ ছিল। শৈশবে তিনি দুটি গল্প রচা করেছিলেন ‘কাশীনাথ’ ও ‘ব্রহ্মদৈত্য’। তার ছোট গল্প ‘মন্দির’ কুন্তলীন প্রতিযোগিতায় সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করে। তিনি কুসংস্কার এবং গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন এবং মহিলাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন তার লেখার মাধ্যমে। দেবদাস, পল্লী সমাজ এবং পরিণীতা অন্যতম।
বৈপ্লবিক আন্দোলন ঘিরে তার গল্প ‘পথের দাবী’। তার রচনা প্রেরণা জাগিয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত উপন্যাস শ্রীকান্ত। এই চার অংশের উপন্যাসটি শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ভ্রমণ এবং তার জীবন ভিত্তি করে লেখা। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন উপন্যাস, সাহিত্য ও গল্পের মাধ্যমে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ৯৩৮ সালে ১৬ জানুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আরও জানুন – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
যামিনী রায়ঃ
একজন মহান বাঙালি চিত্রশিল্পী হলেন বাংলার কিংবদন্তি যামিনী রায়। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী চিত্রশিল্পীদের মধ্যে একজন। যিনি নিজের চিত্রশিল্পীর মধ্যে দিয়ে বাংলার প্রকৃত অর্থকে প্রকাশ করেছিলেন। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিষ্য ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় বেলিয়াতোড় গ্রামের ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশবে গ্রামীণ, লোকশিল্প এবং চিত্রকলার প্রতি আগ্রহ ছিল। তিনি কলকাতায় বেশি থাকতেন এবং প্রথমে কালীঘাটের চিত্রকর্ম থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেছিলেন। নিজেকে পটুয়া হিসাবে স্বীকৃতি দিতেন।
কলকাতায় গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে এই কিংবদন্তি শিক্ষাগত পদ্ধতিতে আঁকা শিখেছিলেন। এবং চারুকলায় ডিপ্লোমা করেছিলেন। তিনি প্রথমে তিরূপ চিত্রণ এবং প্রাকৃতিকবাদী চিত্র দিয়ে তার চিত্রশিল্পের যাত্রা শুরু করেন এবং যা মানুষের নজরে পড়ে। তিনি বুঝতে পারেন ভারতীয় বিষয়” পাশ্চাত্য ঐতিহ্য অপেক্ষা আরও অনুপ্রেরণামুলক হতে পারে। তাই তিনি মন্দিরের রীতি, উপত্যকা, পোড়ামাটির মন্দির, লোকশিল্প ও কারুশিল্পের থেকে অনুপ্রেরণা অর্জন করেছিলেন। ১৯২০ সালে তিনি এমন কিছু চিত্র করেছিলেন যা প্রতিফলিত করেছিল মনোরম পল্লী পরিবেশ এবং গ্রামীণ পরিবেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন।
যামিনী রায়ের চিত্রশিল্পে নতুন স্টাইল জাতীয় আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এই স্টাইলের মধ্যে দিয়ে তিনি আধ্যাত্মিক এবং আবেগের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছিলেন। ১৯২০ দশকের শেষদিকে তিনি গ্রামবাসী এবং কৃষ্ণলীলার চিত্র আঁকেন। তার দুঃসাহসিক চিত্র অঙ্কন ছিল যিশুখ্রিস্টের জীবন সম্পর্কিত ঘটনাগুলির। এই চিত্রে তিনি খ্রিস্টধর্মের পৌরাণিক কাহিনী এমন ভাবে উপস্থাপনা করেছিলেন যে একজন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে।
প্রথম কলকাতার ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্ট্রিট’ এ যামিনী রায়ের শিল্প প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরে তা লন্ডনে এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়। এবং তাকে পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয়। এখনো লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এবং অ্যালবার্ট যাদুঘর লন্ডনে তার কাজগুলি দেখতে পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানুন – যামিনী রায়
প্রশান্ত চন্দ্রঃ
একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং পরিসংখ্যানবিদ হলেন বাংলার কিংবদন্তি প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ। যিনি ২৯ শে জুন ১৮৯৩ সালেকলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও ইংল্যান্ডে কিংস কলেজ চ্যাপেল যোগ দেন এবং পদার্থবিজ্ঞানে তার ট্রাইপোস পেয়েছিলেন। প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ তাত্ত্বিক পরিসংখ্যানগুলিতে ফোকাস করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস দ্বারা প্রকাশিত একটি জার্নাল ‘বায়োমেট্রিকা’ আবিষ্কার করেন।
তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত ছিলেন এবং তিন তিন দশক ধরে পদার্থবিজ্ঞান পড়িয়েছিলেন। যার জন্য তিনি পরিসংখ্যানগুলিতে তার নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করে। প্রথমে নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ এবং কিছু আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা বিশ্লেষণে নিয়ে কাজ করেন।
১৯৩০ সালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা পরে একাডেমিক ইনস্টিটিউট হিসাবে স্বীকৃতি পায়। পরিসংখ্যানে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ‘মহলানবিশ ডিস্ট্যান্স’ আবিষ্কার।
প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ পরিসংখ্যান কৃতিত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাছারাও তিনি আন্তর্জাতিক পদেও অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তার জীবনের মূল উদ্দেশ্যে ছিল পরিসংখ্যার মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, দারিদ্র দূর করে মানুষের জীবনকে সুন্দর করা। আবহাওয়া, নদী পরিকল্পনা, উত্তরবঙ্গ ও উড়িষ্যার বন্যা তার গবেষণায় স্থান পায়। পরিসংখ্যান স্বীকৃতি হিসাবে তিনি স্বর্ণপদক এবং পদ্মবিভূষণ উপাধি লাভ করেন। বিষদ জানুন – প্রশান্ত চন্দ্র
সত্যেন্দ্রনাথ বসুঃ
কিংবদন্তি সত্যেন্দ্রনাথ বসু একজন বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী যিনি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান অর্থাৎ কোয়ান্টাম ফিজিক্সকে নতুন দিকনির্দেশ করেছিলেন। কলকাতার ঈশ্বর মিত্র লেনে ১৮৯৪ সালে ১ লা জানুয়ারি সত্যেন্দ্রনাথ বোস জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা সুরেন্দ্র নাথ বোস ছিলেন পূর্ব ভারত ভারত রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগে কর্মচারী। প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন এবং পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনি ১৯১৬ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পাঠক হিসাবে যোগদান করেন।
কোয়ান্টাম পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে একটি রচনা লেখেন এবং ব্রিটিশ জার্নালে প্রকাশ করার জন্য পাঠান তবে তা প্রকাশিত না হওয়ায় তিনি সেটি আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে পাঠান। আইনস্টাইন তার গুরুত্ব বুঝে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেন এবং তা Zeitschrift für Physik নামক একটি জার্নালে প্রকাশ করেন। তার আরও একটি লেখা তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন নিকটে পাঠান এবং তিনি তা Zeitschrift für Physik পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এই লেখাটি কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় একটি নতুন শাখার ভিত্তি করে।
তিনি বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের সাথে একসঙ্গে কাজ করেন যেমন মেরি কুর,হাইজেনবার্গ, পাওলি এবং প্ল্যাঙ্ক ইত্যাদি। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞান এবং এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফির উপর কাজ করেন। তার প্রতিভার জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও রয়্যাল সোসাইটির ফেলো হিসাবে নির্বাচিত হন। আরও বিস্তারিত জানুন – সত্যেন্দ্রনাথ বসু
সুভাষ চন্দ্র বসুঃ
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের ইতিহাসের সর্বাধিক বিখ্যাত কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব এবং সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর দুর্দান্ত অবদান ভারতের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। তিনি ছিলেন ভারতের সত্যিকারের সাহসী বীর যিনি তাঁর মাতৃভূমির জন্য চিরতরে নিজের বাড়ি ত্যাগ করেছিলেন। তিনি সর্বদা হিংসতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সশস্ত্র বিদ্রোহের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
তিনি ১৮৯৭ সালে ২৩ শে জানুয়ারি উড়িষ্যায় কটকে হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন জানকী নাথ বোস এবং মা প্রভাবতী দেবী। একজন ব্রিটিশ শিক্ষক ভারতের ছাত্রদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী সম্পর্কে মন্তব্য করায় নেতাজি সেই শিক্ষককে মারধর করেন, যার জন্য তাকে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তিনি আই.সি.এস. পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন কিন্তু ১৯২১ সালে সুভাষ চন্দ্র ভারতীয় সিভিল সার্ভিস ছেড়ে দেওয়া এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন যোগ দেন।
এরপর তিনি দেশে ফিরে গান্ধিজির কাছে যান দেশের সেবার নিজেকে উৎসর্গ করার প্রস্তাব দেয়। গান্ধিজি তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের কাছে কাজ করতে উপদেশ দেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে কাজ করে প্রভাবিত হয়েছিল এবং পরে কলকাতার মেয়র এবং তৎকালীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। পরে তিনি ১৯৯৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর সাথে মতামতের পার্থক্যের কারণে দলটি ত্যাগ করেন। কংগ্রেস দল ত্যাগ করার পরে তিনি তার নিজের ফরোয়ার্ড ব্লক পার্টি খুঁজে পান।
তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে অহিংস আন্দোলনটি ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয় তাই তিনি দেশে স্বাধীনতা আনতে হিংস আন্দোলন বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ভারত থেকে জার্মানি এবং তারপরে জাপানে চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি নিজের ভারতীয় জাতীয় সেনা তৈরি করেছিলেন, যা আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও পরিচিত।
তিনি ব্রিটিশ শাসন থেকে সাহসিকতার সাথে লড়াই করার জন্য ভারতীয় যুদ্ধবন্দী এবং সেসব দেশের ভারতীয় বাসিন্দাদের তার আজাদ হিন্দ ফৌজে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তিনি তার সেনাবাহিনিদের দিল্লী চলো এবং জয় হিন্দ নামে একটি স্লোগান দিয়েছিলেন। ব্রিটিশদের শাসন থেকে তার মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য তিনি “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” এই মহান কথায় তার সেনাবাহিনীদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এটা বলা হয় ১৯৪৫ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তিনি কী সত্যিই বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এই নিয়ে এখনো জল্পনা কল্পনা রয়েছে। আরও জানুন – নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু
কাজী নজরুল ইসলামঃ
কিংবদন্তি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি নামে দেশজুড়ে খ্যাতি। তিনি বাংলাদেশের একজন জাতীয় কবি। যার বাংলায় রয়েছে প্রচুর অবদান। তিনি বিখ্যাত কবি হলেও ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও দার্শনিক। তার লেখাগুলি সেই সময় স্বাধীনতা জন্য কাজে এসেছিল। ফ্যাসিবাদ এবং যে কোনও ধরণের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
সাল ১৮৯৯, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার বাবা কাজী ফকির আহমদ সেখানকার মসজিদ ইমাম এবং মা জাহেদা খাতুন একজন গৃহবধূ। বাবার মারা যাওয়ার পর মাত্র ১০ বছর বয়সে নেই কিংবদন্তি রিবারের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে স্কুলে শিক্ষকদের সহায়তা করতেন। তাকে প্রথম জীবনে এতো কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বলে গ্রামবাসীরা তাকে ‘দুখু মিয়া’ বলে ডাকত।
মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনো করে। তারপর তাকে আর্থিক কারণে পড়াশুনো ছেড়ে আসানসোলের বেকারি ও চায়ের দোকানে কাজ করতে হয়েছিল। চায়ের দোকানে কাজ করার সময় তিনি কবিতা এবং ছড়া রচনা করতেন। তার উপর মুগ্ধ হয়ে আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহ তাকে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করেন। সেখানে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনো করেন এবং বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি সাহিত্য এবং হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত অধ্যয়ন করেন।
কর্মরত অবস্থায় সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন “বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী” সওগাত পত্রিকায় প্রকাশ করেন। তার প্রথম কবিতা ‘বাঁধন হারা’। বিদ্রোহী শিরোনাম কবিতা লেখেন যা “বিজলি” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এই কবিতা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকের কাছে প্রশংসা পেয়েছিল।
কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ভালো সম্পর্কে ছিল। ১৯২২ সালে তার রাজনৈতিক কবিতা “আনন্দময়ীর আগমনে” ধূমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কারাগারে থাকাকালীন প্রচুর কবিতা ও গান রচনা করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা না নেওয়ার জন্য খিলাফত” আন্দোলন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমালোচক হয়েছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জনগণকে জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং ‘শ্রমিক প্রজা স্বরাজ দল’ সংগঠিত করেন। ১৯৬০ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে পুরষ্কার পেয়েছিলেন। ‘সিরাজ-উদ-দৌলা’ নামে একটি বায়োপিক নাটকের তার গান এবং রচনা পরিচলনা করা হয়। আরও পড়ুন – কাজী নজরুল ইসলাম
মাদার টেরেসাঃ
মাদার টেরেসা এমন একজন কিংবদন্তি যিনি নিজের জন্য বেঁচে থাকেন নি বরং পরের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার হৃদয় দরিদ্র, অসুস্থ এবং অসহায় মানুষের জন্য কাঁদে। তিনি মানুষের জন্য নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন।
১৯১০ সালে ২৬ আগস্ট আলবেনিয়ার স্কোপ্জে শহর মাদার টেরেসা জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম কিন্তু আসলে শৈশবে মাদার টেরেসা ছিল না বরং ছিল অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ আলবেনীয়। তার পিতা নিকোলো বয়াজুর ছিলেন একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। তার মা দ্রানা বয়াজুর। তিনি পড়াশুনো মেধাবী ছিলেন। তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে স্থির করেছিলেন তার পুরো জীবন সেবায় ব্যয় করবেন। তাই তিনি সিস্টার্স অব লোরেটো সংস্থায় মিশনারী হিসাবে যোগদান করেন। ১৯২৯ সালে ভারতে আসেন এবং সেখানে কলকাতায় ‘লরেটো কনভেন্ট’ পড়ানো শুরু করেন। তার ছাত্ররা তাকে খুব স্নেহ করতেন।
পাটনার হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে নার্সিং প্রশিক্ষণ শেখেন এবং কলকাতায় এসে দরিদ্র বৃদ্ধদের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে থাকতেন। তিনি রোগীদের সেবা করতেন। ১৯৫০ সালে যাদের সমাজে কোনও স্থান নেই তাদের সহায়তা করেছিলেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের সেবা করতেন। ‘নির্মল হৃদয়’ এবং ‘নির্মলা শিশুভবন’ নামে আশ্রম চালু করেন তিনি। নির্মল হৃদয় তৈরি করেছিলেন অসহায় রোগে আক্রান্ত দরিদ্র মানুষের সেবার জন্য এবং নির্মলা শিশুভবন তৈরি করেছিলেন অনাথ ও গৃহহীন শিশুদের সাহায্যের জন্য। তার অসহায় মানুষের জন্য তাকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী এবং দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘ভারতরত্’ ভূষিত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি মানব কল্যাণের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। বিষদ জানতে পড়ুন – মাদার টেরেসা
অমর্ত্য সেনঃ
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, লেখক এবং দার্শনিক বাংলার কিংবদন্তি অমর্ত্য সেন। তার অবদান ছিল সমাজের অনগ্রসর ও দরিদ্র অংশের জন্য। পিতা আশুতোষ সেন ঢাকার রসায়ন অধ্যাপক এবং পরে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান। সিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীর সম্মান সহ স্নাতক ডিগ্রি এবং কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে বি.এ ডিগ্রী অর্জন করে।
তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগে এবং পরে দিল্লী স্কুল অফ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ছিলেন। এছাড়াও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি ও দর্শন বিভাগে অধ্যাপক ছিলেন।
মৌলিক কল্যাণ, সাম্যতা এবং স্বতন্ত্র অধিকার, ন্যায়বিচার ঘিরে তার প্রথম প্রকাশিত ‘Collective Choice and Social Welfare’। অর্থনৈতিক বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে তার প্রকাশিত বই ‘On Economic Inequality’।
‘দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ’ নিবন্ধে তিনি দ্য সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণ, অপুষ্টি এবং দুর্ভিক্ষ বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। ২০০৫ সালে তার জনপ্রিয় বই ‘The Argumentative Indian’ যা ভারতের ইতিহাস,সমসাময়িক ভারত, পরিচয় এবং যুক্তিতর্ক ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলে। এছাড়াও তার প্রকাশিত ‘ন্যায়বিচারের ধারণা’ অর্থনৈতিক যুক্তির উপর হাইলাইট ছিল। এই কিংবদন্তি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মান বিবেচনা করেন এবং দারিদ্রতা মাপার জন্য জটিল সুচক তৈরি করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে তাকে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হয়। বিস্তারিত জানতে পড়ুন – অমর্ত্য সেন
সারকথাঃ
এই সমস্ত মহান ব্যক্তিরা আমাদের বাংলার কিংবদন্তি তথা ভারতের রত্ন।