মুলার উপকারিতাঃ স্বাস্থ্যের জন্য মুলার খাওয়ার উপকারিতা

আমরা অনেকেই মুলা খেতে পছন্দ করি না। আবার অনেকে এই খাবারটি পাতেও নেয় না। তবে জানেন কি স্বাস্থ্যের জন্য মুলার উপকারিতা অনেক। অনেক পুষ্টিবিদদের মতে মুলায় পুষ্টিগুণে জুরি মেলা ভার। নিয়মিত আমাদের খাবারের তালিকায় মুলা রাখা উচিত। মুলার বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল অনেক পণ্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য ব্যবহার করা হয়। আসুন তাহলে আমরা আজ এই প্রবন্ধ থেকে স্বাস্থ্যের জন্য মুলার খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিই।

মুলা খাওয়া ভালো কেন?

source

মুলা খাওয়া ভালো কেন?(Why Radish is good for health)

মুলা ভিটামিন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার কার্যকর এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। মুলায় উপস্থিত ভিটামিন স্কিনের রোগের চিকিৎসা করে। মুলা শুধু লিভারের জন্য ভালো নয় বরং স্বাস্থ্যে সম্পর্কিত ভিন্ন ধরণের সমস্যার জন্য কার্যকর।

মুলার পুষ্টিগুণ

source

আরো পড়ুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেথিঃ নিয়মিত মেথি করবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন

মুলার পুষ্টিগুণ(Nutritional Value of Radish)

মুলা ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। ভিটামিন সি হল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরের শরীরের মুক্ত রেডিক্যালের সঙ্গে লড়াই করে এবং বার্ধক্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিকর কোষ রক্ষা করে। ভিটামিন সি ছাড়াও মুলায় সামান্য পরিমাণে আরও কয়েকটি উপাদান রয়েছে। সেগুলি হল –

  • পটাশিয়াম
  • ভিটামিন বি- ৬
  • ভিটামিন কে
  • ক্যালসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • জিংক
  • ফসফরাস
  • কপার
  • ম্যাংগানিজ
  • সোডিয়াম

আরো পড়ুন। আপেলের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা

মুলার পুষ্টিগুণের উপকারিতা

source

মুলার পুষ্টিগুণের উপকারিতা(Nutritional Benefit of Radish)

  • পটাশিয়াম – পটাশিয়াম স্ট্রোকের ঝুঁকিও হ্রাস করে, রক্তচাপকে হ্রাস করে, পেশী ভরগুলি হ্রাস থেকে রক্ষা করে, হাড়ের খনিজ ঘনত্বকে সংরক্ষণ করে এবং কিডনিতে পাথর গঠনে হ্রাস করে।
  • ভিটামিন বি ৬ – ভিটামিন বি ৬ মেজাজ উন্নত করতে পারে এবং হতাশার লক্ষণগুলি হ্রাস করতে পারে। গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।
  • ভিটামিন কেভিটামিন কে একটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় ভিটামিন যা স্বাস্থ্যকর হাড় এবং সাধারণ রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রোটিন তৈরি করে।
  • ক্যালসিয়ামশক্তিশালী হাড়গুলি তৈরি করতে এবং বজায় রাখতে আপনার দেহের ক্যালসিয়াম দরকার।
  • ম্যাগনেসিয়াম – ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে।
  • জিঙ্ক – জিঙ্ক ডায়রিয়ার চিকিৎসা করে। ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে
  • ফসফরাস – ফসফরাস শক্ত দাঁত তৈরি করুন। ব্যায়ামের পরে পেশী ব্যথা হ্রাস করে।
  • কপার – কপার স্বাস্থ্যকর হাড়, রক্তনালী, স্নায়ু এবং ইমিউন ফাংশন বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং এটি আয়রন শোষণে অবদান রাখে।
  • ম্যাঙ্গানিজম্যাঙ্গানিজ ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
  • সোডিয়াম – সোডিয়াম হার্ট অ্যাটাক ও কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করে।

আরো পড়ুন। শাক সবজির গুণাগুণঃ শাক সবজির যে এত গুণ জানলে অবাক হয়ে যাবেন

স্বাস্থ্যের জন্য মুলার খাওয়ার উপকারিতা(Health Benefit of Radish)

ত্বক ভালো রাখতে

source

ত্বক ভালো রাখতে

মুলায় অল্প পরিমাণে ভিটামিন সি, জিঙ্ক, ফসফরাস,ভিটামিন বি রয়েছে যা ত্বকের জন্য খুব উপকার। এছাড়াও মুলায় উপস্থিত জল ত্বকের আর্দ্রতার মাত্রা বজায় রাখে। এছাড়াও শুষ্ক চামড়া, ফাটা চামড়া জন্য মুলা প্রচুর কার্যকর। কাঁচা মুলা ভালোভাবে পেস্ট করে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। কাঁচা মুলার পেস্ট ত্বকের জন্য ভালো ফেস প্যাক।

ওজন হ্রাস করতে

source

ওজন হ্রাস করতে

মুলা ক্ষুধা নিবারণে সহায়ক। মুলায় কার্বোহাইড্রেট কম থাকে এবং প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। তাই যারা নিজেদের ওজন কমাতে চান তাদের জন্য মুলা খুব ভালো খাদ্য। এছাড়াও এতে ফাইবার রয়েছে যা ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।

জন্ডিসের জন্য

source

জন্ডিসের জন্য

মুলা লিভার এবং পেটের জন্য খুব উপকার এবং এটি রক্তের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। এটি জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য ভালো কার্যকর কারণ এটি বিলিরুবিন বের করে দেয় এবং এর স্তর স্বাভাবিক রাখে। এছাড়াও এটি লাল রক্তের কোষকে নষ্ট হওয়ার থেকে সুরক্ষিত করেসকালে উঠে কাঁচা মুলা খেলে কিছুদিনের মধ্যে জন্ডিস ঠিক হয়ে যায়

আরো পড়ুন। কাঁচা ছোলার গুণঃ নিয়মিত কাঁচা ছোলা এনার্জির চাবিকাঠি

হার্টের জন্য

হার্টের জন্য

অ্যান্থোসায়ানিনস হৃদরোগের জন্য ভালো উৎস, যা এক প্রকার ফ্ল্যাভোনয়েড। যা স্বাস্থ্যের অনেক সুবিধা প্রদান করে। তাই নিয়মিত মুলা হার্টের রোগ কমাতে সক্ষম

ক্যান্সারের জন্য

source

ক্যান্সারের জন্য

ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায় যা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার, বিশেষ করে কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় উপাকারি।

রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

source

রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

মুলা ভিটামিন সি প্রধান উৎস। যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত খাবারের তালিকায় মুলা রাখলে বিভিন্ন রোগ দ্রুত সেরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।

আরো পড়ুন। দৌড়ানোর পর খাবারঃ দৌড়ানোর পর খাদ্য তালিকা কি কি রাখা উচিত?

লিভারের জন্য

source

লিভারের জন্য

মুলা লিভার এবং গল ব্লাডারের জন্য বিশেষ কার্যকারী। এটী বিলিরুবিন, অ্যাসিড এবং এনজাইম উৎপাদন এবং প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এটি রক্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিন অপসারণ করে লিভারকে সুরক্ষিত করে।

রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ

source

রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ

মুলায় কম গ্লাইসেমিক সূচকের জন্য পরিচিত। অর্থাৎ মুলা খেলে রক্তে শর্করা মাত্রায় কোন প্রভাবিত হয় না। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে।

আরো পড়ুন। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধঃ ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার উপায়

হাড় মজবুত করে

source

হাড় মজবুত করে

মুলার বীজ হাড় শক্তিশালী করে। বীজে উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। হাড় মজবুত করার জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও মুলার বীজ শরীরে নিয়মিত মিনারেল সরবরাহ করে থাকে।

চুলের জন্য মুলার উপকারিতা

source

চুলের জন্য মুলার উপকারিতা (Hair Benefits of Radish)

নিয়মিত খাবারের তালিকায় মুলা যোগ করলে চুল ভালো থাকে। মুলার জুস খেলে চুল সিল্কি এবং বৃদ্ধি হয়। নিয়মিত মূলার ব্যবহার যা চুল পড়া সমস্যার সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। মূলার রস আপনার চুলে উজ্জল্য আনতে পারে। সর্বদা সেরা ফলাফলের জন্য তাজা মূলা রস ব্যবহার করুন। এছাড়াও মুলায় আয়রন থাকায় এটি স্বাস্থ্যকর চুল বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি চুলের সামগ্রিক গঠন এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।

দেখলেন তো মুলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তাই আজ থেকে খাবার তালিকায় অল্প পরিমাণে মুলা যোগ করতে ভুলবেন না।

Key Point: মুলা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং নিয়মিত খাওয়া নিরাপদ।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ 

Q. মুলা রোজ খাওয়া কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

A. হ্যাঁ, রোজ অল্প পরিমাণে মুলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

Q. ডায়াবেটিস রোগীরা কি মুলা খেতে পারে?

A. মুলা রক্তে শর্করার মান নিয়ন্ত্রণ রাখে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা মুলা খেলে তাদের স্বাস্থ্যের উপর কোন খারাপ প্রভাব পড়ে না।

Q. মুলা খেলে চুল বৃদ্ধি হওয়া সম্ভব?

A. নিয়মিত মুলা খেলে চুল পড়া অনেকটাই কমে। তাই চুল বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

2 Comments

  1. পাইলসের কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে এই পেজে লেখা হয়েছে আপনি চাইলে অনুসরণ করতে পারেন তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here