আবাহাওয়া পরিবর্তন মানেই ঘরে ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বর। আবার অনেকের এই সময় টনসিলের সংক্রমণ ভুগে থাকেন। এই টনসিলের ব্যথা মারাত্মক বেদনাদায়ক। tonsil hole ki korbo অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেল।
মুখের ভিতরে জিভের শেষে মূলত গলার দু’পাশে যে গোলাকার অংশ দেখা যায়, তাকেই Tonsil বলে। দেখতে মাংসপিণ্ডের মত হলেও আদতে এটি একটি টিস্যু। যা মুখ-গলা, নাক, কান দিয়ে Body-তে জীবাণু প্রবেশে প্রতিরক্ষার কাজ করে।
Read more: 6 টি উপকারি Tips। Pete betha hole ki korbo ?
ঋতু পরিবর্তনের কারণের Tonsil-এর সমস্যা হয়ে থাকে মূলত। যার কারণে গলায় তীব্র ব্যথা সাথে গলা ফুলে যায় দরুন খাবার খেতেও হয় Problem।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক টনসিল (Tonsil) আসলে কি?
টনসিল আমাদের শরীরের এমন একটি অংশ যা গলার উভয় পাশে থাকে। টনসিলের কাজ হল শরীরকে বাহ্যিক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। অর্থাৎ শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশে বাধা দেওয়ার কাজটি করে টনসিল।
তবে টনসিলে কোনো ধরনের Infection হলে টনসিল বাড়তে থাকে। যার ফলে টনসিলের আকৃতির পরিবর্তন হয় এবং ফুলে যায়। টনসিলে সংক্রমণের এই অবস্থাকে ডাক্তারি ভাষায় টনসিলাইটিস (Tonsillitis) বলে। টনসিলাইটিস যেকোনো বয়সে হতে পারে। ছোট শিশু থেকে বয়ঃসন্ধিকাল (5-15 বছর) পর্যন্ত, তবে শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
Read more: 7 টি Tips-এই স্বস্তি। Matha betha korle ki korbo ?
টনসিল কেন হয়?
tonsil hole ki korbo ? এই ধরণের ব্যথা ভাইরাস অথবা সংক্রমণ জনিত কারণে হয়ে থাকে। ছোট বয়স থেকেই টনসিল সংক্রমের ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে সব বয়সী মানুষেরা টনসিল সংক্রমণের আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
ঋতু পরিবর্তনের সময় বেশি ঠাণ্ডা লাগলে, মশলাযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খেলে, ইমিউনিটি দুর্বল হলে টনসিল সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি হতে পারে।
Read more: আর্থ্রাইটিস কি, রোগের লক্ষণ এবং ব্যথা কমানোর চিকিৎসা
টনসিলের লক্ষণগুলো কী কী?
টনসিলাইটিসের কারণে গলায় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার ব্যাপারে সবারই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তবে টনসিলের কিছু সাধারণ উপসর্গ আছে যা দেখে সহজেই বোঝা যায় টনসিলের সমস্যা। চলুন জেনে নেওয়া যাক টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ গুলি কি কি-
- গলায় প্রচন্ড ব্যাথা এবং কিছু গিলতে অসুবিধা।
- কানের নিচের অংশেও ব্যথা।
- চোয়ালের নিচের অংশে ফোলাভাব।
- গলায় ব্যথা সহ জ্বর।
- নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ অনুভব করা।
- অত্যধিক দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং বিরক্তি।
টনসিলের চিকিৎসার ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies for Tonsil Treatment)
tonsil hole ki korbo ? Tonsil pain medicine হিসাবে কি খাব ? এই নিয়ে অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন জাগে। তবে ব্যাথা তেমন গুরুতর না হলে মেডিসিন এরিয়ে চলাই ভালো। সেক্ষেত্রে টনসিলের common symptoms গুলো থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া প্রতিকার গুলি try করে দেখতে পারেন।
Read more: নিয়মিত হাঁটু ব্যথার ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ থাকুন
1. আদা (Ginger)
আদার মধ্যে অনেক ঔষধি গুণ পাওয়া যায় যা টনসিলের ব্যথা থেকে খুব তাড়াতাড়ি relief দিতে পারে। এরজন্য খানিকটা আদা পিষে হালকা গরম জলে মিশিয়ে নিন এবং তাতে লেবুর রস দিয়ে দিনে ২-৩ বার সেই জল দিয়ে গার্গল করুন।
এছাড়া আদা চা করেও খেতে পারেন। এটি টনসিলের Symptoms কমাতে এটি দারুণ কার্যকরী।
2. হলুদ দুধ (Turmeric and Milk)
হলুদ এর শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি ব্যায়টিক এবং এন্টিসেপটিক গুণগুলির কারণে, এটি টনসিল infection -এ দারুণ কাজ করে। এক কাপ গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। টনসিলের ব্যথায় দ্রুত আরাম পেতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি খেলে ভালো কাজ দেবে।
Read more: লিভার ড্যামেজের ৬ টি প্রাথমিক লক্ষণ
3. লবণ জলের গার্গল (Gargle)
টনসিলের সংক্রামণ দূর করতে লবণ জলের গার্গল একটি অব্যর্থ Medicine। শুধু তাই নয় সাধারণ গলা ব্যথাতেও লবণ জলে কুল্কুচি করলে তা Magic এর মত কাজ করে। লবণের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া হ্রাস করার ক্ষমতা। তাই টনসিলের ব্যথা থেকে দ্রুত আরাম পেতে দিনে যতবার সম্ভব উষ্ণ গরম লবণ জলে গার্গল করতে পারেন।
4. তুলসী পাতা (Basil leaves)
তুলসী পাতায় যেমন রয়েছে প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা ঠিক তেমনই মধুতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ। যা টনসিল চিকিৎসায় দারুণ কার্যকর।
এক কাপ জলে কয়েকটি তুলসী পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর জলটি ছেঁকে নিয়ে তার মধ্যে সামান্য মধু মিশিয়ে উষ্ণ গরম থাকা অবস্থায় পান করুন। টনসিলের কারণে হওয়া গলা ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে দিনে অন্তত ২-৩ বার এই পানীয় খেলে আরাম মিলবে অল্প দিনেই।
Read more: ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেটে ব্যথা কমানোর উপায়
5. দারুচিনি (Cinnamon)
দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য, যার কারণে টনসিলের ব্যাকটেরিয়া এবং মাইক্রো অর্গানিজমের বৃদ্ধি রোধ করা যায়। টনসিলের Treatment এ ঘরোয়া উপাদান হিসাবে দারুচিনির বিকল্প নেই।
এরজন্য উষ্ণ গরম জলে দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে নিন এরপর এই মিশ্রনে সামান্য মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। দিনে দুই থেকে তিনবার এই পদ্ধতিতে খেলে অল্প সময়ের মধ্যেই টনসিলের ব্যথা থেকে মিলবে রেহাই।
6. মেথি (Fenugreek)
মেথি আমরা সাধারনত রান্নায় মশলা হিসাবে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু জানেন কি? মেথিতে উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে। টনসিলের ব্যথাতেও ঘরোয়া উপাদান হিসাবে এটি ধন্বন্তরি এই মশলা।
২-৩ কাপ জলে দুই টেবিল চামচ মেথি মিশিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ফুটিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে হালকা গরম থাকা অবস্থায় এই জলে গার্গল করুন। দুই থেকে তিন দিন একটানা ব্যবহারে টনসিলের প্রদাহ থেকে মুক্তি পাবেন সহজেই।
Read more: দাঁতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকা
7. লেবু (Lemon)
টনসিলের চিকিৎসায়ও লেবু খুবই কার্যকরী একটি ওষুধ। গরম জলে তাজা লেবুর রস যোগ করুন এবং এতে মধু এবং এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পান করুন। দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার পান করলে টনসিলের ব্যাথা থেকে স্বস্তি পাবেন তাড়াতাড়ি।
টনসিলাইটিস প্রতিরোধে এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন-
টনসিলের কারণে কিছু জিনিস খাওয়া এরিয়ে চলা উচিত, কারণ সেগুলি আমাদের টনসিলের লক্ষণগুলিকে আরও গুরুতর করে তুলতে পারে। জেনে নিন টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তার একটি ছোট List-
- গলায় কফ তৈরি করে যেসমস্ত খাবার ( যেমন- দই, ঠাণ্ডা দুধ, ঠাণ্ডা জল, আইসক্রিম) একেবারেই খাবেন না।
- Cold Drinks
- জাঙ্ক ফুড
- ভাজা বা মশলাদার খাবার খাবেন না।
- টক জাতীয় খাবার ( যেমন- সস, আচার)
- টক ফল (যেমন- কমলা, আনারস, আম)
- অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
একটু নিয়ম মেনে চললে টনসিল ইনফেকশন সেরে যায়, তবে তিন দিনের বেশি যদি এই ইনফেকশন থাকে তাহলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। কারণ টনসিলের আশপাশে পুঁজ জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বেশি সময় ধরে চললে আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন সেই অনুযায়ী নিয়মিত টনসিল এর ঔষধ খাওয়া দরকার। এছাড়াও টনসিল ফুলে গেলে করণীয় ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে এই ব্যথার আরাম পাওয়া যায়।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ):
Q. টনসিল কেন হয়?
A. ভাইরাল সংক্রমণের কারণে টনসিল আক্রমণ হয়ে থাকে।
Q. টনসিলের সাধারণত উপসর্গগুলি কি?
A. গলা ব্যাথা, খাবার খেতে অসুবিধা, টনসিলের ফোলাভাব ইত্যাদি
Q. গলায় টনসিল কতদিন পর্যন্ত থাকে?
A. একিউট টনসিলাইটিস ৫ থেকে ৭ দিন মতো থাকতে পারে।
Q. কখন টনসিলের অস্ত্রোপচার দরকার?
A. ঘন ঘন টনসিল হলে, টনসিলে যদি পুঁজ জমে বড় আকার ধারণ করে এবং শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে।
Q. বাচ্চাদের কত বয়স থেকে টনসিল হতে পারে?
A. ৩ বছর বাচ্চাদের থেকে শুরু করে ১৫ বছর বয়সীদের টনসিল হতে পারে। পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্কদেরও এই সংক্রমণ হয়।