স্বাস্থ্যের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা

পুদিনা পাতার উপকারিতা

রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য পুদিনা পাতার কদর তো রয়েছে পাশাপাশি এর ভেষজ ঔষধের গুনও কিছু কম নয়। পুদিনা শুধুমাত্র খাবারের স্বাদই বাড়ায় না স্বাস্থ্যকরও বটে। এই পাতা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকে দূরে থাকতে পারি। আপনি যদি পুদিনা পাতার উপকারিতা না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার এই পাতার গুণাগুণ জেনে রাখা উচিত। আমাদের আজকের এই নিবন্ধে আপনাদের জন্য রইল স্বাস্থ্যের জন্য পুদিনা পাতার কিছু দুর্দান্ত উপকারিতা।

পুদিনা পাতা আমাদের সকলের কাছে পরিচিত হলেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকার তার কথা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। এই পাতা ভিটামিন-এ এর ভালো উৎস। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারি পুষ্টি উপাদান। এটি আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে এবং ওজন কম করতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুনঃ মেথির শাকের উপকারিতাঃত্বক ও স্বাস্থ্যের যত্নে মেথি পাতা

পুদিনা পাতার পুষ্টিগুণঃ

পুদিনা পাতার পুষ্টিগুণঃ

দেড় কাপ পুদিনা পাতায় পুষ্টিগুণ রয়েছে –

ক্যালরিঃ

ভিটামিন এঃ ১২ শতাংশ (RDI)

ফাইবারঃ ১ গ্রাম

আয়রনঃ ৯ শতাংশ (RDI)

ম্যাঙ্গানিজঃ ৮ শতাংশ (RDI)

আরও পড়ুনঃ পালং শাকের উপকারিতাঃপালং শাক খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে?

পুদিনা পাতার উপকারিতা

  1. মস্তিষ্ক শক্তিশালী করেঃ

মস্তিষ্ক শক্তিশালী করেঃ

পুদিনা পাতা আপনার মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়।

  1. পেটের জন্য উপকারিঃ

পেটের জন্য উপকারিঃ

পুদিনা পেটের সমস্যার ঠিক করতে সহায়তা করে। পেটের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পুদিনা কোন না কোনভাবে নিয়মিত খাওয়া উচিত। পুদিনা পাতার রস লেবু এবং মধু সমপরিমাণ মিশিয়ে খেলে পেটের সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায়।

  1. ভালো শ্বাসঃ

ভালো শ্বাসঃ

পুদিনা সেবন করলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ সহজে দূর হয় এবং শ্বাসকে সতেজ মনে হয়। এক্ষেত্রে শুকনো পুদিনার পাতার গুঁড়ো দিয়ে যদি দাঁতন করতে পারেন তাহলে দাঁতের পাশাপাশি মুখের অন্যান্য সমস্যা থেকে খুব সহজেই রেহাই পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও পুদিনা পাতা দিয়ে নিয়মিত ব্রাশ করলে মাড়ি মজবুত হয়।

আরও পড়ুনঃ নিমপাতার গুণাগুণঃ নিমপাতার অসাধারণ ৯ টি গুণাগুণ

  1. ব্রণ দূর করতে পুদিনা পাতাঃ

ব্রণ দূর করতে পুদিনা পাতাঃ

জানলে অবাক হবেন অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত পুদিনা পাতা আমাদের ত্বকের ব্রণ দূর করার জন্য  চমৎকার কাজ করে। কয়েকটি পুদিনা পাতা নিয়ে পেস্ট করে নিন। পুদিনার পেস্টে দুই ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ঠাণ্ডা জলে পরিষ্কার করে নিন। এইভাবে কিছুদিন পুদিনা পাতার পেস্ট মুখে লাগিয়ে রাখলে ব্রণ কমে যাবে এবং ত্বক ব্রাইট হয়ে যাবে।

  1. হাঁপানি চিকিৎসায় পুদিনা পাতাঃ

হাঁপানি চিকিৎসায় পুদিনা পাতাঃ

হাঁপানি রোগীদের জন্য পুদিনা পাতা গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা নিয়মিত সঠিক পরিমাণে খেলে হাঁপানির চিকিৎসায় জন্য ভালো উপকার। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় নয়। এছাড়াও পুদিনা মিশ্রিত জলে ভাপ নিলেও হাঁপানি থেকে নিরাময় পাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ পেঁপে গাছের পাতাঃ পেঁপে গাছের পাতার রসের উপকারিতা

  1. ওজন কম করতে সহায়তা করেঃ

ওজন কম করতে সহায়তা করেঃ

ওজন কমানোর জন্য পুদিনা পাতা মধুর মতো কাজ করে। কারণ পুদিনা পাতায় হজমের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পুদিনা হজম এনজাইমগুলিকে প্রভাবিত করে যা খাদ্য ভালো শোষণে সহায়তা করে। যখন আমাদের শরীর পুষ্টিকে ভালোভাবে শোষণ করতে সক্ষম হয় তখন বিপাক ক্রিয়া ভালো হয়। এবং একটু দ্রুত বিপাক ক্রিয়া আমাদের ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। আর পুদিনা পাতা খাওয়ার মাধ্যমেই এইভাবেই ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।

  1. দাঁত এবং মুখের স্বাস্থ্যের জন্য পুদিনা পাতাঃ

দাঁত এবং মুখের স্বাস্থ্যের জন্য পুদিনা পাতাঃ

আপনার স্বাস্থ্যকর দাঁতের জন্য পুদিনা পাতা আপনাকে সহায়তা করতে পারে। পুদিনা পাতার স্বাস্থ্যের জন্য একটি সুবিধা হল এই পাতা দাঁত পরিষ্কার রাখে। পাশাপাশি পুদিনা মুখের ভিতর ব্যাকটেরিয়া দূর করে দাঁত পরিষ্কার রাখে।

আরও পড়ুনঃ চুল এবং ত্বকের যত্নে মেথি ব্যবহারের উপকারিতা

  1. ঠাণ্ডা এবং কাশি দূর করতে পুদিনা পাতার উপকারিতাঃ

ঠাণ্ডা এবং কাশি দূর করতে পুদিনা পাতার উপকারিতাঃ

যখন কোন ব্যক্তি কাশিতে ভোগেন তখন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের সাথে প্রদাহ দূর করতে সহায়তা করে। এর জন্য ঠাণ্ডা এবং কাশির জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা অনেক। গরম জলে পুদিনা পাতার রস মিশিয়ে ভাব নিলে কাশি ধীরে ধীরে কম হয়।

  1. মানসিক চাপ দূর করতে পুদিনা পাতার চাঃ

মানসিক চাপ দূর করতে পুদিনা পাতার চাঃ

মানসিক চাপ দূর করতে পুদিনা পাতার চা অন্যতম সেরা ভেষজ ঔষধ। জড়িবুটিতে মজুত পুদিনায় ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এর মত গুণাবলী পাওয়া যায়। যার কারণে পুদিনা দিয়ে তৈরি চা পান করলে, তা আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে, এছাড়াও ঠান্ডা সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দিতে পারে।

10. পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারীঃ

হজমের সমস্যায় ঘরোয়া উপায় হিসাবে পুদিনা খুবই কার্যকরী। এতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য, যা বদহজম থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার রস পেটের নানারকম পীড়া দূর করে। তাই পেট সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই পুদিনা খাওয়া উপকারি।

আরও পড়ুনঃ  ৮ টি কালমেঘ পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ

11. ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করেঃ 

পুদিনায় উপস্থিত ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে শরীর নানা সংক্রমণ থেকেও মুক্ত থাকে। পুদিনায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।

আশা করি বুঝতে পারলেন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা কতটা। পুদিনা পাতা খেতেও বেশ সুস্বাদু। তাই দেরি না করে নিজেকে সুস্থ রাখতে আপনার খাবারের তালিকায় আজই এই পাতাটি যোগ করুন।

আরও পড়ুনঃ গ্রিন টির গুণাগুণ যা আপনাদের অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন

সারকথাঃ

পুদিনা পাতার চাটনি খেতে খুব সুস্বাদু। চাটনির মাধ্যমেও এটি খাওয়া যায়।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

প্রঃ পুদিনা পাতা কেমন ভাবে খেতে হবে?

উঃ পুদিনা পাতা স্যালাড, চাটনি বা বিভিন্ন রান্নার মাধ্যমে খাওয়া যেতে পারে অথবা পুদিনা পাতার চা তৈরি করেও খেতে পারেন।

প্রঃ পুদিনা পাতা দিয়ে ব্রাশ কীভাবে করা যায়?

উঃ পুদিনা পাতা গুঁড়ো করে ব্রাশ করতে পারেন।

প্রঃ প্রতিদিন কি পুদিনা পাতা খাওয়া যেতে পারে?
উঃ হ্যাঁ, প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় পুদিনা পাতা রাখা যেতে পারে তবে তা স্বল্প পরিমাণে। প্রতিদিন পুদিনা পাতা খাওয়া হাঁপানি রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here