সহজেই ব্লাড সুগার কমানোর উপায় জেনে রাখুন

ব্লাড সুগার কি

বর্তমানে গবেষণা করলে দেখা যায় প্রতেকটি ঘরে অন্তত একজন করে সুগারে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। সুগার এখন মহামারী আকার ধারন করেছে। এটি এমন একটি রোগ যা মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সুগার বেড়ে গেলে যেমন সমস্যা আবার একেবারে কমে গেলেও কিন্তু বিপদ। তাই দরকার নিয়ন্ত্রনে রাখা। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাবারের তালিকার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা। এবং খাবারের পাশাপাশি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনি সুগার নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। তাই আজকের এই নিবন্ধে আপনাদের সহজেই ব্লাড সুগার কমানোর উপায় জানাব যা নিয়মিত অনুশীলন করলে আশাকরি ভালো রেজাল্ট পাবেন।

Read more: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেথি

ব্লাড সুগার কি (What is blood sugar) 

যখন কোনও ব্যক্তির রক্তে গ্লুকোজ বা রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হয়, তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে। ব্লাড সুগার বা গ্লুকোজ হল রক্তের প্রধান চিনি। আমরা যে খাবারটি খাই তার থেকে গুলুকজ পেয়ে থাকি। এই চিনি শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স এবং শরীরের অঙ্গ, পেশী এবং স্নায়ুতন্ত্রের পুষ্টি সরবরাহ করে।

Read more: প্রথম পর্যায়ে ১০ টি ডায়াবেটিসের লক্ষণ

সুগার লেভেল বাড়ার কারন

সুগার লেভেল বাড়ার কারন (Reasons for rising sugar levels) 

সুগারের লেভেল বিভিন্ন কারনে বেড়ে যায়।

  • ঔষধ বা ইনসুলিনের ডোজ সঠিক না থাকলে।
  • ক্রমাগত কাজ করলে।
  • ডায়েট এবং ব্যায়াম না করার জন্য।
  • শরীরে ইনফেকশন থাকলে সুগারের লেভেল বৃদ্ধি পায়।

Read more: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য টিপস

সহজেই ব্লাড সুগার কমানোর উপায় (Easy way to lower blood sugar) 

১. নিয়মিত হাঁটুন (Walk regularly) 

নিয়মিত হাঁটুন

ব্লাড সুগার কমানোর উপায় আলোচনা করতে গেলে আমরা হাঁটার কথা এড়িয়ে চলতে পারি না। নিয়মিত ২৫-৩০ মিনিট হাঁটলে সুগার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম ওজন হ্রাস করতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারেন।

Key point: নিয়মিত হাঁটলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং আপনার পেশী রক্ত থেকে শর্করা নিতে সাহায্য করে। এবং ব্লাড সুগারের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।

২. মিষ্টিযুক্ত খাবার ত্যাগ করুন (Avoid sweet foods)

মিষ্টিযুক্ত খাবার ত্যাগ করুন

মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া সুগারের রোগীদের একদমই উচিত নয়। বিশেষত চিনি। চিনি ব্লাড সুগারের লেভেল হাই করে দেয়। চিনি ছাড়া চা পান করুন। এছাড়া আইসক্রিম, ফাস্ট ফুড খাবেন না। কারন এই খাবার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রায় ক্ষতি করতে পারে। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Read more: ১০ টি ডায়াবেটিসের লক্ষণ

৩. প্রচুর পরিমাণে জল খান (Drink plenty of water) 

প্রচুর পরিমাণে জল খান

নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে আপনার ব্লাড সুগার সুস্থ সীমায় থাকতে সহায়তা করবে। সুগারের রোগীদের শরীর হাইড্রেট রাখা প্রয়োজন। আর তা সম্ভব পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পানের মাধ্যমে। নিয়মিত জল পান করলে রক্ত পুনরায় হাইড্রয়েট হয়, রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে ।

Key point: এক পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা বেশি জল পান করে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার ঝুঁকি কম থাকে ।

৪. টেনশন করা ছাড়ুন (Release the tension) 

টেনশন করা ছাড়ুন

অতিরিক্ত চিন্তা করলে ব্লাড সুগারের উপর প্রভাব পড়ে। ডাক্তারদের মতে হাই সুগারের অন্যতম কারন হল অতিরিক্ত টেনশন। অতিরিক্ত টেনশন করলে শরীরে চাপ পড়ে এবং হরমোনগুলি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। তাই রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করুন। এতে শরীরে কর্টিসোল হরমোনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং ব্লাড সুগারের ঝুঁকি কমবে ।

Key point: ব্যায়াম করলে মনে চাপ মুক্ত করা যায়। তাই আপনি যদি কোন কারনে অতিরিক্ত টেনশন করেন। তাহলে নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন করুন। এছাড়াও যোগব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।

৫. খাদ্য তালিকা সঠিক রাখুন (Keep the food list accurate)

খাদ্য তালিকা সঠিক রাখুন

সুগারের আক্রান্ত রোগীদের অতিরিক্ত ভাত খাওয়া ভালো নয়। অতিরিক্ত পরিমাণ ভাতের পরিবর্তে পেট ভর্তি রাখতে বেশি করে সবজি খান। এছাড়াও খাবারের তালিকায় ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। বার্লি, ভুট্টা, ওটমিল, ব্রাউন রাইস, বাজরা ইত্যাদি শস্য জাতীয় খাদ্য সুগারের রোগীদের খাবারের তালিকায় রাখা উচিত। শস্য জাতীয় খবারে আঁশ থাকে যা সুগারের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

চায়ের পরিবর্তে গ্রিন টি খেতে পারেন। গ্রিন টি উচ্চ পরিমাণে পলিফেনল পাওয়া যায়। যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একটি ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিতে পারেন। তবে একবারে অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে বার বার অল্প পরিমাণে খাবেন।

Key point: নিয়মিত ক্রোমিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দেহের ঘাটতি প্রতিরোধ করে এবং ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে।

6. মেথির বীজ খাবেন (Eat fenugreek seeds)

মেথির বীজ খাবেন

মেথির বীজ ফাইবারের একটি মহান উৎস, যা রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে। অনেক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে মেথির বীজ সুগারের রক্তচাপ কমিয়ে আনতে সক্ষম।

Read more: হাই ব্লাড প্রেসার লক্ষণ

7. সঠিক ঘুম (Proper sleep) 

সঠিক ঘুম

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম দেহের ক্লান্তি এবং চাপ দূর করতে সক্ষম। অতিরিক্ত চাপের কারনে সুগার হাই হয়ে যায়। তাই আপনি যদি নিজের সুগার নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকতে চান তাহলে সঠিক ঘুম এবং বিশ্রামের বিশেষ প্রয়োজন।

Read more: গ্রিন টির গুণাগুণ যা আপনাদের অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন

নিজেরাই একটু সতর্ক হলে সুগারের মতো মারাত্মক রোগের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। সুগার কমানোর উপায় নিবন্ধে এই উপায়গুলি অবলম্বন করে চললে আপনি আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী এবং সঠিক সময় ঔষধ গ্রহণ করুন।

Key point: সুগারের রোগীদের ডায়েট চার্ট মেনে চলা অত্যন্ত আবশ্যিক।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

Q. সুগারের রোগীদের মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া কি একদমই বারণ?

A. সুগারের রোগীদের মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া বারণ। তবে কোন কোন মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া একদমই যাবে না, তা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিন।

Q. মেথির বীজ কি সুগারের রোগীদের জন্য ভালো?

A. মেথির বীজ সুগারের রোগীদের জন্য খুবই উপকৃত।

Q. একটি সুগারের রোগীর নিয়মিত কতক্ষণ হাঁটা উচিত?

A. একটি সুগারের রোগীকে নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।

4 Comments

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here