পেশা হিসাবে ব্যবসা একটি ভালো মাধ্যম। ভিন্ন ধরণের ব্যবসা রয়েছে। ৬০ শতাংশ মানুষ এই পেশাটিকে নিজের ক্যারিয়ার হিসাবে আপন করে নেয়। ব্যবসা বড়ো, মাঝারি অথবা ছোট হোক, সব ধরনের ব্যবসার কলা কৌশল এবং ব্যবসার নিয়ম কানুন মেনে, সঠিক পদ্ধতি পরিচালনা করলে সাফল্য পাওয়া যায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই। কিন্তু তার আগে নিজেকে ভালোভাবে মনস্থির করতে হবে। আপনি যদি ব্যবসা করতে ইচ্ছুক থাকেন, তাহলে আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হন, যে ব্যবসাটিকে মাধ্যমেই নিজের ক্যারিয়ার গড়বেন।
ব্যবসায় সঠিক পরিকল্পনাই একজন ব্যবসায়ীকে তার নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। হতে পারে ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, কিন্তুই তাই বলে অতিরিক্ত মূলধন ব্যবসায় খাটালেই আপনি সাফল্য পাবেন এটা ভাবা ভুল।
Read more: বন্ড কি এবং তার প্রকারভেদ
ভুল দিক নির্দেশ ব্যবসা পরিচালনার জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে সঠিক ভাবে পরিকল্পনা করে নেওয়া প্রয়োজন এবং ব্যবসার নিয়ম কানুন জেনে নেওয়া একজন ব্যবসায়ী মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক। তাই এই নিবন্ধ থেকে ব্যবসা আরম্ভ করার আগে ব্যবসার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনে নিন।
Read more: কেমন হবে নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা
ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে যে সমস্ত কাজকর্ম করতে হবে
-
সিধান্ত গ্রহণঃ
ব্যবসা আরম্ভ করার আগে আপনার সিধান্ত নিতে হবে। আপনি কেমন ধরণের ব্যবসা করতে চান অথবা কিসের ব্যবসা করবেন। ব্যবসার বিষয়বস্তু স্থির হয়ে গেলে মূল কাজের দিকে অগ্রসর হতে হবে। ভিন্ন ধরণের ব্যবসা হয়, যেমন ট্রেডিং, শিল্প, উৎপাদনমূলক অথবা কমিশনভিত্তিক। আপনি কোন ব্যবসাটি করতে চান সেটা প্রথমে মনস্থির করবেন।
Read more: পুঁজি বাজার বলতে কি বোঝায়?
-
মূলধন জোগাড়ঃ
ব্যবসা যেমনি হোক না কেন, মূলধন মুখ্য বিষয় না হলেও বড় বিষয়। কারণ কোন কিছু করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। এর জন্য আপনি যেই ব্যবসা করবেন মনস্থির করছেন, তার জন্য যতটুকু অর্থের প্রয়োজন হবে আগে থেকেই গুছিয়ে রাখবেন। না হলে ব্যবসার মাঝপথে গিয়ে বাধা আসতে পারে।
-
স্থান নির্দিষ্টঃ
ব্যবসা করার জন্য একটি নিরাপদ স্থান দরকার। স্থান চয়েস করার সময় প্রথমে মাথায় রাখবেন, স্থানটি আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক কিনা। সেখানে থেকে ক্রেতা বা কাস্টমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য উপযুক্ত কিনা অথবা স্থানটি জনপ্রিয় কতটা। এই সমস্ত বিষয়বস্তু মাথায় রেখে, ব্যবসা আরম্ভ করার জন্য অফিস অথবা কারখানা অথবা দোকান তৈরি করার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্দিষ্ট করবেন।
Read more: ব্যবসা পরিকল্পনা কি
-
ব্যবসায় মালিকনা নিশ্চিতঃ
ব্যবসা ভিন্ন রূপে করা যায়। আপনি একা করতে পারেন বা কর্মচারী রেখে করতে পারেন অথবা যৌথ (পার্টনারশিপ) ভাবে করতে পারেন। ব্যবসা করার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা হয়ে গেলে আপনাকে সিধান্ত নিতে হবে কীভাবে ব্যবসাটা করবেন।
যেইভাবেই শুরু করুন না কেন, সঠিক সিধান্ত নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। যদি একক মালিকনায় করেন তাহলে পুরোপুরি আপনার উপর নির্ভর করছে। আর যদি পার্টনারশিপে বা যৌথ মালিকনায় করতে চান, তাহলে পার্টনার কাকে করবেন সেটা আগে ঠিক করতে হবে। কারণ যৌথ মালিকনার ক্ষেত্রে পার্টনার হতে হবে উপযুক্ত। তাই ঠাণ্ডা মাথায় বিশ্বাসযোগ্য পার্টনার নির্বাচন করবেন।
-
ব্যবসায় নাম নির্বাচনঃ
নাম ছাড়া মানুষ যেমন অসম্পূর্ণ ঠিক তেমনিই নামহীন ব্যবসা অসম্পূর্ণ। যে কোন ব্যবসা পরিচলনা করার জন্য বিশেষ নামের প্রয়োজন হয়। কারণ আপনার ব্যবসা যদি দেশ অথবা দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে চান, তাহলে দরকার একটি সুন্দর ও সহজ নাম। তাই ব্যবসা আরম্ভ করার আগে উপযুক্ত নাম নির্বাচন করবেন। নামটি খুব জটিল দেওয়ার প্রয়োজন নেই নাম হতে হবে সহজ এবং অর্থপূর্ণ।
Read more: মনোপলি বাজার কি এবং এর বৈশিষ্ট্য
-
ট্রেড লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশনঃ
যে কোন কাজের সাফল্যে তখনি সম্ভব যখন আপনি সঠিক পথে এক কথায় সৎ পথে পরিচলনা করবেন। ট্রেড লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ব্যবসা আইনত বৈধ নয়। তার ব্যবসার আরম্ভ করার আগে সবথেকে জরুরী কাজ হল ট্রেড লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন করানো।
-
সঠিক সেবা বা পণ্য বাছাই করাঃ
আপনার মূলধনের পরিমাণ নিশ্চিত করে পণ্য বা সেবা ক্রয় করবেন। আপনি যে পণ্যগুলি বা পরিষেবাগুলি কেনার জন্য বাছাই করবেন সেগুলি যেন বাজারে চাহিদা থাকে সেটা সন্ধান রাখতে হবে। আপনি যেই দামে পণ্য কিনবেন তার চেয়ে একটু বেশি দামে পণ্য বিক্রি করবেন। আপনার খরচ এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে পার্থক্য খুব কম হলে, আপনার ব্যবসার ক্রমবর্ধমান অসুবিধা হবে।
উপরের প্রাথমিক পর্যায়ে কাজকর্মগুলি সম্পূর্ণ করার পর আপনি ব্যবসা আরম্ভ করতে পারেন। কিন্তু তার আগে ব্যবসার নিয়ম কানুন জেনে নিতে হবে। ব্যবসা আরম্ভ করার আগে প্রাথমিক চিন্তা ধারাগুলি তো জেনে গেলেন এবার নিয়ম কানুনগুলি নীচের তালিকা থেকে জেনে নিন।
Read more: সরকারি বন্ড কি এবং এই বন্ড কি সত্যিই ঝুঁকি মুক্ত বন্ড?
-
ব্যবসার নিয়ম কানুন (Rules of business)
ব্যবসা পরিচলনার জন্য ট্রেড লাইসেন্সঃ
ট্রেড লাইসেন্স পৌর কর্পোরেশন কর্তৃক জারি করা একটি লাইসেন্স, যা আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়। আইনগত ভাবে অথবা বৈধ ভাবে ব্যবসা পরিচলনার জন্য ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। ট্রেড লাইসেন্স মানে হল ব্যবসায় নিরাপদ। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচলনা করলে যে কোন মুহূর্তে আইনি ঝামেলায় জড়াতে পারেন। তাই ব্যবসার নিয়মকানুন মেনে চলতে হলে ট্রেড লাইসেন্স থাকা মাস্ট।
ট্রেড লাইসেন্স নানা ভাবে পাওয়া সম্ভব। আপনি যদি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাস করেন, তাহলে আপিনি সিটি কর্পোরেশন থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে পারেন নতুবা আপনি যদি মিউনিসিপ্যাল এলাকায় (পৌরসভা এলাকা) বসবাস করেন তাহলে আপনি পৌরসভার কাছ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারেন বা অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্য জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন।
ব্যবসা পরিচলনার জন্য কোম্পানির রেজিস্ট্রেশনঃ
আপনি যদি ঠিক করেন পাবলিক অথবা প্রাইভেট কোম্পানিতে ব্যবসা করেন, তাহলে ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের নামে আপনাকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে এবং রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিতে হবে।
Read more: শেয়ার বাজার কাকে বলে এবং তার সম্পর্কিত ধারণা
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ-
Q. ব্যবসার জন্য কত টাকার প্রয়োজন?
A. সেটা নির্ভর করছে আপনি কেমন ধরণের ব্যবসা করবেন তার উপর। কোন ব্যবসায় স্বল্প অর্থের প্রয়োজন হয় আবার কোন ব্যবসায় বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়।
Q. কোন ধরণের ব্যবসায় লাভ বেশি?
A. ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচলনা করলে যে কোন ব্যবসায় লাভ করা সম্ভব।
Q. ট্রেড লাইসেন্স কি ব্যবসার জন্য নিতেই হবে?
A. আইনি ঝামেলায় জড়াতে না চাইলে এবং বৈধ ভাবে ব্যবসা করতে চাইলে লাইসেন্স দরকার।
Q. ব্যবসা করার আগে পরিকল্পনা না করলে কি হতে পারে?
A. ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সাফল্যে পেতে হলে পরিকল্পনা থাকা উচিত।
আমি এখানে কাজ করতে চাই
আমি আপনাদের সাথে আমি এক মত