আমরা নিজের অর্থ ভিন্ন রকমভাবে জমিয়ে রাখি। কখনো তা ঘরে আবার কখনো বিভিন্ন সেভিং একাউন্টে। তবে আরও একভাবে টাকা সঞ্চয় করে বাড়ানোর ভালো বিকল্প রয়েছে। নামটা যদিও সবারই এখন পরিচিত মিউচুয়াল ফান্ড। আমাদের উপার্জিত অর্থ আমরা নানা খাতে বিনিয়োগ করি। কিন্তু হয়তো কখনো ভেবে দেখি না, আমরা সেখান থেকে উপযুক্ত রিটার্ন ফেরত পাচ্ছি কিনা বা সেখানে ঝুঁকি আছে কিনা?
ব্যাংকের সেভিং একাউন্ট নিরাপদ কিন্তু বাইরে অন্যান্য যে খাতে টাকা সঞ্চয় করি সেগুলো নিরাপদ। শুধুমাত্র মিউচুয়াল ফান্ডই না যেকোনো ফান্ডে বা অন্যান্য খাতে টাকা বিনিয়োগ করার আগে আমাদের সকলের উচিত সেই খাতের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে অর্থ বিনিয়োগ করা।
Read more: ইক্যুইটি ফান্ড বলতে কি বোঝায় এবং কত প্রকার
আমরা সকলেই বিনিয়োগ করে অর্থ পরিমাণ বাড়াতে চাই। সেক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ড ভালো মাধ্যম হতে পারে। তবে তাই বলে এই নয় মিউচুয়াল ফান্ডের ভাল মন্দ না জেনেই বিনিয়োগ করে দেবেন। বিনিয়োগ করার আগে এর সম্পর্কিত তথ্য জেনে নিন এই ফান্ডে বিনিয়োগের লাভ কি অথবা ঝুঁকি কতটা? তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগ করবেন। তাই আজকের নিবন্ধনে মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য আপনাদের জানাব যা আপনাদের বিনিয়োগ করতে সাহায্য করবে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
Read more: বন্ড কাকে বলে এবং এটি কীভাবে কাজ করে
মিউচুয়াল ফান্ড কি (What is a mutual fund)
মিউচুয়াল ফান্ড হল অর্থ সঞ্চয় এবং অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহীত অর্থের ভাণ্ডারকে বোঝায়। এই সংগ্রহীত অর্থ তারা বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে বা খাটাবে। যেমন- তরল সম্পদ, তহবিল, ঋণ তহবিল ইত্যাদি। এই বিনিয়োগের উপর অর্জিত লভ্যাংশ সমস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। মিউচুয়াল ফান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচলনা করলেও তাদের SEBI কাছে নথিভুক্ত করতে হয়।
মিউচুয়াল ফান্ডগুলি SEBI অর্থাৎ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা নিবন্ধিত হয়। যা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য অগ্রাধিকার দেয়। অনলাইনের মাধ্যমে বন্ড বা শেয়ার কেনা বেচা করা যেমন সহজতর, ঠিক তেমনি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা সহজ।
Read more: শেয়ার ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য
মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা (Benefits of Mutual Funds)
-
জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা –
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল তহবিলে বিনিয়োগের পাশাপাশি আমরা জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। বিশেষ করে যারা শেয়ার বাজার সম্পর্কে তেমন তথ্য জানে না এবং তারা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে অনেক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে যার ফলে তাদের স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ সাফল্য পায়।
-
ছোট মূলধন বিনিয়োগে সুবিধা –
যদি এসআইপি এর মাধ্যমে প্রতি মাসে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে, যাদের সঞ্চয় হিসাবে ছোট পরিমাণ আমানত আছে তারা এই ক্ষুদ্র পরিমাণটি মিউচুয়াল ফান্ডের সহায়তায় সঠিক ভাবে বিনিয়োগ করতে পারে।
-
Diversification এর সুবিধা –
মিউচুয়াল ফান্ড নিজেই একটি Diversification বিনিয়োগ, যেখানে মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্দেশ্য বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে এবং সেক্টর অনুসারে স্টক বিনিয়োগ করা হয় এবং বিনিয়োগকারী স্বাভাবিকভাবেই Diversification সুবিধা পায়।
-
সময় বাঁচেঃ
একবার আপনি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে, তারপরে তা ম্যানেজারের দায়িত্ব হয়, ফান্ড হাউস এবং ফান্ড ম্যানেজার তাদের সময় ব্যয় করে এবং সিধান্ত নেয় কোন স্টকে কখন বিনিয়োগ করতে হয় তার কত সময় ধরে করতে হবে। এভাবে, একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর সময় বাঁচানো হয় এবং সে সহজেই তার নিজস্ব পেশার সঙ্গে নিযুক্ত থাকতে পারে এবং আপনার বিনিয়োগের দেখাশুনোর দায়িত্ব নেওয়ার ভার পড়ে ফান্ড হাউস উপর।
-
সংগঠিত মিউচুয়াল ফান্ড মার্কেটের সুবিধা –
ভারতে মিউচুয়াল ফান্ড একটি সুনিয়ন্ত্রিত এবং সংগঠিত বিনিয়োগ বাজার, যার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, সেবি এবং স্টক মার্কেট। এভাবে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির সহায়তায়, সাধারণ বিনিয়োগকারী এই সংগঠিত বাজারে বিনিয়োগের সুবিধা পায়।
-
ট্যাক্সের সুবিধা –
মিউচুয়াল ফান্ড থেকে লভ্যাংশ পায় তা ট্যাক্স ফ্রি হয়, যার জন্য বিনিয়োগকারীরা কর মুক্ত বিনিয়োগের সুবিধা পায়।
Read more: প্রাইমারী শেয়ার বাজার
কত ধরণের মিউচুয়াল ফান্ড আছে (How many types of mutual funds are there)
বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে, সম্পদ এবং কাঠামোর ভিত্তিতে ভারতে অনেক ধরণের মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
-
ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডঃ
এই ধরণের মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতে বিনিয়োগ সরাসরি স্টকগুলিতে হয়। যদি এই স্কিম থেকে উচ্চতর রিটার্ন পাওয়ার সম্ভবনা থাকলে স্বল্পমেয়াদীর ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকতে পারে কারণ এটির ভাগ্য পুরোপুরি ভাবে স্টক মার্কেট কীভাবে সঞ্চালিত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করছে। শেয়ার মার্কেট ধ্বস নামলে বিনিয়োগের টাকা মার যেতে পারে।এর জন্য এই স্কিমে বিনিয়োগ করার জন্য বিনিয়োগকারীকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সিধান্ত নেওয়া উচিত। অন্তত পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত। আর সবথেকে ভালো উপায় এই স্কিমে টাকা বিনিয়োগ না করা।
-
ঋণ (Debt) মিউচুয়াল ফান্ডঃ
এই প্রকল্পে বিনিয়োগগুলি ঋণ সিকিউরিটিজগুলিতে হয়। আপনার যদি স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য অর্জন করার উদ্দেশ্যে থাকে তাহলে এই স্কিমটি বেছে নেওয়া সর্বোত্তম হবে। কারণ পাঁচ বছরের নিচে স্বল্পমেয়াদী স্কিমগুলিতে শ্রেষ্ঠ। এই স্কিমগুলি ইক্যুইটি মিউচুয়াল স্কিমের থেকে নিরাপদ এবং সাধারণ আয় প্রদান করে। তাই স্কিমে টাকা রাখলে টাকা ফেরত পাওয়া যায় নিশ্চিন্তে।
-
হাইব্রিড বা ব্যালেন্স মিউচুয়াল ফান্ডঃ
এই স্কিমগুলি বিভিন্ন ধরণের সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। এছাড়া এই স্কিমগুলি ঋণ এবং ইক্যুইটি মিশ্রণে বিনিয়োগ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়সীমার শেষে বিনিয়োগকারীকে মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত দেওয়া হয়ে থাকে। শৈল এবং বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে এই স্কিমগুলিকে ছয়টি ধরণে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
-
মানি মার্কেট মিউচুয়াল ফান্ডঃ
এই ধরনের স্কিমগুলি ট্রেজারি বিল, কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ করা হয়। এই স্কিমটি ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করা হয়। এই ধরনের স্কিমের লক্ষ্য হল স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ। যারা প্রচুর ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চান তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প। মানি মার্কেট ফান্ডকে লিকুইড ফান্ডও বলা হয়ে থাকে।
-
সূচক (index) ফান্ডঃ
এই ফান্ডগুলি এক ধরনের বিনিয়োগ, যা বৈদশিক মুদ্রার সূচকের উপর প্রতিনিধিত্ব করে। সূচকের ওঠা – নামার উপর নির্ভর করে মিউচুয়াল ফান্ডের ওঠা এবং নামা। ইনডেক্স ফান্ডগুলি সাধারণ মিউচুয়াল ফান্ডগুলির চেয়ে কম খরচে কারণ পোর্টফলিও ম্যানেজারকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সিধান্ত নেওয়ার জন্য বেশি গবেষণা করতে হয় না।
-
ট্যাক্স সেভিং ফান্ডঃ
এই ফান্ডগুলি সাধারণত ইক্যুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করে। ট্যাক্স সেভিং ফান্ড আয়কর আইনে কর কাটানোর জন্য দাবি করতে বিনিয়োগকারীদের যোগ্য করে তোলে। এই ফান্ডে ঝুঁকি সম্ভবত উচ্চতর দিক থেকে থাকে। একইভাবে ফান্ডের কর্মক্ষমতা একই হলে উচ্চতর আয় দেওয়া হয়।
-
ফান্ড টু ফান্ডঃ
এই ফান্ডগুলি অন্যান্য মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে এবং এই ফান্ডের রিটার্ন ফান্ডের সামগ্রিক কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
-
গিল্ট ফান্ডঃ
এই ধরনের ফান্ডগুলি সুরক্ষিত কারন এখানে সরাসরি সরকারি সিকিউরিটিজে টাকা খাটানো হয়। তাই আপনার উপার্জিত অর্থ থাকে নিরাপদে। তাই এই ধরণের ফান্ডগুলি নিরাপদ ফান্ড।
-
ওপেন এন্ডেড ফান্ড (open ended fund):
এই মিউচুয়াল ফান্ডগুলি সারা বছর জুড়ে কেনা যাবে এমন ইউনিটের সঙ্গে বিনিয়োগের চুক্তি করে। নেট সম্পদ মূল্যের উপর ক্রয় স্থায়ী হয়। এই তহবিলের বিনিয়োগকারীদের তরলতা প্রস্তাব দেয়।
-
ক্লোজ এন্ডেড ফান্ড (close ended fund):
এই মিউচুয়াল ফান্ডগুলি শুধুমাত্র প্রাথমিক সময়ের মধ্যে কেনা যাবে এমন ইউনিটগুলির সাথে বিনিয়োগ চুক্তি।ইউনিট একটি নির্দিষ্ট মেয়াদপূর্তির তারিখে বিনিময়ের জন্য যোগ্য। তরলতা প্রদানের জন্য, এই স্কিমগুলি ট্রেডিং উদ্দেশ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত।
Read more: শেয়ার ও স্টকের মধ্যে পার্থক্য কি
মিউচুয়াল ফান্ডে যেভাবে বিনিয়োগ করবেনঃ
আপনি একটি মিউচুয়াল ফান্ডের ওয়েবসাইট থেকে বিনিয়োগ করতে পারেন। অথবা যদি আপনি চান আপনি একটি মিউচুয়াল ফান্ড উপদেষ্টা ভাড়া করতে পারেন।
আপনি যদি সরাসরি বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনাকে মিউচুয়াল ফান্ডের স্কিমে সরাসরি প্ল্যানে বিনিয়োগ করতে হবে। আর আপনি যদি মিউচুয়াল ফান্ড উপদেষ্টা মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে চান তাহলে মিউচুয়াল ফান্ডের রেগুলার প্ল্যানে বিনিয়োগ করতে হবে।
Read more: প্রেফারেন্স শেয়ার কত প্রকার
আপনি যদি নিজে সরাসরি বিনিয়োগ করেন তাহলে ওয়েবসাইটে যান অথবা আপনি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে অফিসেও যেতে পারেন। সেখানে গিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।
Key point
মিউচুয়াল ফান্ডে সুবিধা যেমন আছে তেমন ঝুঁকিও আছে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা বিনিয়োগ করা কী নিরাপদ?
A. টাকা ফেরত এবং ক্যাপিটাল সুরক্ষিত হিসাবে নিরাপদ।
Q. গিল্ড ফান্ডে টাকা খাটানো কী সুরক্ষিত?
A. মিউচুয়াল ফান্ডগুলির মধ্যে গিল্ড ফান্ড সবচেয়ে সুরক্ষিত। আপনি নিশ্চিন্তে এতে টাকা খাতাতে পারেন।