শীতকালীন ফুল | রঙিন ও বাহারি ফুলের বৈশিষ্ট ও টবে চাষ

ফুলের বৈশিষ্ট

শীত মানেই প্রাণের ছোঁয়া। হিমের কনকনে ঠাণ্ডা আর চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ ঢাকা প্রকৃতি, সঙ্গে পুলিপিঠে। যেন এক অপূর্ব পরিবেশের মেল বন্ধন। তার সঙ্গে বাড়তি পাওনা বাহারি রঙের শীতকালীন ফুল। এমন কোন মানুষ নেই যে ফুল ভালবাসে না।

শীতকালীন ফুল (Winter flowers)

ফুল হল পবিত্রতা ও ভালবাসার প্রতীক। শীতকালীন ফুল লাগানোর উপযুক্ত সময় হল নভেম্বর মাস। শীতকালে বিভিন্ন ধরণের নাম না জানা, রঙিন ফুল ফোটে। অনেকেই টবে বা বাগানে রঙিন ফুল লাগাতে পছন্দ করেন। ফুল প্রেমিকদের জন্য রইল কিছু রঙিন শীতকালীন ফুল এর বৈশিষ্ট।

আরও পড়ুনঃ ছোটোদের জন্য ১০ টি মজার বাংলা কাটুন

শীতকালীন ফুল (Winter flowers)

১. ডালিয়া ফুল (Dahlia flowers) 

ডালিয়া ফুল

শীতকালীন ফুল এর মধ্যে ডালিয়া খুব বিখ্যাত। বর্ণ বৈচিত্র, বড় আকারের ও নিবাসের জন্য এটি জনপ্রিয়। ডালিয়া গাছের উচ্চতা ১০০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ডালিয়া বিভিন্ন রঙের হতে পারে। এই ফুলের নামকরণ হয়েছিল সুইডেনের আন্দ্রেডালের নামানুসারে।

সিঙ্গেল, ডবল শো ফ্যান্সি, রেড মনার্ক, ক্যাকটাস, স্টার প্রভৃতি উন্নত মানের ডালিয়া। এই ফুলগুলি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে।

Key point:

লাল রঙের ডালিয়া চল খুব বেশি।

বাড়ির টবে ডালিয়া ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

বাড়ির টবে ডালিয়া ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

  1. বাড়িতে ডালিয়া চাষের জন্য একটি বড় আকারের টব জোগাড় করতে হবে।
  2. দোআঁশ মাটি এই ফুল চাষের জন্য ভালো।
  3. ছোট টব হলে ডালিয়ার কাটিং চারা কোন নার্সারি থেকে নিয়ে এসে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে।
  4. গাছের সাথে কোনো শক্ত কাঠি বেঁধে দিন। যাতে গাছ নুইয়ে না পড়ে।
  5. এক সপ্তাহ অন্তর অন্তর গাছের গোড়ার রল সার অর্থাৎ সরষের খোল পচা জল দিতে হবে।
  6. মাঝে মাঝে ডগা ছেঁটে দিতে হবে।
  7. ধীরে ধীরে গাছটি বেড়ে উঠবে।

আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের জন্মদিনের উপহার দেওয়ার আইডিয়া

২. সূর্যমুখী (Sunflower) 

সূর্যমুখী

এটি শীতকালীন ফুল। এটি দেখতে সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকার জন্য এর নাম সূর্যমুখী। এর বীজ হাঁস, মুরগী খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবী বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাষ হয়। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেলের তুলনায় ভালো।  এই গাছ ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

Key point

সূর্যমুখী তেল হৃদরোগের পক্ষে উপকারি।

বাড়ির টবে সূর্যমুখী ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

বাড়ির টবে সূর্যমুখী ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

  1. নার্সারি থেকে গাছ এর জন্য ভালো বড় বীজ কিনে আনতে হবে।
  2. অল্প ভেজা ভেজা মাটি প্রয়োজন। তাঁর মধ্যে জৈব সার মিশিয়ে মাটিটিকে তৈরি করে নিতে হবে।
  3. টবে মাটিতে বীজটি পুঁতে দিন।
  4. রোজ দুবেলা করে জল দিতে হবে
  5. গাছের গোড়ায় জল জমতে দেওয়া যাবে না।
  6. মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে জল দেবেন না।
  7. একমাস হওয়ার পরই গাছের গোড়ায় বাড়তি সার দিতে হবে।
  8. ২ মাস পরিচর্যা করলেই গাছ বড় হবে।

৩. চন্দ্রমল্লিকা (Chandramallika)

চন্দ্রমল্লিকা

সাধারণত অক্টোবর – নভেম্বর মাসে এই গাছের ফুল ফোটে। এই ফুল প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরে ধরনের হয়ে থাকে। এই গাছের ফুল প্রায় ২০-২৫ দিন তাজা থাকে।

এই গাছ ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চন্দ্রমল্লিকার আদি নিবাস চীনে। চীনে এটি ঔষুধিগাছ হিসেবে পরিচিত। ফুলগুলি সাধারণত গোলাকার, পুরু ধরনের হয়ে থাকে। পাঁপড়িগুলি লম্বা, উঁচু ও সরু হয়ে থাকে।

চন্দ্রমল্লিকা

বাড়ির টবে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

  1. চন্দ্রমল্লিকার গাছ থেকে ডাল কেটে ছোট পাত্রের মধ্যে জল দিয়ে রেখে দিন।
  2. শিকড় গজিয়ে গেলে টবে মাটির মধ্যে পুঁতে দিতে হবে।
  3. মাটির সঙ্গে সমপরিমাণ গোবর সার দিন।
  4. ফুলের জন্য দরকার ঝলমলে রোদ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া।
  5. নিয়ম করে জল ও সার দিতে হয়।

আরও পড়ুনঃ 15 টি বাস্তু টিপস ঘরের সুখ শান্তি বজায় রাখবে চিরকাল 

৪. কসমস (Cosmos) 

কসমস

কসমস বাহারি রঙের শীতের ফুল। এগুলি অধিকাংশ বিদেশি ফুল। কসমস গাছের ফুলগুলি বাগানে সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল ” কসমস বিপিন্নাতুস”।

এই ফুলগুলি বৈশিষ্ট হল একই গাছে বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটে ( যেমন- সাদা, গোলাপি, বেগুনি, লাল, কমলা, হলুদ ইত্যাদি। ফুলগুলি হালকা সুগন্ধি বিশিষ্ট। ফুলগুলি ৩-৪ সেন্টিমিটার চওড়া হয়ে থাকে। পাতাগুলি খাঁজকাটা হয়।

বাড়ির টবে কসমস ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

বাড়ির টবে কসমস ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

  1. সমপরিমাণ বাগানের মাটি, নদীর বালি মাটি, ভার্মি কম্পোস্ট (সারের দোকানে পাওয়া যাবেন) ভালোভাবে মিশিয়ে টবে ভরে রাখতে হবে।
  2. নার্সারি থেকে কসমস গাছ লাগিয়ে নিন।
  3. ২-৩ দিন ছায়ায় রেখে দিন।
  4. তারপর রোদের রেখে দিতে হবে।
  5. খুব দ্রুত এটি বড়ো হয় ও ফুল ধরে।
  6. এই গাছের রোজ জল দেওয়ার বা বিশেষ সার দরকার পড়ে না।
  7. এই গাছ রোদ ভীষণ পছন্দ করে।
  8. বেশি রোদ থাকলে গাছটিতে ফুল ভালো হবে।

৫. জিনিয়া (Zinnia) 

জিনিয়া

ধুসর সবুজ রঙের ক্ষুদ্রাকৃতি এই ফুল বেশ নজরকড়া। এই ফুলের গাছ ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। লাল, গোলাপি, বেগুনি, সাদা রঙের বৈচিত্রময়। এর আদি নিবাস মেক্সিকো।

বাড়ির টবে জিনিয়া ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

বাড়ির টবে জিনিয়া ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

  1. বীজের মাধ্যমে এই ফুলের বংশ বিস্তার ভালো হয়।
  2. নার্সারি থেকে জিনিয়ার চারা নিয়ে আসতে হবে।
  3. টবে গাছ রোপন করলে আপনাকে সাত দিন পর পর টবের গোড়ায় তরল সার দিতে হবে।
  4. উর্বর দো-আঁঁশ মাটি এ ফুল উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী।
  5. নিয়মিত জল দিতে হবে এবং ফুল শুকানো শুরু হলেই ফুল কেটে দিতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  কম খরচে ইউনিক ঘর সাজানোর টিপস

৬. গাঁদা (Marigold) 

গাঁদা

এই ফুলটি খুব জনপ্রিয়। বেশিরভাগ বাড়ির টবে বা বাগানে এই ফুল দেখা যায়। শীত হোক বা গরম সব সময় এই ফুল ফোটে। কিন্তু শীতকালে এর চাষটা বেশি। লাল, হলুদ, কমলা রঙের হয়ে থাকে। গাঁদা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন- চায়না গাঁদা, রক্ত গাঁদা, দেশি গাঁদা, বড় ইনকা গাঁদা প্রভৃতি।

বাড়ির টবে গাঁদা ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

বাড়ির টবে গাঁদা ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

  1. বাজার থেকে টব এবং গাঁদা ফুলের চারা কিনে আনুন।
  2. দোআঁশ মাটির সঙ্গে জৈব সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করে টবে ভরে নিন।
  3. টবের মাটিতে গাঁদা ফুলের চারা লাগিয়ে নিন।
  4. প্রতি সপ্তাহে একদিন অন্তত সরষে পচা জল দেবেন।
  5. প্রতিদিন সকাল- বিকেল জল দিন ধীরে ধীরে গাছ বৃদ্ধি পাবে এবং ফুল ফুটবে।

৭. গোলাপ (Rose) 

গোলাপ

গোলাপ সারাবছর এ চাষ হয়ে থাকে। ফুল প্রেমীদের পছন্দের ফুলের তালিকায় গোলাপ শীর্ষ স্থান দখল করে। লাল গোলাপ ভালবাসার প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত। এছাড়াও ভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।

অধিকাংশ ফুল প্রেমীরা বাড়ির টবে, বাগানে এই সুগন্ধি যুক্ত ফুল লাগান। বিদেশি গোলাপের মধ্যে – এলিজাবেথ, ব্ল্যাক প্রিন্স, রানি এলিজাবেথ, ইরান, রোজ গুজার্ড, কুইন এলিজাবেথ, জুলিয়াস রোজ জনপ্রিয়।

বাড়ির টবে গোলাপ ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

বাড়ির টবে গোলাপ ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

  1. নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে আনতে হবে।
  2. দো-আঁশ মাটি, গোবর সার বা কম্পোস্ট, পাতা পচা সার, একত্রে মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে।
  3. মাটি প্রায় এক সপ্তাহ রেখে দিন।
  4. তারপর টবে মাটি ভরে চারাটি বসিয়ে দিন।
  5. মরা ডালপালা ছেঁটে দিন।
  6. দু-তিনদিন অন্তর অন্তর জল দিতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে।

আরও পড়ুনঃ  জন্মদিনের উপহারের আইডিয়া

৮. ক্যামেলিয়া (Camellia) 

ক্যামেলিয়া

এটি একটি বিদেশি ফুল। সাধারণত ফুলটি সাদা ও লাল রঙের হয়ে থাকে। অনেকটা দেখতে গোলাপের মতো। এক স্তর বা বহু স্তর পাপড়ি যুক্ত হয়ে থাকে। চা গাছের মতো এর পরিচর্যা করতে হয়।

বাড়ির টবে ক্যামেলিয়া ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

এই ফুলটি সাধারণত বছরে একবারই ফোটে। একবছর সময় লাগে ফুল ফুটতে।

৯. প্যান্সি (Pansy) 

প্যান্সি

শীতের সব চাইতে সুন্দর ফুল হল প্যান্সি। এটি দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। এর গঠনটা অনেকটা আলাদা ধরনের, ফুলের নিচের দিকে তিনটি পাপড়ি থাকে আর উপরের দিকে দুটি।

আরও পড়ুনঃ গুড ফ্রাইডে পালন | Wishes, Messages, SMS, Quotes 

বাড়ির টবে প্যান্সি ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ

সাধারণত টবে এটি ভালো ফোটে। বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এই ফুলটি অসাধারণ।

Key point
এই ধরনের ফুলগুলি আপনার বাড়ির বাগানে হোক বা টবে, প্রাকৃতিক শোভাময় বাড়িয়ে তুলবে।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

Q. কসমস ফুলের জন্য কি মাটি প্রয়োজন? 

A. সমপরিমাণ বাগানের মাটি, নদীর বালি মাটি, ভার্মি কম্পোস্ট মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে।

Q. জিনিয়া ফুলের জন্য কেমন মাটি প্রয়োজন? 

A. উর্বর দো-আঁঁশ মাটি প্রয়োজন।

Q. চন্দ্রমল্লিকার ফুল কখন ফোটে?

A. চন্দ্রমল্লিকার ফুল অক্টোবর – নভেম্বর মাসে ফোটে।

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here