আমাদের জীবন অনিশ্চিত। কারণ আমরা কেউ বলতে পারব না কাল বা ভবিষ্যতে আমাদের জীবনে কি হতে চলেছে। বা আমরা কেউ বলতে পারি না যে কাল আমাদের কোন বড়সড় ক্ষতি হবে না। তবে নিজেরা চাইলে আমরা সেই সমস্ত ঝুঁকির হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি বীমাপত্রের মারফত। বীমা কি বলতেই আমাদের মাথায় প্রথমে যেটা আসে তা হল ভবিষ্যতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি হ্রাস।
ভবিষ্যতে কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত বীমা করানো। কোন কোম্পানি যদি কোন ব্যক্তির বীমা করে তাহলে সেই ব্যক্তির ভবিষ্যতে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকির দায়িত্ব বীমা কোম্পানির।
বীমা প্রকৃতপক্ষে বীমা কোম্পানি এবং বীমা ব্যক্তির মধ্যে একটি চুক্তিপত্র। যেই চুক্তিপত্র অনুযায়ী বীমা কোম্পানি বীমা ব্যক্তির কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রিমিয়াম হিসাবে গ্রহণ করে এবং ভবিষ্যতে বীমা ব্যক্তির ক্ষতি পূরণের শর্ত গ্রহণ করে।
আজকের আমাদের আলোচ্য বিষয় বীমা কি এবং তার সঙ্গে আমরা আপনাদের সঙ্গে কত প্রকারের বীমা রয়েছে তা শেয়ার করে নেব। আসুন তাহলে জেনে নিন বীমা কি এবং বীমার প্রকারভেদ।
আরও পড়ুন: জীবন বীমা পরিকল্পনা সুবিধা কী ও বীমা পলিসির ধরন
বীমা কি (What is insurance)
বীমা কি সহজ ভাষায় বোঝাতে বীমা হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোন বীমা কোম্পানি আপনার কোন রকমের আর্থিক ক্ষতি, অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, অথবা মৃত্যুর ঝুঁকির নিরাপত্তা প্রদান করে।
ভবিষ্যতে কোন ব্যক্তির জীবনে দুর্ঘটনা বা সম্পত্তির আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হলে বীমা কোম্পানি চুক্তি অনুযায়ী সেই আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে। অর্থাৎ ধরুন আপনার একটি গাড়ি রয়েছে এবং আপনি সেই গাড়ির বীমা করিয়েছেন। এবার ভবিষ্যতে আপনার গাড়ির কোন আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হল এবং সেই আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মাশুল পূরণ করবে বীমা কোম্পানি। আপনার গাড়ির ক্ষতিপূরণের টাকা বীমা কোম্পানি আপনাকে প্রদান করবে।
বাজারে প্রচুর বীমা রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরণের বীমা পলিসি রয়েছে। তবে আপনাকে বীমা করার আগে সেই সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। আপনাকে বীমার নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোন আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হলে আপনি বীমা কোম্পানির কাছে দাবি করলে আপনি ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত পাবেন। তাই আমাদের নিজেদের জীবনের ঝুঁকি হ্রাস করতে হলে বীমা করানো প্রয়োজন। তবে বীমা করানোর আগে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার বাজারে কত রকমের বীমা রয়েছে।
Key point
বীমা আমাদের ঝুঁকি বিহীন জীবনযাত্রার হাতিয়ার।
বীমা কত ধরণের হয় (How many types of insurance are there)
বীমা কি আমরা উপরের আলোচনায় বুঝতে পারলাম তবে বীমা কোম্পানি সদস্যরা আপনাকে বিভিন্ন ধরণের বীমা অফার করবে কেনার জন্য। তবে বীমা ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকলেও বীমা ভাগ বোঝাতে গেলে সাধারণত বলতে হবে বীমা দুই প্রকার। এক জীবন বীমা এবং অন্যটি সাধারণ বীমা। আর এই সাধারণ বীমা অনেক ধরণের রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সাধারন বীমা কি এবং এর শ্রেণীবিভাগ
-
জীবন বীমা কি (What is life insurance)
জীবন বীমা বলতে মানুষের জীবনের উপর যে বীমা করা হয়। জীবন বীমা হল বীমা কোম্পানি এবং বীমা ব্যক্তির মধ্যে একটি চুক্তিপত্র যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের শেষে বীমা কোম্পানি বীমাগ্রহীতাকে বা তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।
প্রথমত আর্থিক পরিকল্পনায় একজন ব্যক্তিকে জীবন বীমা কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়। কারণ মানুষের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই পরিবারের সদস্যের অসুস্থতায় বা যদি মৃত্যু ঘটে ,তাহলে গোটা পরিবারকে আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। এর জন্য পরিবারের কথা ভেবে আমাদের প্রত্যেকের জীবন বীমা নীতি গ্রহণ করা উচিত।
Key point
আজকাল মানুষ জীবন বীমা পলিসি গ্রহণ করে কারণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর যাতে তার পরিবার আর্থিক কিছু সবিধা পায় তার পলিসির শর্ত অনুযায়ী।
আরও পড়ুনঃ কারবার বা ব্যবসার ক্ষেত্রে বীমার প্রয়োজনীয়তা
-
সাধারনব বীমা কি?
কোন দুর্ঘটনাজনিত কারণে সম্পত্তি অথবা অন্য কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলে তার উপর যে বীমা করা হয় তাই হল সাধারণ বীমা। সাধারণ বীমা অনেক রকমের হয় যেমন – বাড়ির বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, গাড়ির বীমা, ভ্রমণ বীমা, কারবারের বীমা, ফসল বীমা ইত্যাদি।
-
বাড়ির বীমা (Home Insurance):
বাড়ির বীমা হল বাড়ির নিরাপত্তার জন্য যে বীমা করা হয়। আপনি যদি আপনার হোম ইনস্যুরেন্স কোন সাধারণ বীমার কোম্পানির দ্বারা করান তাহলে আপনার বাড়ি সুরক্ষিত থাকবে। হোম ইনস্যুরেন্স পত্র কেনার পর আপনার বাড়ির যদি কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাহলে সেই ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে বীমা কোম্পানি।
বাড়ির বীমা পলিসির মধ্যে আপনার বাড়ির যেকোনো ক্ষতি পলিসির কভারেজে অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন – প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি, অগ্নি, ভূমিকম্প, বিদ্যুৎ, চুরি, দাঙ্গা ইত্যাদি কারণে যেকোনো ক্ষয়ক্ষতি।
Key point
আপনার পরিশ্রমে তৈরি করা স্বপ্নের বাড়ির জন্য Home Insurance করে রাখা উচিত।
-
স্বাস্থ্য বীমা (Health Insurance):
মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য যে বীমা করা হয় তাকে স্বাস্থ্য বীমা বলা হয়। আজকাল দিনে পর দিন মানুষের রোগব্যাধি যেমন বাড়ছে তার সঙ্গে দ্রুত বাড়ছে চিকিৎসার খরচও। স্বাস্থ্য বীমা কভারজে মধ্যে বীমা সংস্থা চিকিৎসার সমস্ত খরচের দায় বহন করে।
অর্থাৎ আপনি যদি স্বাস্থ্য বীমা পলিসি কেনেন তাহলে আপনার যেকোনো চিকিৎসার এবং সার্জারি সমস্ত আর্থিক খরচ প্রদান করবে বীমা কোম্পানি। তার জন্য আপনাকে বীমা চুক্তি অনুযায়ী বীমা প্রিমিয়াম ভরতে হবে এবং তার পরিবর্তে আপনি যেকোন চিকিৎসার খরচের আর্থিক সুবিধা পাবেন। বিভিন্ন বীমা কোম্পানির স্বাস্থ্য বীমা পলিসিতে আলাদা আলাদা কভারেজ রয়েছে। স্বাস্থ্য বীমা পলিসি সুবিধা হল আপনার স্বাস্থ্যের যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটলে আপনার কোন আর্থিক খরচ প্রদান করতে হবে না। তাই নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য আমাদের উচিত স্বাস্থ্য বীমা পলিসি কেনা।
Key point
ভবিষ্যতে আমাদের মেডিক্যাল খরচগুলি দ্বিগুণ বাড়বে, তাই আমাদের ভবিষ্যতে জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসি গ্রহণ করা শ্রেষ্ঠ উপায়।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনাঃ স্বাস্থ্য বীমা কভারেজ
-
গাড়ির বীমা ( Car Insurance):
যদি আপনার কাছে গাড়ি, মোটর, বাইক, অটো অথবা কোন গাড়ি থাকলে তার বীমা করানো খুব প্রয়োজন কারণ কোন রকম চুরি বা দুর্ঘটনা হলে আপনি আর্থিক ব্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। এর জন্য আমাদের গাড়ির বীমা করানো প্রয়োজন। ভারতে দুই ধরণের গাড়ির বীমা রয়েছে এক থার্ড পার্টি বীমা পলিসি এবং ফুল পার্টি বীমা পলিসি।
থার্ড পার্টি অথবা তৃতীয় ব্যক্তির গাড়ি বীমা পলিসিতে তৃতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ অন্য গাড়ির চালকের ক্ষয়ক্ষতি হলে সেই ক্ষতিপূরণ করবে বীমা কোম্পানি। তবে থার্ড পার্টি অথবা তৃতীয় ব্যক্তির বীমা পলিসিতে আপনার গাড়ির কোন ক্ষয়ক্ষতির মাশুল দেবে না। এটা শুধুমাত্র তৃতীয় ব্যক্তির জন্যই তাই এটিকে থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স বলা হয়। মটর গাড়ির ক্ষেত্রে এই বীমা বাধ্যতামূলক।
ফুল পার্টি ইনস্যুরেন্সে গাড়ির সমস্ত রকম দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি যেমন গাড়ি, গাড়ির চালক, এবং অন্য গাড়ির ছোট খাটো সমস্ত ক্ষতির আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে বীমা সংস্থা।
Key point
রাস্তায় চলাচল করা যেকোনো গাড়ির আইনি ভাবে গাড়ির বীমা করানো প্রয়োজন।
-
ভ্রমণ বীমা (Travel Insurance):
ভ্রমণ সংক্রান্ত কোন ক্ষয়ক্ষতির থেকে সুরক্ষার জন্য যে বীমা করা হয় তাকে ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স বলা হয়। ভ্রমণ বীমার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিন্ত মনে যেকোনো জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে পারবেন। যদি কোন ব্যক্তি কাজের সূত্রে অথবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিদেশে ঘুরতে যায় এবং তার যদি কোন আঘাত লাগে অথবা কোন জিনিস হারিয়ে যায় তাহলে বীমা কোম্পানি বীমাপত্রের চুক্তি অনুযায়ী সেই সমস্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।
ভ্রমণ বীমা পলিসি আপনার ভ্রমণ যাত্রা শুরু থেকে যাত্রা শেষ পর্যন্ত বৈধ। তবে ভ্রমণ বীমা পলিসিটি আলাদা আলাদা কোম্পানির জন্য আলাদা আলাদা শর্ত প্রযোজ্য।
Key point
আপনি যদি ঘন ঘন বাইরে ভ্রমণ করতে যান তাহলে ভ্রমণ বীমা বা ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স করিয়ে রাখা আপনার জন্য ভালো কাজ হবে।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা
-
কারবারের দায় বীমা (Business Liability Insurance):
কারবার দায় বীমা আসলে কোন কোম্পানির কাজকর্ম বা কোন পণ্য অথবা কোন গ্রাহকের ক্ষতিপূরণের জন্য করা হয়। এই অবস্থায় কারবারের ক্ষতি হলে কোম্পানির দ্বারা জরিমানা এবং আইনির কার্যধারার সমস্ত খরচ বীমা কোম্পানিকে প্রদান করতে হবে।
Key point
অনেক কারবারেই পণ্যের ক্ষতি এবং গ্রাহকের ক্ষতির সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে কারবার দায় বীমা পলিসি কিনে থাকেন।
-
ফসল বীমা (Crop Insurance):
কৃষি ঋণ নেওয়ার জন্য প্রত্যেক কৃষককে ফসল বীমা পলিসি কিনতে হবে। আর এই ফসল বীমা কৃষকদের তাদের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির সুরক্ষা প্রদান করে। এই বীমা পলিসি অনুযায়ী ফসলের কোন রকমের ক্ষয়ক্ষতির হলে বীমা কোম্পানি সেই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করার দায় গ্রহণ করে। আগুন লেগে যাওয়া, বৃষ্টির কারণে অথবা বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতিপূরণে আর্থিক সুরক্ষার এই ফসল বীমা কভারেজের মধ্যে অন্তর্গত। যার ফলে আপনার ফসল একপ্রকার সুরক্ষিত থাকে। যদি আপনার ফসলের কোন ক্ষতি হয় বীমা কোম্পানি সেই ক্ষতি প্রদান করবে। তাই কৃষকদের এই বীমা পলিসি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
Key point
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা যায় না যেকোনো সময় বন্যা, অতিরিক্ত বৃষ্টি ফলে আপনার ফসলের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যার জন্য বীমা করিয়ে রাখা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স
তাহলে আশা করব আজকের এই নিবন্ধ থেকে আপনারা বীমা সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পেয়ে গেছেন, বীমা কি, বীমা কত ধরণের এবং কোন বীমা কি ধরণে সুবিধা পাওয়া যায়। যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে বীমা করানোর আগে এই সমস্ত তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রঃ বীমা পলিসির প্রিমিয়াম কেমন?
উঃ সেটা নির্ভর করছে আপনি কেমন ধরণের পলিসি করছেন। কারণ বিভিন্ন ধরণের পলিসি রয়েছে। এক এক কোম্পানিতে এক এক রকম শর্ত।
প্রঃ ফসল বীমা কি করানো যায়?
উঃ হ্যাঁ অবশ্যই আপনার ফসলের সুরক্ষার জন্য আপনিও করতে পারবেন। এর বিষয়ে জানতে বীমা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
কোনো কৃষকের ফসল যদি কেউ শত্রতাবসত বিনষ্ট করে সেক্ষেত্রে কি ফসলি বীমা কাভারেজ পাওয়া যায়?
সম্ভবত এরকম অবস্থাজনিত কারণে বীমার কভারেজ পাওয়া যায় না। তবুও আপনি যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।