পৃথিবীতে এমন কোন কাজ নেই যেখানে ঝুঁকি নেই এবং এমন কোন মানুষ নেই যার জীবনে অনিশ্চয়তা নেই। ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা আমাদের জীবনে সঙ্গে অঙ্গাআঙ্গিক ভাবে জড়িত। এই ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা কিছুটা প্রতিহত করার জন্যই বীমা ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড, জাহাজডুবি, তহবিল তছরুপ, অপহরণ, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দাঙ্গাহাঙ্গামা, লুটপাট প্রভৃতি বিপদের মধ্যেই আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হয়। এসব দুর্ঘটনার দরুন ব্যবসায় বহু ক্ষতি হতে পারে। এই ধরনের অপরিহার্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে ব্যবসা বা কারবারে বীমার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকের আলোচ্য বিষয় ব্যবসার ক্ষেত্রে বীমার প্রয়োজনীয়তা।
Read more: বীমা কি
Table of Contents
বীমা কি (What is insurance)
মানুষের জীবনের উপর যে বীমা করা হয়, তাকে বীমা বলে। বীমা হল বীমা কোম্পানি এবং বীমা ব্যক্তির মধ্যে একটি চুক্তিপত্র। বীমা চুক্তি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের শেষে বীমা কোম্পানি বীমাগ্রহীতাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।
Read more: জীবন বীমা পরিকল্পনা
ব্যবসার ক্ষেত্রে বীমার প্রয়োজনীয়তা (Insurance importance for business)
১. মূলধন সরবরাহঃ
বীমা কোম্পানি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে মূলধন নিয়ে থাকে, সেই টাকা আবার শিল্প, ব্যবসা বা বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে। অর্থাৎ মূলধন সরবরাহ করে ব্যবসার অর্থনৈতিক ও শ্রীবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
বীমা কোম্পানিগুলি তাদের সঞ্চিত তহবিলের টাকা বিভিন্ন শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এবং সম্ভাব্য লাভজনক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে। বিশেষ করে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার উন্নয়নে বীমা কোম্পানিগুলি অবদান প্রশংসনীয়।
Read more: সাধারন বীমা কি
২. ঝুঁকির পরিমাণ হ্রাসঃ
মানুষের জীবনে যাত্রাপথে বিভিন্ন রকমের ঝুঁকি আসে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন রকমের ঝুঁকি (যেমন- অগ্নি কাণ্ড, টাকা চুরি, জাহাজ ডুবি ইত্যাদি) দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানের এই সকল প্রকার ঝুঁকি এড়াতে বীমার প্রয়োজনীয়তা। বীমা মূল উদ্দেশ্য ঝুঁকির পরিমাণ লাঘব করা।
৩. কর্মসংস্থানের সুযোগঃ
বীমা ব্যবসায় প্রত্যক্ষভাবে নিযুক্ত বহু প্রতিনিধি থাকে, ফলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বেকারত্ব হ্রাস পায়। বর্তমানে প্রতিটি দেশ বীমা ব্যবসায় ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। সেবা প্রদানকারীরা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যবসা জগতে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
Read more: স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনা
৪. সামাজিক নিরাপত্তাঃ
শারীরিক অসুস্থতা, বার্ক্য,অঙ্গহানি এবং বিভিন্ন সামাজিক বিপর্যয় জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বীমার মাধ্যমে গ্রহণ করা যায়। ফলে কারবারিগণ নিশ্চিন্ত মনে পণ্য উৎপাদন এবং ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে মনোনিবেশ করার সুযোগ পায়।
১৯৮৪ সালে কর্মচারী রাজ্যে বিমা, ১৯২৩ সালে শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইন এবং ১৯৩৮ সালে জীবন বীমা আইনের সাহায্যে সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৫. আয়করজনিত সুবিধাঃ
১৯৬১ সালে আয়কর আইনে ৪৪ নং ধারা অনুযায়ী করদাতাকে করযোগ্য আয়ের উপর একটি ছাড় দেওয়া হয়। বীমার উপর যে পরিমাণ মাশুল প্রদান করবেন, তার উপর নির্দিষ্ট হারে ছাড় পান।
৬. ক্ষতিজনিত ঝুঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণঃ
মানুষকে বিভিন্ন রকমের বিপদ- আপদ ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়েই জীবনধারণ করতে হয়। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য সব মানুষই চায় ঝুঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করতে। বীমা ব্যবস্থা এর মধ্যে অন্যতম। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপর বীমার প্রয়োজনীয়তা অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
৭. ঋনের সুযোগঃ
বীমা কোম্পানিতে সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋন সংগ্রহ করা যায়। আবার বীমাপত্র ব্যাংকের কাছে গচ্ছিত রেখেও ঋন নেওয়া যায়। একমালিকনা বা অংশীদারি ব্যবসার মালিকগন জীবনবীমাপত্র গ্রহণ করে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। আবার কন্যা বিবাহ, পুত্র কন্যার লেখাপড়া ইত্যাদি জীবনবীমার অর্থে পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন মেটে। কোন দুর্ঘটনা কারনে মৃত্যু হলে বীমাগ্রহীতার পরিবারবর্গ বীমার অর্থে আর্থিক দুর্গতির হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে।
Read more: গাড়ির ইন্সুরেন্স পলিসি
৮. বৈদেশিক বাণিজ্যের সহায়তাঃ
বৈদেশিক বাণিজ্যে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি সময় নানা রকমের দুর্ঘটনা (যেমন- জাহাজ ডুবে যাওয়া বা জলদস্যুদের হাতে অপহৃত ইত্যাদি) ঘটতে পারে। এর জন্য নৌ- বীমা বা সামুদ্রিক বীমার ব্যবস্থা আছে। ফলে ব্যবসায়ীরা অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত হয়ে কারবার চালাতে পারেন।
৯. শিল্পের সম্প্রসারণঃ
অগ্নি ও নৌ- বীমা ব্যবস্থা থাকার ফলে ব্যবসা বা কারবারে নানা প্রকার ঝুঁকিজনিত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হয়। এর ফলে চিন্তা মুক্ত হয়ে ব্যবসা চালানো যায়। পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে দেশের শিল্প সম্প্রসারন ক্ষেত্রে বীমার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
১০. সঞ্চয় বৃদ্ধিতে সহায়তাঃ
বীমা সঞ্চয়ের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। সাধারন মানুষ তাদের উপার্জনের সম্পূর্ণ অর্থ খরচ না করে ভবিষ্যতের জন্য বীমা সংস্থায় জমা করতে পারেন।
Read more: ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স
এছাড়াও ব্যবসা বা কারবারের স্বাভাবিক মুনফার অনুপাত ঠিক রাখা, সরকারি ঋনপত্র বিনিয়োগে বীমা ব্যবস্থার প্রয়োজন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. বীমা কি?
A. বীমা হল বীমা কোম্পানি এবং বীমা ব্যক্তির মধ্যে একটি চুক্তিপত্র।
Q. বীমা কত প্রকার?
A. বীমা বিভিন্ন ধরণের রয়েছে। তবে সাধারণত বীমা দুইধরনের জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমা।
Q. ব্যবসায় বীমা কেন প্রয়োজন?
A. ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি ঝুঁকির বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য বীমা প্রয়োজন।