নিজেকে ফিট রাখার জন্য আমাদের সবথেকে যেটা করা দরকার। সেটা ব্যায়াম। যেই সমস্ত ব্যক্তি একটু সময় বের করে নিয়মিত ব্যায়াম করে তারা পুরো দিন ফিট থাকে। আপনি যদি সকালে দৌড়াতে পারেন তাহলে শুধু নিজেই ফিট থাকবেন না বরং বিভিন্ন রকমের রোগের সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন । নিয়মিত ৩০মিনিট দৌড়ালে আমরা নিজেদের শরীর সুস্থ রাখতে পারি।
source
দৌড়ানো (Running)
দৌড়ানো হল সবচেয়ে সেরা ব্যায়াম । প্রতিদিন নিয়ম করে দৌড়লে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করা যেতে পারে । সূত্র অনুসারে জানা গেছে নিয়মিত দৌড়াদৌড়ি আপনার জীবনে ৩ থেকে ৭ বছর যোগ করে দিতে পারে ।
আরো পড়ুন। ছেলেদের জন্য বিউটি টিপসঃছেলেদের ত্বকের যত্নে ঘরোয়া টিপস
দৌড়নোর জন্য কিছু সাধারন টিপস (The Best Running Tips)
1. বডি চেক-আপ প্রয়োজন
প্রতিদিন দৌড়নো শুরু করার আগে আপনার বডি চেক-আপ করা খুব প্রয়োজন । বয়স যদি ৪০ বছর বা তার বেশি হলে, ওজন বেশি হলে, শরীরে কোনো অসুস্থতা থাকলে, বা দীর্ঘ সময় ব্যায়াম না করে থাকলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন ।
2. সঠিক রাস্তা দিয়ে দৌড়ানো শুরু করুন
সবসময় চেষ্টা করবেন সমতল, ঘাসযুক্ত রাস্তা দিয়ে দৌড়ানো। যানবাহনের নিষ্কাশিত ধোঁয়াতে আপনার যদি শ্বাসের কষ্ট হয় তবে সেই সব অঞ্চল এড়িয়ে চলুন। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো পার্ক বা খেলার মাঠে যদি আপনি দৌড়ানো শুরু করেন। ভোরবেলা দৌড়নো শরীরে পক্ষে সবচেয়ে ভালো।
যদি পারেন আপনি বালিতে দৌড়তে পারেন। বালিতে দৌড়লে আপনার পেশি আরও উন্নত হবে। সমতল জায়গা বা পার্কে দৌড়নোর থেকে বালিতে দৌড়তে গেলে আপনার বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে ।
3. ভালো জুতো বাছাই করুন
দৌড়নোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সঠিক চলমান জুতো কিনুন,নাহলে আপনি আহত হতে পারেন। সঠিক জুতো না পড়লে আপনার দৌড়ানোর প্রক্রিয়াটি সঠিক হবে না।
4. হাটা ও দৌড়ানোর সঠিক নিয়ম
দৌড়ানোর টিপস হল আপনি যদি নতুন দৌড়নো শুরু করে থাকেন তবে প্রথমে আপনি কিছুটা দৌড়ান, তারপরে কিছুটা হাঁটুন। এতে আপনার শরীর এই অনুশীলনে অভ্যস্ত হতে শুরু করবে। পরে আপনি যখন অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তখন হাটার সময় হ্রাস করবেন এবং দৌড়ানোর সময় বৃদ্ধি করবেন।
আরো পড়ুন। ডাবের জলঃ গরমে নিজেকে সুস্থ রাখতে ডাবের জল
5. শরীরের ভঙ্গি সঠিক রাখবেন
হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় শরীরের সঠিক ভঙ্গি রাখবেন। ভুল ভঙ্গিতে চললে আপনার ঘাড়ে, কাঁধে ব্যাথা হতে পারে। তাই সবসময় মেরুদণ্ড সোজা রাখবেন, কোমরের উপরে হাত তুলবেন না, আপনার কনুই বাইরে রাখবেন।
6. পায়ের টার্নওভার বাড়ান
আপনার পায়ের টার্নওভার বাড়ানো আপনার শরীরকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে। ফলে আপনার ত্বক ও পেশি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি মিনিটে ১৮০টি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
7. ত্বকের পরিচর্যা
দৌড়তে যাবার আগে সবসময় সুতির জামা পরে যাবেন। শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলিতে এসপিএফ 30+ সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। একটা টাওয়াল ও জলের বোতল সাথে রাখবেন। অনুশীলনের পূর্বে, সময় ও অনুশীলনের পরে পর্যাপ্ত পরিমানে জল খাবেন।
আরো পড়ুন। ফ্রুট ফেসিয়াল এর উপকারিতা এবং ব্যবহার করার টিপস
8. খালি পায়ে দৌড়ান
খালি পায়ে ঘাসের ওপর দিয়ে দৌড়নো শরীরের পক্ষে খুব প্রয়োজন। এটি আকুপ্রেসার পয়েন্টগুলির জন্য খুব ভালো। ফলে বিভিন্ন রোগ, ব্রণ নিরাময় হয়।
9. দৌড়ানোর পর খাবার
শুধু দৌড়লেই আমাদের শরীর সুস্থ্য ও সতেজ থাকবে না তার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাবার যেগুলি আমাদের শরীরকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে যেমন কলা, শাকসবজি, সেদ্ধ ডিম, দই, চিকেন ব্রেস্ট।
কোন সময় দৌড়ানো সবচেয়ে ভালো?
ভোরবেলা দৌড়ানো শরীরের পক্ষে সবচেয়ে ভালো। আপনি ভোরবেলা যদি সময় না পেয়ে থাকেন তবে বিকেলবেলা দৌড়বেন। তবে সকাল বা বিকেল যেই সময় দৌড়বেন প্রতদিনের সময়টা একটা নির্দিষ্ট রাখবেন।
দৌড়ানোর উপকারিতা (Benefits of Running)
-
স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য দৌড়ানোর উপকারিতা
গবেষণায় প্রমাণিত, যারা নিয়মিত দৌড় ঝাঁপ করে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব। নিয়মিত দৌড়ানোর ফলে আপনার ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে পাশাপাশি ফুসফুসের কাজ বৃদ্ধি করে । দৌড়ানো আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়িয়ে তুলতে পারে সঙ্গে রক্তে ক্লোট বৃদ্ধি ঝুঁকি কমায় ।
-
রোগের ঝুঁকি কমাতে দৌড়ানোর উপকারিতা
বর্তমানে প্রায়ই দেখা যায়, ডাক্তাররা রোগীদের নিয়মমাফিক দৌড়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারন এটি এমনই একটি ঔষধ যা প্রায় সবরকম রোগ নিরাময়ের চাবিকাঠি।
বিশেষত মহিলাদের জন্য স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে । নিয়মিত সকালে দৌড়ানো আপনাকে স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিস হাত থেকে দূরে রাখবে। তাই সুস্থ থাকতে গেলে আমদের এইটুকু কষ্ট তো করতেই হবে। নিয়মিত দৌড়ান এবং সুস্থ থাকুন ।
আরো পড়ুন। খেজুরের পুষ্টিগুণঃ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেজুরের পুষ্টিগুণ
-
ওজন কমাতে দৌড়ানোর উপকারিতা
আমরা ওজন কমানোর জন্য কত কিছুই না করে থাকি। দৌড়ানো ব্যায়ামের একটি অপরিহার্য অংশ। প্রতিদিন সকালে বা বিকালে নিয়ম করে দৌড়ানো আমাদের অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরাতে সহায়তা করে। ওজন কমাতে রোজ দৌড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। এক মাসের মধ্যে আশ্চর্যজনক ফল বুঝতে পারবেন ।
-
কনফিডেন্স লেভেল বাড়ায়
দৌড়ানো মানেই শারীরিক সুস্থতা তা কিন্তু নয়। বরং এটি আপনাকে মানসিক দিক থেকেও সুস্থ করতে পারে। নিয়মিত দৌড়ানোর ফলে আমাদের মনে কনফিডেন্স লেভেল বাড়ে । দৌড়ানোর জন্য আমাদের মনে মানসিক চাপ মুক্ত হয় এবং কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি হয় ।
-
স্ট্রেস কমাতে দৌড়ানোর উপকারিতা
মনে স্ট্রেস সাধারণত মানসিক বা স্বাস্থ্যের সমস্যার জন্য হয়ে থাকে। মানসিক স্ট্রেস খিদে এবং ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে । এর থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র বিকল্পের পথ নিয়মিত দৌড়ানো। কারন আপনি যখন দৌড়ান তখন শরীরের অতিরিক্ত এনার্জি এবং হরমোন বৃদ্ধি হয়। এটি মাথাব্যথা জনিত সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন। জেনে নিন, নিয়মিত চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
-
ডিপ্রেশন হ্রাস করতে দৌড়ানো উপকারিতা
আপনি কি দীর্ঘদিন ধরে ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে যাছেন। তাহলে যান ৩০ মিনিটের জন্য দৌড়ে আসুন। দেখবেন মনের নেতিবাচক ভাবনা ম্যাজিকের মতো অদৃশ্য হয়ে যাবে । কারণ কয়েক মিনিট দৌড়ানোর পর শরীরের হরমোন সঙ্কুচিত হয় এবং মেজাজের উন্নতি ঘটে। ডিপ্রেশন হ্রাস করার একমাত্র পথ হল ব্যায়াম আর সেটা সম্ভব দৌড়ানো মধ্যে দিয়ে ।
-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে দৌড়ানোর উপকারিতা
আজকের দিনে ডায়াবেটিস একটি সাধারণ রোগ হয়ে গেছে। এই রোগ দেহে মিষ্টি বিষের মতো ছড়িয়ে পড়ে। অতএব এর থেকে বাঁচতে হবে। এটি থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিতভাবে পাঁচ মিনিট দৌড়ানো আপনাকে সাহায্য করতে পারে । দৌড়ানোর ফলে ইনসুলিন বানানোর প্রক্রিয়াটি উন্নতি হয় এবং শরীরের রক্ত শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রিত হয় ।
আরো পড়ুন। শসার ফেসপ্যাকঃ ত্বক ভালো রাখতে শসার ১০ টি ফেসপ্যাক
-
কোলেস্টেরল কম করে
নিয়মিত আপনি যদি দৌড়ান তাহলে স্বাস্থ্যকর স্তর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। আর এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত রকম সমস্যা কম করে।
-
পায়ের গঠন সুন্দর করে
সুন্দর পায়ের গঠন সবসময় ভালো লাগে। নিয়িমিত দৌড়লে আপনার পায়ের পেশীগুলো আরো বেশি পরিমানে কাজ করা শুরু করবে এবং ধীরে ধীরে দেখবেন আপনার পায়ের গঠন খুব সুন্দর ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
-
আপনার শরীরকে ভিটামিন ডি পেতে সাহায্য করে
ভোরবেলা দৌড়তে গেলে আপনার শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হবে। যেটি আপনার হার, ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই খুব সকালে উঠুন, ভোরের রোদে দৌড়তে যান আর সারাদিনের কাজের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে নিয়ে আসুন।
Key Point: দৌড়ানোর ফলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বজায় থাকে। আপনার দৈনন্দিন জীবনে দৌড় আপনাকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ রাখবে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. আমাদের কি প্রতিদিন দৌড়ানো উচিত?
A. প্রতিদিন দৌড়লে স্বাস্থ্যের অনেক উপকার হয়, ৩০ মিনিট করে দৌড়লে আপনার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অন্যান্য রোগ থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে ।
Q. দৌড়নোর সময় ব্যাথা অনুভব করা বা অল্পতে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়া এগুলি কি স্বাভাবিক?
A. আপনি যদি কনরকম ব্যায়াম বা অনুশীলন না করে থাকেন তবে ব্যাথা অনুভব বা একটু দৌড়লে হাপিয়ে যাওয়া এগুলি স্বাভাবিক। আপনি যখন ব্যায়াম বা দৌড়নো প্রথম করবেন তখন আপনার শরীরে পেশীর মধ্যে টান সৃষ্টি হবে, ফলে ব্যাথা অনুভব হবে। দীর্ঘ দিন করার পর আবার অভ্যাস হয়ে যাবে।
Q. দৌড়নোর পর কি কি খাওয়া উচিত?
A. দৌড়নোর পর প্রথম দরকার পর্যাপ্ত পরিমানে জল। এছাড়া ডিম,দুধ,কলা,ওটস, প্রোটিন শেক ইত্যাদি।
Q. দিনের কোন সময় দৌড়নো সবচেয়ে ভালো?
A. দিনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সময় হল ভোরবেলা আর বিকেলবেলা ।