বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারনে আমাদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এই ধরনের শারীরিক অসুস্থতার মতোই সাইনাসও অন্তর্ভুক্ত। সাইনাস এমন একটি রোগ, যা আজ বৃহত্তর মানুষকে ভোগাচ্ছে। এই রোগটি বিশ্বে সাইনুসাইটিস নামে পরিচিত। সাইনাস একটি অনুনাসিক রোগ, যা ঠান্ডা, শ্বাস প্রশ্বাস এবং মুখের পেশীগুলিতে ব্যাথা দ্বারা শুরু হয় এবং পরে গুরুতর আকার নেয়। তবে সব ব্যথা সাইনাসের ব্যথা নয়।
সাইনাস (What is Sinusitis)
সাইনাস হল ছোট এয়ার পকেট যা আপনার কপাল, নাক, গাল এবং চোখের মাঝে থাকে। খুব ঠাণ্ডা লাগার ফলে এইসব জায়গাগুলিতে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ সাইনাস ইনফেকশন ভাইরাল এবং চিকিৎসা ছাড়াই এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়। যদি আপনার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে উন্নত না হয় তবে আপনার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে এবং তখনই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন। সহজেই ব্লাড সুগার কমানোর উপায় জেনে রাখুন
সাইনাস সংক্রমণের প্রকারগুলি কী কী?(Types of Sinusitis)
1. তীব্র সাইনাস
তীব্র সাইনাস অল্প সময়কাল ধরে থাকে। সাধারণ সর্দি দ্বারা আক্রান্ত একটি ভাইরাল সংক্রমণের ফলে এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই সাইনাস সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহ থাকে। ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের ক্ষেত্রে তীব্র সাইনাস চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মৌসুমী অ্যালার্জির কারণে তীব্র সাইনাস হতে পারে।
2. অতিতীব্র সাইনাস
অতিতীব্র সাইনাস লক্ষণগুলি তিন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই অবস্থাটি সাধারণত ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ বা মৌসুমী অ্যালার্জির সাথে ঘটে।
3. দীর্ঘস্থায়ী সাইনাস
দীর্ঘস্থায়ী সাইনাস লক্ষণগুলি তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকে। এগুলি প্রায়শই কম তীব্র হয়। এই ক্ষেত্রে ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের জন্য দায়ী হতে পারে। অতিরিক্তভাবে, দীর্ঘস্থায়ী সাইনাস সাধারণত অবিরাম অ্যালার্জি কারণে ঘটতে পারে।
আরো পড়ুন। অলিভ অয়েলঃ ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েলের ব্যবহার
সাইনাসের সমস্যা কেন হয় (Causes of Sinusitis)?
আমাদের মাথায় অনেকগুলি ছোট ছিদ্র রয়েছে, যা আমাদের শ্বাস নিতে এবং মাথা ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে। সাধারণত এই ছিদ্রগুলিকে সাইনাস বলা হয়। এই গর্তে কোন কারনবশত সমস্যা সৃষ্টি হলে তখন সাইনাসের অথবা সাইনুসাইটিস সমস্যা দেখা দেয়। সাইনাসের সমস্যা নানা কারনে হয়ে থাকে।
• ঠাণ্ডা জনিত সমস্যাঃ
সাইনাসের সবচেয়ে বড়ো কারণ হল ঠাণ্ডা, যার কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়, শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। ঠাণ্ডার সমস্যা একপ্রকার ভাইরাসের মতো। যেসমস্ত মানুষদের অনবরত ঠাণ্ডা লাগে তাদের সাইনাস হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
• অতিরিক্ত দূষণঃ
সাইনাস সমস্যা দূষণের কারণেও হতে পারে। অত্যন্ত দূষিত অঞ্চলে বসবাসকারী ব্যক্তিরা এই রোগে বেশি ভুক্তভোগী। ধুলোবালি, ধোঁয়া এবং দূষিত বায়ুর কারণে সাইনাসের সমস্যা বাড়তে পারে। এর থেকে ধীরে ধীরে ঘনঘন ঠান্ডা লাগা, নাক থেকে রক্তপাত এবং ব্যথার সমস্যা হতে পারে। যদি এই ধরনের উপসর্গ উপস্থিত থাকে তবে আপনাকে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ।
আরো পড়ুন। চকলেট ফেসিয়ালের সুবিধাঃ ত্বকের জন্য চকলেট ফেসিয়াল
• হাঁপানিঃ
হাঁপানি শ্বাস সম্পর্কিত গুরুতর রোগ, যা ফুসফুস এবং শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করে। হাঁপানি রোগীরা সঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে না, যার জন্য তাদের স্পেসার প্রয়োজন হয়। এই পরিস্থিতিতে, রোগীদের মধ্যে সাইনাসের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
• পুষ্টির অভাবেঃ
সঠিকভাবে খাবার না খেলে সাইনাস হতে পারে। সঠিক সময়ে না খাওয়া অথবা সঠিক পুষ্টির অভাবের কারণে পাচক সিস্টেমে প্রভাব পড়তে পারে। যা পরবর্তীকালে সাইনাস সমস্যার মূল কারণ হতে পারে ।
আরো পড়ুন। ঘরে বসে চকলেট ফেসিয়াল করার নিয়ম জেনে নিন
সাইনাসের লক্ষণ (Symptoms of Sinusitis)
আপনার সাইনাসের এর সমস্যা আছে কিনা তা বুঝতে পারবেন কয়েকটি উপসর্গ দেখলে। এখানে ৬ টি সাইনাসের লক্ষণ দেওয়া হল যা আপনাদের এই রোগটির লক্ষণ বুঝতে সহায়তা করবে ।
• প্রচণ্ড মাথা ব্যাথাঃ
সাইনাসের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ মাথা ব্যাথা। যাদের সাইনাসের সমস্যা থাকে তাদের প্রায়শই প্রচণ্ড মাথা ব্যথা সমস্যা দেখা যায়। এই মাথা ব্যথার কারণে স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। কপাল, গাল এবং নাকের চারপাশে ব্যথা অনুভব হয়। অনেক সময় এই ব্যথা সহ্য ক্ষমতার বাইরে পৌঁছে যায় ।
• জ্বর এবং অস্থিরতাঃ
সাইনাসের জন্য রোগীর জ্বরও হতে পারে বা শরীর অস্থির লাগতে পারে বা স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে ভয় লাগতে পারে। এই ধরনের লক্ষণগুলি দেখতে পারলে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন ।
আরো পড়ুন। অ্যালার্জি প্রতিরোধঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে অ্যালার্জির চিকিৎসা
• গলার স্বর পরিবর্তনঃ
সাইনাসের কারণে নাকের থেকে তরল পদার্থ নির্গত হয় এবং গলা ব্যথার সৃষ্টি করে। যা গলার স্বরের উপর প্রভাব ফেলে এবং গলার স্বর ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে পারে। গলার স্বর পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি সাইনাসের লক্ষণ শনাক্ত করতে পারেন ।
চোখের উপর ব্যথা সৃষ্টিঃ
সাইনাসের গহ্বর আপনার চোখের ঠিক উপরেও হতে পারে। যার জন্য চোখের উপরে প্রচণ্ড ব্যথা সৃষ্টি হয়। এই লক্ষণটি বুঝতে অনুভব করতে পারলে সাইনাসের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন ।
আরো পড়ুন। গরমের সবজি ভিন্ন গুণাগুণ জেনে রাখুন
অতিরিক্ত কাশিঃ
তেজ কাশিও সাইনাসের প্রধান উপসর্গ হিসাবে বিবেচিত হয়। সাইনাসের গলা এবং ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। যার ফলে রোগীর অতিরিক্ত পরিমাণে কাশি হয়। এই লক্ষণগুলিকে এড়িয়ে গেলে হতে পারে বিপদ ।
ক্লান্তি অনুভব করাঃ
ডাক্তারদের মতে যদি প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে মাথা ব্যথা, ঘুম না আসা, নাক বন্ধ হয়ে আসা এবং ক্লান্তি অনুভব হয়, তাহলে এটা সাইনাসের লক্ষণ। এই উপসর্গগুলি লক্ষ্য করলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত ।
সাইনাসের লক্ষণ এবং সাইনাস হওয়ার কারণ জেনে গেলেন। এই লক্ষণগুলি বুঝলেই সময়মত চিকিৎসা করান ।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. সাইনাস কি পুরোপুরিভাবে নির্মূল হওয়া সম্ভব?
A. সাইনাস পুরোপুরিভাবে নির্মূল না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা এই রোগ কমাতে পারি।
Q. সাইনাসের সমস্যা হলে কীভাবে বুঝব?
A. সাইনাসের সমস্যা হলে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, নাকে যন্ত্রণা, কাশি, জ্বর, চোখের উপর ব্যথা হয়।
Q. হাঁপানির সমস্যা থাকলে কি সাইনাসের প্রবণতা থাকে?
A. হাঁপানি থাকলে সাইনাস বেড়ে যেতে পারে।