সাধারণত দাঁতের মধ্যে গর্তকে দাঁতের ক্ষয় বাঁ ক্যাভিটি বলা হয়। মুখের মধ্যে উপস্থিত অ্যাসিডের কারণে দাঁতের এনামেল নামক আবরণ ক্ষয় যায় যার কারণে ক্যাভিটি হয়। দাঁতের অযত্নে দাঁতের মাঝখানে ব্যাকটেরিয়া জমা হয়। এই ব্যাকটেরিয়া আপনার খাবারে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেটকে অ্যাসিডে পরিণত করে যা দাঁতে গর্ত সৃষ্টি করে। তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ক্যাভিটি দূর করার উপায় আছে।
ক্যাভিটি কি?(Tooth Cavities)
ক্যাভিটি সাধারণত দাঁতের মধ্যে হওয়া গর্তকে বলা হয়। দাঁতের এনামেল নামক একপ্রকার আবরণ আছে যা ক্ষয় হলে ক্যাভিটি সৃষ্টি হয়। এছাড়াও আমাদের দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জমার ফলে ক্যাভিটির সৃষ্টি হয়। ক্যাভিটি একটি ওলার হেলথের সমস্যা।
ক্যাভিটি যেকোনো সময়ে যেকোনো বয়সে যেকোনো ব্যক্তির হতে পারে। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়া, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া, সঠিক ভাবে ব্রাশ না করলে, দাঁতে খাবার লেগে থাকা, অপুষ্টির কারণে অথবা ব্যাকটেরিয়াগত কারণে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই আমাদের দাঁতের নিয়মিত যত্ন করা উচিত। ক্যাভিটি হলে মুশকিলে পড়তে হয় প্রত্যেক মানুষকে। তবে কিছু সচেতনতার মাধ্যমে আপনি ক্যাভিটি থেকে মুক্ত হতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্যের জন্য কমলালেবুর রসের উপকারিতা
ক্যাভিটি হবার লক্ষণ (Symptoms of Tooth Cavities)
ক্যাভিটি আপনার দাঁতের ক্ষয়ের ওপর নির্ভর করে। লক্ষণগুলি হল –
- দাঁতে ব্যথা
- দাঁতে দৃশ্যমান গর্ত
- দাঁতে কালো বা সাদা দাগ
- মাড়ি ফুলে যাওয়া
- মাড়ি দিয়ে রক্ত বেরোনো
ক্যাভিটি হবার কারণ (Causes of Tooth Cavities)
- নিয়মিত ব্রাশ না করা।
- চিনিযুক্ত বা অম্লীয় খাবার এবং পানীয় বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা।
- পেটে অ্যাসিড হলেও আপনার দাঁত এনামেলটি পরতে পারে।
- দাঁতের সমস্যা হলে দাঁতের ডাক্তারকে না দেখালে সেখান থেকে দাঁতের বড় সমস্যা হতে পারে।
ক্যাভিটি দূর করার উপায়(Treatment for Tooth Cavities)
1. ফ্লুরাইড টুথপেস্ট দিয়ে নিয়মিত ব্রাশঃ
ক্যাভিটি দূর করতে ফ্লুরাইড একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত দুইবার ফ্লুরাইড বেসড টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করতে ক্যাভিটি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি অনেক স্টাডিজও এই গবেষণার সঙ্গে একমত। তাই আপনার যদি ক্যাভিটির সমস্যা থাকে এবং আপনি ক্যাভিটি দূর করার উপায় খুঁজছেন, তাহলে ফ্লুরাইড টুথপেস্ট আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা জেনে রাখুন
2. অয়েল পুলিং:
অয়েল পুলিং দাঁতের সমস্যার একটি পুরনো এবং অসাধারণ টোটকা। এটা ক্যাভিটি দূর করার পাশাপাশি মাড়ি থেকে রক্ত পড়া এবং গন্ধ দূর করে। পাশাপাশি দাঁতের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়তা করে।
একচামচ খাঁটি নারকেল তেল মুখে নিয়ে ১০-১৫ মিনিট কুল্কুচি করুণ। ১০-১৫ মিনিট কুল্কুচি করার পর ব্রাশ এবং ফ্লস করে নিন। নিয়মিত এবার এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে ক্যাভিটি মুক্ত হবে।
আরও পড়ুনঃ দৌড়ানোর পর খাবারঃ দৌড়ানোর পর খাদ্য তালিকা কি কি রাখা উচিত?
3. নিমঃ
নিম ক্যাভিটির চিকিৎসার জন্য একটি জনপ্রিয় প্রতিকার। দাঁত ভালো রাখতে আগে মানুষ নিম ডাল দিয়ে দাঁতন করত। কারণ নিমে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন থাকার কারণে দাঁতে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর কর দাঁত ক্যাভিটি মুক্ত রাখে। এছাড়াও এটি দাঁত এবং মাড়ি সুস্থও রাখে।
দাঁতে নিয়মিত নিমপাতা ঘসে কিছুক্ষণ পর হালকা উষ্ণ লবণ জলে কুলকুচি করুণ ক্যাভিটি দূর হবে কিছুদিনের মধ্যে। এছাড়া আপনি ব্রাশ করার জন্য নিমের ডাল ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ওজন বাড়ানোর ব্যায়াম যা ওজন বৃদ্ধি করবে দ্রুত
4. যষ্টিমধুঃ
আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি এর জার্নাল অফ নেচারাল প্রোডাক্ট প্রকাশিত একটি গবেষণায় অনুযায়ী জানা গেছে যষ্টিমধু দাঁত সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। যষ্টিমধুতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকায় কারণে ক্যাভিটি প্রতিরোধ করে। নিয়মিত দিনে দুবার যষ্টিমধুর শিকড় বা গুঁড়ো দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে ক্যাভিটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে সাইনাস থেকে মুক্তির উপায়
5. ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারঃ
দাঁতের নিয়মিত যত্ন করার পাশাপাশি আমাদের দাঁত ভালো রাখতে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার নিয়মিত খাবার তালিকায় যোগ করতে হবে। ভিটামিন ডি আমাদের দাঁত এবং মাড়ির জন্য উপকার। পাশাপাশি ক্যাভিটি মুক্ত রাখে। তাই নিয়মিত আপনার খাবারের তালিকায় ফ্যাটি ফিশ, ডিম ইত্যাদি রাখতে হবে।
6. লবঙ্গঃ
লবঙ্গ ক্যাভিটির পাশাপাশি দাঁতের সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যাগুলির জন্য উপকৃত। লবঙ্গতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দাঁতের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে অসাধারণ কাজ করে।
দেড় টেবিল চামচ তিলের তেলের সঙ্গে দু-তিন ফোঁটা লবঙ্গ মিশিয়ে নিন। রাতে ঘুমানোর আগে একটি তুলোর বলে করে এই মিশ্রণটি দাঁতে লাগিয়ে নেবেন। এটি দাঁতের ক্যাভিটি দূর করতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুনঃ নিয়মিত হাঁটু ব্যথার ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ থাকুন
তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ক্যাভিটি দূর করার উপায় জেনে গেলেন। এবার আপনার যদি ক্যাভিটির সমস্যা থাকে এই টোটকাগুলি ট্রাই করে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো ফল পাবেন। খেয়াল রাখবেন দাঁত আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই তার অবহেলা করা একদম উচিত নয়।
Key Point: নিয়মিত উষ্ণ লবণ জলের কুলকুচি করলে দাঁতের ব্যাকটেরিয়া জমতে পারে না।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. ক্যাভিটি কি নিজে থেকে নিরাময় করতে পারে?
A. দাঁত ক্ষয় এই মুহুর্তে থামানো বা বিপরীত করা যেতে পারে। এনামেল লালা থেকে খনিজ এবং টুথপেস্ট বা অন্যান্য উৎস থেকে ফ্লোরাইড ব্যবহার করে নিজেকে মেরামত করতে পারে। তবে দাঁতে ক্ষয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আরও খনিজগুলি নষ্ট হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে, এনামেলটি দুর্বল হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়, ক্যাভিটি তৈরি করে।
Q. দাঁতে ক্যাভিটি হলে কি কি খাবেন না?
A. দাঁতে ক্যাভিটি হলে চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন বা চিনিযুক্ত খাবার খেলে তখনই ব্রাশ করবেন। যে খাবারগুলি খাবেন না সেগুলি হল – ব্রেড, অ্যালকোহল, বরফ, কার্বনেটেড পানীয়, লেবু, আলুর চিপস।
Q. ক্যাভিটি কি অন্য দাঁতে ছড়িয়ে পড়ে?
A. যে পরিস্থিতিতে ক্যাভিটি গঠন হয়, চিকিৎসা না করে ছেড়ে দেওয়া হলে আপনার দাঁত সংক্রামিত হয়, এই সংক্রমণটি আশেপাশের দাঁতে ছড়িয়ে যেতে পারে।