দাঁতের যত্নঃ কীভাবে নেবেন দাঁতের যত্ন জেনে নিন

আজকালকার দিনে অধিকাংশ মানুষই দাঁতের সমস্যায় ভুগছে। যার একমাত্র কারণ দাঁতের অবহেলা করা। আমরা শৈশব থেকেই দাঁতের অযত্ন শুরু করি যার ফলে বৃদ্ধ বয়সে এসে আমাদের প্রায়শই দাঁতের সমস্যায় ভুগতে হয়। নিয়মিত ব্রাশ তো আমরা সকলেই করি। তবে সঠিক ভাবে দাঁত পরিস্কার করতে পারি কি? তাই আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সঙ্গে দাঁতের যত্ন নেওয়ার কিছু দরকারি টিপস শেয়ার করে নেব

সৌন্দর্যের গোপন রহস্য হল আমাদের মুখের হাসি। আর এই হাসির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে দাঁতের। তাই সুন্দর হাসির জন্য আমাদের প্রয়োজন দাঁতের সঠিক যত্ন। বয়স যাই হোক না কেন, দাঁতের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি, কারণ দাঁতের সমস্যা সমগ্র শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক দাঁতের যত্নে কিছু উপকারি টিপস।

 দাঁতের যত্ন

দাঁত (Teeth) 

দাঁত যত্ন কেবল স্বাস্থ্যের সাথেই নয়, সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিত্বের সাথেও সম্পর্কিত। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর দাঁত আপনার সুন্দর ব্যক্তিত্বে দাগের মতো। বেদনাদায়ক, অস্বাস্থ্যকর দাঁত দিয়ে খাবার সঠিকভাবে চিবানো যায় না, যার কারণে হজম শক্তি নষ্ট হয়ে যায় এবং পেট সংক্রান্ত অন্যান্য নানা রোগের জন্ম হয়। সুতরাং দাঁতের যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দাঁতের যত্ন কেন নেওয়া উচিত

দাঁতের যত্ন কেন নেওয়া উচিত (Why dental care should be taken)

আমাদের দাঁতগুলির শক্তি তার খাদ্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। জীবিত থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয় যা প্রথম মুখের দ্বারা গ্রহণ করা হয়। পচন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপও মুখের ভিতর থাকা দাঁত দ্বারা সম্পন্ন হয়। এই কারণেই বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে সমস্ত মানুষ দাঁত অপরিস্কার রাখে বা যাদের মাড়ির সাথে সম্পর্কিত রোগ আছে তাদের মুখ সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকির মাত্রাও অনেকাংশে বেড়ে যায়।

এছাড়াও দাঁত অপরিষ্কার রাখলে মুখে দুর্গন্ধ হয় এবং দাঁতে নানা ব্যক্টেরিয়ার জন্ম হয়। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিনিয়ত দাঁতের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। শৈশব থেকেই আমাদের দাঁতের যত্ন নেওয়া উচিত। সকালে এবং রাতে নিয়মিত দুবার ব্রাশ করা উচিত। এবং খাওয়ার পরে কুলকুচি করার অভ্যাস বাচ্চাদেরও শেখানো উচিত।

আরও পড়ুন । দাঁতের বীমাঃ দাঁতের স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা

দাঁত অবহেলা করলে কী হবে

দাঁত অবহেলা করলে কী হবে (What will happen if the teeth are neglected)

আমরা প্রতিদিন ঠিকভাবে দাঁতের যত্ন যদি না নিই তাহলে নিজেদের জন্য বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারি। কারন দাঁতকে অবহেলা করলে দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির প্রদাহ, ক্যাভিটি, দাঁতের সমস্যা, দাঁত থেকে রক্ত পড়া, ওরাল ক্যান্সারের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। দাঁত নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার বংশ বৃদ্ধি হয়। এরপর দাঁতের ক্ষয় হয়ে মাড়ির দুর্বল হয়ে যায় ধীরে ধীরে। যার ফলে অকালে দাঁত পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কীভাবে নেবেন দাঁতের যত্ন (How to take care of teeth)

দাঁত ব্রাশ করুনঃ 

  • দাঁত ব্রাশ করুন (Brush your teeth) 

নিয়মিত ভালোভাবে ব্রাশ করা উচিত। ব্রাশ করার সময় দাঁতের কোনায় কোনায় ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ দাঁতের কোনায় কোনায় জীবাণু জমা হয়ে থাকে। খুব তাড়াতাড়ি ব্রাশ করলে দাঁতের জীবাণু দূর হয় না। তাই ধীরে ধীরে সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করা দরকার। দিনে দুবার অন্তত ব্রাশ করা উচিত। যদি সম্ভব হয় তবে আপনি এটি দিনে তিনবার করতে পারেন।

ফ্লসিং

  • নিয়মিত ফ্লসিং (Floss regularly)

দাঁতের যত্ন নেওয়ার জন্য ফ্লসিং করা খুব ভালো একটা উপায়। যেই সমস্ত স্থানে ব্রাশ দিয়েও সঠিকভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না, সেখানে ফ্লসিং দ্বারা ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার করা যায়।

দাঁতের ব্রাশ পরিবর্তন করুন

  • দাঁতের ব্রাশ পরিবর্তন করুন (Change the toothbrush) 

প্রতি ৩ মাস অন্তর আপনার ব্রাশ পরিবর্তন করুন। বেশিদিন এক ব্রাশ কখনই ব্যবহার করা উচিৎ নয়।     কারণ ৩ মাসে অনেক ধরণের জীবাণুও ব্রাশে আটকে যায়।

ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করুন

  • ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করুন (Use fluoride toothpaste) 

সবসময় সাদা রঙের টুথপেস্ট কিনুন কারণ এতে ফ্লুরাইড রয়েছে। ফ্লুরাইড যুক্ত টুথপেস্ট আমাদের দাঁতের জন্য খুবই ভালো। এই জাতীয় টুথপেস্ট ব্যবহার করলে দাঁতে থাকা জীবাণু ভালোভাবে পরিষ্কার হয়।

  • উষ্ণ গরম জলে কুলকুচি (Rinse in warm hot water)

দিনে অন্তত একবার উষ্ণ গরম জলে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করুন। কারণ লবণ জল একটি কার্যকর জীবাণুনাশক। এই জল আপনার মুখের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে দূর করতে সাহায্য করবে এবং ধীরে ধীরে আলগা দাঁতের পাশাপাশি মাড়িকে মজবুত করবে। এতে করে মাড়ি ভালো থাকবে এবং দাঁতও সুরক্ষিত থাকবে।

আরও পড়ুন । দাঁতের মাড়ির সমস্যাঃ মাড়ির সমস্যা থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

দাঁতের যত্নের জন্য অতিরিক্ত টিপস

দাঁত ভালো রাখতে কি করা উচিত নয় (What not to do to keep teeth good)

  • খাওয়ার সাথে সাথে ব্রাশ করবেন না। ১০ মিনিট পরে করা উচিত।
  • ব্রাশ করার সাথে সাথে চা বা কফি খাবেন না।
  • বেশি ঠান্ডা বা বেশি গরম জিনিস কখনও খাওয়া উচিৎ না।
  • সঠিক ব্রাশ ব্যবহার করুন।
  • অন্য কোনও ব্রাশ ব্যবহার করবেন না। এটি দাঁতের বিভিন্ন ধরণের রোগ হতে পারে।

দাঁতের যত্নের জন্য কি খাবেন

দাঁতের যত্নের জন্য কি খাবেন (What to eat for dental care) 

  • দাঁতের যত্নের জন্য খাওয়ার জল হিসাবে ফ্লোরাইটেটেড জল ব্যবহার করুন। এটিতে এনামেল রয়েছে, যা দাঁতে অ্যাসিডের প্রভাব হ্রাস করে এবং দাঁতকে শক্তিশালী করে তোলে।
  • খাবার খাওয়ার পরে, গাজর, মূলা, শসা, পেয়ারা, আপেল ইত্যাদি খাওয়া দাঁত পরিষ্কার করে এবং দাঁতকে সুন্দর এবং শক্তিশালী করে তোলে।
  • প্রতিদিন আপেল ও আঙ্গুর খান এবং প্রচুর দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ, দই ইত্যাদি খাবেন। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।

আরও পড়ুন । চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায়

দাঁতের যত্নের জন্য অতিরিক্ত টিপস

দাঁতের যত্নের জন্য অতিরিক্ত টিপস (Extra tips for dental care) 

তামাক জাতীয় জিনিস আপনার দাঁতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলি দাঁতে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই দাঁতের যত্ন নিতে চাইলে এই সমস্ত জিনিস ত্যাগ করতে হবে।

• দাঁত মজবুত করতে চাইলে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খান। ভিটামিন সি দাঁতের মাড়ি মজবুত করে এবং দাঁত সাদা করে।

• খবার পরে দাঁত পরিষ্কার করার সবচেয়ে ভালো উপায় মাউথওয়াশ। Listerine and chlorine dioxide সমৃদ্ধ মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন।

• তিনমাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত।

• ভালো টুথপেষ্ট ব্যবহার করা উচিত।

• নিয়মিত উষ্ণ গরম জলে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা উচিত। এতে দাঁতের মাড়ি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি দাঁতে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।

তাহলে দাঁতের অবেহেলা না করে আজ থেকে দাঁতের যত্ন নেওয়া শুরু করুন।

আরও পড়ুন । প্রাকৃতিক উপাদানেই রয়েছে ত্বকের বলিরেখা দূর করার উপায়

Key Point: প্রতেকের নিয়মিত দু’বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

Q. দাঁত ব্রাশ করার সঠিক পদ্ধতি কি?

A. দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। উপর থেকে নীচ এবং দাঁতের কোনায় কোনায় ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।

Q. দাঁতের জন্য কোন মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত?

A. Listerine and chlorine dioxide সমৃদ্ধ মাউথওয়াশ ব্যবহার করা দাঁতের জন্য সবচেয়ে ভালো।

Q. বাচ্চাদের চকলেট খেলে কি ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভবনা থাকে?

A. অতিরিক্ত পরিমাণ চকলেট খেলে বাচ্চাদের দাঁতে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here