গাজরের নাম আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন আর অব্যশই খেয়েছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন এই গাজরের হাজারও গুন লুকিয়ে রয়েছে। তাই নিয়মিত যদি গাজর খাওয়া যায়, তাহলে রোগমুক্ত শরীর পাওয়া অসাধ্য নয়। গাজর বিভিন্ন ভাবে প্রয়োগ করা যায়। তাছাড়াও গাজর কাঁচা খাওয়াও খুব উপকার। যে কোন সময় গাজর খাওয়া যায়। গাজরের জুস এবং সালাডেও ব্যবহার করা যায়।
গাজর (Carrots)
গাজর অন্যতম স্বাস্থ্যকর সবজি। বিশেষত শীত মৌসুমে এটি পাওয়া যায়। তবে, পরিবর্তনের সময়ের সাথে, এখন বহুবর্ষজীবী সবজিতে পরিণত হয়েছে। গাজর নিজেই একটি বহু-উদ্ভিজ্জ উদ্ভিজ্জ, যা দেহের অনেক অংশের জন্য উপকারী প্রমাণিত হয়েছে।
আরও পড়ুন । স্বাস্থ্যের জন্য টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
গাজরের পুষ্টিগুণ (Nutritional value of carrots)
- ক্যালোরি – 41
- জল- 88%
- চিনি- 4.5 গ্রাম
- প্রোটিন – 0.9 গ্রাম
- ফ্যাট- 0.2 গ্রাম
- কার্বস- 9.6 গ্রাম
- ফাইবার- 2.8 গ্রাম
- ভিটামিন এ- 330%
- ভিটামিন সি- 10%
- ভিটামিন বি 6- 6%
- ক্যালসিয়াম- 5%
- ম্যাগনেসিয়াম- 5%
আরও পড়ুন । আদার গুনাগুনঃ শরীর সুস্থ রাখতে আদার গুনাগুন
গাজরের পুষ্টিগুণ উপকারিতা (Nutritional benefits of carrots)
- ক্যালোরি – আমাদের দেহে শক্তির জোগান দেয়।
- প্রোটিন – শরীরের ত্বক, চুল, নখ, হাড় বিকাশে প্রোটিন প্রয়োজন। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে প্রতিরক্ষা করে।
- কার্বস – কার্বোহাইড্রেটগুলি আমাদের দেহে গ্লুকোজ হিসাবে দ্রুত রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে।
- ফাইবার – হজম স্বাস্থ্য ভালো করে।
- ভিটামিন এ – ভিটামিন এ একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন। যা দৃষ্টি, ত্বক, হাড় এবং দেহের অন্যান্য টিস্যুগুলির জন্য ভাল। এটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে, কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই।
- ভিটামিন সি – ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
- ভিটামিন বি 6 – বি 6 দেহের শক্তি বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। চোখের জন্য উপকারী।
- ক্যালসিয়াম – শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে।
- ম্যাগনেসিয়াম – ম্যাগনেশিয়াম হাড় গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
আরও পড়ুন । ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য পেঁয়াজের উপকারিতা
স্বাস্থ্যের জন্য গাজরের উপকারিতা (Health benefits of carrots)
গাজর খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর। গাজরের রস স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকার। এছাড়া কাঁচা খেলে ত্বকের জন্য উপকৃত।
১. জন্ডিস সঙ্গে মোকাবিলা (Fight with jaundice)
গাজর প্রাকৃতিক ঔষধ হিসাবে অভিহিত করা হয়। ডাক্তারদের মতে, জন্ডিস রোগীদের নিয়মিত সালাডে গাজর খাওয়া উচিত। কারন গাজরে ক্যারোটিন নামক উপাদান রয়েছে যা ভিটামিন ‘ এ’ তৈরি করে যা জন্ডিসের সঙ্গে মোকাবিলা করে। জন্ডিস হলে গাজরের পায়েস, কাঁচা গাজর এবং গাজরের রস খাওয়া লাভজনক।
২. চোখের জ্যোতি বাড়াতে (To increase the brightness of the eyes)
আজকার মানুষের চোখের সমস্যা বেশি দেখা যায়। বিশেষত শিশুদের, ছোটো বয়স থেকে চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ায় চশমা গ্রহণ করতে হয়। তাই বাচ্চাদের ছোটো থেকে নিয়মিত ১০০ গ্রাম করে গাজর খাওয়ালে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। কারন গাজর চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করার একটি উত্তম শিকড়।
৩. ব্লাড ক্যান্সারে উপকারি (Beneficial in blood cancer)
গাজর ব্লাড ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার জন্য উপকারি। গাজরে উপস্থিত বিটা – ক্যারোটিন নামক উপাদান যা ক্যান্সার নিয়ন্ত্রনে সক্ষম। নিয়মিত গাজর খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।
৪. হার্টের রোগের জন্য (For heart disease)
হার্টের রোগীদের জন্যও গাজর উপকারি। যাদের হার্ট দুর্বল তারা নিয়মিত গাজরের রস খেলে উপকার পায়। হার্টের অসুখ রোধ করতে কাঁচা গাজর সর্বোত্তম।
আরও পড়ুন । জেনে রাখুন কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতা
Notes: যারা নিয়মিত ঔষধ সেবন করেন, তারা গাজরের জুস খাওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন ।
৫. বুকের ব্যথা উপশম (Chest pain relief)
গাজর সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পর রস বের করে নিন। এই রসে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে বুকে ব্যথা কমে । বুকের ব্যথা উপশমে গাজরের পুষ্টিগুণ অনেক।
৬. হাড় মজবুত করে (Strengthens bones)
নিয়মিত গাজর খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্যালসিয়াম পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত গাজর খেলে গাজরে সমৃদ্ধ ক্যালসিয়াম শরীরে প্রবেশ করে শরীরের হাড় মজবুত করে। তাই যাদের হাড় সম্পর্কিত সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত গাজর খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে (Increases immunity)
গাজরে ভিটামিন সি সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরে ইমুনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে এবং শরীর থেকে রোগ ব্যাধি দূরে রাখে। যদি আপনার প্রতিরোধক সিস্টেম দুর্বল হয়ে থাকে এবং আপনি যদি ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে নিয়মিত গাজরের রস পান করুন।
আরও পড়ুন । সিদ্ধ রসুনের উপকারিতা জেনে নিন
৮. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গাজরের উপকারিতা (Benefits of carrots for diabetics)
গাজরের রস রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের রক্ত শর্করার মাত্রা ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গাজর খুব উপকারি।
৯. ব্রণ দাগ কমাতে গাজরের পুষ্টিগুণ (Nutritional value of carrots to reduce acne scars)
গাজরের রস, টমেটোর রস এবং কমলালেবুর রস দীর্ঘদিন ধরে ব্রণ দাগ কমাতে সক্ষম।
১০. চামড়া ভালো রাখে (Keeps the skin well)
শরীরের ভিটামিন “এ” অভাবে ত্বক ড্রাই হয়ে যায়। আর এর থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত গাজর খেতে পারেন। কারণ গাজর উপস্থিত ভিটামিন “এ” শরীরে ভিটামিনের অভাব পূরণ করে।
Key Point: নানা রঙের গাজর ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ ভারতে গোলাপি ও লাল রঙের গাজর এবং উত্তর ভারতে লাল ও কমলা গাজর ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন । স্বাস্থ্য ভালো রাখতে মিষ্টি আলুর গুণ জানলে অবাক হবেন
গাজর কীভাবে খাওয়া ভালো (How to eat carrots is good)
নীচে গাজর খাওয়ার কিছু ভালো উপায় রয়েছে।
- গাজর কাঁচা খেতে পারেন।
- গাজরের স্যুপ খেতে পারেন।
- গাজর সালাদ তৈরি করে খেতে পারেন।
- গাজরের রস তৈরি করে পান করতে পারেন।
- গাজরের পুডিং খেতে পারেন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. প্রতিদিন গাজর খান তবে কী হবে?
A. গাজরে ভিটামিন এ উপস্থিত রয়েছে। এটি অতিরিক্ত রক্তের ক্যারোটিনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে যা ত্বকে ব্রণ কম করে।
Q. গাজর ত্বকের জন্য কি উপকার?
A. গাজর আপনার ত্বকের চেহারা উন্নত করতে পারে। গাজরে বিটা ক্যারোটিন ত্বকের প্রদাহও হ্রাস করে।
Q. গাজরে চিনির পরিমাণ কি বেশি?
A. গাজরে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তবে অন্যান্য অনেক সবজির চেয়ে বেশি নয়। এবং এটি অবশ্যই এই কম-ক্যালোরিযুক্ত। কাঁচা গাজরের আধা কাপের মধ্যে তিন গ্রাম চিনি রয়েছে।
Q. গাজর কি লিভারের পক্ষে ভাল?
A. ভিটামিন এ সমৃদ্ধ সবজি আপনার লিভারকে রোগ থেকে রক্ষা করে। গাজরে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন লিভারের কাজে সহায়তা করে।