অতিরিক্ত গরমে কারণে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই সর্বদা একটি সমস্যা দেখা যায়। সেটা র্যাশ। এটি গরমের দিনে একটি খুব সাধারণ সমস্যা। এটি যে শুধুমাত্র জ্বালা বা ব্যথার সৃষ্টি করে না বরং এই সমস্যাটি একটি অস্বস্তিকর ব্যাপার। অনেকের তো প্রায় ঘন ঘন র্যাশ হতে দেখা যায়। এটি দেখতেও খারাপ দেখায়। তবে ত্বকের র্যাশ নিরাময় করা যায় ঘরে বসেই। কয়েকটি উপাদান রয়েছে যা ত্বকের চিকিৎসার জন্য ভালো কার্যকর। আজকের এই নিবন্ধে গরমে র্যাশ থেকে মুক্তির উপায় জেনে রাখুন।
র্যাশ (Rash)
র্যাশ শরীরের কেবলমাত্র একটি ছোট অংশে হতে পারে, বা এটি একটি বৃহৎ অঞ্চল জুরে হতে পারে। র্যাশ বিভিন্ন আকারে আসে। র্যাশ শুকনো, আর্দ্র, গন্ধযুক্ত, মসৃণ, ফাটলযুক্ত বা ফোস্কাযুক্ত হতে পারে। র্যাশ বেদনাদায়ক, চুলকানি এমনকি রঙ পরিবর্তন করতে পারে।
আরো পড়ুন। শাক সবজির গুণাগুণঃ শাক সবজির যে এত গুণ জানলে অবাক হয়ে যাবেন
র্যাশ কেন হয়? (Why Rashes come on Body)
র্যাশ ভিন্ন কারনের জন্য হয় যেমন-
- অ্যালার্জি
- অতিরিক্ত ড্রাই ত্বক
- ধুলোবালি
- খাবারে অ্যালার্জি
আরো পড়ুন। কাঁচা ছোলার গুণঃ নিয়মিত কাঁচা ছোলা এনার্জির চাবিকাঠি
র্যাশ নিরাময়ের ঘরোয়া প্রতিকার(Rashes Removal Home Remedy)
1. টি ট্রি অয়েল
2. অ্যালোভেরা
3. নিমের তেল
4. জোজবা অয়েল
5. পেট্রোলিয়াম জেলি
6. বরফ
7. আপেল সাইডার ভিনিগার
আরো পড়ুন। দৌড়ানোর পর খাবারঃ দৌড়ানোর পর খাদ্য তালিকা কি কি রাখা উচিত?
গরমে র্যাশ থেকে মুক্তির উপায় (How to remove Rashes in Summer)
1. টি ট্রি অয়েলঃ
টি ট্রি অয়েল অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি সমৃদ্ধ, যা গরমে র্যাশ থেকে মুক্তির দেয় । এছাড়াও টি ট্রি অয়েল অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল যা ইনফেকশন কমাতে সহায়তা করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পরিমাণ মতো টি ট্রি অয়েল
- পরিমাণ মতো নারকেল তেল
বানানোর পদ্ধতিঃ
ট্রি টি অয়েল এবং নারকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং মিশ্রণটি রাতে ঘুমানোর আগে আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে নিন। নিয়মিত ১ বার ব্যবহার করুন।
2. অ্যালোভেরাঃ
ত্বকের র্যাশের জন্য অ্যালোভেরা জেল খুব কার্যকর। অ্যালোভেরা ত্বকের র্যাশ, ইনফেকশন কমাতে দারুন উপকারী। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি উপাদান এবং এর জেলে উপস্থিত অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল যা ত্বকের ইনফেকশন কমায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- অ্যালোভেরা গাছের জেল
বানানোর পদ্ধতিঃ
অ্যালোভেরা গাছের থেকে অ্যালোভেরা জেল বের করে নিন এবং জেলটি অ্যালোভেরা আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিটের জন্য। ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা জলে পরিষ্কার করে নিন। নিয়মিত ২ বার ব্যবহার করতে পারলে ভালো ফল পেতে পারেন।
আরো পড়ুন। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধঃ ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার উপায়
3. নিমের তেলঃ
নিমপাতা ত্বকের জন্য খুব উপকারি তা আমরা সবাই জানি, তবে এটি র্যাশের জন্য অনেক বেশি কার্যকর। নিমপাতায় ভেষজ ঔষধি গুন রয়েছে যা ত্বকের র্যাশ এবং ইনফেকশন কমাতে সহায়ক।
নিমের তেল বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- একমুঠো নিমপাতা
- পরিমাণ মতো নারকেল তেল
নিমের তেল বানানোর পদ্ধতিঃ
র্যাশ থেকে মুক্তির উপায় আলোচনা করতে গেলে নিমপাতা সবচেয়ে ভালো বিকল্প। আপনি প্রথমে নিমপাতাগুলি পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে গেলে সব নিমপাতা বেটে রাখুন। এবার কড়াইয়ে নারকেল তেল গরম করে বেটে রাখা নিমপাতা দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। তেলের রঙ যখন কালো হয়ে আসবে তখন একটি পাত্রে নিমপাতার তেল ছেঁকে রেখে দিন। ঠাণ্ডা হলে র্যাশ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট রেখে পরিষ্কার করে নিন। রোজ একবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
4. জোজবা অয়েল:
জোজবা অয়েল অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়াও জোজবা অয়েলে উপস্থিত ভিটামিন সি যা ত্বক খুব দ্রুত শোষণ করে। এটি ত্বকে ময়শ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকে ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পরিমাণ মতো জোজবা অয়েল
যা করবেনঃ
নিয়মিত ঘুমানোর আগে কয়েক ফোঁটা জোজবা অয়েল নিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখবেন এবং পরের দিন সকালে উঠে ধুয়ে ফেলবেন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকে র্যাশ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।
আরো পড়ুন। দ্রুত দৌড়ানোর কৌশলঃ কিভাবে দ্রুত দৌড়াবেন জেনে রাখুন
5. পেট্রোলিয়াম জেলিঃ
পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বক ময়শ্চারাইজারের কাজ করে এবং ইনফেকশন সংক্রামণের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি ত্বকের সুরক্ষামূলক স্তর গঠন করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পেট্রোলিয়াম জেলি
যা করবেনঃ
কিছুটা পরিমাণ পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে র্যাশ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে হালকা করে মাসাজ করুন। দিনে যেকোনো সময় যতবার ইচ্ছে ব্যবহার করতে পারবেন।
6. বরফঃ
ত্বকের র্যাশ থেকে মুক্তি পেতে আরও একটি জিনিস আমাদের হাতের সামনেই রয়েছে বরফ। বরফ ত্বকের জ্বালাভাব এবং লালচে ভাব দূর করে এবং যেকোনো ব্যথা থেকে আরাম দেয়। একটুকরো বরফ পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে র্যাশ আক্রান্ত অংশে চেপে ধরে রাখুন জ্বালা ভাব অনেকটা কম হবে।
আরো পড়ুন। বিকালে দৌড়ানোর উপকারিতাঃ বিকালে দৌড়ানো সত্যিই কি উপকার?
7. আপেল সাইডার ভিনিগারঃ
অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল সমৃদ্ধ উপাদান ত্বকের র্যাশের চিকিৎসার জন্য উপকারী।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- এক টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার
- হাফ কাপ জল
যা করবেনঃ
হাফ কাপ জলে এক টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে নিন। এবার ওই মিশ্রণটি তুলোর বলে করে র্যাশ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে নিন। নিয়মিত দুবার ব্যবহার করুন।
গরমে র্যাশ থেকে মুক্তির উপায় তো জেনে গেলেন, এবার সঠিক সময়ে ঘরোয়া উপাদানে দিয়ে ত্বকের র্যাশ কমানোর চেষ্টা করুন।
Key Point: র্যাশের লক্ষণ হল ত্বকে জ্বালা ভাব এবং ফুসকুড়ি।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. একটি র্যাশ কত দিন স্থায়ী হতে পারে?
A. বেশিরভাগ র্যাশ সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায়। র্যাশ অনেক ধরনের হয়। আর তাই র্যাশের ওপর নির্ভর করে সে ততদিন স্থায়ী থাকে।
Q. র্যাশ আচরণ কি?
A. র্যাশ আচরণ বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। যেমন – জ্বালা, চুলকানি ইত্যাদি।
Q. দ্রুত র্যাশ নিরাময় কিভাবে করবেন?
A. র্যাশের ব্যথা এবং চুলকানি রোধ করার অন্যতম দ্রুত এবং সহজ উপায় হল ঠাণ্ডা প্রয়োগ করা। যেমন – অ্যালোভেরা, বরফ, নারকেল তেল, আপেন সাইডার ভিনিগার।