কাল মহালয়া। মহালয়ার ভোরবেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় গঙ্গার ধারে তর্পণ। আমরা সাধারণত যাকে মহালয়া বলে অভিহিত করি সেটা হিন্দুধর্মের মতে, তর্পণ করার জন্য এক বিশেষ পর্ব যা পিতৃপক্ষের পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত পক্ষ। মহালয়া ছাড়াও এই পক্ষ আরও বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- ষোলা শ্রাদ্ধ, মহালয়া পক্ষ, পিত্রুপক্ষ, জিতিয়া, কানাগাত এবং অপরপক্ষ।
Read more: দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা বার্তা
সূত্রঃ- the-endlessriver . com
মহালয়া তর্পণ করতে যে শুধু গঙ্গায় যেতে হবে এমন নয় আপনি পুষ্করিণীতেও তর্পণ করতে পারেন। তবে তর্পণ করার আগে আপনার জেনে রাখা উচিত তর্পণ করতে কি কি জিনিসের প্রয়োজন এবং কীভাবে করতে হবে এই তর্পণ?
Read more: দাদা এবং ভাইয়ের জন্য ভাইফোঁটার শুভেচ্ছা বার্তা
আজকের এই নিবন্ধে আলোচ্য বিষয় মহালয়ার দিন তর্পণকে ঘিরে আমরা আপনাদের জানাব কীভাবে করতে হয় তর্পণ এবং এটি করার জন্য কি কি জিনিস আপনাকে জোগাড় করতে হবে।
তর্পণ কি?
সূত্রঃ- www.wbtdcl.com
মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির উদ্দেশ্য তর্পণ করা হয়। তর্পণ কথাটি এসেছে ‘তৃপ’ আর তৃপ কথার অর্থ হল সন্তুষ্ট করা। পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য জল নিবেদন করা হয়, একেই তর্পণ করা বলে।
Read more: বিশ্বকর্মা পূজা 2024 শুভেচ্ছা
পিতৃ তর্পণ করতে কি কি জিনিসের প্রয়োজন হয়?
সূত্রঃ- blog . railyatri . in
পিতৃতর্পণ করতে আপনার যেসমস্ত উপচার লাগে তা হল-
- মন্ত্র পাঠের জন্য গঙ্গা জল
- চন্দন
- কালো তিল এবং কুশ
- তুলসীপাতা
- হরিতকী
- চাল
- দূর্বা
Read more: ঘুড়ি: বিভিন্ন ধরণের ঘুড়ির তালিকা জেনে নিন
মহালয়া দিন তর্পণ করার নিয়মঃ
সূত্রঃ- images . jansatta . com
মহালয়ার দিন গঙ্গায় গিয়ে অথবা পুষ্করিণী বা স্থলে তর্পণ করতে পারেন। তবে নদীতীরে গিয়ে তর্পণ করা ভালো। তবে কাজের ব্যস্ততায় যদি না পারেন বাড়ির আশেপাশে পুকুর গিয়ে আপনি তর্পণ সারতে পারেন।
- তর্পণ করার আগে স্নান করে প্রথমে পূর্ব মুখে নদী বা জলাশয়ে গিয়ে নাভি পর্যন্ত জলে দাঁড়াতে হয়।
- পৈতে বাম কাঁধে রেখে জল বা মাটি দিয়ে তিলকধারন করতে হবে।
- এবার তর্পণের শুরুতে আচমন ও বিষ্ণু মন্ত্র স্মরণ করতে হবে।
- করজোড়ে তিনবার বিষ্ণুকে স্মরণ করুন।
- আপনাকে আপনার বেদ অনুসারে তিনবার করে মন্ত্র পড়ুন এবং তিনবার জল দান করুন।
- পিতৃতর্পণ করতে ছয়টি কুশ একত্রে করে তিনটি কুশ নিন এবং অনামিকা আঙুলে আংটির ভঙ্গীতে ধারন করে তর্পণ করতে হবে। তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠের মধ্যভাগ উপবীতকে দক্ষিণ স্কন্ধে ঝুলিয়ে দিয়ে তিল সহ জল দান করতে হবে।
Read more: ধনতেরাস কি, সোনা কেনার কারণ, পূজাবিধি
প্রথমে দেব তর্পণ, তারপর মনুষ্য তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্য তর্পণ, যম তর্পণ তারপর পিতৃ তর্পণ। স্বর্গের পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণের মাধ্যমে জলদান করেই পিতৃপুরুষের অবসান হয় এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়।তর্পণের পূর্ববর্তী দিনে তিনপুরুষের নামে পিন্ড দান করা হয়ে থাকে।
তবে পুকুরে বা বাড়িতে যেখানে করুন না কেন ৫-৬ ইঞ্চি উঁচু থেকে জলদান করতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন জলদান করবেন তা বৃষ্টির জলের সাথে যেন মিশ্রিত না হয়। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ছাতা মাথায় দিয়ে আপনাকে তর্পণ করতে হবে।
সারকথাঃ
তর্পণের বিনিময়ে পূর্বপুরুষ আমাদের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, সাফল্য এবং দীর্ঘায়ু দান করেন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রঃ মহালয়ার দিন তর্পণ কখন করতে হয়?
উঃ মহালয়ার দিন তর্পণ ভোরবেলা করতে হয়?
প্রঃ পুকুরে কি তর্পণ করা যাবে?
উঃ হ্যাঁ, যদি আপনি নদীতীরে যেতে না পারেন তাহলে পুকুরে করতে পারেন তবে নদীরতীরে তর্পণ করা ভালো।
প্রঃ পিতৃতর্পণে কত বার মন্ত্র জব করতে হয়?
উঃ পিতৃতর্পণে তিনবার মন্ত্র জব করে জলদান করতে হবে।
প্রঃ তর্পণ করতে গেলে কি তিল লাগবেই?
উঃ হ্যাঁ, কালো তিল ছাড়া তর্পণ সম্ভব নয়।