আমরা অনেক ফল এবং সবজি উপকারিতার ও পুষ্টিগুণের কথা জেনে থাকি। কিন্তু খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে হয়তো খুব একটা শোনা যায় না। অন্যান্য ফল এবং সবজির মতই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেজুর গুরুত্ব অনেকটাই। দেখতে ছোট হলেও এর গুণ অনেক। নানা রকম রোগব্যাধি উপশমে এটি বেশ কার্যকারী। এটি শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়, যাদের শরীরের হিমোগ্লোবিন মাত্রা কম তাদের জন্য কিন্তু খেজুর সর্বোত্তম।
এই মিষ্টি জাতীয় খাবারটি খেতেও বেশ সুস্বাদু। যারা মিষ্টি খেতে পছন্দ করে তার তো এর পরম বন্ধু। যে কোন চাটনির স্বাদ মজাদার করে তুলতে খেজুর অতুলনীয়। তবে খেজুর রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এই খাবারটি শরীরের কোন ক্ষতি করে না। তাহলে আসুন আজ এই নিবন্ধটি থেকে সুস্বাদু মিষ্টি খাবারটির গুনের কথা জেনে নিই। তাই আজকের এই নিবন্ধে আপনাদের জন্য রইল স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেজুরের পুষ্টিগুণ।
খেজুর কি?
খেজুর একটি বীজ সহ একটি মিষ্টি ফল। খেজুরের বিশেষত্ব হ’ল এর প্রাকৃতিক মিষ্টি। এজন্য খেজুরগুলি একটি জনপ্রিয় খাদ্য। খেজুর গাছটি বেশ বড়। এর পাতা প্রায় ৪-৬ মিটার লম্বা হয়। আয়ুর্বেদের মতে খেজুরের উপকারিতা অনেক। রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখার এটি খুব উপকার।
আরও পড়ুন । শসার ফেসপ্যাকঃ ত্বক ভালো রাখতে শসার ১০ টি ফেসপ্যাক
খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য কেন ভালো?
খেজুর খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। কারণ খেজুরে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি৬ মতো উপাদান রয়েছে। এই সমস্ত পুষ্টি আমাদের শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করে।
আরও পড়ুন । ডাবের জলঃ গরমে নিজেকে সুস্থ রাখতে ডাবের জল
খেজুরের কি কি পুষ্টিগুণ আছে?
খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। খেজুরে অন্যান্য সব তাজা ফলের চেয়ে ক্যালরি বেশি থাকে। খেজুরের বেশিরভাগ ক্যালরি পাওয়া যায় কার্বস থেকে। এছাড়াও খেজুরের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি৬।
প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরের পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে –
• ফাইবার (২ গ্রাম )
• পটাশিয়াম (২০ শতাংশ)
• ম্যাগনেসিয়াম (১৪ শতাংশ)
• ক্যালরি (২৭৭ ক্যালরি)
• প্রোটিন (২ গ্রাম প্রোটিন ।
• কপার (১৮ শতাংশ)
• আয়রন (৫ শতাংশ)
• ভিটামিন বি৬ (১২ শতাংশ)
• ম্যাঙ্গানিজ (১৫ শতাংশ)
Key point: খেজুরে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট ।
খেজুরের পুষ্টিগুণ উপকারিতাঃ
- ফাইবারঃ- ফাইবার হজম স্বাস্থ্য এবং নিয়মিত অন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা এবং কোলেস্টেরল উন্নত করতে পারে।
- পটাশিয়ামঃ- রক্তচাপ, কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য, হাড়ের শক্তি এবং পেশী শক্তিশালী করে।
- ম্যাগনেসিয়ামঃ- হৃদরোগ থেকে রক্ষা করার জন্য উপকারি এবং সুগারের রোগীদের জন্য উপকারি।
- ক্যালরিঃ- ক্যালরি মানুষের দেহে শক্তির উৎস। ক্যালরি মানুষের দেহে শক্তির উৎস।
- প্রোটিনঃ- শরীরের ত্বক, চুল, নখ, হাড় বিকাশে প্রোটিন প্রয়োজন।
- আয়রনঃ- রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে।
- ভিটামিন বি৬ঃ- ভিটামিন বি 6 রোগ প্রতিরোধে এর ভূমিকা পালন করে।
- ম্যাঙ্গানিজঃ- মানুষের হাড় গঠনের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য ম্যাঙ্গানিজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ব্যক্তির শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন । রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা ও ব্যবহার
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতাঃ
খেজুর উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার কবজ। স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত ২-৪ তে খেজুর খাওয়া প্রয়োজন। এখানে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খেজুরের পুষ্টিগুণ উপকারিতা আলচনা করা হল –
1. হৃদয় ভালো রাখেঃ
আমাদের হার্ট যদি ভালো থাকে তাহলে আমাদের শরীর এবং মন এমনি ভালো থাকবে। খেজুর রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খেলে এতে দুর্বল হার্ট শক্তিশালী হয়। খেজুরে পটাশিয়াম থাকায়, স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। নিয়মিত না খেতে পারলেও সপ্তাহে অন্তত ২ দিন এইভাবে খেলে হার্ট সুরক্ষিত করা সম্ভব।
2. ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেঃ
খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। খেজুর এমন স্বাস্থ্যকর ফল যাতে ভিটামিন এবং প্রোটিনে ভরপুর। আপনি যদি খুব রোগা হন এবং নিজের ওজন সামান্য বড়াতে চান, তাহলে খেজুর আপনার কাজে আসতে পারে। কারণ শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন। নিয়মিত ৩-৪ তে খেজুর দুধের সঙ্গে খান ফলাফল কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারবেন।
আরও পড়ুন । রইল রূপচর্চায় ত্বকের যত্নে হলুদ ব্যবহারের টিপস
3. হিমোগ্লোবিন মাত্রা বৃদ্ধি করেঃ
সুস্থ জীবনযাপন করার জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক পরিমাণে থাকা দরকার। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখে। তাই যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তাদের নিয়মিত খেজুর খাওয়া জরুরী।
4. অ্যানিমিয়া দূর করেঃ
রক্তে যখন লাল কণিকা কম হয়ে যায় তখন সাধারণত অ্যানিমিয়া রোগ হয়। খেজুরে রয়েছে অত্যধিক পরিমাণে আয়রন, যা রক্তে সব মাত্রা সঠিক পরিমাণে বজায় রাখে। এছাড়াও খেজুর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। এর জন্য অ্যানিমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের খেজুর খাওয়া দরকার।
5. ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করেঃ
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব ঘটলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় ফলে জয়েন্টে ব্যথা হয়। খেজুরে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, যা শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে। এর জন্য যাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে তাদের নিয়মিত খেজুর খাওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন । কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতাঃ কমলালেবুর নানাবিধ উপকারিতা
6. বাচ্চাদের জন্য খেজুরের উপকারিতাঃ
যেই সমস্ত বাচ্চারা শারীরিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য খেজুর খুব উপকার। দুর্বল বাচ্চাদের শরীরের এনার্জি জোগাতে খেজুরের সঙ্গে মধু খাওয়ানো উচিত। এছাড়াও বাচ্চাদের দাঁতের জন্য খেজুর খুব উপকারী।
7. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
খেজুরে পটাশিয়াম বিদ্যমান, যা মস্তিষ্কের স্নায়বিক কাজকর্ম সচল রাখে পাশাপাশি মস্তিষ্কের কাজকর্ম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
8. ত্বক ভালো রাখেঃ
খেজুরে উপস্থিত ভিটামিন “বি” ত্বকের জন্য খুব লাভজনক। ভিটামিন “বি” এর অভাবে ত্বকে নানা ধরণের সমস্যা দেখা যায়। খেজুরের পুষ্টিগুণ ত্বক ভালো রাখতে অতুলনীয়। নিয়মিত ২-৪ তে খেজুর খেলে ত্বক সতেজ থাকে।
আরও পড়ুন । পেস্তা বাদাম খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
9. স্বাস্থ্যকর চুলের জন্যঃ
খেজুরে ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বিশেষ করে খেজুরে ভিটামিন বি৬ বিদ্যমান, যা চুল ভালো রাখতে খুব জরুরী। অতিরিক্ত চুল পড়ে যেতে বাধা দেয় পাশাপাশি চুলের সমস্ত রকম সমস্যা থেকে রেহাই মেলে।
তাহলে দেখলেন তো স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর । ত্বক ও চুল ভালো রাখতে খেজুরও উপকার।
Key Point: খেজুর একটি স্বাস্থ্যকর ফল যা সহজেই ডায়েটে যোগ করা সম্ভব ।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. খেজুর কি রোজ খাওয়া যায়?
A. হ্যাঁ, রোজ খেতে পারবেন।
Q. রোজ কতগুলি খেজুর খাওয়া যেতে পারে?
A. চারটে থেকে ছয়টা।
Q. খেজুর খেলে ত্বক সুন্দর হয়?
A. খেজুরে উপস্থিত ভিটামিন বি ত্বকের জন্য খুব ভালো।
Q. খেজুর চুলের জন্য কি ভালো?
A. হ্যাঁ, চুলে জন্য ভালো।