আপেল সুপরিচিত একটি ফল। পুষ্টিগুণে ভরপুর আপেল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি উপকারিতাও প্রচুর। টকটকে লাল রঙের ফলটি মধ্যে রয়েছে শর্করা, ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “ই”, আঁশ, খনিজ, পেকটিন এবং ম্যালিক এসিড। এতো পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু ফলটি নিয়মিত একটা খেলে আপনার আর ডাক্তারেরে কাছে যাওয়া প্রয়োজন বোধ হবে না। আপেলের পুষ্টিগুণ এতোই যে ডাক্তাররাও অসুস্থ রোগীদের খাবারের তালিকায় সুপারিশ করে।
আপেল (Apple)
আপেলের মধ্যে ফাইটোনিউট্রিএন্টস উপস্থিত, যা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একটি আপেলের প্রায় ১০% কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং একটি আপেলের মধ্যে ৪% বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। বাকি আপেলের প্রায় ৮০% এরও বেশি জল জল থাকে। একটি মাঝারি আকারের আপেলে প্রায় ৪০ ক্যালোরি থাকে। এক কিলোগ্রাম তাজা আপেল প্রায় ৫০০ কিলোক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে।
আরো পড়ুন। দৌড়ানোর পর খাবারঃ দৌড়ানোর পর খাদ্য তালিকা কি কি রাখা উচিত?
আপেলের পুষ্টিগুণ (Nutritional value of Apple)
আপেল এবং আপেলের রস উভয়ই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য উপকার । একটি মাঝারি আপেলের পুষ্টিগুণ হল-
• ফাইবার – আপেলে ফাইবার রয়েছে ৪ গ্রাম ।
• পটাশিয়াম – আপেলে ৬ শতাংশ পটাশিয়াম রয়েছে ।
• ক্যালোরি – আপেলের ৯৫ পরিমাণ ক্যালোরি রয়েছে ।
• ভিটামিন “সি” – আপেলে ১৪ শতাংশ ভিটামিন “সি” ।
• ভিটামিন “কে” – আপেলে ভিটামিন “কে” রয়েছে ৫ শতাংশ ।
আরো পড়ুন। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধঃ ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার উপায়
আপেলের পুষ্টিগুণের উপকারিতা (Nutritional Benefits of Apple)
- ফাইবার – ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- পটাশিয়াম – পটাশিয়াম স্ট্রোকের ঝুঁকিও হ্রাস করে।
- ক্যালোরি – ক্যালোরি আমাদের দেহে শক্তির জোগান দেয়।
- ভিটামিন সি – ভিটামিন সি, যা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড হিসাবে পরিচিত, শরীরের সমস্ত টিস্যুগুলির বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি কোলাজেন গঠন করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্ষত নিরাময় এবং দাঁত গঠনে সাহায্য করে।
- ভিটামিন কে – ভিটামিন কে একটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় ভিটামিন যা স্বাস্থ্যকর হাড় এবং সাধারণ রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রোটিন তৈরি করে।
আরো পড়ুন। দ্রুত দৌড়ানোর কৌশলঃ কিভাবে দ্রুত দৌড়াবেন জেনে রাখুন
স্বাস্থ্যের জন্য আপেলের উপকারিতা (Health Benefits of Apple)
-
দাঁতের জন্য আপেল খাওয়ার উপকারিতাঃ
নিয়মিত আপেল দাঁত মজবুত এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে। আপনি যদি আপেল নিয়মিত খান তাহলে দাঁতের সমস্যা দূর হবে। এছাড়াও আপেল নিয়মিত চিবিয়ে খাওয়ার ফলে দাঁতের হলুদ ভাব দূর হয়।
-
হৃদয়ের জন্য আপেল খাওয়ার উপকারিতাঃ
আপেল হৃদয় সংক্রান্ত রোগের জন্য খুব উপাকারি। যারা নিয়মিত আপেল খায় তাদের তুলনায় যারা আপেল খায় না তাদের হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভবনা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও আপেল শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
আরো পড়ুন। বিকালে দৌড়ানোর উপকারিতাঃ বিকালে দৌড়ানো সত্যিই কি উপকার?
-
হাড় মজবুত করার জন্য নিয়মিত আপেল খাওয়ার উপকারিতাঃ
আপেলে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা হাড়ে শক্তি প্রদান করে। যার ফলে হাড় মজবুত হয়। তাই আপনি সুস্থ এবং সবল জীবনযাপন করবেন তাহলে আপনাকে নিয়মিত আপেল খাওয়া শুরু করতে হবে।
-
অ্যানিমিয়া দূর করার জন্য আপেল খাওয়ার উপকারিতাঃ
অ্যানিমিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য আপেল খুব ভালো কার্যকর। আপেলে এমন উপাদান রয়েছে যা অ্যানিমিয়া দূর করতে সক্ষম। তাই নিয়মিত ২-৩ টি আপেল খেলে অ্যানিমিয়া রোগ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।
Key Point: আপেল সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ফলগুলির মধ্যে অন্যতম।
আরো পড়ুন। জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের লক্ষণ এবং চিকিৎসা
-
ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করেঃ
গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত আপেল বা আপেলের জুস খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। কারণ আপেল ক্যান্সারের কোষগুলি বৃদ্ধি পেতে রোধ করে। তাই আপনি যদি ক্যান্সারের হাত থেকে দূরে থাকতে চান তাহলে নিয়মিত অবশ্যই আপেল খান।
Key Point: যেহেতু অ্যান্টি- অক্সিডেন্টের উৎস, তাই আপেল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
-
ওজন হ্রাস হয়ঃ
আপনি হয়তো শুনলে অবাক হবেন নিয়মিত আপেল খেলে ওজন কমে। আপেল ওজন নিয়ন্ত্রক ফলগুলির মধ্যে একটি। তাই ওজন কমাতে চাইলে আজ থেকেই আপেল খাওয়া শুরু করে দিন।
আরো পড়ুন। ওজন বাড়ানোর ব্যায়াম যা ওজন বৃদ্ধি করবে দ্রুত
তাহলে দেখলেন তো আপেলের কত পুষ্টিগুণ। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত আপেল বা আপেলের জুস খান।
আপেল খাওয়ার সঠিক সময় (Right Time for eating Apple)
আপনার উচিত সকালের সময় একটি আপেল খাওয়া। কারণ আপেলে থাকে ডায়েট্রিক ফাইবার, পেকটিন যা আপেলের খোসাতে পাওয়া যায়। যেহেতু বেশিরভাগ লোকের দেরিতে ঘুম থেকে অথার ফলে বা দেরিতে খাওয়ার অভ্যাসের কারণে হজমজনিত সমস্যা থাকে তাই আপেল ঠিক সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে খাওয়া খুবই উপকারী।
Key Point: আপেল দেহের সমস্ত রকম রোগব্যাধি সারাতে সক্ষম। কিন্তু তা একমাত্র নিয়মিত আপেল খেলেই সম্ভব ।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. দিনে কটা আপেল খাওয়া যেতে পারে?
A. যদি ডায়েট করতে থাকেন তবে চার থেকে পাঁচটি প্রতিদিন খেতে পারেন। ফলমূল হিসেবে খেতে চাইলে দুই থেকে তিনটি প্রতিদিন খেতে পারেন।
Q. আপেলের ত্বক কি খাওয়া উচিত?
A. খোসাযুক্ত একটি আপেল, খোসাহীন আপেলের চেয়ে ৩৩২% বেশি ভিটামিন কে, ১৪২% বেশি ভিটামিন এ, ১১৫% বেশি ভিটামিন সি, ২০% বেশি ক্যালসিয়াম এবং ১৯% পর্যন্ত পটাসিয়াম সমৃদ্ধ।
Q. রাতে ঘুমনোর আগে আপেল খাওয়া কি ঠিক?
A. আপেল পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি ৬ এর একটি ভালো উৎস যা রাতে ভালো ঘুমোতে সাহায্য করে। এছাড়াও, আপেল ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস কারণ এটি আপনার রক্তে শর্করাকে পরিচালনা করতে, রক্তচাপকে হ্রাস করতে এবং আপনার শ্বাসকষ্টকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
Q. আপেল কি ওজন হ্রাসের জন্য ভাল?
A. আপেলগুলিতে কম ক্যালোরি থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে ফলে ক্ষুধা কমাতে আপেলের খাওয়া খুবই ভালো।