৬ টি ঘরোয়া টোটকা । চিকেন পক্স হলে কি করব ? জানুন

চিকেন পক্স

এসে গেছে বসন্ত, বসন্তের আবহাওয়া মনোরম হলেও এই মরশুমেই চিকেন পক্সের মত রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। যাকে আমরা বসন্ত রোগ বলেও জেনে থাকি। ভ্যারিসেলা নামক ভাইরাসের আক্রমনের কারণেই এই রোগ দেখা দেয়। তাহলে চিকেন পক্স হলে কি করব ? তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে অনেকের মনেই। তাই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হল চিকেন পক্স।

ভাইরাস জনিত অসুখ হওয়ার কারণে এই রোগকে আটকানোর তেমন উপায় না থাকলেও ঘরোয়া কিছু টোটকা ব্যবহার করে আমরা সহজেই চিকেন পক্স থেকে মুক্তি পেতে পারি।

Read more: জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের লক্ষণ এবং চিকিৎসা

যদিও আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় এই রোগের ভ্যাক্সিন নেওয়া যেতে পারে। তার পাশাপাশি ঘরোয়া প্রতিকারগুলি মেনে চললেও উপকার মিলবে খুব তাড়াতাড়ি। আজকের আর্টিকেলে আমরা কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকারের বিষয়ে জানব যা চিকেন পক্স থেকে দ্রুত রেহাই পেতে সাহায্য করবে।

চিকেন পক্স

চিকেন পক্স কেন হয়?

ভেরিসেলা-জোস্টার নামক ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার কারণেই চিকেনপক্স হয়। এটি একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস যা চিকেনপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছরিয়ে পড়তে পারে, আক্রান্ত ব্যক্তির ফোস্কা থেকে নির্গত তরল পদার্থের সংস্পর্শে এসে ছড়াতে পারে কিংবা দাদ আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেও এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যার কারণে যা সারা শরীরে চুলকানি এবং লাল দাগ সৃষ্টি হয়।

Read more:  আর্থ্রাইটিস কি, রোগের লক্ষণ এবং ব্যথা কমানোর চিকিৎসা

চিকেন পক্সের লক্ষণ গুলি কি কি-

চিকেনপক্সের লক্ষণগুলি সাধারণত ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ১০ থেকে ২১ দিন পরে শরীরে দেখা দিতে শুরু করে। এটি সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণগুলির সাথে শুরু হয়। চিকেন পক্স কতদিন থাকে ?  চিকেনপক্সের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১ বা ২ দিন পরে, মুখে, বুকে এবং পিঠে লাল র‍্যাশ দেখা দেয় এবং তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

Read more:  চর্মরোগ | একজিমা কি, লক্ষণ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রথম অবস্থায় ফুসকুড়িগুলি ছোট থাকলেও পরবর্তীতে পুঁজ-ভরা ফোস্কায় পরিণত হয়। এরপর আসতে আসতে ফোস্কাগুলো শুকিয়ে যায় এবং জ্বালা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়, জ্বর দেখা দেয়, ক্লান্তিভাব, পেটব্যথা হতে পারে।

 চিকেন পক্স হলে কি করব

চিকেন পক্স চিকিৎসায় ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies to Cure Chicken Pox)

চিকেন পক্স হলে কি করব ? কি ওষুধ খাওয়া উচিত? ইত্যাদি বিষয়ে অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকার গুলি নিরাময় দিতে খুবই উপকারি।

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক চিকেন পক্স থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ প্রতিকার গুলি কি কি-

1. ডাবের জল:

ডাবের জলে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, যার কারণে এটি ত্বকে কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার পাশাপাশি ত্বকের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে। শুধু তাই নয়, চিকেন পক্সের কারণে শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়।

ডাবের জল যেহেতু শরীরের জন্য ভালো এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে তাই শরীরকে হাইড্রেট রাখতে এই সময় ডাবের জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা।

2. ক্যালামাইন লোশন: 

চিকেন পক্সের কারণে আমাদের সারা শরীরে হওয়া চুলকানি কমাতে ক্যালামাইন লোশন লাগান, আরাম পাবেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।

3. মেথির জল:

চিকেন পক্স হলে অনেকে বলে থাকেন মেথির জল খাওয়ার কথা। তবে হোমিওপ্যাথি কিছু চিকিৎসকেরা বলে থাকেন মেথি জল একদম নয়। যদিও এর কারণ জানা নেই। তাই খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Read more:  টাইফয়েড কি, টাইফয়েডের লক্ষণ, ঘরোয়া প্রতিকার

4. অ্যালোভেরা জেল:

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে। এমনকি ত্বকের যেকোন ক্ষত নিরাময়ে এটি দারুণ কার্যকরী। শুধু তাই নয়, চিকেনপক্সের দাগ দূর করতে এবং এর  কারণে হওয়া র‍্যাশ থেকেও মুক্তি দিতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরার পাতার নির্যাস ত্বকে লাগাতে পারেন।

5. স্বাস্থ্যকর খাবার:

চিকেন পক্স রোগীর যত্নে ডায়েটে থাকুক স্বাস্থ্যকর খাবার। এই সময় চিকেন পক্স আক্রান্ত ব্যক্তিকে হালকা মশলাযুক্ত, সহজে হজম হয় তেমন খাবারই খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সেদ্ধ সব্জি খেলে বেশি ভালো হয়। সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখা উচিত ডায়েটে।

6. নিম পাতা: 

নিমে রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ যা ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্যকারী। চিকেন পক্স থেকে দ্রুত আরাম পেতে নিম পাতা ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে স্নান করলে উপকার মেলে খুব তাড়াতাড়ি।

Read more:  সহজেই ব্লাড সুগার কমানোর উপায় জেনে রাখুন

চিকেন পক্স হলে কি করব

চিকেন পক্সে কি করা উচিতঃ

  • বসন্ত আক্রান্ত রোগীর দেহে সারা গায়ে র‍্যাশ থাকে। তাই ভারী পোশাক পড়ালে ঘর্ষণের আশঙ্কা থাকে। তাই সুতির পোশাক পড়ানো উচিত এতে রোগীর আরাম লাগে।
  • যেহেতু এটি একটি ভাইরাস সংক্রমিত রোগ, তাই রোগীকে আলাদা রাখতে হবে। যাতে তাঁর থেকে অন্য কারো দেহে ছড়িয়ে না পড়ে। ভাইরাস দমনে আলো-বাতাস প্রয়োজন হয়। তাই ঘরে যাতে দিনের বেলা আলো-বাতাস খেলে নজর রাখতে হবে।
  • চিকেন পক্স হলে কি করব ? ঘরোয়া প্রতিকারের পাশাপাশি অবশ্যই ডাক্তারের ঔষধ জরুরী। তাই ডাক্তার দেখিয়ে তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী চিকেন পক্স এর ঔষধ খাওয়া উচিত। চিকেন পক্স আক্রান্ত রোগীর ১০০-এর বেশি জ্বর আসে তাহলে অবশ্যই তাকে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে।
  • চিকেন পক্সের সময় স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি বেশি করে ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে টক জাতীয় ফল এড়িয়ে চলাই উচিত।

Read more:  অ্যালার্জি প্রতিরোধঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে অ্যালার্জির চিকিৎসা

চিকেন পক্সে সতর্কতা

চিকেন পক্সে সতর্কতাঃ

  • পক্স থেকে বাঁচার উপায় হিসাবে রোগীর রান্নায় বেশি তেল-মশলা দেওয়া চলবে না। পাতলা খাবার খেতে হবে।
  • পক্স হলে কি খাওয়া যাবে না ? চর্বি ফ্যাট জাতীয় খাবার- মাখন, তেল, বাদাম, পনির, চকোলেট জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট থাকে, যা পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত ড্রাই ফ্রুট- যেমন আখরোট, চিনাবাদাম, কিসমিশের মতো খাবারে এক রকম অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা চিকেন পক্স রোগীর স্বাস্থ্যের পক্ষে একদমই ভালো নয়।
  • পক্সে চুলকানি হলে তাতে কখনো নখ লাগান উচিত নয়। কারণ তা থেকে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। এমনকি ত্বকে দাগ থেকে যেতে পারে।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ):

Q. চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত?

A. চিকেন পক্সের কারণে মুখের ভিতরে ছোট ছোট ক্ষত সৃষ্টি হয়, যার কারণে অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার খেয়ে তাতে ঝাল লাগলে প্রদাহ তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে খুব গরম নয়, হালকা মশলাযুক্ত এবং সহজে হজম হয় তেমন খাবারই খাওয়া উচিত।

Q. চিকেনপক্সের লক্ষণ কতদিন স্থায়ী হয়?

A. চিকেন পক্সের লক্ষণ প্রায় ৪ থেকে ৭ দিন সক্রিয় থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুস্থ হতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগে।

Q. চিকেন পক্স কি ছোঁয়াচে?

A. হ্যাঁ, এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর সঙ্গে ভাইরাস ছড়ায়। যার কারণে রোগীর সংস্পর্শে আসলেও এই রোগ ছড়াতে পারে।

Q. কাদের মধ্যে চিকেন পক্স হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে?

A. যেহেতু এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ তাই সবার মধ্যেই এই ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা কমবেশি থাকে। তবে ১-১৪ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের এই রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে।