মানসিক স্বাস্থ্য বলতে আমাদের মানসিক ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য এবং সামগ্রিক মানসিক কল্যাণ বোঝায়। মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ, প্রতিকূলতার দুর্দশা এবং চাপ মোকাবিলায় সক্ষম হচ্ছে কার্যকরভাবে। মানসিক স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায়িত করার চেয়ে মানসিক অসুস্থতা সংজ্ঞায়িত করা সবসময় সহজ হয়েছে। অনেকে স্বীকার করেছেন যে মানসিক স্বাস্থ্য, মানসিক অসুস্থতার অনুপস্থিতির চেয়ে বেশি। বর্তমানে বেসিরভাগ মানুষই নিজের অজান্তে এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এখানে মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্য এর কিছু ধারনা দেওয়া হল-
মানসিক স্বাস্থ্য কি (What is mental health)
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে সংবেদনশীল, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক সুস্থতার ব্যক্তির স্বাস্থ্যকে বোঝায়। এটি সুস্থতার সাথে জড়িত যার মধ্যে লোকেরা প্রতিদিনের জীবনে যে সাধারণ চাপগুলির মুখোমুখি হয় সেগুলি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত করে কীভাবে আমরা চিন্তা করি? আমরা কী অনুভব করি এবং কীভাবে আমরা মনে করি? কেবল এটিই নয় এটি আমাদের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি আমাদের পছন্দ-অপছন্দকেও সচল রাখে।
আরও পড়ুন । মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নঃ মানসিক রোগের প্রতিকার
স্বাস্থ্যের উপর কী প্রভাব পড়ে (What is the effect on health)
মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য কতটা ভাল কাজ করে এটি তার উপর নির্ভর করে। মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত কিছু সমস্যা, যেমন হতাশা আমাদের বিভিন্ন ধরণের শারীরিক স্বাস্থ্যের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন । শিশু স্বাস্থ্য সচেতনতায় ৪ টি কার্যকর উপায়
মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্যের লক্ষণ (Symptoms characteristic of mental health)
-
জীবন আনন্দ উপভোগ করার ক্ষমতা (The ability to enjoy life)
জীবনে আনন্দ উপভোগ করা, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। জেমস টেলর লিখেছিলেন, জীবন উপভোগ করে কাটিয়ে দেওয়াই হল মানসিক স্বাস্থ্যের গোপন চাবিকাঠি।
-
ব্যালেন্স বজায় রাখা (Maintaining balance)
জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা, মানসিক স্বাস্থ্যের ফল। আমাদের একা সময় না কাটিয়ে সমাজের সঙ্গে সময় কাটানোর ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। যারা সবসময় একা সময় কাটায়, তারা বেশিরভাগ সময় মানসিক চাপে ভোগেন এবং তারা সামাজিক দক্ষতা হারিয়ে ফেলেন। সার্বাধিক সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ফলে বাস্তবতার সঙ্গে বিভক্ত হতে পারে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন খেলা ও কাজের মধ্যে ব্যালেন্স, ঘুম ও জেগে থাকার মধ্যে ব্যালেন্স এবং বিশ্রাম ও ব্যায়াম মধ্যে ব্যালেন্স। এমনকি ঘরে ও বাইরে সময় কাটানোর মধ্যে ব্যালেন্স বজায় রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্য।
-
স্থিতিস্থাপকতা (Resilience)
বিপর্যয় থেকে ফিরে আসার ক্ষমতাকে “স্থিতিস্থাপকতা” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কিছু মানুষ আছে, যারা অন্যদের তুলনায় স্ট্রেস ভালোভাবে হ্যান্ডল করতে পারে। আবার কেউ স্ট্রেস হ্যান্ডল করতে অক্ষম। এই সমস্ত মানুষ প্রাকৃতিক চাপ মোকাবিলা করতে সক্ষম, তাদের স্থিতিস্থাপকতার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ভাগ করা হয়।
-
নমনীয়তা (Flexibility)
কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের দৃঢ় মতামত ধরে রাখতে সক্ষম। কোন পরিস্থিতি তাদের মতামত পাল্টে দিতে পারে না। এই ধরনের মানুষগুলি দৃঢ় প্রত্যাশা দ্বারা প্রতিকূলতার চাপ নিয়ন্ত্রন করতে পারে। নিজেদের প্রতি প্রত্যাশা তৈরি করার কাজ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি আরও নমনীয় করে তুলতে পারে।
আবেগীয় নমনীয়তা শুধুমাত্র জ্ঞানীয় নমনীয়তা উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরা বিভিন্ন আবেগ অনুভব করে এবং নিজেদের ফিলিংস প্রকাশ করে। কিছু মানুষ নিজেদের ফিলিংস বন্ধ করে রাখে এবং নিজেদের অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। এই মানসিক অনমনীয়তা অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন । শীতকালে ভালো থাকার উপায়ঃ শীতকালে ভালো থাকার জন্য কিছু সহজ টিপস
-
নেতিবাচক মনোভাব থেকে দূর (Avoid negative attitudes)
যেসমস্ত মানুষ মানসিক ভাবে সুস্বাস্থ্য তারা নেগেটিভ বাচক মনোভাব এড়িয়ে চলে। প্রিয়জনদের সঙ্গে দৃঢ় সু-সম্পর্ক বজায় রাখে।
-
জীবনের চাহিদা পূরণ (fulfillment demand of life)
মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্য আরও একটি উন্নত দিক হল, এই ধরনের ব্যক্তি নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। সিধান্ত গ্রহণ করতে পারেন পাশাপাশি নিজের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হন।
-
বন্ধুদের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে জানে (Knows how to balance with friends)
একজন মানসিক স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি অন্য লোকদের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে এবং বন্ধু- বান্ধবদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে এবং বন্ধুত্বে বিচ্ছন্ন বোধ করে না। তিনি অন্যদের সমস্যা বুঝতে পারেন এবং মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সমালোচনা গ্রহণ করতে পারে এবং বিরক্ত বোধ করেন না। পাশাপাশি আবেগকে অতিক্রম করার ট্রাই করতে জানেন।
-
আত্ম- নিয়ন্ত্রণ (Self-control)
মানসিক স্বাস্থ্য অধিকারী ব্যক্তিরা নিজকে আত্ম নিয়ন্ত্রন করতে জানেন এবং বুদ্ধিমানের সঙ্গে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। এবং সমাধান করার চেষ্টা করেন। এই ধরনের ব্যক্তিরা ভয়, রাগ, ঈর্ষা, চাপ, উদ্বেগের দ্বারা প্রভাবিত হন না সহজেই।
আরও পড়ুন । আপনার জানা উচিত থাইরয়েডে কি খাওয়া বারণ
-
আত্ম সম্মান বোধ (Feeling self-respect)
মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যক্তিদের আত্ম সম্মান বোধ রয়েছে। এই ধরনের ব্যক্তিরা কোন দ্বন্দ্বের মধ্যে গিয়ে আত্ম সম্মান হারাতে রাজি নন। এরা নিজেদের ক্ষমতার মধ্যে থাকতে জানেন।
এখানে মাত্রে কয়েকটি মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্য ধরনা দেওয়া হল। এছাড়াও অন্যদের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক গঠন করার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন । জেনে রাখুন আশ্চর্যজনক ১০ টি গাজরের উপকারিতা
কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখব (How to maintain mental health)
মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে আমাদের যেগুলি করনীয় সেগুলি হল-
- নিয়মিত শারীরিক অনুশীলনে জড়িত থাকতে হবে।
- অন্য মানুষের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে।
- জীবনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার চেষ্টা করা।
- পর্যাপ্ত ঘুম।
- অন্যদের সাহায্য করা।
আরও পড়ুন । জেনে নিন, শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার এ কী কী রাখা জরুরী
Key Point: মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ মানসিক এবং শারীরিক উভয় দিক থেকে সুস্থ এবং সবল মন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. মানসিক স্বাস্থ্য কি?
A. প্রতিদিনের জীবনে যে সাধারণ চাপগুলির মুখোমুখি হয় সেগুলি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয় হন যেসব ব্যক্তি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী বলা হয়।
Q. মানসিক স্বাস্থ্য কি মানসিক অসুস্থতার সাথে জড়িত?
A. হ্যাঁ মানসিক স্বাস্থ্য মানসিক অসুস্থতার সাথে জড়িত।
Q. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় কি?
A. নেতিবাচক চিন্তা দূর করে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন এবং হাসিখুশি থাকুন।