সূত্রঃ- i.ytimg . com
মহেন্দ্র সিং ধোনি বা এম.এস ধোনি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার দের মধ্যে একজন। যিনি নিজের দক্ষতার জন্য ভারতের অধিনায়কের পদ অর্জন করেছিলেন। ভারতে প্রাক্তন অধিনায়ক এতটাই বিখ্যাত ছিলেন যে তার বায়োপিক তৈরি করা হয়েছিল। তিনি সকলের কাছে মাহি নামে পরিচিত। মাহি দুর্দান্ত উইকেট কিপিং সকলের মনের অন্তরে জায়গা করে দেয়। মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী সিনেমাটিতে আমরা মাহি ছোট থেকে বড় হওয়ার গল্প জানতে পেরেছিলাম।
আজ আরও একটু বিস্তারিত ভাবে জানাব এই ক্রিকেটারের সম্পর্কে। আজ আপনাদের সামনেই এই মহান ক্রিকেটারের জীবনকাহিনী নিয়ে হাজির আমরা। আজ এই আর্টিকেলে মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী কিছু না জানা কথা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব। তাহলে চুলন জেনে নিই তার সফল তার পিছনে আসল কাহিনী।
মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী ( BIOGRAPHY )
মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী – শৈশব জীবনঃ
সূত্রঃ- assets-news-bcdn-ll.dailyhunt . in
মহেন্দ্র সিং ধোনি ১৯৮১ সালে, ৭ ই জুলাই বিহারের রাঁচিতে (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড)রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা ছিলেন পান সিং এবং মা দেবকী দেবী। ধোনি বাবা রাঁচির মেকনলিমিটেডে জুনিয়র ম্যানেজারের পদে চাকরি করতেন।বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। মহেন্দ্র সিং ধোনি একজন বড় ভাই নরেন্দ্র সিং ধোনি এবং বড় বোন জয়ন্তী গুপ্তা।
তিনি ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলার ডিএভি জাওয়াহার মন্দির বিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেন। বাল্যবয়স থেকে তার পড়াশুনো প্রতি তার বিশেষ ঝোঁক ছিল না। ফুটবল এবং ব্যাডমিন্টন খেলার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। কিন্তু তার বাবা চাইতেন ইচ্ছে ছিল তাকে ভালোভাবে শিক্ষিত করে তোলার।
তিনি স্কুল ফুটবল দলের গোলকিপার ছিলেন। তার স্কুল শিক্ষক ব্যানার্জির জন্য তিনি ক্রিকেট প্র্যাক্টিস সেশন গেলে তার প্রথম ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। স্কুল ফুটবল টিমের কোচ তার খেলা দেখে তাকে স্থানীয় ক্রিকেট দলে ক্রিকেট খেলতে পাঠান। এই ম্যাচে তার উইকেট কিপিং দক্ষতার জন্য সবাইকে প্রভাবিত করেছিলেন। যার ফলে তিনি কমান্ডো ক্রিকেট ক্লাবের উইকেট কিপারের পদ পেয়েছিলেন।
সূত্রঃ- www.crictracker . com
১৯৯৫-১৯৯৮ সাল মধ্যে কমান্ডো ক্রিকেট দলের উইকেট কিপার হিসাবে তার পারফরমেন্স সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে ভিনো মানকাদ ট্রফি আন্ডার -১৬ চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফির জন্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তিনি শিক্ষাগত জীবনও চালিয়ে গিয়েছিলেন এবং ১০ ম শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব সঙ্গে নিতে শুরু করেন।
মহেন্দ্র সিং ধোনি তার প্রিয় অভিনেতা জন আব্রাহামেকে অনুকরণ করে লম্বা চুল রাখতে পছন্দ করতেন। আর তার সেই লুকস আজও তার ভক্তরা অনুকরণ করে। তিনি একজন বাইক প্রেমিক ছিলেন। বাইকের প্রতি তার ভালোবাসা যুবক বয়স থেকে ছিল। শোনা যায় তার একটি গ্যারেজ ছিল যেখানে ২৩ টি বাইক এবং ৪ টি গাড়ি ছিল।
মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী– ক্যারিয়ার জীবনঃ
সূত্রঃ- www.sportzcraazy . com
১৯৯৮ সাল থেকে তার ক্যারিয়ার জীবন শুরু হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে সেন্ট্রাল কোল ফিল্ডস লিমিটেড ( সি.সি.এল) খেলার জন য নির্বাচিত হন। বিহারের ক্রিকেটের অ্যাসোসিয়েশান প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাল সাহে তার খেলা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি প্রথম শ্রেণী ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেয়ে যান।
১৯৯৮-১৯৯৯ সালে ইস্ট জোনের ইউ -১৯ স্কোয়াড খেলতে ব্যর্থ হন কিন্তু ধোনি পরবর্তী সিজেনে নায়ুদু ট্রফির জন্য ইস্ট জোনের ইউ -১৯ স্কোয়াডে নির্বাচিত হন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তিনি ভাল পারফরম্যান্স করতে পারতেন না।
সুপারিশ নিবন্ধন :-
- বাল্য বয়স থেকে বিয়ের আসর কেমন ছিল অনুষ্কা শর্মার জীবনী?
-
সুশান্ত সিং রাজপুতের বায়োগ্রাফিঃ সুশান্ত সিংয়ের সফলতার কাহিনী
সূত্রঃ- statics.sportskeeda . com
১৯৯৯-২০০০ সালে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৬৮ রান করে রঞ্জি ট্রফিতে নিজেকে অভিষিক্ত করেন। একই সালেই বাংলা ক্রিকেটের বিপক্ষে মহেন্দ্র সিং ধোনি প্রথম সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তার দলটি হেরে গিয়েছিল।
পরিবারের আর্থিক অভাব এর কারণে তিনি স্পোর্টস কোটা মাধ্যমে খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্র্যাভেলিং টিকেট পরীক্ষক চাকরী পান এবং পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় চলে আসেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ের কর্মচারী হিসাবে কাজ করেছিলেন। কর্মরত অবস্থায়ও কিন্তু ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রতি তার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় নি। তার চাকরী জীবনের পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি গভীর টান থেকে যায়।
সূত্রঃ- im.indiatimes . in
২০০১ সালে তিনি ইস্ট জোনের জন্য দুলেপ ট্রফি খেলার জন্য নির্বাচন হন। তবে, দুর্ভাগ্যবশত, বিহার অ্যাসোসিয়েশন এই তথ্য ধোনির কাছে পৌঁছাতে দেরি করে ফেলে কারণ তিনি এখন মেদেনীপুরে ছিলেন।
যখন তার কাছে এই খবর পৌঁছায় তখন তার এই টিম ইতিমধ্যেই আগরতলায় পৌঁছেছিল। কলকাতায় বিমানবন্দরে তার একজন বন্ধু তাকে সহায়তা করে। তার বন্ধু তাকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে দেন। তবে মাঝপথে গাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার তার আর পোঁছানো হয় না যার ফলে বীর দাসগুপ্ত উইকেট কিপার হিসাবে কাজ করে।
সূত্রঃ- archive.mid-day . com
২০০২-০৩ সালে, তিনি রণজি ট্রফি এবং দেওধর ট্রফিতে ভাল খেলেছিলেন, যা তাঁকে স্বীকৃতি পেতে সহায়তা করেছিল। ইস্ট জোনের টিমের অংশ হিসেবে, ২০০৩-২০০৪ সালে তিনি দেওধর ট্রফি জিতেছিলেন, যেখানে তিনি আরেকটি সেঞ্চুরি করেছিলেন।
২০০৩-২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ার সফরের জন্য তিনি অবশেষে ভারত এ দলের দলে নির্বাচিত হন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ম্যাচে 7 টি ক্যাচ নিয়েছেন। পাকিস্তানকে পরাজিত করার জন্য তিনি তার টিমকে সহায়তা করে। পর পর ১০০ রান করে দুটি ম্যাচে। তার এই অসাধারণ পারফরমেন্স জন্য তিনি ভারতীয় জাতীয় দলের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির নজরে পড়েছিলেন।
সূত্রঃ- th.thgim . com
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার অসাধারণ পারফরমেন্স পর, ২০০৪-২০০৫ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত সফরের জন্য জাতীয় ওডিআই দলের খেলায় এম.এস.এস ধোনি নির্বাচিত হন। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি তার প্রথম ম্যাচে রান আউট হয়ে যান এবং সিরিজের বাকি খেলাগুলোতে খুব ভাল পারফরমেন্স করতে পারে না।
সিরিজটিতে খারাপ পারফরম্যান্স সত্ত্বেও, নির্বাচকরা পাকিস্তান ওডিআই সিরিজের জন্য তার উপর বিশ্বাস রেখে তাকে নির্বাচন করে। পঞ্চম ওয়ানডে ম্যাচে ভারতের একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি ১৪৮ রানের রেকর্ড গড়েন ঠাণ্ডা মাথার খেলোয়াড়।
সূত্রঃ- akm-img-a-in.tosshub . com
ভারত-শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি ধোনি। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ব্যাটসম্যানের পদে উন্নীত হন ধোনি। সিরিজ চলাকালীন তিনি বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়ে দেন এবং তার পারফরমেন্সের জন্য ম্যান অফ দ্য সিরিজ মনোনীত হন।
২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের টুর্নামেন্টের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলংকার বিপক্ষে দুটি সিরিজেই ধোনি গড়ে ১০০ এর বেশি রানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন। তবে বিশ্বকাপের সময় তিনি খেলতে ব্যর্থ হন এবং ভারতীয় দল টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্যায়ে যেতে পারেনি।
সূত্রঃ- akm-img-a-in.tosshub . com
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি সিরিজের জন্য ওডিআই দলের ভাইস অধিনায়ক হিসাবে মনোনীত হন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় আইসিসি টুয়েন্টি ২0 বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেন এবং পাকিস্তান দলকে পরাজিত করে ট্রফি জিতেছিলেন।
টি ২0 তে তার সফল অধিনায়কত্বের পর, সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের জন্য ভারতীয় ওডিআই দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১১ সালে তিনি বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন, যার জন্য তাঁকে ক্রিকেট কিংবদন্তী শচীন তেন্ডুলকারের কাছ থেকে প্রচুর প্রশংসা অর্জন করে।
সূত্রঃ- www.freepressjournal . in
২০১১ সালে বিশ্বকাপে তিনি ভারতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ৭৯ বলে ৯১ রান করে তিনি নিজের ব্যাটিং অর্ডারকে উন্নীত করেন এবং ধোনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার অর্জন করে। ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়। এই ইনিংস ইতিহাসে রেকর্ড গড়ে তুলেছিল।
দুই বছর পর, ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে অধিনায়ক এমএস ধোনির হাত ধরে। ভারত ওডিআই বিশ্বকাপ ২০১৫ এবং বিশ্ব টি ২0 বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে পৌছেছে। তিনি বিরাট কোহলিকে অধিনায়ক পদ হস্তান্তর করে অবসান নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি দীর্ঘতম ফর্ম্যাট থেকে অবসর নিলেন তবে ওডিআই ও টি ২0 আই-তে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমানে তিনি চেন্নাই সুপার কিং এর অধিনায়ক পদে রয়েছেন।
২০১৩ সালে তিনি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জয়ের জন্য অধিনায়কত্ব করেন। এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি একমাত্র অধিনায়ক যিনি সমস্ত আইসিসি আই ট্রফি জিতেছেন যেমন- টেস্ট ম্যাচ, ওডিআই বিশ্ব কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী – ব্যক্তিগত জীবনঃ
সূত্রঃ- i.pinimg . com
ধোনির তার ছোট বেলার বন্ধু সাক্ষী রাওয়াতকে ৪ জুলাই, ২০১০ সালে বিয়ে করেন। তাজ বেঙ্গলে শিক্ষানবীশ হিসাবে কাজ করার সময় সঙ্গে মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে তার আলাপ হয় এবং তাদের প্রেমের সম্পর্ক হয় এবং তা অবশেষে বাগদানে পরিণত হয়। বর্তমানে তাদের একটি কন্যা রয়েছে জিভা।
এই ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী। আরও বিখ্যাত মানুষের জীবনী জানার জন্য আমাদের অন্যান্য পেজগুলি অনুসরণ করুন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রঃ মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্মদিন কবে?
উঃ ৭ ই জুলাই।
প্রঃ মহেন্দ্র সিং ধোনির উচ্চতা কত?
উঃ ৫ ফুট ৯ ইঞ্চ।
প্রঃ মহেন্দ্র সিং ধোনির শখ কি?
উঃ ক্রিকেট, বাইক চালানো, সাঁতার কাটা, টেনিস খেলা।
প্রঃ মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রিয় রঙ কি?
উঃ নীল এবং কালো।
প্রঃ মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রিয় অভিনেতা এবং অভিনেত্রী কে?
উঃ প্রিয় অভিনেতা আমিতাভ বচ্চন, জন আব্রাহাম এবং প্রিয় অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন।