বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা । ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় প্রবন্ধ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা

Rabindranath Tagore paragraph ( বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা ) In Bengali

বাংলা সাহিত্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলতে যে মানুষটির নাম প্রথমে মনে আসেন তিনি হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি বাংলার গর্ব সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

Read more: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর শৈশব এবং কর্মজীবনের কাহিনী 

ভূমিকা:

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কবিদের মধ্যে একজন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অসাধারণ। তিনি এমন একজন কবি ছিলেন যিনি বাংলা ভাষাকে প্রথম বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি প্রথম নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

Read more: রইল ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় শিক্ষক দিবসের রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও শৈশবকাল:

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ই মে কলকাতার জোড়াসাঁকোতে এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতার নাম সারদা দেবী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা ব্রাহ্ম সমাজের একজন প্রবীণ নেতা ছিলেন এবং সরল ও সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর পিতামাতার কনিষ্ঠ সন্তান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান (১৮৭৫ সাল)। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায়শই দেশ-বিদেশে ভ্রমণে যেতেন, তাই বাড়ির ভৃত্যরা তার দেখাশুনো করতেন। 

Read more:  ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বামী বিবেকানন্দের রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন মেধাবী শিশু। তিনি তার বেশিরভাগ শিক্ষা বাড়িতেই পেয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি কলকাতার একটি বিখ্যাত স্কুল সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ভর্তি হন। তার বাবা, একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সমাজসেবায় জড়িত ছিলেন এবং চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ব্যারিস্টার হন।

১৮৭৮ সালে, তার বাবা তাকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান, কিন্তু ব্যারিস্টার পড়াশুনায় আগ্রহী ছিলেন না, তাই তিনি ১৮৮০ সালে ডিগ্রি ছাড়াই বাংলায় ফিরে আসেন। তার আগ্রহ ছিল সাহিত্যের প্রতি এবং তিনি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে অপছন্দ করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে পুরাতন ব্যবস্থা নতুন ব্যবস্থার চেয়ে অনেক উন্নত। রবীন্দ্রনাথ বাড়িতেই ভূগোল, শিল্প, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত, সংস্কৃত এবং ইংরেজি সহ অনেক কিছু শিখেছিলেন, তার বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহায়তায়। রবীন্দ্রনাথের বাবা সর্বদা তার সন্তানদের ইংরেজি এবং সঙ্গীত শেখার জন্য জোর দিতেন এবং এই কারণে তিনি বাড়িতেই সঙ্গীতজ্ঞদের নিয়োগ করতেন।

Read more:  ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় নারী শিক্ষার রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৈবাহিক জীবনঃ

দেশে ফিরে ১৮৮৩ সালে ৯ ই ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেণীমাধব রায়চৌধুরী নামে ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারীর মাত্র ১০ বছরের কন্যা ভবতারিণীকে বিয়ে করেন। পরবর্তীকালে তার নাম পাল্টে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। তাদের পাঁচ সন্তান ছিল, যাদের মধ্যে দুজন অল্প বয়সেই মারা যান। ১৯ বছর বিবাহিত জীবনের পর তিনি তাঁর স্ত্রী মৃণালিনীকে হারিয়েছিলেন এবং আর কখনও বিবাহ করেননি।

Read more:  শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ভাষায় পরিবেশ দিবস এর রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মজীবনঃ

বিয়ের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ সাল পর্যন্ত নিজেদের কুঠিবাড়ি শিলাইদহ (বর্তমানে বাংলাদেশে) কাটিয়েছিলেন। তিনি তার স্ত্রী এবং পুত্রের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতেন। সেই সময় তিনি গ্রামীণ এবং দরিদ্র মানুষের জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। অবশেষে ১৮৯১ সাল থেকে ১৮৯৫ সালে পর্যন্ত তিনি গ্রামীণ বাংলার পটভূমির উপর ভিত্তি করে অনেক ছোট গল্প লিখেছিলেন।

১৯০১ সালে তিনি বোলপুরের  শান্তিনিকেতনে চলে আসেন এবং এখানে এসে বাবার  একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে। এখানেই তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান মারা যান। সেখানে পাঠ্য ভবন নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেই স্কুল ছিল একটি গাছ তলায় সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নীচে। পরে সেই স্কুল আরও বড় করেন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেন। যা পরবর্তীকালে বিশ্বভারতী নামে প্রতিষ্ঠিত।

Read more: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী কাহিনী জেনে নিন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখালেখি ও অবদানঃ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন প্রতিভাবান লেখক, ঔপন্যাসিক, দৃশ্য শিল্পী, সুরকার, নাট্যকার, দার্শনিক এবং একজন সুপরিচিত কবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাত্র ১৬ বছর বয়সে নাট্যজগতে প্রবেশ করেন এবং ২০ বছর বয়সে তিনি তাঁর মৌলিক নাটক “বাল্মীকি প্রতিভা” রচনা করেন। ১৮৯০ সালে রচিত তাঁর অসাধারণ নাটক “বিসর্জন” তাঁর অন্যতম সেরা নাটক হিসেবে বিবেচিত হয়। ঠাকুর ১৬ বছর বয়সে ছোটগল্প লেখা শুরু করেন, তাঁর প্রথম নাটক “ভিখারিণী”। তিনি বাংলায় তাঁর অসাধারণ ছোটগল্প লেখার জন্য পরিচিত। ১৮৯১ থেকে ১৮৯৫ সালের মধ্যে তিনি ৮৪টি চিত্তাকর্ষক ছোটগল্প লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় আটটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস রচনা করেছিলেন।

কবিতা বা কল্পকাহিনী লেখার সময় তাঁর ভাষার উপর দৃঢ় দখল ছিল এবং তিনি একজন ভালো দার্শনিক ছিলেন যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ জুড়ে অনেক ভারতীয়কে প্রভাবিত করেছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা হল গীতাঞ্জলি নামে একটি সুন্দর কবিতার সংকলন। গীতাঞ্জলির জন্য ১৯৩১ সালে রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় সাহিত্যে তাঁর অবদান তাৎপর্যপূর্ণ এবং স্মরণীয়। তাঁর দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত রচনা আমার সোনার বাংলা’, ‘জন গণ মন’ দুটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত হয়েছে।

১৯১৫ সালে  ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি দেন যা তিনি ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের  প্রতিবাদে ত্যাগ করেন।

Read more: রাজা রামমোহন রায় শৈশব, পারিবার, কর্মজীবন

উপসংহার

১৯৪১ সালে ৭ ই আগস্ট (১৩৪৮ সাল ২২ শে শ্রাবণ) রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। তাঁর অনন্য অমর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তিনি আজীবন রয়ে যাবে দেশবাসীর হৃদয়ে। তিনি হলেন বাংলা সাহিত্য জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি, আমাদের প্রাণের কবিগুরু।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (Frequently Asked Questions)

প্রঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কবে?

উঃ ১৮৬১ সালের ৭ই মে।

প্রঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? 

উঃ কলকাতার জোড়াসাঁকোতে।

প্রঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবার নাম কি?

উঃ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মায়ের নাম কি? 

উঃ সারদা দেবী।

প্রঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু কত সালে হয়? 

উঃ ১৯৪১ সালে ৭ ই আগস্ট।