যে অমর কবির নাম তাঁর কবিতায় বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে এবং বিশ্বে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যাকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে কবিগুরু বলে উল্লেখ করি। প্রত্যেক বছর তাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ২৫ শে বৈশাখ রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করা হয়। শৈশব থেকেই কবিতা লেখার শখ ছিল তাঁর। মহান কবি হওয়ার পাশাপাশি তিনি মানবতাবাদী, দেশপ্রেমিক, চিত্রশিল্পী, ,পন্যাসিক, গল্প লেখক, শিক্ষাবিদ ও দার্শনিকও ছিলেন।
তিনি ছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রদূত যিনি বিশ্বব্যাপী ভারতীয় সংস্কৃতির জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শৈশব থেকেই আশ্চর্য প্রতিভাতে সমৃদ্ধ ছিলেন। তিনি প্রথম কবিতাটি লিখেছিলেন মাত্র আট বছর বয়সে। আজকের নিবন্ধে বিশ্বকবির জয়ন্তী নিয়ে আলোচনা করব।
আরও পড়ুন >> বুদ্ধপূর্ণিমা | গৌতম বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও শিক্ষা (Birth and education of Rabindranath Tagore)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ৭ই মে, ১৮৬১ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তাঁর পিতার চতুর্দশতম সন্তান। তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরে তার ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। কবিগুরুর শৈশব কেটেছিল প্রধানত বোলপুর, পাণিহাটির বাগানবাড়ি এবং জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মধ্যেই।
মাত্র ৮ বছর বয়সেই তিনি প্রথম লেখা শুরু করেন। কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি তার লেখা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। ১৩ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয় ‘তত্ত্ববোধিনী ’ নামে একটি ম্যাগাজিনে।রবীন্দ্রের প্রাথমিক পড়াশোনা বাড়িতেই হয়েছিল।
স্কুলের চার দেওয়ালের গণ্ডীর মধ্যে নিয়মমাফিক পড়াশোনা করতে ভাল লাগতো না তাঁর। বাড়ির খোলা পরিবেশে রবি ঠাকুরের পড়তে বেশি ভালো লাগতো। ফলে গৃহশিক্ষকের কাছেই তিনি শিক্ষালাভ করেছিলেন।তিনি মাত্র ছয় বছর স্কুলশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। এর পরে তাঁর স্কুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
১৮৭৭ সালের মধ্যে, রবীন্দ্রনাথ অনেকগুলি রচনা করেছিলেন, যা বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। অভিনয় ও চিত্রকলারও তার খুব পছন্দ ছিল। দর্শনশাস্ত্রের সাথেও তার দারুণ সখ্যতা ছিল। তিনি তার ভাই সাথে প্রথমবার ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। সেখানে কিছু সময় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ-লন্ডনে আইনবিদ্যা পড়াশোনা করেন। সাহিত্যচর্চার প্রতি আকর্ষণের কারণে তিনি সেই পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।
আরও পড়ুন >> ছত্রপতি শিবাজী জয়ন্তী দিবস উদযাপন
বিবাহ (Marriage of Rabindranath Tagore)
১৮৮৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবতারিণী দেবীকে বিয়ে করেন। ভবতারিণী দেবী ছিলেন ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারী বেনিমাধব রায়চৌধুরীর মেয়ে। বিয়ের সময় ভবতারিণী দেবীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। তবে ১৯০২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান।
কর্ম (Works)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক এবং প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তাঁর রচনাগুলি জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি সাহিত্যের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন এবং তিনি গীতঞ্জলি রচনার জন্য সাহিত্যের নোবেল পুরষ্কারও পেয়েছিলেন। তাঁর অনেকগুলি রচনা ইংরেজী অনুবাদ করা হয়েছে। রবি ঠাকুর ছিলেন একজন দার্শনিক, শিল্পী ও সমাজ সংস্কারকও। তিনি কলকাতার নিকটে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা বর্তমানে ‘বিশ্বভারতী’ নামে পরিচিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য, শিক্ষা, সংগীত, শিল্প, থিয়েটার এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অনন্য প্রতিভা দেখিয়েছিলেন। তিনি ‘কবিগুরু’ হিসাবে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। গুরুদেবের কবিতার মানবতাবাদ তাকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি এনেছিল। তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির সাথে পড়াশোনা করুক। এই ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তিনি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বাঙালি সমাজে তিনি একজন সঙ্গীতস্রষ্ঠা হিসেবেও জনপ্রিয়। তার দুটি রচনা দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। এক জনগণমন–অধিনায়ক জয় হে এবং অন্যটি আমার সোনার বাংলা। এছারাও রবি ঠাকুরের লেখা ৯৫ টি ছোটো গল্প ও ১৯১৫ টি গান যথাক্রমে ‘গল্পগুচ্ছ’ ও ‘গীতবিতান’ সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন >> মহা শিবরাত্রি উদযাপন | Wishes and Quotes
রবীন্দ্র জয়ন্তী কবে পালন করা হয় (When was Rabindra Jayanti celebrated)
নোবেল বিজয়ী মহান ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী প্রতি বছর “রবীন্দ্র জয়ন্তী’ হিসাবে পালন করা হয়। রবীন্দ্র জয়ন্তী বাংলা ক্যালেন্ডার প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ২৫ তারিখ দিনে পড়ে। ইংরেজি তারিখ অনুসারে এটি প্রতিবছর মে মাসে পালিত হয়।
আরও পড়ুন >> ভীমরাও রামজি আম্বেদকর জয়ন্তী দিবস
রবীন্দ্র জয়ন্তী কেন পালন করা হয় (Why Rabindra Jayanti is celebrated)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম দিবসে তাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করা হয়। সর্বত্র আনন্দ ও শ্রদ্ধার সহিত উদযাপিত হয় এই দিনটি।
আরও পড়ুন >> আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেন পালন করা হয়
রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন ( Rabindra Jayanti celebrations)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী প্রতিবছর সযত্নে পালিত হয়। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে স্কুলে কবিতা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, রঙিন চিত্রকলা এবং কোলাজ পেইন্টিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সংগঠন এবং সোসাইটির সদস্যরা ঠাকুর জয়ন্তীর উদ্দেশ্য ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন। রবীন্দ্রসংগীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, রবীন্দ্রনাট্যাভিনয়, রবীন্দ্ররচনাপাঠ, আলোচনাসভার আয়োজন ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অন্যান্য দেশে যেখানে বাঙালী বসবাস করে তারাও রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপিত করে।
রবীন্দ্র জয়ন্তী সর্বত্র দুর্দান্ত আড়ম্বরের সাথে উদযাপিত হয় এবং অনেক জায়গায় জায়গায় প্রভাতফেরি হয়।
আরও পড়ুন >> গুড ফ্রাইডে পালন | Wishes, Messages, SMS, Quotes
সারকথাঃ
রবীন্দ্রনাথ আমাদের বিশ্বকবি বর্তমান এবং ভবিষ্যতের।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রঃ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন কবে?
উঃ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫ শে বৈশাখ।
প্রঃ কেন রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করা হয়?
উঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করা হয়।
প্রঃ রবীন্দ্র জয়ন্তী কীভাবে পালন করা হয়?
উঃ রবীন্দ্রসংগীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, রবীন্দ্রনাট্যাভিনয়, রবীন্দ্ররচনাপাঠ, আলোচনাসভার আয়োজন ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করা হয়।