বাঙালির রথের মেলা 2025 । বাংলার বিখ্যাত রথের মেলা

রথের মেলা 2025
সামনেই রথ যাত্রা। আর রথযাত্রা মানেই রথের মেলা। এটি বাংলার এক প্রাচীন ঐতিহ্য। পুরীর প্রধান উৎসব হলেও বাংলায় প্রায় সব জায়গায় ধুমধাম করে আয়োজিত হয় এই মেলা। রথযাত্রায় হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান এই মেলা পরিদর্শন করতে।
রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী….
রথযাত্রা হিন্দু সমাজের প্রাচীনতম ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি। সাধারণ মানুষ ভগবান জগন্নাথ, ভগবান বলরাম এবং তাদের বোন সুভদ্রার রথ টেনে নিয়ে যান। এদিন রথের দড়ি টানা শুভ বলে মনে করা হয়। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক জেলায় জেলায় গড়ে ওঠে রথের মেলা।
রথের মেলাকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির একরাশ  শৈশবের স্মৃতি। বাবা-মায়ের হাত ধরে মেলায় ঘোরা, নাগরদোলা থেকে পাঁপড় ভাজা, শৈশব যেন এই মেলার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।
রথের মেলার ইতিহাস

রথের মেলার ইতিহাস (History of the rather mela) 

সাধারণত রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করেই রথে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। উল্টো রথ পর্যন্ত চলে এই মেলা। রথের মেলার ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে কথিতে আছে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল মাহেশের রথযাত্রা।

তথ্য অনুসারে শ্রীরামপুরের মাহেশের রথকেই বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা বলে ধরে নেওয়া হয়।  মাহেশের রথযাত্রা উপলক্ষে বসা মেলাকে কেন্দ্র করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লেখেন ‘রাধারাণী’ উপন্যাস।

আরও পড়ুনঃ শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা । Happy Birthday Wishes

বাংলার বিখ্যাত রথের মেলা

বাংলার বিখ্যাত রথের মেলা (Famous Rather Mela) 

মাহেশ –
মাহেশের রথযাত্রার ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ উপন্যাসে এই রথযাত্রার উল্লেখ রয়েছে। কথিতে রয়েছে, ধ্রুবনন্দ ব্রহ্মচারী এই রথ উৎসবের সূচনা করেছিলেন। এই রথের ওজন প্রায় ১২৫ টন। আর রথের উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। এখানে রথযাত্রার সময় বিরাট মেলার আয়োজন করা হয়। স্নানপিঁড়ি ময়দানে এক মাস ধরে বসে মেলা বসে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই মেলায়। প্রচুর মানুষের সমাগম। পাঁপড় ভাজা, জিলিপি থেকে নানা রকমের পসরা নিয়ে সেজে ওঠে এই মেলা।
কীভাবে যাবেন –   হাওড়া থেকে শ্রীরামপুর স্টেশনে নেমে অটো বা টোটোয় মাহেশ যাওয়া যায়। 
মায়াপুর –
পুরীর রথযাত্রার পাশাপাশি মায়াপুরের নদীয়া জেলার মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের রথযাত্রা বিখ্যাত। পৌরাণিক গল্প অনুযায়ী, প্রায় পাঁচশো বছর আগে এখানে একজন পুরোহিত ছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখেন রাজাপুর থেকে মায়াপুরে প্রস্থান করবেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। তারপর সেখান থেকে রথে চড়ে ফিরে আসবেন। সেই প্রথা অনুযায়ী আজও এই রীতি মেনেই পালিত হয় রথযাত্রা।
উল্টোরথ পর্যন্ত এখানে রথযাত্রা উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে। মানুষের ভিড়ে এইকটা দিন জমজমাট থাকে। মেলায় অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
কীভাবে যাবেন –  প্রথমে মায়াপুর যেতে হবে। হাওড়া থেকে ট্রেনে নবদ্বীপ। সেখান থেকে ট্রেন, বাস বা ট্যাক্সি/গাড়িতে করে মায়াপুর। 

মহিষাদল –

রথের উৎসব অথবা রথের মেলা হিসাবে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল অন্যতম বিখাত। এখানে রথের সজ্জা দেখলে চোখ ধাধিয়ে যাবে। ৪০ ফুট উচ্চতার রথ যখন ধ্বজা এবং কলস দিয়ে সাজানো হয় তা ৫০ ফুটের বেশি হয়ে যায়। রথে কারুকার্যের থাকে দেশিয় থেকে বিদেশির শিল্পীর হাতের ছোঁয়া। এখানে রথটি মদনগোপাল জিউ-এর রথ নামে পরিচিত। মহিষাদলের জমিদার আনন্দলালের স্ত্রী জানকী দেবী এখানে রথযাত্রার সূচনা করেন। প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে।

শুধু রথ উৎসব নয়, এখানকার রথের মেলায় রয়েছে চাকচিক্য। এই রথের মেলায় ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনের। এমন কিছু নেই যে এই মেলায় গেলে চোখে পরবে না। ফিরে পাবেন শৈশবের স্মৃতিও।

কীভাবে যাবেন –  হাওড়া থেকে ট্রেনে বা বাসে করে মহিষাদল যেতে হবে। সেখান থেকে টোটো।  

আমোদপুর-

বর্ধমানের মেমারির আমোদপুরের রথযাত্রাও ভীষণ জনপ্রিয়। প্রতি বছর ধূমধাম করে আয়োজিত হত রথযাত্রার উৎসব। পাশাপাশি বসে রথযাত্রা উপলক্ষে বসেছে মেলা। মেলাটি বেশ প্রসিদ্ধ এবং বহু দূর থেকে মানুষ এই রথযাত্রা দেখতে আসেন।

কীভাবে যাবেন –  হাওড়া থেকে যেকোনও বর্ধমানগামী বা কাটোয়াগামী ট্রেনে উঠে মেমারি স্টেশনে নামতে হবে। অথবা কলকাতা থেকে সরাসরি মেমারির বাস পাওয়া যায়। মেমারি বাসস্ট্যান্ড থেকেও আমোদপুরের জন্য বাস বা অটো পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ বেস্ট রাখি বন্ধন শুভেচ্ছা ম্যাসেজ । এসএমএস

রথের মেলায় জিলিপি-পাঁপড়ে খাওয়ার চল

রথের মেলায় জিলিপি-পাঁপড়ে খাওয়ার চল (tradition of jilipi and papad) 

মেলা বলতেই প্রথমে মাথায় আসে রথের মেলাড় কথা। রথযাত্রা উপলক্ষে একাধিক জায়গায় বসে রথের মেলা। মেলা মানেই নানা-রকমের খাবারের স্টল। তবে রথের মেলার মূল আকর্ষণ পাঁপড় ভাজা এবং জিলিপি। এই চল আজকের নয়, ঐতিহ্য মেনে এদিন প্রতেকে পাঁপড় ভাজা ও জিলিপি খেয়ে থাকেন। তবে রথের দিন কেন আমরা পাঁপড় আর জিলিপি খাই?

জানেন কি পাঁপড় আর জিলিপি দুটোই আফগানিস্তান আর পাঞ্জাবের খাবার। পাঁপড় উত্তর ভারতের জনপ্রিয় খাবার। এই খাবারের নাম রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, ভরদ্বাজ মুণি রামচন্ত্র ও তার অক্ষৌহিনী সেনার জন্য বাঙালি খাবার আয়োজন করেছিলেন। আর তার মধ্যে ছিল পাঁপড়।

অন্যদিকে, মোঘলরা পছন্দ করতেন জিলিপি। কথিতে আছে, যখন জগন্নাথদেব জ্বর এসেছিল সেইসময় নাকি তার মুখের স্বাদ বদলানোর জন্য নানা রকমের খাবার দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় নাকি তিনি জিলিপি আর পাঁপড় খেয়েছিলেন যদিও ৫৬ ভোগের মধ্যে কোথাও কিন্তু জিলিপি বা পাঁপড়ের দেখা যায় না। তবে এই প্রচলিত কথা থেকেই রথের মেলায় এই দুই খাবারের চল এসেছে।

আরও পড়ুনঃ বেস্ট 70 টি দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা বার্তা

শেষকথাঃ

রথের মেলার সাথে জড়িয়ে রয়েছে ছেলেবেলার স্মৃতি। তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পাল্টেছে মজা উপভোগের দিনগুলো। আজও মানুষ মেলায় ভিড় বাড়ায় তবে মনের সেই আনন্দগুলো যেন ফিকে।

আরও পড়ুনঃ সুপ্রভাত শুভেচ্ছা বার্তা । ম্যাসেজ । এসএমএস | কোটস

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

Q. রথের মেলা কতদিন হয়? 

A. রথযাত্রা থেকে শুরু করে উল্টো রথ পর্যন্ত এই মেলা চলে।

Q. কোথায় রথের মেলা বিখ্যাত? 

A. পুরী ছাড়াও বাংলায় মায়াপুরে, মাহেশে, পূর্ব মেদিনীপুরে, বর্ধমানের মেমারির আমোদপুরের রথের মেলা বিখ্যাত।

Q.  মাহেশের রথের মেলার ইতিহাস কী?

A. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ উপন্যাসে এই রথযাত্রার উল্লেখ ছিল।

Q. রথের মেলার মূল আকর্ষণ কি?

A. রথ, পাঁপড় আর জিলিপি হল রথের মেলার মূল আকর্ষণ।