হিম ঠান্ডা কনকনে শীতল বাতাসের অনুভুতি আমাদের জানান দেয় শীতের আগমনী বার্তা। শীতের সকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অনন্য এবং মনোমুগ্ধকর। প্রায়সময় ছাত্রছাত্রীদের শীতের সকাল রচনা লিখতে দেওয়া হয়। তাই ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে সহজ ভাষায় রইল শীতের সকাল রচনা।
Read more: শরৎকাল রচনা ছোটদের জন্য সহজ ভাষায়
শীতের সকাল রচনা (১০০ শব্দের)
১। বাংলা ছয়টি ঋতুর পঞ্চম ঋতু হল শীত।
২। শীতের সকাল মানেই চারদিকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ও ঘাসের উপর ফোটা ফোটা শিশির জমে এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করে।
৩। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস মিলেই শীতকাল। ইংরাজি মাসের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হলেও মুলত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের আমেজ থেকেই যায়।
৪। আবহাওয়া প্রচণ্ড ঠান্ডা থাকার কারনে শীতকালে শরীর গরম রাখার জন্য আমরা উলের পোশাক পরে থাকি।
৫। এই সময় অধিকাংশ গাছের পাতা রুক্ষ ও বিবর্ণ হয়ে ঝরে পরে। শীতকালে রাত বড় আর দিন ছোট হয়।
৬। শীতের সকালে উত্তরের হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এই সময় তাপমাত্রা সাধারণত ১০-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
৭। পিঠা পার্বণের ঋতু হিসেবে বিশেষ খ্যাতি রয়েছে শীতকালের। শীতের সকাল যেন পিঠা তৈরির আদর্শ সময়। চিতই পিঠা, দুধ চিতই, দুধপুলি, ক্ষীর পিঠা, পাটিসাপটা, নকশী পিঠা ছাড়াও আরো অনেক সুস্বাদু পিঠা তৈরি হয় শীতকালে।
৮। কমলালেবু, নাশপাতি এই ঋতুর প্রধান ফল। এই সময় নানা ধরনের ফুল ফোটে, যেমন – গাঁদা, সূর্যমুখী, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ ইত্যাদি। শীতকালে খেজুরের রস খুব ভালো পাওয়া যায়।
৯। শিম,মটরশুঁটির, টমেটো, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিট, পালং শাক ইত্যাদি শাকসবজি সমাহার ঘটে শীতকালে।
১০। শীতকালিন ছুটিতে সকলেই মেতে ওঠে বড়দিনের উৎসবে। এই সময়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে পিকনিক করার মজাটাই আলাদা।
Read more: বর্ষাকাল রচনা ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায়
শীতের সকাল রচনা (২০০-৫০০ শব্দের)
গ্রীষ্মের তাপদাহ এবং বর্ষার আর্দ্রতার পর শীতলতা ও প্রশান্তি নিয়ে আসে শীতকাল। শীতকালের কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, শিশিরভেজা ঘাস এবং শীতল বাতাস এক অনন্য অনুভূতি জাগায়।
শীতের ভোরে কুয়াশা মোড়া থাকলেও দিনের আকাশ থাকে পরিষ্কার। দিনের বেলায় সূর্য মিষ্টি রোদে ভরিয়ে দেয়। এই সময়ে দিন ছোট হয়ে আসে রাত বড় হয়। এই সময় তাপমাত্রা সাধারণত ১০-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
শীতকালেই মেলে সুস্বাদু ও পুস্তিকর সব্জির সমারোহ। শিম,মটরশুঁটির, টমেটো, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিট, পালং শাক ইত্যাদি শাকসবজি প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় এই সময়ে। কমলালেবু, নাশপাতি এই ঋতুর প্রধান ফল। এসময়ে গাঁদা, সূর্যমুখী, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপের মত রঙবেরঙের ফুলে বাগান ভরে যায়।
পিঠে পুলি পার্বন শীত ঋতুর অন্যতম উৎসব। শীতের সকাল যেন পিঠা তৈরির আদর্শ সময়। চিতই পিঠা, দুধচিতই, দুধপুলি, ক্ষীর পিঠা, পাটিসাপটা, নকশী পিঠা ছাড়াও আরো অনেক সুস্বাদু পিঠা তৈরি হয় শীতকালে। এছারাও বড়দিন পালন ও সরস্বতী পুজাও অনুষ্ঠিত হয় এই সময়ে।
Read more: গ্রীষ্মকাল রচনা ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায়
শীতের সকাল রচনা (৫০০-১০০০ শব্দের)
ভূমিকাঃ
কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শুরু হয় শীতের সকাল। কুয়াশাচ্ছন্ন, শিশিরভেজা প্রকৃতিতেও আছে স্নিগ্ধতা।
সময়কালঃ
শীতকাল বলতে পৌষ ও মাঘ মাসকে বোঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে শীতের আগমন শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে। পৌষের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ তীব্র হয়ে উঠলেও ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। যা ইংরাজি মাসের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বোঝায়।
শীতের সকালের প্রকৃতিঃ
শীতের সকালের শুরুটাই হয় ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল হাওয়া দিয়ে। ভোর হতেই রাস্তাঘাট আবছা এবং অপষ্ট দেখা যায়। তবে দিন হতেই কুয়াশা বিদায় নেয়। ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুতে একফালি রোদের ঝলক পড়ে চিক্ চিক্ করে ওঠে। এসময় লেপ কম্বল ছেড়ে বিছানা থেকে উঠি উঠি করেও উঠতে ইচ্ছা করে না। অজানা এক অলসতা ঘিরে ধরে মানুষকে। তবুও সকালের মিষ্টি রোদে হাত পা গরম করেই বেড়িয়ে পরতে হয় যে যার কাজে।
গ্রামে শীতের সকালঃ
শীতের আসল সৌন্দর্য গ্রামেই। গ্রামীণ প্রকৃতিতেই ধরা পড়ে শীতের প্রকৃত রুপ। ভোর হতেই গ্রামের কৃষকরা বেড়িয়ে পড়ে চাষবাসের কাজে। অনেকে গৃহপালিত পশুদের চরানোর জন্য বের হন। বয়স্ক মানুষরা খড়কুটো জ্বালিয়ে তাপ পোহায়। গাছিরা গাছ থেকে খেজুর রসের হাড়ি নামায়। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হয় সুস্বাদু সব শীতের পিঠা।
Read more: সহজ ভাষায় পরিবেশ দূষণ রচনা
শহরে শীতের সকালঃ
শহরে শীতের সকাল কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকেই কাটে। ইট-কাঠ-পাথরের শহরে শীতের সকালের আমেজ একেবারেই আলাদা। গ্রামের তুলনায় শহরে শীতের প্রকোপটাও একটু কম। শহরে শীতের সকালে দেখা যায় বারান্দায় বসে রোদ পোহানোর দৃশ্য। কিংবা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে খবরের কাগজ পড়ার দৃশ্য। পিচ ঢালা রাস্তায় শিশিরের অস্তিত্ব দেখা যায় না বরং শুধুই যানবাহনের শব্দ, দোকানিদের হাকডাক।
শীতের সকালের সুখ-দুঃখঃ
শীতকাল মানেই রকমারি সবজি চাষের সময়। এসময় মানুষ নানারকম সবজি খেয়ে যেমন আনন্দ পায় তেমন দুর্মূল্যের বাজারদর থেকেও কিছুটা স্বস্তি পায়। এসময়ে বাংলার ঘরে ঘরে চলে পিঠেপুলি পার্বন, বড়দিন উদযাপন।
শীতকাল ধনী ব্যক্তিদের জন্য আরামদায়ক হলেও শীতের সময় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় খেটে খাওয়া গরিব মানুষদের। তাদের কাছে শীত মানেই গরম কাপড়ের অভাব আর ঠান্ডা জনিত রোগের সাথে লড়াই করা। শীতকালে অনেক জমিতে চাষাবাদ সম্ভব হয়না। ফলে কৃষকদের অনাহারে দিন কাটাতে হয়। এই সময় অনেক গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে মারা যায়।
উপসংহারঃ
শীতের সকাল অন্য সব ঋতুর চেয়ে একেবারে আলাদা। শীতের রিক্ততা প্রকৃতির সবুজকে ছিনিয়ে নিলেও দিয়ে যায় ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা।
Read more: রইল ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় শিক্ষক দিবসের রচনা
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ
প্রঃ শীতকালে মানুষের জীবনযাত্রা ঠিক কেমন হয়?
উঃ শীতকালিন ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানুষ গরম জামাকাপড় পড়ে। এই সময়ে পিঠে-পুলি পার্বন শীতের আনন্দকে আরও দ্বিগুন করে। অনেক জায়গায় পিকনিক ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় এই সময়ে।
প্রঃ শীতকালে প্রকৃতির কি পরিবর্তন দেখা যায়?
উঃ শীতকালের সকাল থাকে ঘন কুয়াশায় মোড়া। কোন কোন দিন সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যায় না। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতলতা অনুভুত হয়। তাপমাত্রা সাধারণত ১০-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
প্রঃ শীতকালীন আবহাওয়ার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা?
উঃ শীতকালীন আবহাওয়ায় ক্লান্তি কম থাকে, শরীর সতেজ থাকে। এই সময়ে নানা শাকসবজি, ফল পাওয়া যায়। অন্যদিকে শীতের প্রকোপে ভোগান্তি পোহাতে হয় খেটে খাওয়া গরিব মানুষদের। তাদের কাছে শীত মানেই গরম কাপড়ের অভাব আর ঠান্ডা জনিত রোগের সাথে লড়াই করা।
প্রঃ শীতকালে বাঙালিরা কি কি উৎসব পালন করে?
উঃ শীতের শুরুতেই বাঙালিরা প্রধানত পিঠা উৎসব এবং পৌষ সংক্রান্তি পালন করে থাকে। এছাড়া, বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করা হয় এই সময়ে। শীতের মনোরম আবহাওয়ায় পরিবার ও বন্ধুদের সাথে পিকনিক করাটাও বাঙালির একটি জনপ্রিয় প্রথা।

