কলিযুগ নিয়ে উক্তি ও শ্রীকৃষ্ণের বাণী

কলিযুগ নিয়ে উক্তি

হিন্দু দর্শন ও ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, কলিযুগ হল পৃথিবীর চক্রের চতুর্থ এবং শেষ পর্যায়। আর প্রথম তিনটি পর্যায় হল সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ এবং দ্বাপর যুগ। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের সমাপ্তি এবং পাণ্ডবগণ এর প্রস্থানের পর শুরু হয় কলিযুগ। মানা হয় যে এই যুগের শেষ পর্যায়ে বিষ্ণু মানব অবতার নিয়ে অধর্মের নাশ করবেন। বিষ্ণুর এই অবতারই কল্কি অবতার নামে প্রসিদ্ধ হবে। এমনকি কলিযুগের শেষ পর্যায়ে পৃথিবীও ধ্বংস হবে এবং সকলের বসবাসযোগ্য, ধর্ম ও ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। এমনতাই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে মহাভারতে। কলিযুগের কিছু অজানা সত্য তুলে ধরতেই আজকের নিবন্ধে রইল কলিযুগ নিয়ে উক্তি ।

আরও পড়ুনঃ রইল মহাভারতের বিশেষ উক্তি ও শ্রী কৃষ্ণের শাশ্বত বাণী

কলিযুগ নিয়ে উক্তি

কলি যুগে অর্থই মানুষের একমাত্র ক্ষমতা হিসাবে প্রাধান্য পাবে।

কলিযুগ হল ধর্ম, মানবিকতাবোধ এবং সততার পতন হিসাবে বর্ণিত একটি যুগ। যে যুগে মানুষ তাদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা, মানসিক স্বচ্ছতা এবং বোধগম্যতা ক্রমশ হারিয়ে ফেলবে।

কলিযুগে হরিনামই পারে সকল পাপ খণ্ডন করতে। ঈশ্বরের স্মরণ নিলেই মানুষ সকল বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ 50 টি মনুষ্যত্ব নিয়ে উক্তি ও বাণী সমূহ

কলিযুগ নিয়ে উক্তি

কলিযুগ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের অবনতির পাশাপাশি ধার্মিকতার পতন এবং অধার্মিকতার বৃদ্ধি দ্বারাও চিহ্নিত।

কলিযুগে দানই একমাত্র কর্ম। কর্ম দ্বারা শুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কেউ জ্ঞান অর্জন করে না।

কলিযুগ নিঃসন্দেহে একটা ভয়ঙ্কর যুগ, যা শুরু হওয়ার থেকেই অন্ধকার ও ধ্বংসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

কলিযুগে মানুষজন স্বার্থবাদী, সহানুভূতি দেখানো তো দুরের কথা, বরং স্বার্থ ফুরালেই মানুষ মানুষকে আর চিনবে না।

কলিযুগ সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণের বাণী

কলিযুগ সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণের বাণী

কলিযুগে মানুষ হবে মিথ্যাবাদী ও স্বার্থপর। মানুষের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আর কাজের মধ্যে কোন মিল থাকবে না ।

দেশ ও সমাজের বুকে যারা ধার্মিক ও জ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি পাবেন তাদের প্রকৃত মানসিকতা থাকবে শকুনের ন্যায়। উপরে ধর্ম ও জ্ঞানের বর্ম পরিহিত মানুষগুলি নিজেরাই হবে ভন্ড।

কলিযুগ হল পাপের যুগ, আর এই পাপ থেকে উদ্ধারের একমাত্র উপায় ভগবানের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করা ।

কলিযুগ সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণের বাণী

কলিযুগে মানুষের ভালোবাসা হবে স্বার্থ ও অর্থকেন্দ্রিক।

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ জানিয়েছেন, ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত মন তাদের শত্রুতে পরিণত হয়। যার কারণে কোন পরিস্থিতিতেই মানুষ কখনও সফল হতে পারেন না।

শ্রীকৃষ্ণের বাণী অনুযায়ী কলিযুগে মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা ও ইচ্ছা যত কম থাকবে, পৃথিবীতে তারা ততই সুখী থাকতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী নিয়ে উক্তি ও উপদেশ

কলিযুগ নিয়ে কিছু কথা

কলিযুগ নিয়ে কিছু কথা

কলি যুগে কোনও মানুষের কাছে অর্থ না থাকলে, তাকে অপবিত্র হিসেবে গণ্য করা হবে। অন্যদিকে ভণ্ডামিকে গ্রহণ করা হবে সম্মানের সঙ্গে।

কলিযুগে মানুষের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ, খিদে, তৃষ্ণা, রোগ-ভোগ ও গভীর উদ্বেগও ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।

কলিযুগে মানুষ খরা ও অত্যধিক করের কবলে পরে মানুষের খাদ্যের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠবে গাছের পাতা, মূল, মাংস, মধু, ফল, ফুল, বীজ। খরায় মানবজাতি ক্রমাগত ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে।

বিশ্বজুড়ে অসহিষ্ণুতা যে হারে বাড়ছে, তাতেই প্রমাণিত এখন ঘোর কলিযুগ।

কলিযুগে গোটা পৃথিবী দুর্নীতিপূর্ণ জনসংখ্যায় ভরে যাবে, তাই যারা নিজেদেরকে শক্তিশালী হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে, একমাত্র তারাই রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হবে।

কলিযুগ নিয়ে কিছু কথা

আরও পড়ুনঃ ভগবত গীতার নির্বাচিত কিছু বাণী

গীতায় বলা আছে কলিযুগের প্রভাবেই ক্রমে ধর্ম, বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা প্রদর্শন, শারীরিক ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি এই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

কলিযুগে একজন ব্যক্তির যত বেশি ধনসম্পদ থাকবে, সে তত বেশি গুণী বলে বিবেচিত হবে এবং আইন ও ন্যায়বিচার কার্যকর হবে শুধুমাত্র একটি শক্তির ভিত্তিতে।

কলিযুগে, জীবনকাল এতটাই সংক্ষিপ্ত হয় তা কেবল অপর্যাপ্ত খাবারের কারণে নয় বরং অনিয়মিত অভ্যাসের কারণে।

কলি যুগে প্রকৃতি হয়ে পড়বে ভারসাম্যহীন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষকে দুর্বল করবে প্রবল গরম, ঝড়, বৃষ্টি, শীত ও তুষারপাত।

কলিযুগে নিরপেক্ষ এবং অসহায় মানুষ, এবং যাদের ঘুষ দেওয়া হবে না তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।

আরও পড়ুনঃ আধ্যাত্মিক উক্তি যা সকলকে অনুপ্রেরণা দেবে

আশাকরি, কলিযুগ নিয়ে উক্তি সকলের ভালো লাগবে।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তরঃ

Q. বাংলা শাস্ত্রে কয়টি যুগের কথা উল্লেখ আছে? কি কি?

A. শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে প্রধানত চারটে যুগ। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি যুগ‌।

Q. এককথায় কলিযুগের বৈশিষ্ঠ্য কি?

A. আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক সম্প্রীতির হ্রাস, রোগের বৃদ্ধি এবং সম্পদের ঘাটতি এই যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কলিযুগ হল সেই যুগ যেখানে নৈতিক ও নৈতিক মূল্যবোধের পতন অনিবার্য।

Q. কলিযুগে মানুষের ধর্ম কি হওয়া উচিৎ?

A. কলিযুগে পুণ্য একভাগ হলে বাকি তিনভাগ পাপে পূর্ণ, তাই কলিযুগে দান করাই হবে মানুষের প্রধান ধর্ম। কলিকালে ধর্মগ্রন্থের প্রতি মানুষদের আকর্ষণ থাকবে না, কিন্তু কলিযুগের প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করবে একমাত্র হরি নাম যপ।

Q. কলিযুগ নিয়ে উক্তি কি হতে পারে?

A. কলিযুগে দানই একমাত্র কর্ম। কর্ম দ্বারা শুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কেউ জ্ঞান অর্জন করে না।