জীবনে সফল হতে কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় ব্যর্থতা আমাদের পিছু ছাড়ে না। যার ফলে অনেক মানুষ রয়েছেন ব্যর্থ হতে হতে ভেঙে পড়েন আর সফলতার রাস্তা খুঁজে পান না। আজ আপনাদের এমন কিছু সফলতার শিক্ষনীয় গল্প শোনাবো যা আপনাদের সফল হতে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলবে এবং আপনাদের জীবন বদলে দেবে।
Read more: একটি ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প কাহিনী । A romantic love story
সফলতার শিক্ষনীয় গল্প (Success Stories)
সাফল্য পাওয়া এতটা সহজ নয়। সাফল্য পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আপনি যদি বড় সাফল্য অর্জন করতে চান তাহলে এই চারজন ব্যক্তির সাফল্যের গল্প আপনাকে জানতে হবে। সফলতার শিক্ষনীয় গল্প জীবনে মনোবল বাড়াবে।
Read more: অসাধারণ প্রেমের রোমান্টিক গল্প । Love At First Sight
১. বিল গেটসের সাফল্যের গল্প (Bill Gates success story)
অধ্যাবসায় এবং তপস্যা মানুষকে কীভাবে সাফল্য এনে দিতে পারে তা বিল গেটসের থেকে শেখা উচিত। বিল গেটস এর পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস। জন্ম হয়েছিল ১৯৫৫ সালের ২৮শে অক্টোবর আমেরিকার ওয়াশিংটনের সিয়াটলে।
তার বাবা ছিলেন একজন বিখ্যাত আইনজীবী এবং মা ছিলেন ইউনাইটেড ওয়ে এর ডিরেক্টর। হার্ভার্ড কলেজে পড়ার সময় বিল গেটস বেশিরভাগ সময় কাটাতেন কলেজের কম্পিউটার ল্যাবে। এক বন্ধুকে নিয়ে তৈরী করেন এম.আই.টি.এস ‘৪৪০০’ যা ইন্টেল ৮০৮০ সিপিইউতে ব্যবহার উপযোগী। এই আবিষ্কারের পরে গেটস সফটওয়ার কোম্পানী প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এবং হার্ভার্ড ত্যাগ করে।
ছেলেটি খুব চালাক ছিল, একজন তরুণ প্রোগ্রামার উৎসাহী যে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছিল।
বিল গেটস সপ্তাহে ছুটি হয় সেটা মনে করেন না। নিজের লক্ষ্য স্থির ছিলেন তিনি। নিজের এই লক্ষ্য পৌছাতে তাকে অনেকবার ব্যর্থ হতে হয়েছিল কিন্তু তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল স্বপ্নপূরণ। আজ তিনি মাইক্রোসফ্ট কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হিসাবে খ্যাত তিনি।
একসময় তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাঁর সাফল্যের গোপন রহস্য কি? সেই ব্যক্তিকে বিল গেটস একটি খালি চেক এগিয়ে দেন এবং বলেন আপনার ইচ্ছে মতো বসিয়ে নেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি চেকটি ফেরত দিয়ে বলে আপনার সফলতার রহস্য জানতে চাই। বিল গেটস আবার সেই ব্যক্তির দিকে খালি চেক এগিয়ে দেন এবং স্বাভাবিকভাবে সেই ব্যক্তি খালি চেকটি ফিরিয়ে দেন। তখন বিল গেটস বলেন এটা আমার সফলতার রহস্য। ব্যক্তিটি বুঝতে পারেন না। তখন বিল গেটস ব্যক্তিটিকে জানান, “এই আমি কখনো সুযোগ হাত ছাড়া করি না, যেভাবে আপনি এইমাত্র করলেন। আপনার যদি এরকম মাইন্ডসেট থাকত, তাহলে আপনি হয়ে যেতেন বিশ্বের সবচেয়ে বিত্তশালী উপস্থাপিকা। চলার পথে যতো সুযোগ আসবে, ছিনিয়ে নিতে হবে। তখনই সফল হওয়া যাবে।”
Read more: এক তরফা ভালোবাসার গল্প এর কাহিনী
২. রতন টাটার সাফল্যের গল্প (Ratan Tata’s success story)
ভারতের সবচেয়ে বড় শিল্পীপতি ছিলেন রতন টাটা। টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি একটি প্রচলিত বাণিজ্যিক সমষ্টিকে একটি আন্তর্জাতিক টাইটানে রূপান্তরিত করেছিলেন যার কার্যক্রম ছিল ইস্পাত থেকে শুরু করে অটোমোবাইল পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ।
জানেন কি, টাটা মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি। প্রথম দিকে কোনও চেয়ারম্যানের বিলাসবহুল অফিসে নয়, বরং টাটা স্টিলের কারখানার মাটিতে ঘাম ঝরিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন।
১৯৬১ সালে তিনি টাটা গ্রুপে যোগ দেন একজন সাধারণ ট্রেনি কর্মচারী হিসেবে। তখন তাঁর কাজ ছিল কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্টিল কাটিং, ভারী লোহার যন্ত্র বহন করা, এমনকি প্রয়োজনে মেশিন মেরামতেও অংশ নেওয়া।
রতন টাটার মধ্যে ছিল না কোনও অহংকার। তিনি নিজের হাতে শ্রমিকদের মতো কাজ করেছেন। তিনি মনে করতেন যারা নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের কাজ বোঝে না, তারা কখনোই সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে না।
নিজের কঠোর পরিশ্রমে পরবর্তী দু-দশকে রতন টাটা টাটা গ্রুপের বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণ করে। অবশেষে ১৯৯১ সালে কোম্পানির রতন টাটাকে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করেন।
তিনি টাটা ন্যানো গাড়ি চালু করেছিলেন, মানুষের জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যের উপায়। প্রকল্পের বৃহত্তর সম্প্রদায়ের সেবা করার তার সদিচ্ছা সকলেই বুঝতে পেরেছিল।
রতন টাটা কেবল একজন মহান ব্যবসায়ীই নন, একজন নীতিবান নেতা এবং জনহিতৈষীও ছিলেন । তিনি তার মন্ত্র দিয়ে তরুণ উদ্যোক্তা এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছেন, “আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্বাস করি না। আমি সিদ্ধান্ত নিই এবং তারপর সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক করি।”
তিনি প্রমাণ করেছেন যে, যে কোনও জায়গা থেকেই সাফল্য আসতে পারে, সাফল্যের জন্ম কেবল আপনার বিশেষাধিকার দিয়েই হয় না, বরং আপনার মূল্যবোধ, নম্রতা এবং আপনি কীভাবে আপনার ব্যবসাকে বিশ্বকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করেন।
Read more: ভালোবাসার মানুষের জন্য রোম্যান্টিক ভালোবাসার কবিতা
৩. হ্যারি পটার উপন্যাসের লেখক জে.কে. রাউলিং (J.K. Rowling, author of the Harry Potter novels)
হার্ভার্ড বক্তৃতার সময় ব্যর্থতার গুরুত্ব এবং মূল্যের উপর জোর দিয়ে বলেন, “আমি একজন ব্যর্থ ব্যক্তি ছিলাম। আমার খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল, যা ভেঙে যায় এবং আমি বেকার ছিলাম। আমার বাবা-মায়ের সাথে, আমি আধুনিক ব্রিটেনের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের মধ্যে একজন ছিলাম। আমার বাবা-মায়ের আমার প্রতি যে ভয় ছিল। আমি যা করেছি তা অদৃশ্য হয়ে গেছে। প্রতিটি স্বাভাবিক মানদণ্ড অনুসারে, আমি ছিলাম সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা যা আমি জানতাম।” জে.কে. রাউলিং বলেছিলেন যে শক্তি এবং দৃঢ়তার সাথে এই ব্যর্থতাকে কাটিয়ে ওঠাই ছিল তার সাফল্যের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। এই পরিস্থিতিতেও, জে.কে. রাউলিং হাল ছাড়েননি এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য নিজের সাফল্যের গল্প লিখেছিলেন।
Read more: জেনে নিন কয়েকটি সেরা বিদায় কবিতা /দুঃখের কবিতা
৪. স্টিভ জবস সাফল্যের গল্প (Steve Jobs success story)
আজ স্টিভ জবসকে কে না চেনে? প্রযুক্তির জগতে বিপ্লব এনে দেওয়া অ্যাপল সংস্থাটি খুব কম বয়সেই এক বন্ধুর সঙ্গে শুরু করেন। সেই সময় ব্যবসা সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা ছিল না। দুজনে বুদ্ধি খাটিয়ে একটি ‘বোর্ড’ তৈরি করেন, যারা ব্যবসার বিশেষজ্ঞ। এরপর একের পর এক কম্পিউটার তৈরি করে ক্রমশ জনপ্রিয়তা পেতে থাকে এই সংস্থা।
তবে জানেন কি? যিনি এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাকে তার নিজের কোম্পানি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল? তিনি প্রতিজ্ঞা করেন সিইও হবেন। জবস বুঝতে পারেন কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ ব্যর্থতার চেয়ে শতগুণ বেশি।
এরপর ১৯৮৩ সালে জবস সিদ্ধান্ত নিলেন সংস্থা দিতে হবে কোনও পাকা হাতে। চাকরি দিলেন পেপসিকো সংস্থার তৎকালীন সিইও জন স্কালি-কে। নেক্সট এবং পিক্সারের মতো উদ্যোগগুলি অবশেষে জবসকে অ্যাপলের সিইও পদে ফিরিয়ে আনে।
২০০৫ সালে এক বক্তৃতায় জবস বলেছিলেন, “আমি তখন এটি দেখতে পাইনি, তবে আমি জানি যে অ্যাপল থেকে বরখাস্ত হওয়া, আমার সাথে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভালো ঘটনা ছিল।” তাঁর মতে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া মানে হতাশ হওয়া নয় আরও দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
আজকের এই ৪ টি সফলতার শিক্ষনীয় গল্প আশাকরি আপনাদের জীবনকে মোটিভেট করবে এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
Read more: 20 টি সেরা বৃষ্টি নিয়ে কবিতা ও কোটস
উপসংহারঃ
ক্যারিয়ারের সফলতা অর্জনের অন্যতম উপায় হলো কঠোর পরিশ্রম, সময়ের সঠিক ব্যবহার, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং ইতিবাচক মনোভাব। সফলতার শিক্ষনীয় গল্প ব্যর্থ মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তর (Frequently Asked Questions Answers)
Q. সাফল্যের চাবিকাঠি কি?
A. কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ধৈর্য্য আর ইতিবাচক মনোভাব।
Q. সাফল্যের গল্প পড়লে কি লাভ হয়?
A. সাফল্যের গল্প পড়লে মোটিভেট হওয়া যায়।
Q. বিল গেটস কে?
A. মাইক্রোসফ্ট কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা।





