স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। যিনি একাধারে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সারা বিশ্বে বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বতের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। একজন মহান রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ভালো লেখক ও বক্তাও ছিলেন। তিনি অনেক বইও লিখেছেন। যার মধ্যে ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ ছিল পণ্ডিত নেহরুর সবচেয়ে জনপ্রিয় বই। এমনকি তার মূল্যবান চিন্তাভাবনা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আজকের প্রতিবেদনে থাকা পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর বিখ্যাত কিছু উক্তি গুলি অনুসরণ করলে জীবনে আসা অনেক বাধাই আমরা অতিক্রম করতে পারব যাতে জীবনের পথ অনেক সহজ মনে হতে পারে।
প্রতি বছর, জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনে অর্থাৎ ১৪ ই নভেম্বর দেশে শিশু দিবসও পালিত হয়। শিশুদের প্রতি তার ভালবাসা ছিল অফুরন্ত। আর সেই স্নেহ ভালবাসাকে স্মরণে রাখতেই তার জন্মদিনটিকে ভারতে শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
আরও পড়ুনঃ
পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর বিখ্যাত কিছু উক্তি:
ব্যর্থতা ঘটে যখন আমরা আমাদের আদর্শ, উদ্দেশ্য এবং নীতিগুলি ভুলে যাই।
মানুষের শিল্প তাদের মনের চিন্তা প্রতিফলিত করে।
ভয়ের মতো খারাপ এবং বিপজ্জনক জীবনে সম্ভবত আর কিছুই নেই।
সফলতা তাদের কাছে আসে যারা নির্ভয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরিণতিকে ভয় পায় না।
আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি । চিরন্তনী বাণী
বড় কাজ এবং ছোট মানুষ একসাথে যেতে পারে না।
সংকটের সময়ে, প্রতিটি ছোট জিনিস গুরুত্বপূর্ণ।
অজ্ঞানতা সবসময় পরিবর্তনকে ভয় পায়।
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি হল আমরা যে কোন বিষয় নিয়ে বেশি কথা বলি আর কাজ কম করি।
সময় পরিমাপ করা হয় বছর পেরিয়ে যাওয়ার দ্বারা নয়, একজন ব্যক্তি কী করে, সে কী অনুভব করে এবং সে কী অর্জন করে তার দ্বারা।
জওহর লাল নেহরুর রাজনৈতিক মতামত:
পুঁজিবাদী সমাজের শক্তিগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তাহলে ধনীকে আরও ধনী এবং গরীবকে আরও দরিদ্র করে তোলে।
দেয়ালে ছবি পাল্টে আমরা ইতিহাসের ঘটনা বদলাতে পারি না।
গণতন্ত্র ভাল কারণ অন্যান্য ব্যবস্থাগুলি আরও খারাপ।
স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার।
একটি মহৎ কাজে পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে কাজ করা, তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি না পেলেও, পরিণামে সফলতা লাভ করে।
আরও পড়ুনঃ মহান দার্শনিক প্লেটোর উক্তি ও অনুপ্রেরণামূলক বাণী সমূহ
আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে যে আমাদের ধর্ম ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আমরা এক।
ভারত যুদ্ধের দেশ নয় প্রেমের দেশ।
রাজনীতি ও ধর্ম পুরনো হয়ে গেছে, এখন বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার সময় এসেছে।
সত্য সবসময় সত্যই থাকে, তারা কখনও আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী অদৃশ্য হবে না।
শিক্ষার্থীদের জন্য জওহরলাল নেহরুর চিন্তাধারা:
সঠিক শিক্ষার মাধ্যমেই একটি উন্নত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
সংস্কৃতি হল মন ও আত্মার সম্প্রসারণ।
শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল সামগ্রিকভাবে সম্প্রদায়ের সেবা করার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করা এবং অর্জিত জ্ঞান শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, জনকল্যাণের জন্য প্রয়োগ করা।
শিশুরা বাগানের কুঁড়ির মতো এবং তাদের ভালবাসা দিয়ে লালন-পালন করা উচিত, কারণ তারা দেশের ভবিষ্যত এবং আগামী দিনের নাগরিক।
আরও পড়ুনঃ জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর বিখ্যাত উক্তি ও চিরস্মরণীয় বাণী
শিশুরা নিজেদের মধ্যে কখনও পার্থক্য চিন্তা করে না।
আমার কাছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সময় নাও থাকতে পারে, কিন্তু শিশুদের জন্য আমার যথেষ্ট সময় আছে।
শান্তি না থাকলে সব স্বপ্নই শেষ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় গুলি মানবতাবাদের জন্য, সহনশীলতার জন্য, যুক্তির জন্য, ধারণাগুলির সাহসিকতার জন্য এবং সত্যের সন্ধানের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
জাতির গঠন করতে হলে আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে খেলাধুলা বৃদ্ধি করার উপর জোর দিতে হবে। তাহলেই তারা উপযুক্ত নাগরিক হতে পারবে।
জওহর লাল নেহরুর সামাজিক চিন্তা:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানবজাতির উন্নতির চাবিকাঠি।
আমরা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের সাথে যেভাবে আচরন করি, সংখ্যালঘুদের সাথেও সেরকম আচরণ করব।
অন্যরা আমাদের সম্পর্কে কী ভাবছে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমরা আসলে কে।
আরও পড়ুনঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের উক্তি । জনপ্রিয় কবিতা
প্রতিটি আগ্রাসী জাতির অভ্যাস যে তারা প্রতিরক্ষামূলকভাবে কাজ করছে।
সর্বদা বিদ্রোহী মনোভাব কোন বিষয়ে গভীর বিবেচনার জন্য একদমই ভালো না।
আদর্শের সাথে আপোস করা সবসময়ই বিপজ্জনক, কারণ সময়ের সাথে সাথে ক্ষমতার প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়।
কর্মে বোকামির চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছু নেই।
যে ব্যক্তি তার গুণাবলী সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি কথা বলে সে নিজেই বাস্তবে গুণহীন।
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ওপর। কিন্তু আধ্যাত্মিকতার নির্দেশনায় তা না হলে মানবতা ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।
জওহর লাল নেহরুর অনুপ্রেরণামূলক উক্তি:
আগামী সময় বিজ্ঞানের এবং যারা বিজ্ঞানকে গ্রহণ করেছে তাদের।
জীবন হল তাসের খেলা। আপনার হাতে যা আছে তা ভাগ্য, আপনি যেভাবে খেলবেন তা স্বাধীন ইচ্ছা।
যে কোন কাজ পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে করলেই সফলতা পাওয়া যায়। সফলতা অবিলম্বে আসে না, সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
আরও পড়ুনঃ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উক্তি যা সকলের চিন্তাভাবনা বদলে দেবে
সুখী জীবনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকা প্রয়োজন।
যেকোন কাজে সঙ্কট ও বিঘ্ন ঘটার একটি সুবিধা হল যে তারা আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
সুস্থ থাকাই পরম লাভ, তৃপ্তিই পরম সম্পদ, বিশ্বাস সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু, নির্বাণ পরম সুখ।
আরও পড়ুনঃ 80 টি জীবনে সাফল্যের উক্তি । মোটিভেশনাল বার্তা
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তরঃ
Q. জওহরলাল নেহরু কতসালে এবং কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
A. জওহরলাল নেহরু, ১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর, উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) এক কাশ্মীরি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
Q. পন্ডিত জহরলাল নেহেরু কিসের জন্য বিখ্যাত ছিলেন?
A. স্বাধীনতার পর, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারতে গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি তার পরিকল্পনা ও উন্নয়নের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রেখে গেছেন। যা ভারতকে প্রযুক্তিগত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এমনকি ‘আধুনিক ভারতের স্থপতি’ হিসেবেও তিনি পরিচিতি লাভ করেন।
Q. জওহরলাল নেহরু কতসালে মৃত্যুবরণ করেন?
A. ১৯৬৪ সালের ২৭ মে মৃত্যুবরণ করেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।