আজও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছেন মহাত্মা গান্ধী। গান্ধিজীর চিন্তা আজও সারা বিশ্বকে সত্যের পথ দেখায়। তিনি শুধুমাত্র ভারতের স্বাধীনতাতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননি বরং সারা বিশ্বের দেশগুলিকে স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি কেবল অহিংসার পথ অনুসরণ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানই রাখেননি বরং হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য বৃদ্ধির চেষ্টাও করেছেন। আজকের এই নিবন্ধে মহাত্মা গান্ধীর বিখ্যাত উক্তি গুলি রইল যা সকলকে অনুপ্রাণিত করবে।
আরও পড়ুনঃ মহান দার্শনিক প্লেটোর উক্তি ও অনুপ্রেরণামূলক বাণী সমূহ
জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর বিখ্যাত উক্তি:-
একজন মানুষকে তার পোশাক দ্বারা নয়, বরং তার চরিত্র দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
সকল ধর্মের সারমর্ম এক। শুধু তাদের পন্থা ভিন্ন।
গৌরব লক্ষ্যের জন্য প্রচেষ্টার মধ্যে নিহিত, লক্ষ্যে পৌঁছানোর মধ্যে নয়।
স্বাস্থ্যই আসল সম্পদ, সোনা-রূপা নয়।
মানুষ তার চিন্তা দ্বারা সৃষ্ট একটি প্রাণী, সে যা চিন্তা করে তাই হয়।
নিঃশব্দ সবথেকে বড় কথন। ধীরে ধীরে গোটা দুনিয়া তোমাকে শুনবে।
অনেক টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন না দেখে, বরং ছোট ছোট সুখের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ুন। দেখবেন, দুঃখ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
আরও পড়ুনঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের উক্তি । বাণী । কবিতা
আমার জীবনের অভিজ্ঞতায় উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, একমাত্র সততা ও ভালোবাসা দ্বারা পৃথিবীকে জয় করা সম্ভব।
তোমার অনুমতি ছাড়া কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবে না।
বইয়ের মূল্য রত্নের চেয়েও বেশী, কারণ বই আমাদের ভবিষ্যৎ কে উজ্জ্বল করে।
প্রকৃত সৌন্দর্য মানুষের হৃদয়ের পবিত্রতায় নিহিত।
ভুল করা পাপ, কিন্তু তা লুকিয়ে রাখা আরও বড়ো পাপ।
সাতটি মহাপাপ: কর্মহীন ধন, অন্তরাত্মা হীন সুখ, মানবতাহীন বিজ্ঞান, চরিত্রহীন জ্ঞান, নীতিহীন রাজনীতি, নৈতিকতা ছাড়া ব্যবসা, ত্যাগ ছাড়া পুজো।
আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি । চিরন্তনী বাণী
মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণামূলক বার্তা:-
ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো সহজ কিন্তু একা দাঁড়াতে সাহস লাগে।
পরিশ্রম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন, ফলাফল নিয়ে বেশি ভাবতে যাবেন না।
কিছু মানুষ শুধুমাত্র সাফল্যের স্বপ্ন দেখে, আবার কিছু মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জন করে।
মানুষের মধ্যে যদি শেখার আগ্রহ থাকে, তাহলে তার করা প্রতিটি ভুলও তাকে শিক্ষা দেবে।
মনুষ্যত্বের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। মানবতা একটি সাগরের মতো, সাগরের কয়েক ফোঁটা নোংরা হলে পুরো সাগর নোংরা হয়ে না।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষক দিবস এর শুভেচ্ছা বার্তা । ম্যাসেজ । উক্তি
নিজস্ব প্রয়োজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া সাধারণ মানুষও ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে।
তোমার বিশ্বাসই তোমার চিন্তা হয়ে উঠবে,
তোমার চিন্তা তোমার শব্দে পরিণত হবে,
তোমার শব্দ তোমার কর্মে পরিণত হবে,
তোমার কাজ তোমার অভ্যাসে পরিণত হবে।
মনুষ্যত্বের মহানতা মনুষ্য হওয়াতে নয়, দয়ালু হওয়াতে।
সুখ কি? আপনি যা ভাবেন, যা বলেন এবং যা করেন, তার মধ্যে মিল থাকাটাই সুখ।
সর্বদা নিজের বিচার, শব্দ এবং কর্ম অনুসারে লক্ষ্য স্থির করুন। সর্বদা নিজস্ব চিন্তাধারা, বিচার কে পবিত্র রাখুন এবং সেই ভাবে লক্ষ্য স্থির করুন।
সামান্য অভ্যাস অধিক উপদেশের থেকে অনেক ভালো।
আরও পড়ুনঃ বিখ্যাত বিল গেটস এর উক্তি ও বাণী
মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষামূলক উক্তি:-
নম্রতা ছাড়া সেবা হল স্বার্থপরতা এবং অহংকার।
সন্তুষ্টি প্রচেষ্টার মধ্যে নিহিত, অর্জনের মধ্যে নয়।
মানুষ হিসাবে আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হল বিশ্বকে পরিবর্তন করা নয়, বরং নিজেকে পরিবর্তন করা।
সম্পর্ক চারটি নীতির উপর ভিত্তি করে: সম্মান, বোঝাপড়া, গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রশংসা।
শক্তি কেবল শারীরিক ক্ষমতা থেকে আসে না। অদম্য ইচ্ছা থেকেও আসে।
আরও পড়ুনঃ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস এর উক্তি
পূর্ণ প্রচেষ্টাই পূর্ণ বিজয়।
আমার জীবন আমার বার্তা।
অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান বইয়ের জ্ঞানের চেয়ে অনেক বহুগুণ বেশি দরকারী।
নারীর আসল অলঙ্কার হল তার চরিত্র, তার পবিত্রতা।
পৃথিবীতে পাওয়া প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য, আমাদের লোভ মেটানোর জন্য নয়।
দেশের স্বাধীনতা শুধু বীরত্ব দেখিয়ে অর্জন করা যায় না।
আরও পড়ুনঃ 60 টি সেরা কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি
মহাত্মা গান্ধীর চিরস্মরণীয় বাণী:-
নিজেকে জানার সর্বোত্তম উপায় হল নিজেকে অন্যের সেবায় নিয়োজিত করা।
ভুল করার স্বাধীনতা না থাকলে সেই স্বাধীনতার কোনো মানে হয় না।
তুমি আমাকে শিকলে বেঁধে রাখতে পারো, এমনকি আমার শরীরকে কষ্ট দিতে পারো, কিন্তু তুমি কখনও আমার চিন্তাভাবনাকে বেঁধে রাখতে পারবেনা।
সৎ মতবিরোধ প্রায়ই অগ্রগতির একটি ভাল লক্ষণ।
আরও পড়ুনঃ স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণী
ভবিষ্যত নির্ভর করবে আপনি আজ যা করছেন তার উপর।
মানবতার মাহাত্ম্য মানুষ হওয়ার মধ্যে নয়, মানবিক হওয়ার মধ্যে।
পাপকে ঘৃণা করো কিন্তু পাপীকে নয়, কারণ ক্ষমা খুবই মূল্যবান জিনিস।
আমি কাউকে তাদের নোংরা পা দিয়ে আমার মনের মধ্যে দিয়ে যেতে দেব না।
যেখানে প্রেম আছে সেখানে জীবন আছে।
শান্তির কোন পথ নেই, আছে শুধু শান্তি।
সত্য ও অহিংসা সম্পর্কে গান্ধীজির মূল্যবান বাণী:-
সত্য এক, পথ অনেক।
আমার ধর্ম সত্য ও অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ভগবান, অহিংসা তা অর্জনের উপায়।
জনসমর্থন ছাড়াই সত্য দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। কারণ সত্য আত্মনির্ভরশীল।
নিষ্ঠুরতার সাথে নিষ্ঠুরভাবে জবাব দেওয়ার মানে নিজের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অধঃপতনকে মেনে নেওয়া।
সত্য কখনই ন্যায়সঙ্গত কারণের ক্ষতি করে না।
হিংসা গড়তে জানে না। সে শুধু ধ্বংস করে।
আমি এই দুনিয়ার সব ধর্মের মূল সত্যে বিশ্বাস করি।
আরও পড়ুনঃ রইল মহাভারতের বিশেষ উক্তি ও শ্রী কৃষ্ণের শাশ্বত বাণী
বিশুদ্ধ বিবেক যা সর্বদা সত্যতার পরিচয় দেয়।
অহিংসা কোন কাপুরুষতার লক্ষণ নয়, বরং অহিংসা একজন সাহসী ব্যক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। কারণ হিংসার পথের চেয়ে অহিংসার পথে সবচেয়ে বেশি সাহসের প্রয়োজন হয়।
সত্য একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের মতো। সঠিক ভাবে যত্ন করলে তা অবশ্যই ভালো ফল দেয়। কারণ প্রয়োজনে সত্য একাই টিকে থাকবে, বাকি সব সময়ের স্রোতে ভেসে যাবে।
মতবিরোধের মাধ্যমে মিথ্যা কোনদিন সত্য হয়ে যায় না আবার কারো নজরে না আসলেও সত্য কোনদিন মিথ্যা হয়ে যায় না।
দারিদ্রতা হিংসার অন্যতম ভয়ঙ্কর রূপ।
আমি তাকেই ধার্মিক বলে মনে করি যে অন্যের ব্যথা বুঝতে পারে।
আরও পড়ুনঃ উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের উক্তি ও বাণী সমূহ
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র সম্পর্কে গান্ধীজির বলা কথা:-
প্রকৃত গণতন্ত্রে একজন সবল ব্যক্তির যে অধিকার, সেই অধিকার একজন দুর্বলেরও থাকা উচিত।
জীবন না থাকলে যেমন স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যায় না। তেমনই স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনে জীবন পর্যন্ত দিতে হবে।
সাধারণ মানুষদের যদি নিজেদের মতো করে বাঁচার অধিকার না থাকে, তাহলে সেই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অ্যাাখ্যা দিলে ভুল হবে।
আরও পড়ুনঃ বিখ্যাত সদগুরুর উক্তি । মূল্যবান বাণী । উপদেশ
রাষ্ট্র নিজের দায়িত্ব পালন না করলে শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাধ গড়ে তোলাটাই একজন নাগরিকের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত।
বল প্রয়োগ করে বা ভয় দেখিয়ে নেতা হওয়া যায় না। জননেতা হতে গেলে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, তাদের একজন হয়ে উঠতে হয়।
আরও পড়ুনঃ 80 টি জীবনে সাফল্যের উক্তি । মোটিভেশনাল বার্তা
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তরঃ
Q. মহাত্মা গান্ধীর পুরো নাম কি?
A. মহাত্মা গান্ধীর পুরো নাম ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।
Q. মহাত্মা গান্ধীর পিতা ও মাতার নাম কি?
A. তার পিতার নাম করমচাঁদ গান্ধী এবং মায়ের নাম পুতলিবাই।
Q. মহাত্মা গান্ধীর জন্ম কোথায় ও কতসালে হয়েছিল?
A. ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্ম নেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।
Q. জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী কতসালে মৃত্যুবরণ করেন?
A. ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি, গান্ধীজি মৃত্যুবরণ করেন।
Q. মহাত্মা গান্ধীকে ‘জাতির জনক’ হিসাবে কে অ্যাাখ্যা দিয়েছিলেন?
A. স্বাধীনতা সংগ্রামী সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধীকে ‘জাতির জনক’ হিসাবে সম্মানিত করেছিলেন।