বাংলা ধারাবাহিক বর্তমানে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এক কথায় বলতে গেলে বাংলা সিনেমাকে পিছনে ফেলে দর্শক এখন বাংলা ধারাবাহিকে মেতেছেন। সন্ধ্যের পর থেকে পরিবারের সকলেই টিভির পর্দায় বসে যান একের পর এক ধারাবাহিক দেখার জন্য। কিছু ধারাবাহিক শেষ হয়ে গেলেও এভারগ্রিন। দর্শকের আজও ভুলতে পারেননি সেই চরিত্রগুলিকে। সেইরকম সর্বকালের সেরা ১০ টি ধারাবাহিক হল-
১। বৌ কথা কও (মৌরি)
বাংলার ধারাবাহিক দশের মধ্যে প্রথম স্থান বৌ কথা কও। টিভির পর্দায় রাতারাতি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিল এই সিরিয়াল। গোটা বাংলা প্রায় মৌরির প্রেমে পাগল ছিল। ধারাবাহিকের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল মৌরি অর্থাৎ মানালি দে। তার প্রথম ধারাবাহিকে প্রবেশ একজন গ্রামের মেয়ে চরিত্রে। মানালি বিপরীত চরিত্রে ছিলেন রিজু বিশ্বাস। তাদের জুটি সেইসময় হিট। সিরিয়ালের সমাপ্তি হয়েছে বহু বছর আগে। আজও বাংলা দর্শক ভুলতে পারেননি তাদের এভারগ্রিন মৌরিকে।
২। সুবর্ণলতা
জি বাংলার জনপ্রিয় বাংলা ধারাবাহিক ‘সুবর্ণলতা’ আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাসের দ্বিতীয় খন্ড অবলম্বনেই তৈরী। সুবর্ণলতা এক বঙ্গবধূর গল্প। যে স্বাধীনতাকামী, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের। তবে সংসারের অন্যায়ে প্রশ্ন তোলার সাহস ছিল মনে। তার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে প্রত্যেক গৃহবধূই নিজের জীবনের মিল খুঁজে পান। এমন ধারাবাহিক মানুষের মনে আজও গাঁথা।
৩। সাত পাঁকে বাঁধা (দুষ্টু)
ঐন্দ্রিলা সেন এবং বিক্রম চট্টোপাধ্যায় জুটির প্রথম ধারাবাহিক “সাত পাঁকে বাধা” হিট। সর্বকালের জনপ্রিয় বাংলা ধারাবাহিকের মধ্যে একটি। এই ধারাবাহিকের পর থেকে দর্শক তাদের জুটি পছন্দ করে এবং পরবর্তীকালে দর্শকের ভালোবাসায় “ফাগুন বউ” ধারাবাহিকে কামব্যাক করেন দুইজনে।
৪। তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না মা (ঝিলিক)
সর্বকালের সুপারহিট ধারাবাহিক “তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না মা”। আজও সেই ধারাবাহিক দর্শকের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে রয়েছে। ছোট শিশু ঝিলিক চরিত্রে (তিথি বোস) অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তার অভিনয়ের জন্য তিথি বোস অনেক পুরস্কার অর্জন করেন সাথে বাংলা দর্শকের মন। ছোট বেলায় মা হারিয়ে যাওয়া মেয়েটির অনবদ্য অভিনয় দর্শকের চোখে জল এনে দিয়েছিল। শুধু মা ধারাবাহিক নন তার টাইটেল ট্র্যাকও বেশ জনপ্রিয়।
৫। ওগো বধূ সুন্দরী (ললিতা)
বাংলা ধারাবাহিক ওগো বধূ সুন্দরী দর্শকের হৃদয় চুরি করেছে। ঋতাভরী চক্রবর্তীর অভিনীত ওগো বধূ সুন্দরী একটি যৌথ পরিবারের মিষ্টি সম্পর্ক ঘিরে তৈরি হয়েছিল। সিরিয়ালের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ললিতা-ঈশান। বড়লোক বাড়ির বদমেজাজি মেয়ে, যে ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছে। বিয়ে হয় মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে। জ্যেঠি শাশুড়ির থেকে মায়ের মতন ভালোবাসা পেয়ে পাল্টে যায় মেয়ে। ঋতাভরী যখন ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন, সে তখন স্কুলে পড়ত। ছোট বয়সে এত সুন্দর অভিনয় দর্শকের হৃদয়ে মন জায়গা করে নেয়। এই শো থেকে তিনি ভালো ফ্যানবেস অর্জন করেছে এবং এরপর থেকে তার ক্যারিয়ারে ফিরে তাকতে হয়নি। তবে বাংলা দর্শক আজও তাকে ললিতা বলেই চেনে।
৬। গোয়েন্দা গিন্নি (পরমা)
ইন্দ্রানী হালদারের ‘গোয়েন্দা গিন্নি’ আজও মানুষের মনে। ধারাবাহিক শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই, কিন্তু তার জনপ্রিয়তা এখনও বজায় রয়েছে। বাড়ির বউয়ের গোয়েন্দা গিরি গল্প নিয়ে তৈরি হয় ধারাবাহিক। প্রতিদিন নতুন গোয়েন্দার রহস্য নিয়ে টিভির পর্দায় হাজির হত ইন্দ্রানী হালদার। অল্প সময়ের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ধারাবাহিকটি। কারণ আর পাঁচটা সংসারের অশান্তি, ড্রামা চেয়ে ভিন্ন স্বাদের রহস্যময় গল্প। কিন্তু খুব জলদি শেষ করে দেওয়া হয়েছিল ধারাবাহিকটি। যার জন্য আফসোস করেছিল দর্শক।
৭। ইষ্টি কুটুম (বাহামনি)
বাংলার এভারগ্রিন ধারাবাহিক ইষ্টি কুটুম। রনিতা দাস এই ধারাবাহিকে বাহামনি চরিত্রে অভিনয় করেন। যদিও পরে মুখ্য চরিত্রের মুখ চেঞ্জ করা হয়েছিল। পলাশবণির মেয়ে বাহামনির দুষ্ট-মিষ্টি চরিত্র বাঙালি আজও মিস করেন। বাহা এবং অর্চির প্রেমকাহিনী ২০১১ সালে টিভির পর্দায় ঝড় তুলেছিল। সেইসময় টিআরপির রেটিং-এ শীর্ষে থাকত এই ধারাবাহিক।
৮।বোঝে না সে বোঝে না (পাখি)
২০২১-এ দাঁড়িয়েও পাখি (মধুমিতা সরকার)-অরণ্যের (যশ দাসগুপ্ত) জুটি এভারগ্রিন। বোঝে না সে বোঝে না ধারাবাহিক সেই সময় শুধু এপার বাংলা নয় ওপার বাংলার ধারাবাহিক প্রেমীদের মনেও সাড়া জাগিয়েছিল। মিষ্টি মেয়ে পাখি আর রাশভারী ছেলে অরণ্যের প্রেম কাহানী নিয়ে দর্শকের মাতামাতি কিছু কম ছিল না। সেই রেশ আজও যায়নি। তাদের ফ্যানপেজে আজও পাখি-অরণ্যকে নিয়ে চর্চা হয়। তার ভক্তরা এই জুটিকে ছোট পর্দায় আবারও ফিরে পেতে চায়।
৯। ভুতু
ছোট মিষ্টি ভুতুকে কি ভোলা যায়? বাঙালি দর্শক তো আজও ভুলতে পারেনি তাকে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ভুতু চরিত্রে আরশিয়া মুখার্জির অনবদ্য অভিনয় দেখে হকচকিয়ে গিয়েচ্ছিল পর্দার দর্শক। শুধু বড়রাই নন খুদে দর্শকরাও ছিল ভুতুর ফ্যান। ছোট্ট ভূত, একটি বড় সাদা শার্ট, মুখে দুষ্ট-মিষ্টি হাসি নিয়ে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছিল। সেইসময় বাংলা ধারাবাহিক ভুতু এক অন্যতম নিবেদন ছিল।
১০। ইচ্ছে নদী (মেঘলা)
ত্রিকোণ প্রেমের গল্প নিয়ে তৈরি ইচ্ছে নদী। আজও ‘ইচ্ছে নদী’ সিরিয়ালের অনুরাগ-মেঘলা জুটিকে মনে রেখেছেন দর্শক। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে প্রথম অভিনয় জগতে পা রাখেন সোলাঙ্কি রায়। তার অভিনয় নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। এই ধারাবাহিকে তার সাবলীল অভিনয় “প্রথমা কাদম্বিনী ‘ মতো ধারাবাহিকে তাকে অভিনয় করার সুযোগ করে দেয়। তবে দর্শক আজও মিস করে অনুরাগ-মেঘলার প্রেম কাহিনী। সিরিয়ালটি শেষ হয়ে গেলেও বিক্রম-সোলাঙ্কি এখনো সমান জনপ্রিয়।