পরিবেশকে রক্ষা করে, আনো সবারে আলোকিনী”
সুস্থ জীবন মানেই সুন্দর পরিবেশ। তবে গোটা মানবসমাজ বর্তমানে পরিবেশ দূষণের মত ভয়াবহ সংকটের মুখে। আর এই সংকট থেকে মুক্তির পথ হল আমাদের সকলের সমবেত প্রচেস্টায় পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা। পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের অবগত করতে প্রায় সময় পরিবেশ দূষণ রচনা লিখতে দেওয়া হয়। তারজন্য সহজ ভাষায় রইল – পরিবেশ দূষণ রচনা।
Read more: শরৎকাল রচনা ছোটদের জন্য সহজ ভাষায়
পরিবেশ দূষণ রচনা (১০০ শব্দ)
সমগ্র বিশ্ব বর্তমানে এক ভয়াবহ সংকটের মুখে তা হল পরিবেশ দূষণ। যার কারনে মানব সমাজ প্রায় ধ্বংসের মুখে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক পরিবেশ দূষণের মুল কারণ গুলি ঠিক কি কি এবং কি উপায়ে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে আমরা রেহাই পেতে পারি।
অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস, পানীয় জল এবং আমরা যে জমিতে খাদ্য উৎপাদন করি তার ক্ষতি করে। কারখানা, গাড়ি এবং জ্বালানি পোড়ানোর ধোঁয়ার কারণে বায়ু দূষণ হয়। এটি বাতাসকে নোংরা করে এবং হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করে।
আবর্জনা, রাসায়নিক এবং বর্জ্য নদী, হ্রদ এবং সমুদ্রে ফেলা হলে জল দূষণ হয়। দূষিত জল জলজ প্রাণীদের জন্য বিপজ্জনক এবং মানুষকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। ভূমি দূষণ তখন ঘটে যখন মানুষ ডাস্টবিন ব্যবহার না করে মাটিতে আবর্জনা ফেলে। এটি মাটিকে নোংরা করে এবং উদ্ভিদের ক্ষতি করে। যার ফলে কৃষিকাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শব্দ দূষণও একটি সমস্যা। যানবাহন, মেশিন এবং নির্মাণ স্থান থেকে আসা উচ্চ শব্দ আমাদের শ্রবণশক্তির ক্ষতি করতে পারে এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এরজন্য আমাদের বেশি মাত্রায় গাছ লাগাতে হবে যাতে অক্সিজেনের পরিমান বেড়ে পরিবেশে ভারসাম্য বজায় থাকে। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে। কলকারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রন করতে হবে। নদী-নালা পরিস্কার রাখতে হবে।
Read more: রইল ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় শিক্ষক দিবসের রচনা
পরিবেশ দূষণ রচনা (২০০-৫০০ শব্দের)
আকাশ, বাতাস, জল, গাছপালা এবং সমগ্র প্রানীকুলকে কেন্দ্র করেই আমাদের এই মানব সভ্যতা। প্রকৃতির এই দান মানুষকে দিয়েছে জীবনধারনের সমস্ত উপকরণ। কিন্তু মানুষ তার প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলছে পরিবেশের ভারসাম্য। শিল্পায়ন, নগরায়ন, যানবাহনের বৃদ্ধির কারনেই পরিবেশ আজ ভীষণভাবে দূষিত। পরিবেশ দূষণ শুধু প্রাকৃতিক ভারসম্যকেই নষ্ট করছে না বরং সমগ্র মানবজীবনের অস্তিত্বকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বায়ুদূষণঃ কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড, জ্বালানির পোড়ানোর ফলে ক্রমাগত বায়ুদূষণ বাড়ছে। যার কারনে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ক্যান্সার এবং হাঁপানির মত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
জলদূষণঃ রাসায়নিক বর্জ্য, নর্দমার ময়লা, শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য নদী ও পুকুরের জলে মিশে জল দূষিত করছে। যার কারনে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, কলেরার মত জলবাহিত রোগের পরিমান বাড়ছে।
শব্দদূষণঃ যন্ত্রচালিত যানবাহনের হর্ন, মাইক্রোফোনের উচ্চ শব্দ, বাজির শব্দের কারনে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে শব্দদূষণ। এরফলে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস, মানসিক চাপ ও উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা বাড়ছে।
মাটিদূষণঃ অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। কৃষিজ ফসলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে। যা মানব শরীরে রোগের বাসা বুনছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে, আমাদের সকলকে যেসমস্ত ভূমিকা পালন করতে হবে:
- বেশিকরে গাছ লাগাতে হবে, বনাঞ্চল ধবংস বন্ধ করতে হবে।
- ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারের পরিবর্তে গণপরিবহন, সাইকেল বা হাঁটা পথকে বেছে নিতে হবে।
- প্লাস্টিকজাতীয় ব্যাগ এবং বোতল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তার বদলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসের ব্যবহার করতে হবে।
- খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলা যাবে না। প্রয়োজনে ডাস্টবিন ব্যবহার করতে হবে।
- মাটিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার করতে হবে।
- পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
শেষকথাঃ পরিবেশ দূষণ সকল জীবের জন্যই বিপদ। আমাদের সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই আমরা আমাদের পরিবেশকে বসবাসের জন্য পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারি।
Read more: গ্রীষ্মকাল রচনা ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায়
পরিবেশ দূষণ রচনা (৫০০-১০০০ শব্দের)
ভূমিকাঃ
প্রাকৃতিক কারনে হোক বা মানুষের কার্যকলাপে, আমাদের চারপাশের পরিবেশে এমন কোনো অবাঞ্ছিত পরিবর্তন ঘটে যা মানবসমাজ, জীবজন্তু এবং উদ্ভিদের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে, তখন তাকে পরিবেশ দূষণ বলে।
পরিবেশ দূষণের কারণ ও প্রভাবঃ
বায়ুদূষণঃ কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড, জ্বালানির পোড়ানোর ফলে ক্রমাগত বায়ুদূষণ বাড়ছে। যার কারনে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ক্যান্সার এবং হাঁপানির মত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
জলদূষণঃ রাসায়নিক বর্জ্য, নর্দমার ময়লা, শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য নদী ও পুকুরের জলে মিশে জল দূষিত করছে। যার কারনে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, কলেরার মত জলবাহিত রোগের পরিমান বাড়ছে।
শব্দদূষণঃ যন্ত্রচালিত যানবাহনের হর্ন, মাইক্রোফোনের উচ্চ শব্দ, বাজির শব্দের কারনে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে শব্দদূষণ। এরফলে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস, মানসিক চাপ ও উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা বাড়ছে।
মাটিদূষণঃ অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। কৃষিজ ফসলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে। যা মানব শরীরে রোগের বাসা বুনছে।
Read more: বর্ষাকাল রচনা ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায়
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের উপায়ঃ
গাছ সংরক্ষনঃ বেশি মাত্রায় গাছ লাগাতে হবে, বনাঞ্চল ধ্বংস রোধ করতে হবে। কারণ গাছ বাতাস থেকে কার্বন- ডাই অক্সাইড শোষণ করে অতিমাত্রায় অক্সিজেন ছড়ায় যা পরিবেশ দূষণ কমাতে সাহায্য করে।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রনঃ কলকারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি চালিত গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। প্লাস্টিক কিংবা কয়লা পোরানো বন্ধ করতে হবে।
জলদূষণ রোধঃ কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে নদী বা জলাশয়ে ফেলতে হবে। ময়লা-আবর্জনা পুকুরে ফেলা যাবে না। নর্দমার জল প্রক্রিয়াকরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রনঃ যানবাহনের হর্ন ও মাইক্রোফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে কঠোর আইনি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। শব্দবাজি পোরানো বন্ধ করতে হবে।
মাটিদূষণ রোধঃ মাটিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার করতে হবে। এতে কৃষিজ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। প্লাস্টিকজাতীয় ব্যাগ এবং বোতল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তার বদলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসের ব্যবহার করতে হবে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধিঃ পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহারঃ
বর্তমান সমাজে পরিবেশ দূষণ একটা গুরুতর সমস্যা যার কারনে আজ মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিঘ্নিত। আর ক্রমাগত বাড়তে থাকা এই গভীর সংকটের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রত্যেকেই সচেতন হতে হবে।
Read more: ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় নারী শিক্ষার রচনা
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তর (Frequently Asked Questions and Answers):
প্রঃ পরিবেশ দূষণ কী?
উঃ প্রাকৃতিক কারনে বা মানুষের কার্যকলাপের কারনে যখন ধোঁয়া, রাসায়নিক, প্লাস্টিক এবং বর্জ্যের মতো ক্ষতিকারক জিনিস প্রকৃতিতে এসে মেশে তখনই পরিবেশ দূষণ ঘটে। যা বাতাসকে দূষিত করে, জলকে অনিরাপদ করে, প্রাণী এবং উদ্ভিদের জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
প্রঃ পরিবেশ দূষণের প্রকারভেদ ও কি কি?
উঃ পরিবেশ দূষণের প্রধান চারটি ভাগ হল – বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মাটিদূষণ, শব্দ দূষণ। এছাড়াও বেশকিছু দূষণের প্রকারভেদ আছে যাতে আমাদের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হল – প্লাস্টিক দূষণ, তেজস্ক্রিয় দূষণ, তাপ দূষণ, আলোক দূষণ ইত্যাদি।
প্রঃ আমরা কিভাবে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?
উঃ পরিবেশকে রক্ষা করতে সবার প্রথমে চারপাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, বেশি করে গাছ লাগাতে হবে, বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নদী, পুকুরকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। প্লাস্টিকজাত জিনিসের ব্যবহার কমাতে হবে।


